রাজশাহীর পুঠিয়ায় টিসিবির কার্ড নিয়ে বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এতে দুজন আহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে একজনকে আইসিইউয়ে ভর্তি করা হয়েছে। আজ রোববার দুপুরে উপজেলার বিড়ালদহ বাজারে এ ঘটনার পর প্রায় আধা ঘণ্টা রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করেন এক পক্ষের নেতা–কর্মীরা। পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।

আহত দুজন হলেন পুঠিয়ার বানেশ্বর ইউনিয়ন বিএনপির সদস্য ও ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য রফিকুল ইসলাম (৪৪) ও স্থানীয় যুবদল কর্মী মিঠুন (৩২)। রফিকুল ইসলামকে আজ বিকেল সাড়ে চারটার দিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউয়ে নেওয়া হয়েছে। আইসিইউ ইনচার্জ আবু হেনা মোস্তফা কামাল প্রথম আলোকে জানান, রফিকুল ইসলামের মাথায় গুরুতর জখম হয়েছে। সংকটাপন্ন অবস্থায় তাঁকে আইসিইউয়ে নেওয়া হয়েছে।

পুঠিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, দুপুরে বিড়ালদহ মাজারের সামনে ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলামকে পেয়ে যুবদল কর্মী মিঠুন, আল আমিন (৪০), আহসান (৩০), আলাল (৫০), সীমান্তসহ পাঁচ থেকে সাতজন মিলে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপাতে শুরু করেন। তখন রফিকুল ইসলামের পক্ষের লোকজন তা প্রতিরোধ করেন। ধারালো অস্ত্রের কোপে রফিকুল ইসলাম মারা গেছেন বলে গুজব ছড়িয়ে পড়লে ক্ষুব্ধ লোকজন রাজশাহী-নাটোর মহাসড়ক অবরোধ করেন। পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনী পরিস্থিতি শান্ত করে।

বিএনপির স্থানীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মিঠুন কিছুদিন ধরেই ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলামের কাছে কিছু টিসিবির কার্ড দাবি করে আসছিলেন। তবে ইউপি সদস্য রফিকুল তা দিতে পারেননি। এর জেরে তাঁর ওপর হামলা হয়। তখন রফিকুল ইসলামের পক্ষের বিএনপির নেতা-কর্মীরা মিঠুনকেও পিটিয়ে আহত করেন। আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকায় মিঠুনের সঙ্গে কথা বলা যায়নি।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, যুবদল কর্মী মিঠুনের বাবা ও ভাই আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। পরে ওই মামলা তিনি আপস করে নেন। আওয়ামী সরকারের পতনের পর থেকে মিঠুন বাবা ও ভাইয়ের হত্যার কথা মনে করিয়ে দিয়ে এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করছেন। সম্প্রতি মিঠুন ও তাঁর লোকজন এলাকার এক প্রধান শিক্ষককে বিদ্যুতের খুঁটিতে বেঁধে মারধর করেন। ওই শিক্ষক বর্তমানে ঢাকায় পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এ ছাড়া মিঠুনের নেতৃত্বে পুঠিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান যুব মহিলা লীগ নেত্রী মৌসুমী রহমান ও রাজশাহী মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ নওশাদ আলীর বাসায় ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।

পুঠিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কবির হোসেন বলেন, সংঘর্ষে দুই পক্ষের দুজন আহত হয়েছেন। তাঁদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। একটি পক্ষ মিনিট দশেকের মতো মহাসড়ক অবরোধ করে রেখেছিল। পরে অবরোধ তুলে নেওয়া হয়। এলাকার পরিস্থিতি এখন শান্ত। এ ব্যাপারে কেউ থানায় অভিযোগ করলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব এনপ র র ধ কর

এছাড়াও পড়ুন:

সাকিবের পথে হাঁটছেন মিরাজ

সাকিব আল হাসানের সঙ্গে নিজের তুলনাকে মেহেদী হাসান মিরাজ হয়তো উপভোগই করেন। কারণ, তাঁর স্বপ্ন সাকিবের মতো বিশ্বনন্দিত অলরাউন্ডার হয়ে ওঠা। সেই পথে বোধ হয় গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে টেস্টে দেশে-বিদেশে সম্প্রতি ভালো করছেন। পাকিস্তানে দারুণ প্রশংসিত ছিলেন অলরাউন্ড পারফরম্যান্স করে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই টেস্টের হোম সিরিজে উভয় টেস্টে নিজেকে ছাপিয়ে গেলেন। সিলেটের হারের ম্যাচেও ১০ উইকেট ছিল তাঁর। চট্টগ্রামে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট নিয়ে সাকিব ও সোহাগ গাজীর কাতারে নাম লেখালেন। মূলত মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ইনিংস ব্যবধানে টেস্ট জেতা সম্ভব হয়। 

গতকাল শতকের ঘরে যেতে কম কসরত করতে হয়নি তাঁর। নব্বইয়ের ঘরে গিয়ে তো অনিশ্চয়তায় পড়ে গিয়েছিলেন হাসানের আউটের শঙ্কায়। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হওয়ায় দ্বিতীয় শতকের দেখা পান তিনি। ২০২১ সালে এই চট্টগ্রামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি ছিল মিরাজের। গতকালের পারফরম্যান্স নিয়ে টাইগার এ অলরাউন্ডার বলেন, ‘ব্যাটিংয়ের সময় চেষ্টা করেছিলাম ২ রান নিয়ে ১০০ রানে যেতে। সেভাবে দৌড় দিয়েছিলাম। কিন্তু ফিল্ডারের হাতে বল চলে গিয়েছিল (হাসি)। তার পর তো আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়েছিলাম। হাসান অনেক ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তানজিমও ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তাইজুল ভাইও। এই তিনজনকেই অনেক অনেক ধন্যবাদ। কারণ, ওদের জন্যই আমি ১০০ রান করতে পেরেছি।’ 

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে করা সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট প্রাপ্তিকে নিজের সেরা পারফরম্যান্স দাবি মিরাজের, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে ১০০ করেছিলাম, ৩ উইকেট নিয়েছিলাম। অল্পের জন্য ৫ উইকেট হয়নি। হলে ভালো লাগত। ওই ম্যাচ হেরেছিলাম এই মাঠে। সে জিনিসটা মাথায় ছিল। ভালো লাগছে ম্যাচটি জিতেছি।’ মিরাজ ১৬২ বলে ১১টি চার ও একটি ছয় মেরে ১০৪ রান করেন। ২১ ওভারে ৩২ রান দিয়ে নেন পাঁচ উইকেট।

টেস্টে এ রকম অলরাউন্ড পারফরম্যান্স বাংলাদেশে আর দু’জনের আছে। সাকিব আল হাসান দু’বার ম্যাচে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট পেয়েছেন ২০১১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে মিরপুরে আর ২০১৪ সালে খুলনায়। সোহাগ গাজী নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট শিকার করেন চট্টগ্রামে। সেই মাইলফলক ছোঁয়া মিরাজকে সম্প্রতি অলরাউন্ডার ক্যাটেগরিতে ফেলা হয়। সাকিবের বিকল্প ভাবা হয় তাঁকে এখন। 

এ ব্যাপারে মিরাজের অভিমত, ‘দেখেন একটা জিনিস, যখন সাকিব ভাই ছিলেন, ভিন্ন রোল ছিল। এখন ভিন্ন রোল। যেহেতু টিম ম্যানেজমেন্ট, সবাই ব্যাটিংয়ে আস্থা রাখে। আমিও ভেবেছি আমার ব্যাটিংটা গুরুত্বপূর্ণ। এখন হয়তো আমি লিডিং রোল প্লে করছি, আগে সাকিব ভাই করত। এখন আমাদের দায়িত্ব আরও বেশি।’ 

সিলেটে দুই ইনিংসে পাঁচ উইকেট করে নিয়েও দলকে জেতাতে পারেননি মিরাজ। চট্টগ্রামে সাদমান, তাইজুলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ম্যাচ জয়ের নায়ক হন। এই সাফল্য নিয়ে বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে, প্রথম ম্যাচ হারার পর যেভাবে কামব্যাক করেছি, এটা খুবই দরকার ছিল। আমাদের সবাই ভেবেছিল, আমরা ভালো করব।’ মিরাজ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন কোচিং স্টাফ ও সতীর্থের কাছে। আর তাঁর কাছে কৃতজ্ঞতা পুরো দলের।

সম্পর্কিত নিবন্ধ