রেলের আয় সরাসরি রাষ্ট্রীয় কোষাগারে
Published: 21st, February 2025 GMT
বর্তমান প্রক্রিয়ায় রেলের টিকিট বিক্রির আয় সরকারের কোষাগারে জমা হতে এক মাস বা ক্ষেত্রবিশেষে আরও বেশি সময় লাগে। শুধু রেলের আয়ই নয়, সরকারের অন্যান্য রাজস্বও ট্রেজারিতে জমা হতে অনেক দেরি হয়। এতে সরকারি আয়-ব্যয়ের মাধ্যে ভারসাম্য রক্ষায় অনেক সময় বাড়তি ঋণ গ্রহণের প্রয়োজন পড়ে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে আদায়কৃত রাজস্ব এ-চালানের মাধ্যমে সরাসরি ট্রেজারি অ্যাকাউন্ট বা সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর অংশ হিসেবে রেলের টিকিট বিক্রির আয়ও সরকারি ট্রেজারিতে জমার সিদ্ধান্ত হয়, যা বাস্তবায়নে কাজ করছে সরকার। অর্থ ও রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, মূলত রাজস্ব আহরণ কম হওয়ার পাশাপাশি সময়মতো কোষাগারে রাজস্ব জমা না হওয়ার কারণে প্রায়ই ব্যয় মেটাতে ঋণ নেয় সরকার। ট্রেজারি বিল ও বন্ডের সুদের হারে ঊর্ধ্বগতিতে ব্যাংকিং খাত থেকে ঋণ নেওয়া ব্যয়সাপেক্ষ হওয়া এবং সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ কমে যাওয়ায় নগদ টাকার ওপর চাপও বাড়ছে। এ অবস্থা কিছুটা হলেও কাটিয়ে উঠতে সরকারের আদায়কৃত রাজস্ব যথাসময়ে ট্রেজারিতে জমা হওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
এরই অংশ হিসেবে রেলে টিকিট বিক্রির অর্থ তাদের ব্যাংক হিসাবে জমা না রেখে একই দিনে ট্রেজারি অ্যাকাউন্টে জমার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে প্রথম পর্যায়ে অনলাইন টিকিট ব্যবস্থা এর আওতায় আনা হবে। এ জন্য আইবাস প্লাস প্লাস সিস্টেমের সঙ্গে অনলাইন টিকিটের ভেন্ডর সহজ-এর সিস্টেমের পরিপূর্ণ ইন্টিগ্রেশনের লক্ষ্যে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব হাসান মাহমুদের সভাপতিত্বে একটি কারিগরি কমিটি গঠন করা হয়। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, সংস্থার পাশাপাশি বেসরকারি অংশীজন নিয়ে গঠিত এ কমিটি সম্প্রতি বৈঠক করেছে। এ বিষয়ে অগ্রগতি জানতে চাইলে যুগ্ম সচিব হাসান মাহমুদ সমকালকে বলেন, এটি বাস্তবায়নে আরও একটি কমিটি রয়েছে। সব পক্ষের সঙ্গে বিষয়টি সবকিছু পর্যালোচনা করা হচ্ছে। যত দ্রুত সম্ভব আলোচনা শেষ করে এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন করতে চায় সরকার।
বাংলাদেশ রেলওয়ের পরিচালক ট্রাফিক (বাণিজ্যিক) মো.
অর্থ বিভাগের উপসচিব মোহাম্মদ আনিসুজ্জামান সভায় বলেন, বিদ্যমান টিকিটিং সিস্টেমে টিকিট বিক্রির অর্থ একই দিনে ট্রেজারি অ্যাকাউন্টে জমা না হওয়ায় রাজস্ব আয়ের সঠিক চিত্র তাৎক্ষণিক পাওয়া সম্ভব হয় না। স্বয়ংক্রিয় চালান এ-চালান পদ্ধতি চালু করার মাধ্যমে সরকারি রাজস্ব সংগ্রহ ব্যবস্থাপনাকে একীভূত করা এবং সরকারি কোষাগারে রাজস্ব/ফি তাৎক্ষণিকভাবে জমা দেওয়া নিশ্চিতকরণে ‘আইবাস প্লাস প্লাস’ কাজ করে যাচ্ছে। এ বিষয়ে ‘আইবাস প্লাস প্লাস’ থেকে বাংলাদেশ রেলওয়েকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও কারিগরি সহায়তা দেওয়া হবে।
অর্থ বিভাগের যুগ্ম সচিব ড. আবদুর রহিম বলেন, সরকারের প্রতিদিনের আয়-ব্যয়সহ ট্রেজারির প্রয়োজনীয় সব তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংক সমন্বয় করে। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রতিদিনের আয় বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা হওয়া প্রয়োজন। তাই টিকিটের বিক্রয়লব্ধ অর্থ একই দিনে ট্রেজারিতে জমা প্রদান এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে রিকনসাইলেশনের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
চালডালের সিইও ওয়াসিম আলম সভায় বলেন, বিদ্যমান টিকিটিং সিস্টেমে ফান্ড রিফান্ডের ক্ষেত্রে সেবাগ্রহীতার অ্যাকাউন্টে নির্ধারিত অর্থ ফেরতে দীর্ঘসূত্রতা পরিলক্ষিত হয়। তিনি রিফান্ডের বিষয়ে আলাদা অ্যাকাউন্ট করার প্রস্তাব করেন। অর্থ বিভাগের সিনিয়র পরামর্শক সাব্বির আহমেদ বলেন, ফান্ড রিফান্ডের অর্থ টিকিট বাতিলের অনুরোধের পরবর্তী দিনের মধ্যে সেবাগ্রহীতার অ্যাকাউন্টে ফেরতের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার।
বৈঠকে টিকিট বিক্রির অর্থ একই দিনে ট্রেজারি অ্যাকাউন্টে জমা প্রদান এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে রিকনসাইলেশনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে সিদ্ধান্ত হয়। একই সঙ্গে বাংলাদেশ রেলওয়ের রিফান্ড পলিসি এবং সংশ্লিষ্ট বিদ্যমান বিধির আলোকে টিকিট বাতিলের অনুরোধ করার পরবর্তী দিনের মধ্যে সেবাগ্রহীতার অ্যাকাউন্টে অর্থ রিফান্ডের বিষয়েও প্রয়োজনীয় উদ্যোগের সিদ্ধান্ত হয়।
রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশ রেলওয়ের ব্যয় ছিল ৩ হাজার ৩০৭ কোটি টাকা। একই সময়ে রেলওয়ে আয় করেছে ১ হাজার ৭৮৩ কোটি টাকা। রেলের আয়ের অধিকাংশই আসে টিকিট বিক্রি থেকে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ল দ শ র লওয় র একই দ ন ব যবস থ সরক র র গ রহণ
এছাড়াও পড়ুন:
ট্রাম্পকে ইউক্রেনের পাশে থাকার আহ্বান রাজা চার্লসের
বিশ্বের সবচেয়ে জটিল কিছু সংকট সমাধানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ব্যক্তিগত প্রতিশ্রুতির প্রশংসা করেছেন ব্রিটিশ রাজা তৃতীয় চার্লস। একই সঙ্গে তিনি ‘স্বৈরাচারের (রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন) বিরুদ্ধে ইউক্রেনের প্রতি মার্কিন সমর্থন’ দেওয়ার জন্য ট্রাম্পের প্রতি আহ্বান জানান। খবর বিবিসির।
বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) মার্কিন প্রেসিডেন্টের সফরের প্রথম দিনে উইন্ডসর ক্যাসলে আয়োজিত রাষ্ট্রীয় নৈশভোজে দেওয়া বক্তৃতায় এ কথা বলেন রাজা।
আরো পড়ুন:
যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক হামলায় ৩ পুলিশ নিহত
সম্পদ বৃদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন করায় সাংবাদিকের ওপর ক্ষেপলেন ট্রাম্প
জবাবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ সম্পর্কের প্রশংসা করে বলেন, এ সম্পর্ককে ‘বিশেষ’ শব্দ দিয়ে যথাযথভাবে বোঝানো যায় না।
উইন্ডসর ক্যাসলে ১৬০ জন অতিথির জন্য আয়োজিত জাঁকজমকপূর্ণ এই নৈশভোজে রাজার বক্তৃতায় দুই দেশের গভীর বন্ধন এবং সাংস্কৃতিক, বাণিজ্যিক ও সামরিক সম্পর্ক ধরে রাখার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেওয়া হয়।
ট্রাম্পের রাষ্ট্রীয় এ সফর চলবে আজ বৃহস্পতিবারও। এদিন নানা অনুষ্ঠানে মার্কিন ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্পের সঙ্গে অংশ নেবেন ব্রিটিশ রানি ক্যামিলা ও প্রিন্সেস অব ওয়েলস।
রাজকীয় অ্যাপায়ন শেষে ট্রাম্পের আজকের কর্মসূচি রাজনৈতিক আলোচনায় রূপ নেবে। আজ বৃহস্পতিবার ট্রাম্প ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে তার সরকারি বাড়ি চেকার্সে বৈঠক করবেন। বৈঠক শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনও হবে।
বুধবারের (১৭ সেপ্টেম্বর) রাষ্ট্রীয় ভোজ ছিল আড়ম্বর ও রাজনীতির সমন্বয়ে সাজানো এক বিশেষ আয়োজন। ভোজে রাজা, রানি ও রাজপরিবারের জ্যেষ্ঠ সদস্যদের উপস্থিতিতে ট্রাম্পকে স্বাগত জানানো হয় উইন্ডসরে।
উইন্ডসর ক্যাসলের মনোরম প্রাঙ্গণে পৌঁছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও মেলানিয়া রাজকীয় ঘোড়ার গাড়ি থেকে নামেন। সেখানে সুশৃঙ্খলভাবে সাজানো সেনাদলের অভিবাদন গ্রহণ করেন তারা।
যুক্তরাজ্যের কর্মকর্তাদের মতে, বিদেশি কোনো রাষ্ট্রপ্রধানকে স্বাগত জানানোর জন্য দেশটিতে আয়োজিত স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সামরিক সংবর্ধনা ছিল এটি।
যুক্তরাষ্ট্রের অতিথিকে স্বাগত জানাতে প্রিন্স ও প্রিন্সেস অব ওয়েলসও উপস্থিত ছিলেন। তারা প্রেসিডেন্ট ও মেলানিয়ার সঙ্গে উষ্ণ ও বন্ধুত্বপূর্ণ এক বৈঠকও করেন।
ভোজসভায় বক্তৃতা করতে গিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রিন্স উইলিয়ামের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে তিনি হবেন ‘অসাধারণ সফল নেতা’। প্রিন্সেস অব ওয়েলস ক্যাথরিনকে তিনি আখ্যা দেন ‘উজ্জ্বল, সুস্বাস্থ্যের অধিকারী ও সুন্দরী’ হিসেবে।
ট্রাম্পের ঐতিহাসিক এ দ্বিতীয় রাষ্ট্রীয় সফর প্রমাণ করেছে রাজা ও তাঁর মধ্যে সম্পর্ক বেশ ভালো। সফরে আনুষ্ঠানিক কুচকাওয়াজে তাঁদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের মুহূর্তও দেখা গেছে।
এরপর রাজপ্রাসাদে ট্রাম্প দম্পতিকে স্বাগত জানান রাজা তৃতীয় চার্লস ও রানি ক্যামিলা। ট্রাম্প যখন রাজার সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করছিলেন, তখন প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ের ছয়টি কামান থেকে একযোগে ৪১ বার তোপধ্বনি করা হয়। একই সময়ে টাওয়ার অব লন্ডন থেকে একই রকম তোপধ্বনি হয়।
ট্রাম্প দম্পতিকে স্বাগত জানানোর এ আয়োজনে অংশ নেন ব্রিটিশ সামরিক বাহিনীর ১ হাজার ৩০০ সদস্য। ছিল শতাধিক ঘোড়া।
যুক্তরাজ্যের কর্মকর্তাদের মতে, বিদেশি কোনো রাষ্ট্রপ্রধানকে স্বাগত জানানোর জন্য দেশটিতে আয়োজিত স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সামরিক সংবর্ধনা ছিল এটি।
বিবিসি বলছে, রাজকীয় অনুষ্ঠানের পাশাপাশি, বাণিজ্য ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে প্রভাবিত করার প্রচেষ্টা থাকবে।
যুক্তরাজ্যে রাষ্ট্রীয় সফর হলো একধরনের নরম শক্তির কূটনীতি, যা গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য রাজকীয় আকর্ষণ ব্যবহার করে, যার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আর কেউ নেই।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্টারমার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আর্থিক সেবা, প্রযুক্তি এবং জ্বালানি খাতে ঘনিষ্ঠ সমন্বয় গড়ে তুলে যুক্তরাজ্যকে আমেরিকান বিনিয়োগের প্রধান গন্তব্য হিসেবে উপস্থাপন করতে চেষ্টা করছেন। এর মাধ্যমে তিনি নিজ দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি করতে চাইছেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্টের সফর শুরু হওয়ার সাথে সাথে, মার্কিন প্রযুক্তি সংস্থাগুলোর সঙ্গে যুক্তরাজ্যে ৩১ বিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগের একটি বড় প্রযুক্তি চুক্তি ঘোষণা করা হয়েছে। যার মধ্যে মাইক্রোসফট থেকে ২২ বিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং এবং পারমাণবিক শক্তিতে সহযোগিতা দেখা যাবে।
ট্রাম্পের সফরের আগে গুগলের মূল প্রতিষ্ঠান অ্যালফাবেট যুক্তরাজ্যের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গবেষণায় ৫ বিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার ট্রাম্প-স্টারমারের বৈঠক থেকে কয়েক বিলিয়ন ডলারের ব্যবসায়িক চুক্তির ঘোষণাও আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ঢাকা/ফিরোজ