দুর্নীতির অভিযোগে অধ্যক্ষের অপসারণ চান প্রতিষ্ঠাতা
Published: 20th, February 2025 GMT
দুর্নীতির অভিযোগে ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার হুরমত উল্লাহ কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জিল্লুর রহমানের অপসারণের দাবি জানানো হয়েছে। ময়মনসিংহ প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে গতকাল বুধবার সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ফজলুর রহমান।
সংবাদ সম্মেলনে ফজলুর রহমান বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গফরগাঁওয়ের সংসদ সদস্য ফাহমি গোলন্দাজ জোর করে আমাকে কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি পদ থেকে সরিয়ে দেন। এর পর জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিয়ম ভঙ্গ করে কলেজের ১ নম্বর শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ না করে এমপি তাঁর প্রিয়ভাজন জিল্লুর রহমানকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগ দিয়েছেন। এর পর থেকে তিনি দুর্নীতি, অর্থ আত্মসাৎ ও অনিয়ম করে আসছেন।’
বিষয়টি কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ফজলুর রহমান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানালেও কোনো কাজ হয়নি। কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জিল্লুর রহমানের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগগুলো লিখিত বক্তব্যে তুলে ধরে ফজলুর রহমান বলেন, ‘আমার বাবার নামে ১৯৯৩ সালে নিজের জমি দিয়ে কলেজ প্রতিষ্ঠা করি। কিন্তু সাবেক এমপি ফাহমি গোলন্দাজের আশীর্বাদপুষ্ট আওয়ামী লীগ নেতা জিল্লুর রহমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হয়ে ধরাকে সরাজ্ঞান করে চলতেন। কলেজের শিক্ষকরা তাঁর কথামতো না চললে তাদের সঙ্গে অশোভন আচরণ করতেন।’
এ বিষয়ে ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ করার পর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি তদন্ত করে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে দুর্নীতি অনিয়মের সত্যতা পেলেও সাবেক সংসদ সদস্য গোলন্দাজের হস্তক্ষেপের ফলে প্রশাসন আইনগত কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি। গত ৫ আগস্ট থেকে আত্মগোপনে রয়েছেন ফাহমি গোলন্দাজ বাবেল। তাঁর আশীর্বাদপুষ্ট জিল্লুর রহমান এখনও কলেজে অনিয়ম করে যাচ্ছেন। জেলা-উপজেলা ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে জানিয়েও কোনো ফল পাওয়া যাচ্ছে না। কলেজের সার্বিক কল্যাণে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জিল্লুর রহমানকে দ্রুত অপসারণে সরকারের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছেন প্রতিষ্ঠাতা ফজলুর রহমান।
গফরগাঁওয়ের হুরমত উল্লাহ কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জিল্লুর রহমান রুবেল বলেন, ‘রেজুলেশনের মাধ্যমে আমার নিয়োগ হয়েছে। আমার সভাপতি ইউএনও। শিক্ষকদের বেতন ব্যাংকের মাধ্যমে হয়। শিক্ষার্থীদের বেতনের টাকাও ব্যাংকে জমা হয়। আমি ৩ বছরে ৩৭ লাখ টাকা আয় দেখিয়েছি, যা গফরগাঁওয়ের কোনো কলেজ দেখাতে পারবে না।’ তিনি বলেন, ‘তিনি কীভাবে প্রতিষ্ঠাতা হলেন, এমন তথ্য আমার কাছে জানতে চাইলে তদন্তে দেখা যায়, ১০ লাখ টাকা পে-অর্ডারের মাধ্যমে জমা দিতে হয়। ওই টাকা জমা না দিয়েই উনি প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা হয়েছেন। তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার পর থেকেই উনি আমার পেছনে লেগেছেন।’
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ময়মনস হ ফজল র রহম ন কল জ র তদন ত
এছাড়াও পড়ুন:
জমিজমার বিরোধে থানায় সালিসে গিয়ে ‘রাজনৈতিক মামলায়’ গ্রেপ্তার যুবক
জমিজমা–সংক্রান্ত বিরোধে ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানায় সালিসে আসা এক যুবককে ‘রাজনৈতিক মামলায়’ গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ দুপুরে ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে ওই যুবকের মা আনারা বেগম এ কথা জানান।
গ্রেপ্তার ওই যুবকের নাম আল-আমিন (৩২)। তাঁর বাড়ি নগরের বলাশপুর এলাকায়। মায়ের দাবি, আল-আমিন রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন। সালিসে জমিজমার কাগজ ঠিক থাকায় সাদা কাগজে স্বাক্ষর করতে রাজি না হলে রাজনৈতিক মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়।
তবে পুলিশ বলছে, ওই যুবক যুবলীগের সমর্থক। তাঁকে গ্রেপ্তারে কয়েকবার বাড়িতে অভিযানও চালিয়েছে পুলিশ। থানায় তাঁকে পেয়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যদিও গ্রেপ্তারের পর আদালতে পাঠানো প্রতিবেদনে তাঁকে নগরের কেওয়াটখালী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে আল-আমিনের মা আনারা বেগম বলেন, ২০২১ সালে বলাশপুর এলাকায় স্বামীর পেনশনের ১৭ লাখ টাকায় ৩ দশমিক ৬০ শতাংশ জমি কেনেন তাঁরা। এর আগে ২০০৮ সালে একই দাগে ৪ শতাংশ জমি কেনার দাবি করে ২০২২ সালে জোরপূর্বক সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করেন এক ব্যক্তি। এ নিয়ে স্থানীয়ভাবে সালিস হলেও কোনো সুরাহা হয়নি। ৫ আগস্টের পর সরকার পরিবর্তন হলে নিজের কেনা জমিতে বাড়ি করার উদ্যোগ নিলে বাধা হয়ে দাঁড়ান ওই ব্যক্তি ও তাঁর পক্ষের লোকজন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বিষয়টি সমাধানের লক্ষ্যে কোতোয়ালি মডেল থানায় উভয় পক্ষকে ডাকা হয়। গত শনিবার রাত আটটায় থানায় সালিস শুরু হয়। চলে রাত ১২টা পর্যন্ত। সালিসে শেষ পর্যায়ে যখন জমির কাগজপত্র তাঁদের ঠিক পান সালিসকারীরা, তখন ওসি আল-আমিনকে তাঁর কক্ষে নিয়ে পিটিয়ে হাড়গোড় ভেঙে ফেলার হুমকি দেন। পেছনে পেছনে তিনি গিয়ে প্রতিবাদ করলে তাঁর সঙ্গেও খারাপ ব্যবহার করা হয়। এরপর আল-আমিনকে গারদে ঢুকিয়ে সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করার জন্য চাপ দেওয়া হয়। রাজি না হওয়ায় সাজানো রাজনৈতিক মামলায় তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়।
আনারা বেগম বলেন, ‘আমার ছেলে কোনো রাজনীতি করে না। আমার ছেলে ব্যবসা করে। তাকে রাজনৈতিক মামলায় পুলিশ কারাগারে পাঠিয়েছে।’
২৭ জুলাই আল-আমিনকে আদালতে পাঠানোর প্রতিবেদনে পুলিশ উল্লেখ করে, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি রাত ১টা ৩৫ মিনিটে পুলিশের টহল দল নগরের আকুয়া ভাঙ্গাপুল এলাকায় অবস্থানকালে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারে যে সদরের উত্তর দাপুনিয়ার সরকারি পুকুরপাড় সেলফি নামের স্থানে পাকা রাস্তার ওপর একদল সন্ত্রাসী জনতাবদ্ধ হয়ে রাস্তা বন্ধ করে গাড়ি ভাঙচুর ও দাঙ্গাহাঙ্গামা সৃষ্টি করে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে ৫টি মশাল, ২০টি লাঠি, ৩০টি ইটের টুকরা, ২৫টি কাচের টুকরা জব্দ করা হয়। এ ঘটনার পরদিন পুলিশ কোতোয়ালি মডেল থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন। ওই মামলায় আল-আমিনকে সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে ২৬ জুলাই রাত ১১টা ৪০ মিনিটে নগরের কেওয়াটখালী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। প্রতিবেদনে পুলিশ আল-আমিনকে যুবলীগের সমর্থক হিসেবে উল্লেখ করে।
থানার ওই সালিসে থাকা মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি মো. বাবু বলেন, থানা চত্বরের একটি ঘরে এসআই সজীব কোচের উপস্থিতিতে দুই পক্ষের কাগজপত্র বোঝেন, এমন লোকজন নিয়ে সালিস শুরু হয়। একপর্যায়ে আল-আমিনকে ‘ফ্যাসিস্ট’ আখ্যায়িত করে গ্রেপ্তারের দাবি জানান প্রতিপক্ষের লোকজন। পরে তাঁকে থানা থেকেই গ্রেপ্তার করা হয়।
জানতে চাইলে কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ শিবিরুল ইসলাম বলেন, ‘১০ দিন আগে থেকে দারোগারা তাঁকে (আল-আমিন) ধরার জন্য খুঁজতেছে। ডেভিল হান্টের আসামি সে। আমাদের দুই দারোগা ছয় থেকে সাতবার তাঁর বাড়িতে রেড দিছে। সে যুবলীগের ফ্যাসিস্ট। মামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তদন্তে প্রাপ্ত আসামি।’ ওসি বলেন, কোনো কাগজপত্র দিয়ে নোটিশ করে তাঁকে থানায় ডাকা হয়নি। বিচারক যদি মনে করে আমরা তাঁকে ইলিগ্যাল অ্যারেস্ট করেছি, তাহলে আদালত ফাইন্ডিংস দেবেন। আসামিকে থানা থেকে গ্রেপ্তার করা কী নিষেধ আছে?’ আদালতের প্রতিবেদনে ভিন্ন স্থান দেখানোর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘জজ এটার বিচার করবে। যদি এমন কইরা থাকে, সমস্যা কী?’