দেড় দশক পর গৌরনদীতে ভাষাসৈনিক কাজী গোলাম মাহবুবকে নিয়ে অনুষ্ঠান
Published: 21st, February 2025 GMT
দেড় দশক পর সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক, ভাষাসৈনিক কাজী গোলাম মাহবুবকে ঘিরে তাঁর জন্মস্থান বরিশালের গৌরনদীতে সরকারিভাবে পালিত হলো ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’। এদিন তাঁকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। গৌরনদী উপজেলা প্রশাসন ও গোলাম মাহবুব ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে দিবসটি উপলক্ষে নানা কর্মসূচি পালন করা হয়।
দিবসটি উপলক্ষে আজ শুক্রবার সকাল ১০টায় গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো.
আজ বেলা সাড়ে ১১টায় বরিশাল-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য জহির উদ্দিন স্বপনের নেতৃত্বে বিএনপি নেতা-কর্মীরা গোলাম মাহবুবের কবর জিয়ারত করেন। এ সময় জহির উদ্দিন স্বপন বলেন, ভাষা আন্দোলনের এক অবিস্মরণীয় নাম কাজী গোলাম মাহবুব। তিনি ছিলেন একজন নিরেট দেশপ্রেমী ও সংগ্রামী। ১৯৫২ সালে গঠিত সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়ে জড়িয়ে পড়েন ভাষা আন্দোলনে। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের সূচনা বিকাশ ও সফল পরিণতিতে যেসব ভাষাসৈনিকের নাম ইতিহাসের পাতায় উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতো প্রজ্বলিত, তাঁদের মধ্যে অন্যতম কাজী গোলাম মাহবুব। ভাষা আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালনের কারণে তাঁকে জেল–জুলুমসহ বহু কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে। ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসের সঙ্গে তাঁর নামটি তাই অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িত।
ভাষাসৈনিক কাজী গোলাম মাহবুব ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক জহুরুল ইসলাম বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর গত ১৫ বছর ধরে একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে ভাষাসৈনিক কাজী গোলাম মাহবুবের স্মরণে সব কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়। এমনকি তাঁর নামে প্রতিষ্ঠিত চত্বর ও দুটি তোরণ ভেঙে ফেলা হয়। ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে নির্মিত কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছিল।
জহুরুল ইসলাম আরও বলেন, ১৫ বছর পর এবারই প্রথম ভাষাসৈনিক কাজী গোলাম মাহবুবকে স্মরণ করে স্বাধীনভাবে কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। প্রশাসনের সহায়তায় গোলাম মাহবুব চত্বর পুনর্নির্মাণ ও শহীদ মিনার সংস্কার করে উপজেলা সদরে কেন্দ্রীয়ভাবে শহীদ দিবস পালন করা হয়েছে।
দিবসটি উপলক্ষে ‘ভাষা আন্দোলন ও ভাষাসৈনিক কাজী গোলাম মাহবুব’ শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে সভায় অংশ নেন কাজী গোলাম মাহবুবের মেয়ে মহুয়া মাহবুব খান, ভাষা আন্দোলন মিউজিয়ামের পরিচালক লিপি মাহবুব, সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. রাজীব হোসেন, গৌরনদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইউনুস মিয়া, ভাষাসৈনিক কাজী গোলাম মাহবুব ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক জহুরুল ইসলাম, বিএনপির উপজেলা সদস্যসচিব জহীর সাজ্জাত হান্নান ও বিএনপি নেতা এস এম মনিরুজ্জামান। আলোচনা সভা শেষে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির একাধিকবার নির্বাচিত সভাপতি ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন গোলাম মাহবুব। স্থানীয় ব্যক্তিরা জানান, গোলাম মাহবুবের স্মৃতি রক্ষায় স্থানীয় লোকজনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গৌরনদী উপজেলা প্রশাসন ২০০২ সালে উপজেলা পরিষদের প্রধান সড়কের মুখে ‘ভাষাসৈনিক কাজী গোলাম মাহবুব তোরণ’ নির্মাণ করে। একই সঙ্গে তোরণ থেকে ২৫০ মিটার দূরে প্রশাসনিক ভবনসংলগ্ন মাঠে ‘ভাষাসৈনিক কাজী গোলাম মাহবুব চত্বর’ নির্মাণ করে সেখানে তাঁর ম্যুরাল স্থাপন করা হয়। তার দক্ষিণ পাশেই নির্মাণ করা হয় গৌরনদী কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার।
গৌরনদী উপজেলা পরিষদ সূত্রে জানা যায়, ২০০৭ সালের জানুয়ারিতে উপজেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় গৌরনদী উপজেলা চত্বরকে ‘ভাষাসৈনিক কাজী গোলাম মাহবুব চত্বর’ করার জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়। পরে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়। স্থানীয় সরকার বিভাগ ২০০৭ সালের ৮ মে এর অনুমোদন দেয়।
কাজী গোলাম মাহবুবের পরিবারের অভিযোগ, ২০০৮ সালে নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে কাজী গোলাম মাহবুবের নাম মুছে ফেলতে পাঁয়তারা শুরু হয়। ২০১৫ সালে উপজেলা প্রশাসনিক ভবন চারতলা করার সময় তোরণটি ভেঙে ফেলে উপজেলা প্রশাসন। ওই বছরই কাজী গোলাম মাহবুব চত্বর পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। সেখানে নির্মাণ করা হয় একটি মিলনায়তন। একই সঙ্গে ভাষাসৈনিক কাজী গোলাম মাহবুব ফাউন্ডেশন কর্তৃক নির্মিত শহীদ মিনারটিও পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন র ম ণ কর উপলক ষ ব এনপ স মরণ উপজ ল সরক র গ রনদ
এছাড়াও পড়ুন:
দুর্গাপূজা উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে হিন্দু নেতাদের সাক্ষাৎ
আসন্ন দুর্গাপূজা উপলক্ষে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিভিন্ন পূজা উদ্যাপন পরিষদের নেতারা সাক্ষাৎ করেছেন। তাঁরা এ সময় প্রধান উপদেষ্টাকে পূজামণ্ডপ পরিদর্শনের আমন্ত্রণ জানান।
আজ সোমবার বিকেলে হিন্দু নেতারা রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় যান। এ সময় তাঁদের কাছে দুর্গাপূজার প্রস্তুতি ও সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে চান প্রধান উপদেষ্টা। তিনি তাঁদের বলেন, ‘আপনাদের সঙ্গে সব সময় দেখা করার ইচ্ছা থাকলেও সুযোগ হয় না। পূজা উপলক্ষে বছরে একবার সামনাসামনি দেখা হয়, কথা বলার সুযোগ হয়।’
হিন্দুধর্মীয় নেতারা জানান, গত বছরের তুলনায় এ বছর এক হাজারের বেশি পূজামণ্ডপ বেড়েছে। সারা দেশে পূজামণ্ডপ তৈরির কাজ পুরোদমে এগিয়ে চলছে।
নেতারা বলেন, ধর্ম উপদেষ্টা নিয়মিতভাবে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন, মন্দির পরিদর্শন করেন। দুর্গাপূজা উৎসবমুখর করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা হচ্ছে। গতবারের মতো এবারও নির্বিঘ্নে পূজা উদ্যাপন হবে বলে তাঁরা আশা করছি।
এ সময় স্থায়ী দুর্গামন্দিরের জন্য রেল মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জায়গা বরাদ্দ দেওয়ায় প্রধান উপদেষ্টাকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানান মহানগর পূজা কমিটির সভাপতি জয়ন্ত কুমার দেব। তিনি বলেন, ‘এটি একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। এ জন্য আপনাকে বিশেষ ধন্যবাদ। আপনি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে নিয়মিত আমাদের খোঁজখবর রেখেছেন। গত বছরের মতো এ বছরও পূজায় আমরা দুই দিন ছুটি পেয়েছি। এ জন্যও আপনাকে বিশেষ ধন্যবাদ। গত বছর ৮ আগস্ট দেশে ফেরার পরপরই আপনি ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিদর্শন করে বলেছিলেন, আমরা সবাই এক পরিবার। আপনার বক্তব্য আমাদের মনে গভীরভাবে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে।’
বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর বলেন, ‘গত বছর দুর্গাপূজায় ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিদর্শনে গিয়ে আপনি বলেছিলেন, নিরাপত্তা বাহিনী দিয়ে কড়া পাহারা বসিয়ে পূজা হবে এমন দেশ আমরা চাই না। আমরা প্রথমবারের মতো কোনো সরকারপ্রধানের কাছে এমন বক্তব্য শুনেছি। আমরাও আপনার বক্তব্যের সঙ্গে একমত, আমরাও চাই এ আয়োজনে সবাই সহযোগিতা করুক, দেশের সবার মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক থাকুক।’
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের মহাসচিব এস এন তরুণ দে বলেন, ‘আপনি দায়িত্বে থাকাকালীন দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির নজির স্থাপন করেছেন। আমরা লক্ষ করেছি, এক বছর ধরে, বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচুর মিথ্যা কথা, ফেক নিউজ ছড়ানো হচ্ছে। আপনার নেতৃত্বে ধর্ম–বর্ণ–জাতিনির্বিশেষে বাংলাদেশের সব মানুষের কল্যাণ হবে, আমরা সেটাই কামনা করি।’
বৈঠকে ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন, ‘ধর্ম মন্ত্রণালয় সব ধর্মের প্রতিনিধিত্ব করে। কল্যাণ ট্রাস্টের মাধ্যমে আমরা কল্যাণকর কর্মসূচিগুলো নিশ্চিত করি।’ এ সময় তিনি বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে সহযোগিতার কথা তুলে ধরেন।
প্রধান উপদেষ্টা সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও পূজার অগ্রিম শুভেচ্ছা জানান এবং দুর্গাপূজা ঘিরে যাতে কোনো ধরনের ষড়যন্ত্রের সুযোগ তৈরি না হয়, সে জন্য সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বান জানান।
বৈঠকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার, হিন্দুধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ভাইস চেয়ারম্যান তপন চন্দ্র মজুমদার ও সচিব দেবেন্দ্র নাথ উঁরাও, রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের অধ্যক্ষ স্বামী পূর্ণানন্দ (একক), বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু সমাজসংস্কার সমিতির সভাপতি অধ্যাপক হীরেন্দ্রনাথ বিশ্বাস, শ্রীশ্রী গীতা হরি সংঘ দেব মন্দিরের সভাপতি বিমান বিহারী তালুকদার, বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন ফ্রন্টের আহ্বায়ক অপর্ণা রায় দাস, শ্রীশ্রী সিদ্ধেশ্বরী কালীমন্দিরের সাধারণ সম্পাদক নারায়ণ চন্দ্র দত্ত ও সিদ্ধেশ্বরী সর্বজনীন পূজা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রণীতা সরকার উপস্থিত ছিলেন।