গত ২০ জানুয়ারি শপথ গ্রহণের পর থেকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্বজুড়ে তুলকালাম ঘটিয়ে চলেছেন। ওভাল অফিসে প্রবেশের আগেই দূতিয়ালি করে গাজায় হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি করান, যা পাল্টাপাল্টি জিম্মি ও বন্দিবিনিময়ের মধ্য দিয়ে অব্যাহত। ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতির জন্যও কাজ শুরু করেছেন ট্রাম্প। এরই মধ্যে মার্কিন প্রতিনিধিরা রিয়াদে রুশ প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গেও কথা হয়েছে ট্রাম্পের। অচিরেই হয়তো দু’নেতার বৈঠক হতে পারে।

এই সব কিছুর মধ্যে একটি বিষয় চোখে পড়ার মতো। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের যুক্তরাষ্ট্র তার প্রথাগত মিত্র ইউরোপকে দূরে ঠেলেই সামনে এগোনোর চেষ্টা করছে। গ্রিনল্যান্ড দখলের বার্তা দিয়ে এরই মধ্যে ন্যাটোভুক্ত দেশ ডেনমার্কের সঙ্গে দূরত্ব বেড়েছে যুক্তরাষ্ট্রের। পাশাপাশি ইউক্রেনকে না নিয়েই রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনায় যাওয়ায় নাখোশ ইউরোপের দেশগুলোও। কার্যত দ্বিতীয় মেয়াদে ট্রাম্পের এ পথচলা অনেকটাই নির্ভার। সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ সর্বাগ্রে। এতে প্রথাগত ‘অমিত্র’ দেশের সঙ্গেও হাত মেলাতে ট্রাম্পের আপত্তি নেই। আবার ‘বন্ধু’ হলেও আর্থিক লোকসান দিয়ে তিনি চালিয়ে যাবেন, এমনটাও হবে না। 

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র সফর করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সফরকালে ট্রাম্প এমন কিছু পদক্ষেপের ঘোষণা দিয়েছেন, যা কেবল ভারতের অর্থনীতির জন্য চাবুকের আঘাত শুধু নয়, অপমানেরও বটে। ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর ভারতীয় মুদ্রা রুপির দর ক্রমাগত পড়তে শুরু করে, যা এরই মধ্যে সর্বকালের রেকর্ড ভেঙেছে। বর্তমানে এক ডলারের জন্য ভারতকে দিতে হচ্ছে ৮৬ রুপিরও বেশি। যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া নথিপত্রহীন ভারতীয়দের হাত-পায়ে শিকল বেঁধে সামরিক বিমানে ফেরত পাঠাচ্ছেন ট্রাম্প।  

গত ১৩ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্র সফরে হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করেন মোদি। বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে মোদির উপস্থিতিতেই ভারতীয় পণ্যে ‘রিসিপ্রোকাল ট্যারিফ’ বা অনুরূপ পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন ট্রাম্প। এ ধরনের শুল্ক ভারতের অর্থনীতির জন্য এক বড় আঘাত হয়ে দেখা দিতে পারে। কারণ, যুক্তরাষ্ট্র ভারতীয় পণ্যের এক বড় বাজার। ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত অনুসারে, ভারতে মার্কিন পণ্য যে পরিমাণ শুল্কের মুখোমুখি হয়, ঠিক একই পরিমাণ শুল্ক বসবে মার্কিন বাজারের ভারতীয় পণ্যের ওপর। 

কার্যত ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি ব্যাপক। রয়টার্স জানায়, এ দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি কমবেশি ৪৫ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার। যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভস অফিসের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র ভারতীয় পণ্য আমদানি করেছে ৮৭ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলারের; ভারতে রপ্তানি করেছে ৪১ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলারের পণ্য। 
এদিকে, দ্য হিন্দু অনলাইন জানায়, ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন দপ্তর ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিশিয়েন্সি (ডিওজিই) ভারতে ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে এতদিন ধরে চলা যুক্তরাষ্ট্রের ২১ মিলিয়ন ডলারের বরাদ্দ বাতিল করেছে। গত মঙ্গলবার ব্যক্তিগত বাসভবন ফ্লোরিডার মার-এ-লাগোতে একটি নির্বাহী আদেশে সই করার সময় ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা ভারতে কেন ২১ মিলিয়ন ডলার দিয়ে যাচ্ছি? তাদের এমনিতেই প্রচুর অর্থকড়ি।’ 

ওয়াশিংটন সফরকালে মোদিকে উচ্চ মূল্যের মার্কিন এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান কেনার প্রস্তাব দেন ট্রাম্প। ভারতের সামরিক সক্ষমতার জন্য সর্বনিম্ন ৪২টি যুদ্ধবিমানের প্রয়োজন হলেও চীনকে মোকাবিলায় তাদের আছে ৩১টি। এ কারণে মোদি সরকারকে এ বিমান কেনার প্রস্তাব দেয় যুক্তরাষ্ট্র, যা নিয়ে তুমুল সমালোচনামুখর দেশটির বিরোধী দলগুলো। তাদের দাবি, এসব বিমান অত্যন্ত ব্যয়বহুল হলেও সর্বাধুনিক নয়। ভারতের বিরোধী দল কংগ্রেস বলছে, ট্রাম্পের মিত্র ইলন মাস্কই অতীতে এ যুদ্ধবিমানের সমালোচনা করেছেন। তবে শুল্ক নিয়ে ট্রাম্প যে কেবল ভারতের ওপর চড়াও হচ্ছেন, এমনটা নয়। এরই মধ্যে চীনের পণ্যে তিনি ১০ থেকে ১৫ শতাংশ শুল্ক  আরোপ করেছেন। প্রতিবেশী কানাডা ও মেক্সিকোর পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়ে তা এক মাসের জন্য স্থগিত করেছেন। ইউরোপকে হুমকি দিয়েছেন শুল্কের। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে পাল্টা পদক্ষেপও নিচ্ছে বিভিন্ন দেশ। এরই মধ্যে চীন মার্কিন পণ্যে ১০-১৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। আরও কয়েকটি দেশ কঠোর হওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে। এ অবস্থায় অঘোষিতভাবে বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু হয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

ট্রাম্প মূলত ‘যুক্তরাষ্ট্র প্রথম’ নীতি নিয়ে এগোচ্ছেন। তিনি যে রাজনীতি করছেন, তা তাঁর পূর্বসূরিদের চেয়ে বেশ ভিন্ন। তাঁর প্রশাসন বিদেশি ব্যয় কমিয়ে দিয়েছে, যা বিশ্বজুড়ে নানা সংকট তৈরি করেছে। বিশ্বব্যাপী ইউএসএআইডির মতো প্রতিষ্ঠানের সহায়তা বন্ধ করে দিয়েছে। এতে এমন অনেক প্রতিষ্ঠানে ধাক্কা লেগেছে, যেগুলো মানবিক সহায়তা দিয়ে থাকে। ট্রাম্প যুদ্ধ চান না; যুক্তরাষ্ট্রকে আর্থিকভাবে শক্তিশালী দেখতে চান।

তুহিন তৌহিদ: জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক, দৈনিক সমকাল
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ত র জন য কর ছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

আধা ঘণ্টার মধ্যেই গিলের দুই রেকর্ড

ওভাল টেস্টের আজ প্রথম দিন। ‘অ্যান্ডারসন-টেন্ডুলকার ট্রফি’র এই ম্যাচটি শেষ পর্যন্ত ভারতের জন্য স্মরণীয় হয়ে উঠবে কি না সময়ই বলবে। তবে শুবমান গিল নিজের জন্য স্মরণীয় করে তুললেন প্রথম দিনের প্রথম সেশনেই। দিনের দ্বিতীয় ঘণ্টায় ব্যাট করতে নামা গিল আধা ঘণ্টার মধ্যেই ভেঙেছেন দুটি রেকর্ড।

একটি রেকর্ড গ্যারি সোবার্সের, যা টিকেছিল ৫৯ বছর। আরেকটি রেকর্ড সুনীল গাভাস্কারের, টিকেছিল ৪৬ বছর। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের শেষ টেস্টের প্রথম সকালের এ দুই কীর্তির পর গিলকে হাতছানি দিচ্ছে আরও কয়েকটি রেকর্ড।

সিরিজের প্রথম চার টেস্টে ৭২২ রান করা গিল আজ প্রথম রেকর্ডটি ভেঙেছেন নিজের প্রথম স্কোরিং শটে। সেনা দেশগুলোতে (দক্ষিণ আফ্রিকা, ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া) সফরকারী অধিনায়ক হিসেবে এক সিরিজে সবচেয়ে বেশি রানের রেকর্ডটা ছিল সোবার্সের। ওয়েস্ট ইন্ডিজ কিংবদন্তি ১৯৬৬ সালের ইংল্যান্ড সফরে পাঁচ টেস্টের আট ইনিংসে করেছিলেন ৭২২ রান। প্রায় ছয় দশক পর গত সপ্তাহে ওল্ড ট্রাফোর্ড টেস্টেই তাঁকে ছুঁয়ে ফেলেন গিল।

সোবার্সকে ছাড়িয়ে যেতে বাকি যে এক রান দরকার ছিল, গিল আজ সেটিই নিয়েছেন ক্রিস ওকসের বলে স্কয়ার লেগে ঠেলে জোড়া রান নিয়ে। ইংল্যান্ডে সফরকারী অধিনায়ক হিসেবে এক সিরিজে সবচেয়ে বেশি রানের এই কীর্তি গড়েই থামেননি গিল। কিছুক্ষণ পরই ছাড়িয়েছেন স্বদেশি কিংবদন্তি সুনীল গাভাস্কারের এক রেকর্ড।

১৯৭৮-৭৯ মৌসুমে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৬ টেস্টের ৯ ইনিংসে ৭৩২ রান করেছিলেন তখনকার ভারত অধিনায়ক গাভাস্কার। চার দশকের বেশি সময় ধরে এটিই ছিল অধিনায়ক হিসেবে এক টেস্ট সিরিজে ভারতের রেকর্ড। আজ জেমি ওভারটনকে কাভার দিয়ে চার মেরে ১১ রানে পৌঁছে গাভাস্কারের রেকর্ডটিও দুইয়ে ঠেলে দিয়েছেন গিল।

প্রথম আধা ঘণ্টার মধ্যে দুটি নতুন রেকর্ড গড়া গিলের সামনে হাতছানি দিচ্ছে আরও কিছু রেকর্ড। যেমন ওভাল টেস্টে ৫৩ রান করতে পারলে তিনি হয়ে যাবেন ভারতের হয়ে এক সিরিজে সবচেয়ে বেশি রানের মালিক। বর্তমানে রেকর্ডটি গাভাস্কারের, যিনি ১৯৭১ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৮ ইনিংসে করেছিলেন ৭৭৪ রান।

গিল যদি আরেকটু এগিয়ে ৮৯ রান করতে পারেন, তাহলে ডন ব্র্যাডম্যানকে ছাড়িয়ে তিনি হবেন অধিনায়ক হিসেবে এক সিরিজে সবচেয়ে বেশি রান করা বিশ্ব রেকর্ডের মালিক। ১৯৩৬-৩৭ অ্যাশেজে ৯ ইনিংসে ৮১০ রান করেছিলেন অস্ট্রেলিয়ান কিংবদন্তি।

আর গিল যদি ওভালে সেঞ্চুরিই করে ফেলেন, তাহলে তিনি হয়ে যাবেন এক সিরিজে সবচেয়ে বেশি ৫ সেঞ্চুরি করা ব্যাটসম্যান, যে কীর্তিটি আছে শুধু ক্লাইভ ওয়ালকটের (১৯৫৫ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৫ টেস্টে ৫ সেঞ্চুরি)।

এই প্রতিবেদন লেখার সময় বৃষ্টিতে বন্ধ ছিল খেলা। বৃষ্টি আসার আগে ২ উইকেটে ৭২ রান তুলেছে টসে হেরে ব্যাটিং করা ভারত। গিল ১৫ ও সাই সুদর্শন ২৫ রানে অপরাজিত আছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আধা ঘণ্টার মধ্যেই গিলের দুই রেকর্ড