Samakal:
2025-05-01@09:51:52 GMT

স্বামীর আয়ে কোটিপতি ২০ স্ত্রী

Published: 22nd, February 2025 GMT

স্বামীর আয়ে কোটিপতি ২০ স্ত্রী

স্বামীর অবৈধ আয় আড়াল করতে গৃহিণী স্ত্রীদের কেউ সাজেন মাছচাষি, কেউ সাজেন ব্যবসায়ী। কূটকৌশলের আশ্রয় নিলেও চট্টগ্রামে স্বামীর ‘অবৈধ’ আয় ২০ স্ত্রীর গলার কাঁটা হয়ে উঠেছে। বৈধ কোনো আয়ের উৎস না থাকলেও সরকারি চাকরিজীবী স্বামীর স্ত্রীরার বনে গেছেন কোটিপতি। দুর্নীতির মাধ্যমে আয় করা অবৈধ অর্থের খোঁজে তদন্ত করতে গিয়েই দুদকের জালে আটকে পড়েন তারা। কাস্টমস কর্মকর্তা, সার্ভেয়ার, পুলিশ, সাব-রেজিস্ট্রার, বন্ড কমিশনারেট, জুট মিল, রেলওয়ে কর্মকর্তা স্বামীদের কালো টাকা আড়াল করতে গিয়ে ফেঁসে গেছেন।
দুদকের মামলায় রেলওয়ের সাবেক জিএম হাবিবুর রহমান ও তাঁর স্ত্রী মালা রহমানের বিরুদ্ধে ৬১ লাখ ৫৬ হাজার ৩৩০ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে দুদক। মালা নিজেকে মাছ ব্যবসায়ী দাবি করলেও ব্যবসায়িক লেনদেনের কোনো ডকুমেন্ট দুদকে উপস্থাপন করতে পারেননি। ফ্ল্যাট থেকে আয় দেখানো হলেও ওই ফ্ল্যাটটি কীভাবে কিনেছেন তার ব্যাখ্যা দিতে পারেননি। এভাবে অভিনব কৌশলের আশ্রয় নিলেও শেষ রক্ষা হয়নি তাদের। স্বামী-স্ত্রী উভয় আসামিকে পলাতক দেখিয়ে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। অন্যদের বিরুদ্ধে মামলার তদন্ত চললেও প্রত্যেক আসামি পলাতক রয়েছেন বলে জানিয়েছে দুদক।
দুদক পিপি অ্যাডভোকেট মাহমুদুল হক মাহমুদ বলেন, ‘অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় দেখা যায় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অবৈধ আয়ের অর্থ স্ত্রীর নামে রেখে বৈধ করার চেস্টা করেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায় অভিযুক্তরা স্ত্রীকে মৎস্যচাষি, কৃষি উদ্যোক্তা, পোলট্রি ফার্মিং ব্যবসাসহ কাগজে-কলমে ব্যবসায়ী বানান। যখনই দুদক তদন্তে নামে তখনই তাদের এ প্রতারণার কৌশল আর টিকে না। স্বামীর অবৈধ সম্পদ আড়াল করতে গিয়ে গৃহিণী স্ত্রীদের দুর্নীতি মামলার আসামি হয়ে জেল খাটতে হচ্ছে।’
যদিও কাস্টমস কর্মকর্তা নিজামুল হকের স্ত্রী নাসিমা আক্তার দাবি করেছেন, তিনি স্বামীর আয়ে নয়, বৈধভাবেই দুই কোটি টাকার সম্পদ অর্জন করেছেন। দুদককে সেই ডকুমেন্টও তিনি জমা দিয়েছেন বলে জানান তিনি।
দুদক ও আদালত সূত্রে জানা গেছে, স্বামীর অবৈধ আয়ের অংশীদার হয়ে ২০২৪ সালে ১২ জন ও ২০২৩ সালে ৮ নারী দুর্নীতি মামলার আসামি হয়েছেন। এদের মধ্যে রয়েছেন চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্মকর্তা নিজামুল হকের স্ত্রী নাসিমা আক্তার, ব্যবসায়ী এমইইএস আবুল হোসাইনের স্ত্রী ফয়জুন নেছা হোছাইন, সার্ভেয়ার সুনীল কান্তি দেব মহাজনের স্ত্রী স্মৃতি রানী, পুলিশ কনস্টেবল সেলিম হাওলাদারের স্ত্রী জাহানারা বেগম, সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের সহকারী মো.

আলমগীর প্রকাশ লাতুর স্ত্রী হাসিনা বেগম, কাস্টমস কর্মকর্তা আবদুল বারিকের স্ত্রী ফেরদৌস ইয়াসমিন, পুলিশের এএসপি আবুল হাশেমের স্ত্রী তাহেরিনা বেগম, আমিন জুট মিলের কর্মচারী আবদুল নবী লেদুর স্ত্রী লাকি আক্তার, সাব-রেজিস্ট্রার অফিস সহকারী মাহফুজুর রহমানের স্ত্রী দিলুয়ারা মাহফুজুর রহমান, রেলওয়ের সাবেক জিএম হাবিবুর রহমানের স্ত্রী মালা রহমান, বিএনপি নেতা লিয়াকত আলীর স্ত্রী জেসমিন আক্তার। সম্পদ বিবরণী দাখিল না করায় সুপরিনটেনডেন্ট অব কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট চট্টগ্রামে মো. ইদ্রিসের স্ত্রী ফখরে জাহান বেগমের বিরুদ্ধে দুর্নীতি মামলা করা হয়।
অন্যদিকে, ২০২৩ সালের স্বামীর সঙ্গে অবৈধ সম্পদ অর্জনের ঘটনায় দুদকের জালে আটকে পড়েন আট নারী। এরা হলেন– বাঁশখালীর চাম্বল ইউপি চেয়ারম্যান মজিবুল 
হক চৌধুরীর স্ত্রি সাহেদা বেগম নূরী, সীতাকুণ্ড সাব-রেজিস্ট্রার অফিস সহকারী রফিক আহম্মদের স্ত্রী নুর জাহান বেগম, যমুনা অয়েল কোম্পানির সাবেক ম্যানেজার (শিপিং) এমদাদুল হকের স্ত্রী পারভীন আক্তার, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের লাইসেন্স ইন্সপেক্টর মোহাম্মদ আরিফের স্ত্রী সানজিদা চৌধুরী, সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর সলিম উল্লাহ বাচ্চুর স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা, কাস্টমসের রাজস্ব কর্মকর্তা গোলাম কিবরিয়া হাজারীর স্ত্রী সেলিনা আকতার, পুলিশে ট্রাফিক ইন্সপেক্টর আবুল কাশেম চৌধুরীর স্ত্রী ফাতেমা বেগম এবং এএসপি এবিএম শাহাদাত হোসেন মজুমদারের স্ত্রী রাজিয়া সুলতানা। এদের সবার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে দুর্নীতি মামলা দায়ের করেছে দুদক। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব যবস য় র রহম ন র অব ধ

এছাড়াও পড়ুন:

নড়াইলে সরকারি গাছ বিক্রির অভিযোগে চেয়ারম্যানসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা

নড়াইল সদর উপজেলার শাহাবাদ ইউনিয়নে সড়কের পাশে সরকারি গাছ চুরি করে বিক্রির অভিযোগে মামলা হয়েছে। গতকাল বুধবার রাতে শাহবাদ ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মশিউর রহমান বাদী হয়ে সদর থানায় মামলাটি করেন।

মামলায় ওই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমানসহ ১৩ জন আসামি করা হয়েছে। অন্য আসামিরা হলেন প্রশিকা নড়াইল উন্নয়ন এলাকা ব্যবস্থাপক শাহাব উদ্দিন ও প্রশিকার গঠিত সংগঠন প্রভাতী যুব সংঘের সভাপতি নড়াইল সদর উপজেলার তুজরডাঙ্গা এলাকার মুজিবুর রহমান, সদস্য একই এলাকার জরিনা বেগম, রজব আলী, মো. আজিবর, মো. ইলিয়াছ, ইমান আলী, মো. ওমর, মো. হায়দার, আবু সাঈদ, মো. এনামুল ও মো. শরিফুল।

এ বিষয়ে আজ বৃহস্পতিবার সকালে নড়াইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজেদুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারি গাছ চুরি করে বিক্রির অভিযোগে একটি মামলা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

মামলার এজহারে বাদী অভিযোগ করেছেন, গত ২৯ এপ্রিল নড়াইল সদর উপজেলার শাহাবাদ বাজার থেকে হাজির বটতলা পর্যন্ত সরকারি রাস্তার জায়গা থেকে গাছ কাটা ও চুরি করে বিক্রির সংবাদ পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে যান। উপস্থিত হয়ে দেখেন, কাটা গাছবোঝাই একটি ট্রাক এবং নছিমন জব্দ করেছেন নড়াইল সদর উপজেলা ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার দেবাশীষ অধিকারী। তখন ঘটনাস্থলে শ্রমিকদের জিজ্ঞাসাবাদ ও খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, মামলার আসামিরা কোনো ধরনের অনুমতি ছাড়াই খাসজমি থেকে গাছ কেটে বিক্রি করেছেন। এর আগেও একবার তাঁরা ওই জমি থেকে গাছ বিক্রি করেছিলেন। জব্দ করা গাছের লগ, ডালপালা এবং আগে কাটা গাছের অবশিষ্ট ভূমিসংলগ্ন গুঁড়ি পর্যবেক্ষণ করে বোঝা গেছে, ওই স্থান থেকে আনুমানিক পাঁচ লাখ টাকার অধিক গাছ চুরি করে কাটা ও বিক্রি হয়েছে।  

প্রশিকা নড়াইল উন্নয়ন এলাকার ব্যবস্থাপক শাহাব উদ্দিন বলেন, ২০০৯ সালে প্রশিকা, ইউনিয়ন পরিষদ ও প্রভাতী যুব সংঘের যৌথ উদ্যোগে একটি চুক্তির মাধ্যমে সড়কের পাশে গাছগুলো রোপণ করেছিল। সে সময় সড়কটি খাস খতিয়ানভুক্ত ছিল না। বর্তমানে তা সরকারের আওতায় পড়ায় গাছ কাটার অনুমতি চেয়ে ইউএনওর কাছে আবেদন করা হয়েছিল, তবে প্রশাসন কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি।  কিছুদিন আগে ইউপি সদস্য ইব্রাহিম তাঁকে ফোনে জানান, বিদ্যুৎ বিভাগের কাটা ডালপালা বিক্রি করতে চান চেয়ারম্যান। বিদ্যুৎ বিভাগের কাটা ডালপালাগুলো পড়ে থেকে নষ্ট হবে ভেবে তিনি বিক্রিতে সম্মতি দেন। পরে গাছ কীভাবে বা কারা কেটেছে, তা তিনি জানেন না।

মামলা করার আগে অবৈধভাবে গাছ কাটার অভিযোগের ব্যাপার জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান বলেছিলেন, প্রশিকার সঙ্গে চুক্তির একটি পক্ষ ছিল ইউনিয়ন পরিষদ। সেই হিসেবে গাছ কাটার অনুমতি নিতে ইউএনও বরাবর প্রশিকার আবেদন তিনি চেয়ারম্যান হিসেবে সুপারিশ করেছিলেন। তবে গাছ কেটেছে প্রশিকা আর তাদের সংগঠন। এখানে চেয়ারম্যান-মেম্বরের কিছু নেই।

নড়াইল সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) দেবাশীষ অধিকারী বলেন, প্রশিকার চুক্তির সময় সড়কটি ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিতে ছিল, পরে ২০১৫ সালে এটি খাস খতিয়ানভুক্ত হয়। খাসজমি থেকে গাছ কাটা বেআইনি। এ কারণে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ