রিজিয়া (প্রকৃত নাম রাজিয়া) ছিলেন ভারতবর্ষের ইতিহাসে একমাত্র নারী সম্রাট; আর আমরা তাঁকে ‘সুলতানা’ হিসেবে উল্লেখ করলেও নিজেকে তিনি অভিহিত করতেন ‘সুলতান’ বলে। পাঁচ বছরের কম সময় তিনি দিল্লির সিংহাসনে অধিষ্ঠিত ছিলেন। এ সময়টাও তাঁর কেটেছে দরবারের ও বাইরের শত্রুদের মোকাবিলায়; ষড়যন্ত্র ও বিদ্রোহ দমনের প্রচেষ্টায়। যাঁরা তাঁকে ক্ষমতায় বসতে সাহায্য করেছিলেন, তাঁরাও চেয়েছিলেন নারী হিসেবে তিনি তাঁদের কথামতো চলবেন; কিন্তু রাজিয়া পুরুষতন্ত্রের হাতের পুতুল হতে চাননি।

দিল্লির এই নারী সম্রাটের ব্যক্তিত্ব, সাহস ও আত্মমর্যাদাবোধ তরুণ বয়সেই মাইকেল মধুসূদন দত্তকে আকৃষ্ট করেছিল। মাদ্রাজে অবস্থানকালে তিনি তাঁকে নিয়ে ইংরেজিতে একটি কাব্যনাট্য লিখতে শুরু করেন। ‘রিজিয়া–ইমপ্রেস অব ইন্ডে’ নামের এই রচনা তিনি মাদ্রাজেই তাঁর নিজের সম্পাদিত পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করতে শুরু করেন। মাইকেল মধুসূদন দত্তের জন্মের দ্বিশতবর্ষ উপলক্ষে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে কবির অসমাপ্ত কাব্যনাট্যটি প্রথমবারের মতো পুস্তক আকারে প্রকাশ করেছে প্রথমা প্রকাশন।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

কার্টুন, মিমে অভ্যুত্থানের ভিন্ন ধারার দৃশ্যায়ন

টাকার বস্তার ভেতর থেকে মাথা উঁচিয়ে আছেন শুভ্র কেশ, সফেদ দাড়ি, চশমা পরিহিত এক লোক। তাঁর ছবি দেখে তো বটেই, এই বর্ণনা থেকেও তাঁকে চিনবেন দেশবাসী। বর্তমানে কারাগারের বাসিন্দা পতিত স্বৈরশাসকের এই উপদেষ্টা বলছেন, ‘টাকার ওপর আমার বিশ্বাস উঠে গেছে।’ এই ছবির পাশেই এক কাটআউট। সেখানে ‘শেখ হাসিনা পালায় না’ বলতে বলতে দৌড়ে পালাচ্ছেন ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতার মসনদ থেকে উৎপাটিত শেখ হাসিনা।

এমন মজার মজার কার্টুন, মিম, গ্রাফিতি, ভিডিও স্থাপনাকর্মসহ বৈচিত্র্যময় সৃজনসম্ভার নিয়ে শুরু হয়েছে ‘বিদ্রূপে বিদ্রোহ’ নামের ব্যতিক্রমী এক প্রদর্শনী। আয়োজন করেছে অনলাইনভিত্তিক স্যাটায়ার সাময়িকী ‘ইয়ারকি’। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ধানমন্ডির আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের লা গ্যালারিতে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে ছয় দিনের এ প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। চলবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত। সবার জন্য প্রতিদিন বেলা তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা।

গত বছর ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে উত্তাল ছিল জুলাই। একটি বৈষম্যহীন, উদার গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য পথে নেমেছিলেন অগণিত মানুষ। শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী সরকারকে উৎখাত করতে জীবন উৎসর্গ করেছেন তাঁদের অনেকে। আহত হয়েছেন বেশুমার। রক্তরঞ্জিত রাজপথ বেয়ে এসেছে জনতার বিজয়।

প্রদর্শনীতে প্রবেশপথটির দুই পাশে লাল রঙের পটভূমিতে বড় বড় ডিজিটাল পোস্টার। সেখানে ২ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিদিনের বিভিন্ন ঘটনার আলোকচিত্র, সংবাদপত্র, অনলাইন পোর্টাল, টেলিভিশনের রিপোর্ট, ছবি, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমের পোস্ট—এসব তুলে আনা হয়েছে এ পোস্টারগুলোতে। প্রবেশপথটিও লাল রঙের। ‘জুলাই করিডর’ নামে এই রক্তিম পথটি বেয়ে দর্শনার্থীরা প্রদর্শনীতে প্রবেশের সময় অভ্যুত্থানের উত্তাল দিনগুলোর উত্তাপ ফিরে পাবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ