সিলেটের কানাইঘাট উপজেলায় লোভাছড়া নদীতে পানি খেতে নামে অপরিচিত একটি প্রাণী। গ্রামের কয়েকজনের নজরে এলে তাঁরা প্রাণীটিকে ধরতে ধাওয়া দেন। প্রাণীটি কিছুটা দূরে আসামপাড়া নিহালপুর গ্রামের পাশে চলে গেলে স্থানীয় লোকজন প্রাণীটিকে ধরে ফেলেন। এরপর তাঁরা বন বিভাগের কর্মকর্তাদের খবর দেন। কর্মকর্তারা দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রাণীটিকে বিলুপ্তপ্রায় বনছাগল বলে নিশ্চিত করেন। পরে গ্রামবাসীর সহায়তায় বন বিভাগের কর্মকর্তারা প্রাণীটিকে লোভছড়া বনে অবমুক্ত করেন।

শনিবার সকাল সাতটার দিকে লোভাছড়া নদীতে বনছাগলটির দেখা মেলে। বেলা আড়াইটার দিকে বনে প্রাণীটিকে অবমুক্ত করা হয়। এ সময় গ্রামবাসীর পাশাপাশি স্থানীয় লোভাছড়া চা-বাগানের ব্যবস্থাপক ইউসুফ ওসমান, বন বিভাগের বিট কর্মকর্তা মো.

আলী আক্তারুল হক চৌধুরী, সহযোগী বিট কর্মকর্তা মেহেদী হাসান, ফরেস্ট গার্ড হাবিবুর রহমান তালুকদার ও রতন মিয়া, বন পাহারাদার আবদুন নূর প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

লোভাছড়া চা-বাগানের ব্যবস্থাপক ইউসুফ ওসমান প্রথম আলোকে বলেন, প্রাণীটি পানি খেতে নদীতে নামলে স্থানীয় লোকজন ধাওয়া দিয়ে ধরেন। পরে বন বিভাগের কর্মকর্তারা চেতনানাশক ইনজেকশন দিয়ে বনছাগলটিকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে নিয়ে এসে লোভাছড়া বনে অবমুক্ত করেন।

যোগাযোগ করলে বন বিভাগের বিট কর্মকর্তা মো. আলী আক্তারুল হক চৌধুরী বলেন, প্রাণীটি বিলুপ্তপ্রায় একটি বনছাগল। একজন ভেটেরিনারি সার্জন দিয়ে প্রাণীটির শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা হয়। প্রাণীটি ঊরুতে কিছুটা আঘাত পেয়েছিল, এ জন্য চিকিৎসাও দেওয়া হয়। সুস্থ অবস্থাতেই প্রাণীটিকে লোভাছড়া চা-বাগানসংলগ্ন গহিন বনে অবমুক্ত করা হয়েছে।

স্থানীয় মানুষ ও বন বিভাগের প্রচেষ্টায় বনছাগলটিকে বনে অবমুক্ত করার বিষয়টির প্রশংসা করেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আবদুল করিম চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘এখন যেকোনো প্রাণী ধরেই পিটিয়ে মেরে ফেলার একটা অলিখিত রেওয়াজ দেখা যায়। কিন্তু এখানে প্রাণীর প্রতি বিরল ভালোবাসা দেখিয়েছেন মানুষজন। তাঁরা প্রাণীটিকে ধরে বন বিভাগে খবর দিয়েছেন। পরে সবাই মিলে প্রাণীটিকে বনে অবমুক্ত করেছেন, এটা প্রশংসনীয়।’

আবদুল করিম চৌধুরী আরও জানান, কয়েক দশক আগেও সিলেটের বনে প্রচুর পরিমাণে বনছাগলের দেখা মিলত। এখন আর চোখেই পড়ে না। সিলেট অঞ্চলে প্রাণীটি এখন একেবারেই বিলুপ্তপ্রায়।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: বন ব ভ গ র

এছাড়াও পড়ুন:

প্রেমিকার বিয়ের দিনে প্রেমিকের লাশ উদ্ধার, হত্যার অভিযোগ পরিবারের

নড়াইলের লোহাগড়ায় প্রেমিকার বিয়ের দিনে প্রেমিক সৈয়দ মাসুম বিল্লাহর (২০) মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। মাসুমের বাম হাতের একটি আঙুলের নখ উপড়ে ফেলার আলামত থাকায় তার পরিবার অভিযোগ করছে, এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। 

শুক্রবার (১ আগস্ট) দুপুরে কালনা মধুমতি সেতুর পশ্চিম পাশে রাস্তার ওপর মাসুমকে অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে ইজিবাইকের চালক সুজন শেখ তাকে উদ্ধার করে লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসেন। বিকেলে অবস্থার অবনতি হলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।

মাসুম বিল্লাহ লোহাগড়া উপজেলার শালনগর ইউনিয়নের মাকড়াইল গ্রামের মৃত সৈয়দ রকিবুল ইসলামের ছেলে। 

আরো পড়ুন:

জুলাই হত্যাকাণ্ডের মামলায় চট্টগ্রামে প্রথম অভিযোগপত্র দাখিল

সিলেটে স্কুলছাত্র সুমেল হত্যা: ৮ জনের মৃত্যুদণ্ড, ৭ জনের যাবজ্জীবন

মাসুমের স্বজনরা জানিয়েছেন, শালনগর ইউনিয়নের এক কিশোরীর সঙ্গে মাসুমের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। মেয়েটির বিয়ের খবর পেয়ে শুক্রবার (১ আগস্ট) সকালে তিনি ঢাকা থেকে লোহাগড়ায় আসেন। সকালে পরিবারের সঙ্গে তার শেষবার কথা হয়, এরপর থেকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল।

মাসুম বিল্লাহর চাচা শরিফুল ইসলাম বলেছেন, “আমরা শুনেছি, সকালে লোহাগড়া বাজারের একটি পার্লারে মেয়েটির সঙ্গে মাসুমের কথা হয়। এর পর মেয়েটির বাবার কাছ থেকে হুমকি পায় সে। পরে হাসপাতাল থেকে ফোন পেয়ে মাসুমের মৃত্যুর খবর জানি। তার বাম হাতের  নখ উপড়ানো ছিল। সব মিলিয়ে মনে হচ্ছে, তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।”

মাসুমকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া ইজিবাইক চালক সুজন বলেছেন, “ঘটনাস্থলে কোনো দুর্ঘটনার চিহ্ন ছিল না। তবে মনে হয়েছে, কেউ মাসুমকে গাড়ি থেকে ফেলে দিয়েছে।”

লোহাগড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শরিফুল ইসলাম শনিবার (২ আগস্ট) সকালে সাংবাদিকদের বলেছেন, “আমরা মাসুম বিল্লাহকে মৃত অবস্থায় লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে থানায় নিয়ে আসি। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য নড়াইল আধুনিক সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর আসল কারণ জানা যাবে।” 

ঢাকা/শরিফুল/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ