ইসলামি দলগুলো একই প্ল্যাটফর্ম থেকে প্রার্থী দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা করছে: খেলাফত মজলিসের আমির
Published: 21st, February 2025 GMT
আগামী নির্বাচনে একই প্ল্যাটফর্ম থেকে প্রার্থী ও প্রতীক দেওয়ার বিষয়ে ইসলামি দলগুলোর মধ্যে আলোচনা চলছে বলে জানিয়েছেন খেলাফত মজলিসের আমির আবদুল বাছিত আজাদ। আজ শুক্রবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ শহরের মাসদাইর কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে দলটির জেলা ও মহানগরের কর্মী সম্মেলনে শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
খেলাফত মজলিসের আমির আবদুল বাছিত আজাদ বলেন, ‘আমরা মতানৈক্য না করে সবকিছু ভুলে এ দেশের মানুষের স্বার্থে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের স্বার্থে, জনগণের স্বার্থে ঐক্য চাই। আগামী নির্বাচনে ইসলামি দলগুলো একটি প্ল্যাটফর্ম থেকে প্রার্থী ও মার্কা দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা করছে। যাতে ভোটারদের ভোটদান সহজ হয়।’
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের উদ্দেশে খেলাফত মজলিসের আমির বলেন, ‘শেখ হাসিনা ও তাঁর দল ব্যতীত আমরা সব সংগঠনের সঙ্গে ঐক্য চাই। ঐক্যের মাধ্যমে আমরা একটি সফল রাষ্ট্র কায়েম করতে চাই। ইসলামি দলগুলোর মধ্যে আমাদের কিছু মতবিরোধ থাকলেও আমরা সবাই এক।’
ইসলামি দলগুলোর সঙ্গে ঐক্য প্রসঙ্গে খেলাফত মজলিসের এই নেতা বলেন, ‘যেখানে জামায়াতে ইসলামী থাকবে, সেখানে আর কোনো ইসলামি দল থাকতে পারবে না। যে জায়গায় খেলাফত মজলিস থাকবে, সেখানে আর কোনো ইসলামি দল থাকতে পারবে না। যেখানে ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন থাকবে, সেখানে একটাই প্রার্থী থাকবে, আর কেউ সেখানে থাকবে না। যেখানে খেলাফত মজলিসের প্রার্থী ও ফিল্ড ভালো, সেখানে অন্য কেউ যাতে না দাঁড়ায়। আবার যেখানে জামায়াতে ইসলামীর ফিল্ড ভালো ও প্রার্থী ভালো, সেখানে শুধু জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী থাকবে। এগুলো আমরা এক টেবিলে বসে আলোচনা করে প্রার্থী ঘোষণা করব।’
সম্মেলনে খেলাফত মজলিস নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি আহমদ আলীর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদের। প্রধান বক্তার বক্তব্য দেন দলটির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব এ বি এম সিরাজুল মামুন। মহানগরের সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ শাব্বীর আহমেদের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান আবদুল কাদির, খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা আবু তাহের, জামায়াতে ইসলামী কর্ম পরিষদ সদস্য মঈনুদ্দিন আহমদ, মহানগর জামায়াতে ইসলামীর আমির আবদুল জব্বার, ঢাকা মহানগর খেলাফত মজলিসের সাধারণ সম্পাদক আবু হোসাইন, নারায়ণগঞ্জ জেলা উলামা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জাকির হুসাইন কাসেমী প্রমুখ।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
শিক্ষার্থীদের উপর অটো চালকদের হামলা, আহত ২০ (ভিডিও)
নারায়ণগঞ্জ শহরে যানজট নিরসনে সড়কে কাজ করা শিক্ষার্থীদের ওপর ব্যাটারিচালিত রিকশা (ইজিবাইক) চালকরা হামলা চালিয়েছে। এ নিয়ে ইজিবাইক চালকদের সাথে সংঘাতে জড়ালে উভয় পক্ষের কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়েছেন।
এ ঘটনায় ইজিবাইকচালকরা প্রায় দুই ঘণ্টা ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড অবরোধ করে রাখেন। তাদের অবরোধে পুরো শহরজুড়ে যানজট সৃষ্টি হয়।
বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টায় ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের চাষাঢ়া ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের প্রবেশ গেটে এ ঘটনা ঘটে। পরে বিকেলে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে প্রশাসন ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, শিক্ষার্থী ও ইজিবাইক চালকদের প্রতিনিধিদের নিয়ে প্রায় দেড় ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে বিষয়টি সমাধান হয়।
এদিকে আহত শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৯ জনের নাম পাওয়া গেছে। তারা হলো- মোঃ আবু সাঈদ (১৯), মারুফ (১৯), আসিফ (৩০), মাহিম (২২), ফয়সাল আহমেদ (২৮), হুমায়ন কবির (২৬), এনামুল হক শান্ত (২৩), শাহীন খন্দকার (২২) ও নুহেল মুন্সী আপন (২২)। তবে আহত ইজিবাইক চালকদের নাম পাওয়া যায়নি।
(ভিডিও দেখতে এখানে ক্লিক করুন)
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সড়কে ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করা শিক্ষার্থীরা চাষাড়ায় ঢুকতে বাঁধা দেয় ইজিবাইক চালকদের। এ নিয়ে কথাকাটাকিাটি হয় উভয়ের মধ্যে এক পর্যায়ে ইজিবাইকরা চালকরা সংঘবদ্ধ হয়ে শিক্ষার্থীদের উপর হামলা চালায়। শিক্ষার্থীরা প্রতিরোধ করতে গেলে উভয়ের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ও সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অনেকেই আহত হয়।
এ ঘটনার প্রতিবাদে ইজিবাইক চলকরা সড়ক অবরোধ করে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়। ফলে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। ভোগান্তিতে পড়ে হাজার হাজার যাত্রী সাধারণ। পরে আইনশৃংখলাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
এদিকে স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, সংঘর্ষের সময় ইজিবাইক চালকদের অনেকেই তাদের গাড়ির সিটের নিচ থেকে লাঠি ও লোহার রড বের করে শিক্ষার্থীদের উপর হামলা চালায়।
ধারণা করা হয়, আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিল ইজিবাইক চালকরা যে শিক্ষার্থীদের উপর সুযোগ পেলেই হামলা করবে। কারণ গত এক দেড় মাস ধরেই চাষাড়ায় ইজিবাইক ঢুকতে বাধা দিয়ে আসছিল শিক্ষার্থীরা। এতে ক্ষোভ জমতে থাকে ইজিবাইক চালকদের মধ্যে। আজকে তারা সুযোগটি কাজে লাগিয়েছে।
ওদিকে যানজট নিরসনে কাজ করা শিক্ষার্থী ইয়াসিন আরাফাত বলেন, ‘আমরা এক মাস ধরে শহরের যানজট নিরসনে কাজ করে যাচ্ছি। চেম্বার অব কমার্স এবং বিকেএমই থেকে আমাদেরকে ট্রাফিক মনিটরিং সেলে দেওয়া হয়। আমাদের দায়িত্ব দেওয়ার পর থেকেই বড় অটোরিকশাগুলো চাষাঢ়ায় প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল।
কিন্তু তারা নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে চাষাঢ়ায় প্রবেশ করেন। পরে বাধা দিলে তারা আমাদের ওপর ক্ষেপে যান। এবং পরিকল্পিতভাবে হামলা চালায়। এতে আমাদের বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে।
তবে উজ্জল নামে এক অটোরিকশাচালক জানায়, ‘আমাদের চাষাঢ়া যাওয়া নিষেধ। আমরা নিষেধ উপেক্ষা করে চাষাঢ়া গেছি, এটা আমাদের অপরাধ। কিন্তু তারা আমাদের অটোরিকশার গ্লাস ভেঙে দিয়েছে। গ্লাস ভাঙার কারণ জানতে চাইলে তারা আমাদের ওপর হামলা করেছে। আমাদের অনেককে তারা মারধর করেছে। কয়েকজন হাসপাতালে ভর্তি আছে।’
নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন বলেন, সব পক্ষকে নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে ভালো একটি সমাধানে আসা সম্ভব হয়েছে। আলোচনা সভায় দুই পক্ষই ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় জেলা প্রশাসনের সব সিদ্ধান্ত মানতে একমত হয়েছেন। এ ঘটনায় একটি কমিটি গঠন করা হবে।
উল্লেখ্য, নারায়ণগঞ্জ শহরের অসহনীয় যানজট নিরসনের লক্ষ্যে গত কয়েক মাস ধরে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও ট্রাফিক বিভাগের কর্মকর্তাদের সাথে দফায় দফায় বৈঠক করেছেন বিকেএমইএ, নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং নাগরিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা।
এরই ধারাবাহিকতায় বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স ও বিকেএমইএ’র যৌথ উদ্যোগে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে শতাধিক যানজট নিরসন কর্মী নিয়োগ দেয়া হয়। এ কাজে নিয়োগপ্রাপ্তরা বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।
গত প্রায় এক মাস ধরে এই শিক্ষার্থীরা লেখাপড়ার ফাঁকে যানজট নিরসন কর্মী হিসেবে বিভিন্ন সড়কে দায়িত্ব পালন করছেন। ফলে নগরীর যানজট অনেকটা কমে এসেছে।