লালগালিচায় নানা ভঙিমায় বিড়ালের ‘ক্যাটওয়াক’
Published: 22nd, February 2025 GMT
চোখে চশমা, শরীরে বর্ণিল পোশাক। কারও কপালে টিপ, মুখে মেকআপ করা। লালগালিচায় নানা ভঙিমায় ক্যাটওয়াক করছে বিড়াল। দেশি-বিদেশি নানা প্রজাতির, নানা নামের বিড়াল অংশ নেয় এই শোতে। ময়মনসিংহে বিড়ালপ্রেমীদের এক ছাতার নিচে নিয়ে আসতে ‘প্রফেসরস পেট কেয়ার’ নামের একটি সংগঠন আয়োজন করেছে ‘ক্যাট শো’।
আজ শনিবার বেলা ১১টায় নগরের জয়নুল আবেদিন উদ্যানের বৈশাখী মঞ্চে আয়োজন করা হয় ক্যাট শো, যা নগরের বিড়ালপ্রেমীদের মিলনমেলায় পরিণত হয়।
প্রফেসরস পেট কেয়ারের পরিচালক বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক মো.
মাহমুদুল আলম আরও বলেন, বর্তমানে ময়মনসিংহ শহরে প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ বিড়াল লালন–পালন করেন। বিড়াল লালন–পালন করলেই হবে না, এর রোগবালাই ও ঝুঁকি সম্পর্কে জানানোর জন্য এই আয়োজন।
আজ বেলা ১১টায় অনুষ্ঠান শুরুর আগেই নগরের বিভিন্ন এলাকা থেকে বিড়াল নিয়ে হাজির হন বিড়ালপ্রেমীরা। সাজানো বিড়ালগুলো নিয়ে মালিকেরা চেয়ারে বসে থাকেন, আদর করেন৷ ২০২৩ সালে প্রথমবার একটি সংগঠন ক্যাট শো করেছিল একই স্থানে। দ্বিতীয়বারের এই আয়োজনে কোকো, মিমি, মুলু, প্রিটি, ব্রাউনি, সিম্বি, জ্যাকসো, জোজো, পরী, মারলী, মিঠি, ইমু, লিও, জলিসহ নানা নামের বিড়াল অংশ নেয়। যেমন খুশি তেমন সাজ, প্রদর্শনী ও র্যাম্প শোতে অংশ নেয় ১৩০টি বিড়াল।
নগরের নতুন বাজার এলাকার গৃহিণী শাহানাজ মাইফুল নিজের ছেলে আফিদ আমিন চৌধুরীকে নিয়ে মেলায় আসেন। পার্সিয়ান জাতের দুটি বিড়াল ছিল মা-ছেলের হাতে। বিড়ালের শরীরে বর্ণিল পোশাক, চোখে চশমা। একটির নাম মুলু ও অন্যটির প্রিটি। আফিদ আমিন চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের বাসায় বিড়ালগুলো আমাদের ভাইবোনের মতো। বাবা-মা আমাদের যেমন কেয়ার করে, তাদেরও এমন কেয়ার করে। পড়াশোনার ফাঁকে সময় কাটাই বিড়ালের সঙ্গে। মুঠোফোনে গেম খেলার চেয়ে বিড়ালের সঙ্গে খেলা করা অনেক ভালো। কারণ, বিড়াল খুবই বিশ্বস্ত, ওরা মানুষের মতো বেইমানি করবে না। মুরগির মাংস, মাছ ও ক্যাট ফুড খেতে দেওয়া হয়। আমাদের কথা শুনলে গিফটও দেওয়া হয়।’
শাহানাজ মাইফুল বলেন, ‘বিড়ালকে নিজের সন্তানের মতো ভালোবাসি। নাম ধরে ডাকলেই সাড়া দেয়। আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে বিড়ালের জন্মদিন উদ্যাপন করি। জন্মদিন উপলক্ষে আলাদা করে মাছ বা মুরগি কাটা হয়। বিড়াল বাসায় থাকলে সুন্দর সময় কাটে, ডিপ্রেশন লাগে না। বিড়ালকে রোগমুক্ত রাখতে নিয়মিত চেকআপ করা হয়।’
ময়মনসিংহ নগরের জয়নুল আবেদিন উদ্যানের বৈশাখী মঞ্চে আয়োজন করা হয় ক্যাট শো। শনিবার দুপুরেউৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সুন্দর কাঠ ও ফুলের গামারি
ময়মনসিংহ শহরের ব্রহ্মপুত্র তীরের কাছারিঘাট ও শিল্পাচার্য জয়নুল উদ্যান সকালে প্রাতভ্র৴মণকারীদের পদচারণে মুখর থাকে। কয়েক দিন আগে হেঁটে ফেরার পথে জেলা নির্বাচন অফিসের পেছনে গামারিগাছে ফুল ফুটতে দেখলাম। এই গাছের পাতা শীতে ঝরে গিয়েছিল। বসন্তে পত্রশূন্য গাছে ফুল ফুটেছে। ফুল ফোটার পর আবার পাতা গজাচ্ছে। কাঠের জন্য লাগানো হলেও এর হলুদ ফুলও কিন্তু সুন্দর। গামারি ফুল ভ্রমরের খুব প্রিয়; কারণ, এই ফুলে বেশ মধু আছে। তাই গামারির আরেক নাম ভ্রমরপ্রিয়া। টিয়া ও কাঠবিড়ালিরও প্রিয় এই ফুল। ফুলের নিচের দিকটা খয়েরি বাদামি।
গামারি সবুজ ও ঘন পাতাবিশিষ্ট, দ্রুত বর্ধনশীল পত্রঝরা বৃক্ষ। গামারি কাঠের জন্য লাগানো হলেও এর ফুলও কম সুন্দর নয়। এর বৈজ্ঞানিক নাম Gmelina arborea, এটি Lamiaceae পরিবারের বৃক্ষ। ইংরেজিতে এই গাছ কান্ধার ট্রি, কাশ্মীর ট্রি, গুমার ট্রি, মালয় বুশ-বিচ, হোয়াইট বিচ, হোয়াইট টিক ইত্যাদি নামে পরিচিত। এ ছাড়া বাংলা নাম গামার, গাম্বার, গাম্ভারি, তার কাঠ, গাম্ভারিকা ইত্যাদি নাম রয়েছে। এর সংস্কৃত নামগুলো হলো মধুমতি, গাম্ভারি, সিন্ধুপর্ণী, ভাদ্রাপর্ণী, গামহার ইত্যাদি।
আদিনিবাস ভারতবর্ষ ও মিয়ানমার। বাংলাদেশসহ দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ায় জন্মে। ভারতের আসাম, দক্ষিণ বিহার, ওডিশা ও পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাঞ্চল–সংলগ্ন এলাকায় এ গাছ হয়। বাংলাদেশের মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, চট্টগ্রাম, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান ও কক্সবাজার জেলায় বেশি দেখা যায়।
এই গাছ লম্বায় ১৫ থেকে ৩৫ মিটার উঁচু হয়। গাছের প্রশাখা ও কুঁড়ি রোমশ। বাকল সাদা বা উজ্জ্বল ধূসর। পাতা পানপাতার আকৃতির, ২০ থেকে ২৪ সেন্টিমিটার লম্বা হয়। পাতার ওপর দিক উজ্জ্বল সবুজ, নিচে পাণ্ডুর, বোঁটা ৬ থেকে ১০ সেন্টিমিটার লম্বা। শীতে পাতা ঝরে। এটি অত্যধিক খরা–সহনশীল। বসন্তকালে পাতাহীন ডালে ডালে দেখা যায় গাঢ় হলুদ ফুল। পাঁচটি পাপড়ি থাকলেও মাঝের পাপড়িটি অন্যগুলোর চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ লম্বা। বড় পাপড়িটির লম্বা পতাকার মতো অংশটি গাঢ় হলুদ। ফুলের গোড়ার দিকে হলুদ রঙের পাশাপাশি দেখা মেলে লালচে-বাদামি ও খয়েরি রঙের। ফুলের অনেক মিষ্টি গন্ধ, ফুল ৩ থেকে ৩ দশমিক ৫ সেন্টিমিটার লম্বা, ২ ভাগে বিভক্ত। এর পুষ্পমধু ভোমরাদের খুবই প্রিয়। গামারির ফল দেখতে গোলাকার, ডিম্বাকৃতির, ফলে এক-দুটি বীজ হয়। ফল তিন সেন্টিমিটার চওড়া, শাঁসাল, পাকলে হালকা হলুদ হয়। শীতের পর ফুল এবং তাঁর দুই মাস পর ফল হয়।
কাঠ হলুদ, খানিকটা লাল অথবা সাদা। কাঠ টেকসই, সহজে কাজ করা যায়। সেগুনের পরেই গামারি কাঠের স্থান। এ জন্য ইংরেজিতে একে হোয়াইট টিক বলে। এই কাঠ আসবাব নির্মাণের জন্য বিশেষ উপযোগী। খোদাইয়ের কাজ, তক্তা, বাক্স, চিরুনি, খেলনা, গাড়ি ও নৌকা এই কাঠ দিয়ে বানানো যায়। এই কাঠের প্লাইউড বেশ ভালো।
গামারির অনেক ভেষজ গুণ রয়েছে। কটু–তিক্ত রস, গুরুপাক, উষ্ণবীর্য, কফ ও ত্রিদোষনাশক, বিষদোষ দাহ, জ্বর, তৃষ্ণা ও রক্তদোষনাশক। এর ছাল এবং কাঠে আছে অনেক তিক্ত পদার্থ ও স্টেরোল। পাতার রসে আছে জীবাণুনাশক শক্তি। কচি পাতার রস গনোরিয়া ও কাশিতে উপকারী। শিকড় কৃমিনাশক ও কুষ্ঠরোগে উপকারী। ক্ষতের পুঁজ বের করে দেয়। ফল চর্মরোগ ও চুল ওঠা বন্ধ করার মহৌষধ। শিকড় কৃমিনাশক ও কুষ্ঠরোগে উপকারী। গামারিগাছের পাতা এবং ফল গবাদিপশুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এগুলো পুষ্টিকর এবং প্রাণীদের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
চয়ন বিকাশ ভদ্র: অধ্যাপক, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগ, মুমিনুন্নিসা সরকারি কলেজ, ময়মনসিংহ