বর্তমান প্রক্রিয়ায় রেলের টিকিট বিক্রির আয় সরকারের কোষাগারে জমা হতে এক মাস বা ক্ষেত্রবিশেষে আরও বেশি সময় লাগে। শুধু রেলের আয়ই নয়, সরকারের অন্যান্য রাজস্বও ট্রেজারিতে জমা হতে অনেক দেরি হয়। এতে সরকারি আয়-ব্যয়ের মাধ্যে ভারসাম্য রক্ষায় অনেক সময় বাড়তি ঋণ গ্রহণের প্রয়োজন পড়ে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে আদায়কৃত রাজস্ব এ-চালানের মাধ্যমে সরাসরি ট্রেজারি অ্যাকাউন্ট বা সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর অংশ হিসেবে রেলের টিকিট বিক্রির আয়ও সরকারি ট্রেজারিতে জমার সিদ্ধান্ত হয়, যা বাস্তবায়নে কাজ করছে সরকার। অর্থ ও রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। 
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, মূলত রাজস্ব আহরণ কম হওয়ার পাশাপাশি সময়মতো কোষাগারে রাজস্ব জমা না হওয়ার কারণে প্রায়ই ব্যয় মেটাতে ঋণ নেয় সরকার। ট্রেজারি বিল ও বন্ডের সুদের হারে ঊর্ধ্বগতিতে ব্যাংকিং খাত থেকে ঋণ নেওয়া ব্যয়সাপেক্ষ হওয়া এবং সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ কমে যাওয়ায় নগদ টাকার ওপর চাপও বাড়ছে। এ অবস্থা কিছুটা হলেও কাটিয়ে উঠতে সরকারের আদায়কৃত রাজস্ব যথাসময়ে ট্রেজারিতে জমা হওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
এরই অংশ হিসেবে রেলে টিকিট বিক্রির অর্থ তাদের ব্যাংক হিসাবে জমা না রেখে একই দিনে ট্রেজারি অ্যাকাউন্টে জমার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে প্রথম পর্যায়ে অনলাইন টিকিট ব্যবস্থা এর আওতায় আনা হবে। এ জন্য আইবাস প্লাস প্লাস সিস্টেমের সঙ্গে অনলাইন টিকিটের ভেন্ডর সহজ-এর সিস্টেমের পরিপূর্ণ ইন্টিগ্রেশনের লক্ষ্যে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব হাসান মাহমুদের সভাপতিত্বে একটি কারিগরি কমিটি গঠন করা হয়। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, সংস্থার পাশাপাশি বেসরকারি অংশীজন নিয়ে গঠিত এ কমিটি সম্প্রতি বৈঠক করেছে। এ বিষয়ে অগ্রগতি জানতে চাইলে যুগ্ম সচিব হাসান মাহমুদ সমকালকে বলেন, এটি বাস্তবায়নে আরও একটি কমিটি রয়েছে। সব পক্ষের সঙ্গে বিষয়টি সবকিছু পর্যালোচনা করা হচ্ছে। যত দ্রুত সম্ভব আলোচনা শেষ করে এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন করতে চায় সরকার।
বাংলাদেশ রেলওয়ের পরিচালক ট্রাফিক (বাণিজ্যিক) মো.

নাহিদ হাসান খান ওই বৈঠকে জানান, বর্তমানে ৪৮৩টি স্টেশনের মধ্যে ১০৯টি  অনলাইন টিকিটিং সিস্টেম চালু রয়েছে। অনলাইনে টিকিট কেনার পর পেমেন্ট গেটওয়ের মাধ্যমে সেবাগ্রহীতা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টিকিটের দাম পরিশোধ করে, যা ভেন্ডরের অ্যাকাউন্টে জমা হয়। ভেন্ডরের অ্যাকাউন্টে জমা হওয়া অর্থ থেকে চুক্তি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় অর্থ কর্তনের পর অবশিষ্ট অর্থ ব্র্যাক ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে চিফ কমার্শিয়াল ম্যানেজারের কাছে চালান জমা দেওয়া হয়। পরে ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে অর্থ সংযুক্ত তহবিলে জমা করা হয়। তিনি আরও জানান, টিকিটের বিক্রয়লব্ধ অর্থ রিফান্ডের বিষয়টি বাংলাদেশ রেলওয়ের হিসাব বিভাগ করে। ফান্ড রিফান্ডের ক্ষেত্রে সেবাগ্রহীতা টিকিট বাতিলের অনুরোধ করলে বাংলাদেশ রেলওয়ের রিফান্ড পলিসি অনুসারে নির্ধারিত পরিমাণ অর্থ কর্তন করে অবশিষ্ট অর্থ পেমেন্ট গেটওয়ের মাধ্যমে সেবাগ্রহীতার অ্যাকাউন্টে ফেরত দেওয়া হয়। 

অর্থ বিভাগের উপসচিব মোহাম্মদ আনিসুজ্জামান সভায় বলেন, বিদ্যমান টিকিটিং সিস্টেমে টিকিট বিক্রির অর্থ একই দিনে ট্রেজারি অ্যাকাউন্টে জমা না হওয়ায় রাজস্ব আয়ের সঠিক চিত্র তাৎক্ষণিক পাওয়া সম্ভব হয় না। স্বয়ংক্রিয় চালান এ-চালান পদ্ধতি চালু করার মাধ্যমে সরকারি রাজস্ব সংগ্রহ ব্যবস্থাপনাকে একীভূত করা এবং সরকারি কোষাগারে রাজস্ব/ফি তাৎক্ষণিকভাবে জমা দেওয়া নিশ্চিতকরণে ‘আইবাস প্লাস প্লাস’ কাজ করে যাচ্ছে। এ বিষয়ে ‘আইবাস প্লাস প্লাস’ থেকে বাংলাদেশ রেলওয়েকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও কারিগরি সহায়তা দেওয়া হবে। 
অর্থ বিভাগের যুগ্ম সচিব ড. আবদুর রহিম বলেন, সরকারের প্রতিদিনের আয়-ব্যয়সহ ট্রেজারির প্রয়োজনীয় সব তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংক সমন্বয় করে। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রতিদিনের আয় বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা হওয়া প্রয়োজন। তাই টিকিটের বিক্রয়লব্ধ অর্থ একই দিনে ট্রেজারিতে জমা প্রদান এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে রিকনসাইলেশনের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
চালডালের সিইও ওয়াসিম আলম সভায় বলেন, বিদ্যমান টিকিটিং সিস্টেমে ফান্ড রিফান্ডের ক্ষেত্রে সেবাগ্রহীতার অ্যাকাউন্টে নির্ধারিত অর্থ ফেরতে দীর্ঘসূত্রতা পরিলক্ষিত হয়। তিনি রিফান্ডের বিষয়ে আলাদা অ্যাকাউন্ট করার প্রস্তাব করেন। অর্থ বিভাগের সিনিয়র পরামর্শক সাব্বির আহমেদ বলেন, ফান্ড রিফান্ডের অর্থ টিকিট বাতিলের অনুরোধের পরবর্তী দিনের মধ্যে সেবাগ্রহীতার অ্যাকাউন্টে ফেরতের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার। 
বৈঠকে টিকিট বিক্রির অর্থ একই দিনে ট্রেজারি অ্যাকাউন্টে জমা প্রদান এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে রিকনসাইলেশনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে সিদ্ধান্ত হয়। একই সঙ্গে বাংলাদেশ রেলওয়ের রিফান্ড পলিসি এবং সংশ্লিষ্ট বিদ্যমান বিধির আলোকে টিকিট বাতিলের অনুরোধ করার পরবর্তী দিনের মধ্যে সেবাগ্রহীতার অ্যাকাউন্টে অর্থ রিফান্ডের বিষয়েও প্রয়োজনীয় উদ্যোগের সিদ্ধান্ত হয়।
রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশ রেলওয়ের ব্যয় ছিল ৩ হাজার ৩০৭ কোটি টাকা। একই সময়ে রেলওয়ে আয় করেছে ১ হাজার ৭৮৩ কোটি টাকা। রেলের আয়ের অধিকাংশই আসে টিকিট বিক্রি থেকে। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ল দ শ র লওয় র একই দ ন ব যবস থ সরক র র গ রহণ

এছাড়াও পড়ুন:

চুম্বন দৃশ্যের অভিজ্ঞতা ভয়ংকর ছিল: মধু

বলিউড অভিনেত্রী মধু শাহ। নব্বই দশকের জনপ্রিয় এই অভিনেত্রী মধু নামেই পরিচিত। মনি রত্নম নির্মিত ‘রোজা’ সিনেমায় অভিনয় করে প্রশংসা কুড়ান। নব্বই দশকে একটি সিনেমায় চুম্বন দৃশ্যে অভিনয় করেন মধু, যা ভীষণ তিক্ত অভিজ্ঞতা ছিল বলে জানিয়েছেন তিনি।

কয়েক দিন আগে নিউজ১৮-কে সাক্ষাৎকার দেন মধু। এ আলাপচারিতা তিনি বলেন, “আজকাল সিনেমায় যে ধরনের চুম্বন দৃশ্য দেখা যায় এটি তেমন ছিল না। এটি ঠোঁটে খোঁচা দেওয়ার মতো অভিজ্ঞতা ছিল। সত্যি এটি আমার খারাপ লেগেছিল।”

চুম্বন দৃশ্যের অভিজ্ঞতা ভয়ংকর ছিল। তা জানিয়ে মধু বলেন, “শুটিং শুরু করার আগে আমাকে চুমু খেতে বলা হয়। কিন্তু তার আগে এ বিষয়ে আমাকে জানানো হয়নি। এ নিয়ে যখন প্রশ্ন করি, তখন তারা আমাকে পাশে নিয়ে গিয়ে কথা বলে। তারা আমাকে ব্যাখ্যা করে, এই দৃশ্যটি কেন গুরুত্বপূর্ণ এবং সেই কারণেই আমি চুম্বন দৃশ্যে অভিনয় করি। কিন্তু এটা ছিল আমার করা সবচেয়ে ভয়ংকর কাজ।”

চুম্বন দৃশ্যে যখন অভিনয় করেন, তখন মধুর বয়স ছিল ২২ বছর। তা স্মরণ করে এই অভিনেত্রী বলেন, “সিনেমায় চুম্বন দৃশ্যটির কোনো উদ্দেশ্য ছিল না। সিনেমায় দৃশ্যটি অন্তর্ভুক্ত না করার জন্য পরিচালকের সঙ্গে কোনো কথাও হয়নি। আমি এটি এড়িয়ে গিয়েছিলাম। কেবল বয়সের দিক দিয়ে নয়, আমি সবদিক থেকেই তখন খুব ছোট ছিলাম। এখনকার ২২-২৪ বছর বয়সি ছেলে-মেয়েরা ভীষণ চালাক। কিন্তু ২২ বছর বয়সে আমি খুব বোকা ছিলাম।”

১৯৯৬ সালে দীপা মেহতা নির্মাণ করেন ‘ফায়ার’ সিনেমা। এতে শাবানা আজমি, নন্দিতা দাস সমকামী চরিত্রে অভিনয় করেন। এ সিনেমা পর্দার ঘনিষ্ঠতা সম্পর্কে মধুর ধারণা বদলে দিতে শুরু করে। এ তথ্য উল্লেখ করে মধু বলেন, “আমি বলছি না, পর্দায় চুম্বন করা খারাপ। ‘ফায়ার’ সিনেমায় যখন শাবানাজির মতো অভিনেত্রীর অভিনয় দেখি, তখন আমার মনে হয়েছিল সত্যি তারা তাদের প্রতিবন্ধকতা ভেঙে ফেলেছেন, যা আমি তখন করতে পারিনি। আমি সেই সব শিল্পীদের প্রশংসা করি, যারা মাথা ন্যাড়া করতে পারেন বা সিনেমায় সমকামীর ভূমিকায় অভিনয় করতে পারেন।”

১৯৯১ সালে তামিল ভাষার সিনেমার মাধ্যমে রুপালি জগতে পা রাখেন মধু। একই বছর ‘ফুল আউর কাঁটা’ সিনেমার মাধ্যমে বলিউডে পা রাখেন এই অভিনেত্রী। হিন্দি সিনেমায় পা রেখেই নজর কাড়েন। ৫৬ বছরের মধু অভিনয়ে এখন খুব একটা সরব নন। তবে প্রতি বছরে দুই একটা সিনেমায় দেখা যায় তাকে। 

ঢাকা/শান্ত

সম্পর্কিত নিবন্ধ