দিনাজপুরের বীরগঞ্জে হিমাগারে অন্যায্য ও অযৌক্তিক ভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ ও সমাবেশ করেছেন আলুচাষি ও ব্যবসায়ীরা।

আজ রোববার সকাল ১০টায় উপজেলা শহরের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে চাষি ও ব্যবসায়ীরা সমাবেশ করেন। পরে পঞ্চগড়-ঢাকা মহাসড়কে আলু ফেলে দুপুর ১২টা পর্যন্ত সড়ক অবরোধ করেন। এতে রাস্তার উভয় পাশে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে উপজেলার আলুচাষি ও ব্যবসায়ী সমিতির নেতাদের সঙ্গে নিয়ে চারটি হিমাগার সিলগালা করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফজলে এলাহী।

সিলগালা করা হিমাগারগুলো হলো উপজেলার চাকাই এলাকায় হিমাদ্রী কোল্ডস্টোরেজ লিমিটেড, হাবলুর হাটে শাহী কোল্ডস্টোরেজ-৪, বটতলীতে রাহবার কোল্ডস্টোরেজ ও দলুয়া এলাকায় শাহী কোল্ডস্টোরেজ-২।

সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন আলুচাষি ও ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আবদুল মালেক। এ সময় বক্তব্য দেন সমিতির সাধারণ সম্পাদক সুন্দর রায়, আলুচাষি রেজাউল ইসলাম, কছিমউদ্দিন, ব্যবসায়ী ইরফান আলী, উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন প্রমুখ।

আলুচাষিরা জানান, গত কয়েক বছর হিমাগারে আলু সংরক্ষণে নানা ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। এতে আলুচাষি ও ব্যবসায়ীরা আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে পুঁজি হারিয়েছেন। গত দুই বছরে অনেকে আলু চাষ বন্ধ করেছেন। পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী আজ মহাসড়ক অবরোধ করে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।

সমাবেশে বীরগঞ্জ আলুচাষি ও ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আবদুল মালেক বলেন, ‘আমরা আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ে পুঁজি হারাচ্ছি। অন্যদিকে হিমাগারমালিকেরা আলুর বস্তা সংরক্ষণে একচেটিয়া মুনাফা করছেন। চলতি মৌসুমে উৎপাদনের জন্য বীজ আলু ও সার বেশি দামে কিনতে হয়েছে। আগে প্রতি বিঘা জমি ১৫ থেকে ১৮ হাজার টাকায় লিজ পাওয়া যেত। এবার সেটা ২৫ হাজারের বেশি টাকা দিয়ে লিজ নিতে হয়েছে। গত বছর প্রতি কেজি আলুর হিমাগার চার্জ ছিল তিন থেকে পাঁচ টাকা। এবার একলাফে সেটা আট টাকা করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।’

এ বিষয়ে ইউএনও ফজলে এলাহী বলেন, কয়েক দিন ধরে আলুচাষি ও ব্যবসায়ীরা হিমাগারে ভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদে আন্দোলন করে আসছেন। হিমাগারের মালিকপক্ষ এ বিষয়ে চাষি ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বসেনি। দ্বিতীয়বারের মতো তাঁরা সড়ক অবরোধ করেছিলেন। জনদুর্ভোগ এড়ানো ও শৃঙ্খলা বজায় রাখতে উপজেলার চারটি হিমাগার সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন-২০০৯ অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ও ব যবস য় র আল চ ষ উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

‘লাল পরি’ হয়ে ঘরে ফিরল হারিয়ে যাওয়া শিশুটি

ঠিকমতো চোখে দেখে না আট বছরের শিশু মরিয়ম। মাদ্রাসা থেকে ঘরে ফেরার পথে নিখোঁজ হয় সে। নানা ঘটনাচক্রে একসময় পৌঁছায় কক্সবাজার সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার ( ইউএনও) কার্যালয়ে। পরে ইউএনওর সহায়তায় ঘরে ফিরেছে শিশুটি। ঘরে ফেরার আগে তার ‘লাল পরি’ সাজার ইচ্ছাপূরণও হয়েছে।

শিশু মরিয়মের বাড়ি কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলায় পূর্ব পোকখালী চরপাড়া গ্রামে তার বাড়ি। সেখানেই একটি মাদ্রাসায় পড়ালেখা করে। গত বুধবার মাদ্রাসা ছুটির পর মায়ের জন্য অপেক্ষায় ছিল সে। তবে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে এক ব্যক্তি তাকে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায় কক্সবাজার সদরে।

ইউএনও কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মরিয়ম কক্সবাজার পৌরসভার কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকায় চোখেমুখে ভয় আর আতঙ্কের ছাপ নিয়ে হাঁটাহাঁটি করছিল। কৌতূহলী এক পথচারী কথা বলে তার নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি জানতে পারেন। ওই পথচারী মরিয়মকে নিয়ে যান তিন কিলোমিটার দূরে উপজেলা পরিষদের কার্যালয়ে। সেখান থেকে এক আনসার সদস্য মরিয়মকে ইউএনও কার্যালয়ে নিয়ে আসেন।

ইউএনও নিলুফা ইয়াছমিন চৌধুরী এ সময় শিশু মরিয়মের সঙ্গে কথা বলে তার বিস্তারিত ঠিকানা জানার চেষ্টা করেন। শিশুটি কেবল তার বাড়ি ঈদগাঁওয়ের পোকখালী এতটুকুই বলতে পারছিল। পরে ঈদগাঁওয়ের ইউএনওর মাধ্যমে শিশুটির বাড়ির ঠিকানা নিশ্চিত হওয়া যায়।

কাপড় কিনে দেওয়ার সময় মরিয়ম বলল, সে লাল পরি সেজে বাড়ি ফিরবে। তাকে লাল জামা, লাল চুড়ি, লাল লিপস্টিক ও লাল ওড়না দিয়ে লাল পরি সাজানো হয়। নিলুফা ইয়াছমিন চৌধুরী, ইউএনও, কক্সবাজার সদর উপজেলা

শিশুটি প্রথমে পাচারকারীদের খপ্পরে পড়েছিল বলে সন্দেহ ইউএনও নিলুফা ইয়াছমিনের। তিনি বলেন, আলাপে শিশুটি জানায়, সে তার তিন-চার বছর বয়স পর্যন্ত ভালোভাবেই চোখে দেখত। এরপর থেকে ক্রমে তাঁর চোখের আলো ঝাপসা হতে শুরু করে। এখন সে তেমন দেখতে পায় না। তার বাবা মারা গেছেন। মা ও বড় ভাই অন্ধ। পরিবারে অষ্টম শ্রেণিপড়ুয়া একটি বোন আছে, সে–ই কেবল চোখে দেখতে পায়। ঘরের কাজ সব বোনই সামলায়। তাদের পরিবার থাকে সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে।

শিশুটির কাছ থেকে চোখের বিষয়টি জেনে তাকে কক্সবাজার শহরের পানবাজার এলাকার কমিউনিটি চক্ষু হাসপাতালে নেওয়া হয় বলে জানান ইউএনও। তিনি বলেন, ‘শিশুটির সঙ্গে কথা বলে মনে হলো তার চোখের সমস্যা এত জটিল না। হাসপাতালে নেওয়ার পর চক্ষুবিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বিমল চৌধুরী তার চোখের পরীক্ষা করেন। এরপর বিনা মূল্যে শিশু মরিয়মকে চশমা ও এক মাসের ওষুধ কিনে দেওয়া হয়। চশমা চোখে দিয়ে সে জানিয়েছে, আগের চেয়ে অনেক ভালো দেখতে পাচ্ছে।’

শিশুটিকে মায়ের হাতে তুলে দেন কক্সবাজার সদরের ইউএনও নিলুফা ইয়াছমিন চৌধুরী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘লাল পরি’ হয়ে ঘরে ফিরল হারিয়ে যাওয়া শিশুটি