চট্টগ্রামের বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি নিয়ে মাঠে দুর্নীতি দমন কমিশন। বিগত সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রী-এমপি, সরকারি চাকরিজীবী, এমনকি দুর্নীতি আড়াল করতে স্বামীর টাকায় কোটিপতি বনে যাওয়া স্ত্রীরাও দুদকের জালে। এ নিয়ে প্রিয় চট্টগ্রামের বিশেষ আয়োজন, প্রতিবেদনগুলো তৈরি করেছেন আহমেদ কুতুব  
চট্টগ্রামে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ২০২৪ সালে ৩৪টি দুর্নীতি মামলায় ১৬৯ জন ব্যক্তিকে আসামি করেছে। এর মধ্যে ২৩টি মামলা হয়েছে দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জন করা ৪৩ সরকারি চাকরিজীবীর বিরুদ্ধে। এ তালিকায় শীর্ষ কর্মকর্তা থেকে শুরু করে ছোট কর্মচারীও রয়েছেন, যাদের প্রত্যেকেই বনে গেছেন কোটিপতি। চট্টগ্রাম শহর ও গ্রামে তারা গড়ে তুলেছেন বাড়ি-গাড়ি, কিনেছেন জমির পর জমি। দুদকের দায়ের করা মামলায় অভিযুক্ত ৭৩ শতাংশই সরকারি চাকরিজীবী, যাদের বিরুদ্ধে ‘ঘুষ ও দুর্নীতি’র মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া সরকারি অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় ১৭ শতাংশ এবং ব্যাংকিং খাতে জাল-জালিয়াতি করে টাকা আত্মসাতের ঘটনায় ১০ শতাংশের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। চট্টগ্রাম কাস্টমস, পুলিশ, সার্ভেয়ার, সাব-রেজিস্ট্রার, জুট মিল কর্মচারী, রেলওয়ে, বিএডিসি, প্রগতি, হাসপাতাল, বন্ড কমিশনারেট, বন্দর ও ব্যাংকিং খাতের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি মামলা হয়েছে।
দুদক চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১-এর উপপরিচালক মো.

নাজমুচ্ছায়াদাত বলেন, ‘দুদক দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি নিয়ে কাজ করেছে। ২০২৪ সালে আমরা ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জন করা সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি মামলা করেছি। এর মাধ্যমে সমাজে একটি মেসেজ দিতে চেয়েছি– দুর্নীতি করলে যে কাউকেই বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। অনেকের অবৈধ সম্পদ জব্দও করেছি। ব্যাংকিং খাতে দুর্নীতি বন্ধে জোর দেওয়া হচ্ছে।’
দুদক কর্মকর্তারা জানান, সরকারি চাকরিরত অবস্থায় অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী ঘুষ ছাড়া কোনো কাজই করেন না। চাহিদামতো ঘুষ পেলে নয়কে ছয়, ছয়কে নয় করে দেন। বিনিময়ে গড়ে তোলেন অবৈধ সম্পদ। কেউ নিজের নামে, আবার কেউ স্ত্রীর নামে কৌশলে রেখে বৈধ করার চেস্টা করেন। অভিযোগ পেলে দুদক অনুসন্ধান শেষে যথাযথ ব্যবস্থা নিয়ে থাকে। ২০২৪ সালে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক মামলার অনুমতি চেয়ে অনুসন্ধান প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে প্রধান কার্যালয়ে। কমিশনের অনুমোদন না পাওয়ায় মামলা দায়ের করতে বিলম্ব হচ্ছে।
দুদক ও আদালত সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামে দুদকের দুটি কার্যালয় রয়েছে। চট্টগ্রাম মহানগরের দুর্নীতি দমনে কাজ করে চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এবং চট্টগ্রামের ১৪ উপজেলায় দুর্নীতি দমনে কাজ করে চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়-২। দুটি অফিসের দুর্নীতি মামলা রেকর্ড হয় সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১-এ। ২০২৪ সালে ১২টি সরকারি দপ্তরের দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ৩৪টি দুর্নীতি মামলা হয়। তার মধ্যে ১৬৯ জনকে আসামি করা হয়েছে। ৪৩ সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারী ছাড়াও ৬৪ জন ব্যাংকার, ৩২ জন ব্যবসায়ী আসামির তালিকায় রয়েছেন। ৩৪টির মধ্যে ২৩টি অবৈধ সম্পদ অর্জনের ঘটনায় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে, সরকারি অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় ছয়টি এবং ব্যাংক খাতে ঋণের নামে অর্থ আত্মসাৎ ও মানি লন্ডারিংয়ের ঘটনায় পাঁচটি মামলা করা হয়েছে।
এর মধ্যে চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্মকর্তা নিজামুল হক ও তার স্ত্রী নাসিমা আক্তারের বিরুদ্ধে ২ কোটি ২৫ লাখ ৯৩ হাজার ১৩৮ টাকা অবৈধ সম্পদ অর্জনের খোঁজ পায় দুদক। তাদের বিরুদ্ধে মামলাও করা হয়। একইভাবে ব্যবসায়ী এমইইএস আবুল হোসাইনের বিরুদ্ধে ৭ কোটি ৯৪ লাখ ৪৭ হাজার ১২ টাকা অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং তার স্ত্রী ফয়জুন নেছা হোছাইনের বিরুদ্ধে ৯৯ কোটি ৪ হাজার ৪৩০ টাকা অবৈধ সম্পদ অর্জন, সার্ভেয়ার সুনীল কান্তি দেব মহাজন ও তার স্ত্রী স্মৃতি রানীর বিরুদ্ধে ৫ লাখ ৩১ হাজার ৮২১ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন, পুলিশ কনস্টেবল সেলিম হাওলাদারের স্ত্রী জাহানারা বেগমের বিরুদ্ধে ১ কোটি ১০ লাখ ৮৬ হাজার ৯৪৮ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের দায়ে মামলা হয়।
এ ছাড়া সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের সহকারী মো. আলমগীর প্রকাশ লাতু এবং তার স্ত্রী হাসিনা বেগমের বিরুদ্ধে ৬৩ লাখ ৮২ হাজার ২৭১ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন, পুলিশের ট্রাফিক সার্জেন্ট মোহাম্মদ শেখ রাসেলের বিরুদ্ধে ২২ লাখ ৩৩ হাজার ৫১২ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের দায়ে 


মামলা হয়। কাস্টমসের রাজস্ব কর্মকর্তা আব্দুল বারিকের বিরুদ্ধে ১ কোটি ২৩ লাখ ২৪ হাজার ৯২২ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন, কাস্টম কর্মকর্তা ফেরদৌস ইয়াসিমিনের বিরুদ্ধে ১ কোটি ৯২ লাখ ৬৫ হাজার ৮০৮ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন, পুলিশের এএসপি আবুল হাশেমের বিরুদ্ধে ১৮ লাখ ৬০ হাজার ২৯৪ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং তার স্ত্রী তাহেরিনা বেগমের বিরুদ্ধে ৪৩ লাখ ৩২ হাজার ৪৫৬ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন, আমিন জুট মিলের কর্মচারি আবদুল নবী লেদুর বিরুদ্ধে ৭৬ লাখ ৬৪ হাজার ২৯১ টাকা, তার স্ত্রী লাকি আক্তারের বিরুদ্ধে ৩ কোটি ৯ লাখ ১১ হাজার ৩৮৫ টাকা এবং তার ছেলে আবদুর রহিমের বিরুদ্ধে ১ কোটি ৫ লাখ ৭৮ হাজার ৮৮৭ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের দায়ে মামলা হয়।
অন্যদিকে, সাব-রেজিস্ট্রার অফিস সহকারী মাহফুজুর রহমানের স্ত্রী দিলুয়ারা মাহফুজুর রহমানের বিরুদ্ধে ১ কোটি সাত লাখ ২ হাজার ৭৪৬ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন, সাবেক কাস্টম কর্মকর্তা আমজাদ হোসেন হাজারীর বিরুদ্ধে ৭৯ লাখ ৩৬ হাজার ৬২২ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন, রেলওয়ের সাবেক জিএম হাবিবুর রহমান ও তার স্ত্রী মালা রহমানের বিরুদ্ধে ৬১ লাখ ৫৬ হাজার ৩৩০ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের প্রাথমিক তদন্তে সত্যতা পায় দুকক। অবৈধ সম্পদের খোঁজ পাওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি মামলা দায়ের করা হয়।   
রেলওয়ের ১ কোটি ৩৭ লাখ ৮৭ হাজার টাকা আত্মসাতের ঘটনায় প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক ফরিদ আহম্মেদসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি মামলা, ভুয়া রেকর্ড সৃষ্টি করে রেলওয়ের ২৪ লাখ ১৮ হাজার ৭২৩ টাকা সরকারের ক্ষতি সাধনের ঘটনায় ৮ রেল কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা, বিএডিসি’র দুই কোটি ৮৫ লাখ ৬০ হাজার ৭৭৬ টাকার সরকারি সার আত্মসাতের ঘটনায় গুদামরক্ষক আল আমিনের বিরুদ্ধে, সরকারি গাড়ি প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান প্রগতি’র কর্মকর্তাদের কারসাজিতে ২৯ লাখ ৬৭ হাজার ৭২০ টাকা আত্মসাতের ঘটনায় মামলা, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের ৫ কোটি ৩৭ লাখ টাকা আত্মাসাতের চেস্টার ঘটনায় কর্মচারি ফোরকানসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। 
সরকারি প্রতিষ্ঠানের বাইরে অবৈধ সম্পদ অর্জনের ঘটনায় ব্যবসায়ী জালাল উদ্দিন শাহের বিরুদ্ধে ১ কোটি ২১ লাখ ৪৬ হাজার ২৪ টাকার মামলা, বিএনপি নেতা লিয়াকত আলীর স্ত্রী জেসমিন আক্তারের বিরুদ্ধে ১ কোটি ৬ লাখ ২৬ হাজার ২৬২ টাকা অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলা, সম্পদ বিবরণী দাখিল না করায় সুপরিনটেনডেন্ট অব কাস্টমস বন্ড কমিশনারেন্ট চট্টগ্রামে মো. ইদ্রিসের বিরুদ্ধে ও তার স্ত্রী ফখরে জাহান বেগমের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা, চট্টগ্রাম বন্দরে ইনভয়েস জালিয়াতি করে সরকারের ১ কোটি ৭২ লাখ ৯৯ হাজার ৯২৮ টাকার রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার ঘটনায় ব্যবসায়ী আমিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে দুর্নীতি মামলা করে দুদক। এর বাইরে ন্যাশনাল ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় এসআলম গ্রুপের মালিক সাইফুল আলম মাসুদের ছেলেসহ ৬০ ব্যাংক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ৬টি মামলা দায়ের করে দুদক। 
টিআইবি-সনাক চট্টগ্রামের সভাপতি অ্যাডভোকেট আখতার কবির চৌধুরী বলেন, ‘দুর্নীতির মামলায় সরকারি চাকরিজীবী আসামিদের সংখ্যা বেশি হওয়া প্রমাণ করে তারা সরাসরি দুর্নীতিতে জড়িত। সেবার পরিবর্তে ঘুষের লাগাম টানতে না পারায় সরকারি চাকরিজীবীদের নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। দুর্নীতিতে অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে পারলে সরকারি অফিসে অফিসে দুর্নীতি কমে আসবে, অন্যথায় নয়।’ 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: চ কর জ ব ব গম র ব র দ ধ সমন ব ত জ ল ২০২৪ স ল দ য় র কর চ কর জ ব ব যবস য় ক স টমস সরক র র লওয় রহম ন

এছাড়াও পড়ুন:

শক্তিশালী ব্যালান্স শিট প্রবৃদ্ধিসহ ২০২৪ সালে ব্র্যাক ব্যাংকের উল্লেখযোগ্য সাফল্য

চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতি সত্ত্বেও ২০২৪ সালে ব্র্যাক ব্যাংক সমন্বিতভাবে কর-পরবর্তী নিট মুনাফায় (এনপিএটি) পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় ৭৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। ২০২৪ সালে অঙ্গপ্রতিষ্ঠানসহ সমন্বিতভাবে ব্যাংকটি ১ হাজার ৪৩২ কোটি টাকা কর-পরবর্তী নিট মুনাফা অর্জন করেছে, যা ২০২৩ সালে ছিল ৮২৮ কোটি। ব্যাংকিং খাতে এটি একটি উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি।  

একক (স্ট্যান্ডঅ্যালন) ভিত্তিতে ২০২৪ সালে ব্র্যাক ব্যাংকের কর-পরবর্তী নিট মুনাফা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২১৪ কোটি টাকায়, যেখানে আগের বছরের ৭৩০ কোটি টাকার তুলনায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬৬ শতাংশ। ব্যাংকিং খাতে চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতি সত্ত্বেও ব্র্যাক ব্যাংক ব্যালান্স শিটে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে, যা ইন্ডাস্ট্রি-অ্যাভারেজের চেয়েও অনেক বেশি। এ সময় ব্যাংকটি এককভাবে গ্রাহক আমানতে ৩৪ শতাংশ এবং ঋণে ২০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।

২৮ এপ্রিল ২০২৫ ব্র্যাক ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ব্যাংকটির ২০২৪ সালের আর্থিক বিবরণী অনুমোদন করে। ব্যাংকটির আর্থিক বিবরণীতে উঠে আসা উল্লেখযোগ্য সূচকগুলো এখানে তুলে ধরা হলো—

শক্তিশালী গ্রাহক-ভিত্তি এবং খাতভিত্তিক সহায়তা

২০২৪ সালে ব্র্যাক ব্যাংকের রিটেল ব্যাংকিং সেগমেন্টে সাড়ে তিন লাখ নতুন গ্রাহক যুক্ত হয়েছে, যার ফলে ব্যাংকটির রিটেইল ব্যাংকিং সেগমেন্টে এখন মোট গ্রাহকসংখ্যা ১৩ লাখের বেশি। এই অর্জন পারসোনালাইজড ব্যাংকিং সেবার মাধ্যমে গ্রাহকদের ক্রমবর্ধমান ব্যাংকিং প্রয়োজন মেটানোর ব্যাপারে ব্যাংকটির নিবেদিত প্রচেষ্টার প্রতিফলন। দেশের অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ সেক্টর এসএমই খাত। ব্যাংকটি এই সেগমেন্টে এক লাখের বেশি নতুন সিএমএসএমই গ্রাহক যুক্ত করতে সক্ষম হয়েছে, যা উদ্ভাবন ও তৃণমূল উদ্যোক্তাদের সহায়তার ব্যাপারে ব্যাংকটির ব্যক্ত করা প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন। এ ছাড়া ব্যাংকটি করপোরেট ব্যাংকিং সেগমেন্টে ক্লায়েন্ট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে সাড়ে ৯ হাজার। এভাবে ব্র্যাক ব্যাংকের করপোরেট ব্যাংকিং সেগমেন্ট দেশের বৃহৎ প্রতিষ্ঠানগুলোকে সহায়তার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।

কৌশলগত ডিজিটাল উদ্যোগ

২০২৪ সালেও ব্র্যাক ব্যাংক ডিজিটাল রূপান্তরযাত্রায় ধারাবাহিক বিনিয়োগ অব্যাহত রেখেছে। নতুন অ্যাকাউন্টগুলোর মধ্যে ৭৭ শতাংশই খোলা হয়েছে ডিজিটাল অ্যাকাউন্ট ওপেনিং প্ল্যাটফর্ম ‘ইকেওয়াইসি’র মাধ্যমে। ২০২৪ সালের শেষে ব্যাংকটির আস্থা অ্যাপ ব্যবহারকারীর সংখ্যা দাঁড়ায় ৮ লাখ। এই ইন্টারনেট ব্যাংকিং অ্যাপে ২০২৪ সালে ২ কোটি ৭০ লাখের বেশি লেনদেনের মাধ্যমে দেড় লাখ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে, যা গ্রাহকদের সহজ, সুবিধাজনক ও নিরাপদ ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা প্রদানের ব্যাপারে ব্যাংকটির প্রতিশ্রুতি প্রতিফলন।

সমাজের মানুষকে ক্ষমতায়ন এবং টেকসই উন্নয়নকে উৎসাহিতকরণ

ব্র্যাক ব্যাংকের গৃহীত উদ্যোগ আর্থিক সাফল্যের চেয়েও বেশি কিছু। ব্যাংকিং খাতে মোট জামানতবিহীন সিএমএসএমই ঋণের ৪৩ শতাংশই অর্থায়ন করেছে ব্র্যাক ব্যাংক। ব্যাংকটির ‘উদ্যোক্তা ১০১’ কর্মসূচির আওতায় দেশের ২১০ জন নারী উদ্যোক্তা বিভিন্ন বিষয়ে সহায়তা পেয়েছেন। ৯৭৯ কোটি টাকা কৃষিঋণ বিতরণের মাধ্যমে ব্র্যাক ব্যাংক গ্রামীণ উন্নয়ন এবং নারীর ক্ষমতায়নেও উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে।

বৈশ্বিক খাতে অবদান এবং পরিবেশগত উন্নয়ন

রপ্তানিতে ২.০৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং আমদানিতে ৩.৩৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কার্যক্রম সম্পন্নের মাধ্যমে ব্র্যাক ব্যাংক বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। সবুজ কারখানা ও টেকসই প্রকল্পে অর্থায়নের মাধ্যমে ব্র্যাক ব্যাংক পরিবেশগত খাতে সহায়তা অব্যাহত রেখেছে।

উল্লেখযোগ্য পরিমাণ কর প্রদানের মাধ্যমে জাতীয় উন্নয়নে অবদান

একটি দায়িত্বশীল করপোরেট প্রতিষ্ঠান হিসেবে ২০২৪ সালে কর প্রদানের মাধ্যমে ব্র্যাক ব্যাংক সরকারের রাজস্ব কোষাগারে ১ হাজার ৯৩৯ কোটি টাকার অবদান রেখেছে।

নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ

দেশের আরও বেশি মানুষের কাছে সহজ ও সুবিধাজনক ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে দিতে ব্র্যাক ব্যাংক নিজেদের ব্যাংকিং নেটওয়ার্ক সম্প্রসারিত করে চলেছে। ২৬৩টি শাখা ও উপশাখা, ৩২৯টি এটিএম, ৪৪৬টি এসএমই ইউনিট অফিস এবং ১ হাজার ১১৯টি এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট নিয়ে বাংলাদেশের সবচেয়ে বিস্তৃত ব্যাংকিং নেটওয়ার্কগুলো মধ্যে অন্যতম অবস্থানে রয়েছে ব্র্যাক ব্যাংক। সর্বাধিক বিস্তৃত ব্যাংকিং নেটওয়ার্কের মাধ্যমে গ্রাহকদের আরও উন্নত, সহজ, সুবিধাজনক ও উপভোগ্য ব্যাংকিং সেবা দিতে ব্র্যাক ব্যাংক প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

২০২৪ অর্থবছরে ব্র্যাক ব্যাংকের উল্লেখযোগ্য পারফরম্যান্স

• সমন্বিত শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) ২০২৩ সালের ৪.৩০ টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৪ সালে ৬.৯৫ টাকায় উন্নীত হয়েছে।

• শেয়ার প্রতি সমন্বিত নিট অ্যাসেট ভ্যালু (এনএভি) আগের বছরের তুলনায় ৩৭.৬০ টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৪৪.১১ টাকায় উন্নীত হয়েছে।

• শেয়ার প্রতি সমন্বিত নিট ক্যাশ ফ্লো (এনওসিএফপিএস) ২০২৩ সালের ৩৭.০৫ টাকার তুলনায় ২০২৪ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬০.৯১ টাকায়।

• ইয়ার-অন-ইয়ার ভিত্তিতে ব্র্যাক ব্যাংকের লোন পোর্টফোলিও বেড়েছে ২০ শতাংশ, যেখানে ইন্ডাস্ট্রি-অ্যাভারেজ ছিল ৭ শতাংশ।

• এ সময় গ্রাহক আমানত ৩২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যেখানে ইন্ডাস্ট্রি-অ্যাভারেজ ছিল ৭ শতাংশ।

• সমন্বিত রিটার্ন অন ইকুইটি (আরওই) এবং রিটার্ন অন অ্যাসেট (আরওএ) যথাক্রমে ১৯.৮০ শতাংশ এবং ১.৫১ শতাংশ।

• ঋণ প্রবৃদ্ধি, দক্ষ তহবিল ব্যবস্থাপনা এবং বেশি নন-ফান্ডেড আয়ের ফলে ইন্টারেস্ট আয়ও উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বেড়েছে। এর ফলে ২০২৪ সালে মোট সমন্বিত আয় ৩৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

• ব্যাংকের কৌশল বাস্তবায়নের লক্ষ্যে মানবসম্পদ, প্রযুক্তি এবং অবকাঠামোতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বিনিয়োগের ফলে ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে মোট সমন্বিত পরিচালন ব্যয় ১৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

• বিশেষ করে আন্ডাররাইটিং, মনিটরিং এবং রিকভারির ওপর জোর দেওয়ার ফলে নন-পারফর্মিং লোন (এনপিএল) ২০২৩ সালের ৩.৩৮ শতাংশ থেকে কমে ২০২৪ সালে ২.৬৩ শতাংশ হয়েছে।

প্রবৃদ্ধিযাত্রা অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে ব্র্যাক ব্যাংক রেগুলেটরি ক্যাপিটাল বৃদ্ধির প্রতি জোর দিয়েছে। সাব-অর্ডিনেটেড বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে ২০২৪ সালে ব্যাংকটির রেগুলেটরি ক্যাপিটাল ৭ হাজার ১৪৩ কোটি টাকায় পৌঁছেছে, যা ২০২৩ সালে ছিল ৫ হাজার ৫০৯ কোটি টাকা।

২০২৪ অর্থবছরের এই অসাধারণ অর্জন সম্পর্কে মন্তব্য করে ব্র্যাক ব্যাংকের ম্যানেজিং ডিরেক্টর অ্যান্ড সিইও সেলিম রেজা ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘২০২৪ সালে আমাদের এই অর্জিত সাফল্য গ্রাহক, সমাজ ও দেশের প্রতি ব্র্যাক ব্যাংকের অবিচল প্রতিশ্রুতির উদাহরণ। গ্রাহক ও স্টেকহোল্ডারদের আস্থা ও বিশ্বাসকে সঙ্গে নিয়ে আমরা উদ্ভাবন, ক্ষমতায়ন এবং বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়নে অবদান অব্যাহত রাখতে বদ্ধপরিকর।’

সেলিম রেজা ফরহাদ হোসেন আরও বলেন, ‘বছরের পর বছর ধরে ধারাবাহিক সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ সব স্টেকহোল্ডারের কাছে ব্র্যাক ব্যাংক এখন এক আস্থার নাম। করপোরেট সুশাসন, কমপ্লায়েন্স এবং মূল্যবোধনির্ভর ব্যাংকিংয়ে ব্র্যাক ব্যাংক রোল-মডেল হিসেবে স্বীকৃত। এমন অর্জনের জন্য আমি কৃতজ্ঞতা জানাই ব্র্যাক ব্যাংকের গ্রাহকদের প্রতি—তাঁদের অবিচল আস্থার জন্য; আমাদের পরিচালনা পর্ষদের প্রতি—তাঁদের ধারাবাহিক দিকনির্দেশনার জন্য এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতি—চ্যালেঞ্জিং সময়েও তাঁদের দূরদর্শী রেগুলেটরি দিকনির্দেশনার জন্য।’

আর্থিক তথ্য সম্পর্কে বিস্তারিত ব্র্যাক ব্যাংকের ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে: https://www.bracbank.com/en/investor-relations#financialStatements

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ১ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা ৫ বছরে, অস্ট্রেলিয়ার বিনোদন বাজার বাড়ছে
  • বিদেশি ঋণ পরিশোধ বেড়েছে ২৪ শতাংশ
  • জ্বালানি তেলের দাম কমল লিটারে ১ টাকা
  • শক্তিশালী ব্যালান্স শিট প্রবৃদ্ধিসহ ২০২৪ সালে ব্র্যাক ব্যাংকের উল্লেখযোগ্য সাফল্য
  • আইন সংশোধন করে কি ঠেকানো যাবে ইন্টারনেট বন্ধ
  • ম্যারিকোর ১ হাজার ৯৫০ শতাংশ চূড়ান্ত লভ্যাংশ ঘোষণা
  • অর্থনীতির আকারে এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ দশম
  • ইউনাইটেড ফাইন্যান্সের ১০ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা
  • সিটি ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক সম্মেলন অনুষ্ঠিত
  • সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্সের ১২ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা