‘বন্ধু’ মোদিকে কেন ছাড় দিলেন না ট্রাম্প
Published: 23rd, February 2025 GMT
গত ২০ জানুয়ারি শপথ গ্রহণের পর থেকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্বজুড়ে তুলকালাম ঘটিয়ে চলেছেন। ওভাল অফিসে প্রবেশের আগেই দূতিয়ালি করে গাজায় হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি করান, যা পাল্টাপাল্টি জিম্মি ও বন্দিবিনিময়ের মধ্য দিয়ে অব্যাহত। ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতির জন্যও কাজ শুরু করেছেন ট্রাম্প। এরই মধ্যে মার্কিন প্রতিনিধিরা রিয়াদে রুশ প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গেও কথা হয়েছে ট্রাম্পের। অচিরেই হয়তো দু’নেতার বৈঠক হতে পারে।
এই সব কিছুর মধ্যে একটি বিষয় চোখে পড়ার মতো। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের যুক্তরাষ্ট্র তার প্রথাগত মিত্র ইউরোপকে দূরে ঠেলেই সামনে এগোনোর চেষ্টা করছে। গ্রিনল্যান্ড দখলের বার্তা দিয়ে এরই মধ্যে ন্যাটোভুক্ত দেশ ডেনমার্কের সঙ্গে দূরত্ব বেড়েছে যুক্তরাষ্ট্রের। পাশাপাশি ইউক্রেনকে না নিয়েই রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনায় যাওয়ায় নাখোশ ইউরোপের দেশগুলোও। কার্যত দ্বিতীয় মেয়াদে ট্রাম্পের এ পথচলা অনেকটাই নির্ভার। সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ সর্বাগ্রে। এতে প্রথাগত ‘অমিত্র’ দেশের সঙ্গেও হাত মেলাতে ট্রাম্পের আপত্তি নেই। আবার ‘বন্ধু’ হলেও আর্থিক লোকসান দিয়ে তিনি চালিয়ে যাবেন, এমনটাও হবে না।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র সফর করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সফরকালে ট্রাম্প এমন কিছু পদক্ষেপের ঘোষণা দিয়েছেন, যা কেবল ভারতের অর্থনীতির জন্য চাবুকের আঘাত শুধু নয়, অপমানেরও বটে। ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর ভারতীয় মুদ্রা রুপির দর ক্রমাগত পড়তে শুরু করে, যা এরই মধ্যে সর্বকালের রেকর্ড ভেঙেছে। বর্তমানে এক ডলারের জন্য ভারতকে দিতে হচ্ছে ৮৬ রুপিরও বেশি। যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া নথিপত্রহীন ভারতীয়দের হাত-পায়ে শিকল বেঁধে সামরিক বিমানে ফেরত পাঠাচ্ছেন ট্রাম্প।
গত ১৩ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্র সফরে হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করেন মোদি। বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে মোদির উপস্থিতিতেই ভারতীয় পণ্যে ‘রিসিপ্রোকাল ট্যারিফ’ বা অনুরূপ পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন ট্রাম্প। এ ধরনের শুল্ক ভারতের অর্থনীতির জন্য এক বড় আঘাত হয়ে দেখা দিতে পারে। কারণ, যুক্তরাষ্ট্র ভারতীয় পণ্যের এক বড় বাজার। ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত অনুসারে, ভারতে মার্কিন পণ্য যে পরিমাণ শুল্কের মুখোমুখি হয়, ঠিক একই পরিমাণ শুল্ক বসবে মার্কিন বাজারের ভারতীয় পণ্যের ওপর।
কার্যত ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি ব্যাপক। রয়টার্স জানায়, এ দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি কমবেশি ৪৫ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার। যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভস অফিসের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র ভারতীয় পণ্য আমদানি করেছে ৮৭ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলারের; ভারতে রপ্তানি করেছে ৪১ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলারের পণ্য।
এদিকে, দ্য হিন্দু অনলাইন জানায়, ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন দপ্তর ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিশিয়েন্সি (ডিওজিই) ভারতে ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে এতদিন ধরে চলা যুক্তরাষ্ট্রের ২১ মিলিয়ন ডলারের বরাদ্দ বাতিল করেছে। গত মঙ্গলবার ব্যক্তিগত বাসভবন ফ্লোরিডার মার-এ-লাগোতে একটি নির্বাহী আদেশে সই করার সময় ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা ভারতে কেন ২১ মিলিয়ন ডলার দিয়ে যাচ্ছি? তাদের এমনিতেই প্রচুর অর্থকড়ি।’
ওয়াশিংটন সফরকালে মোদিকে উচ্চ মূল্যের মার্কিন এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান কেনার প্রস্তাব দেন ট্রাম্প। ভারতের সামরিক সক্ষমতার জন্য সর্বনিম্ন ৪২টি যুদ্ধবিমানের প্রয়োজন হলেও চীনকে মোকাবিলায় তাদের আছে ৩১টি। এ কারণে মোদি সরকারকে এ বিমান কেনার প্রস্তাব দেয় যুক্তরাষ্ট্র, যা নিয়ে তুমুল সমালোচনামুখর দেশটির বিরোধী দলগুলো। তাদের দাবি, এসব বিমান অত্যন্ত ব্যয়বহুল হলেও সর্বাধুনিক নয়। ভারতের বিরোধী দল কংগ্রেস বলছে, ট্রাম্পের মিত্র ইলন মাস্কই অতীতে এ যুদ্ধবিমানের সমালোচনা করেছেন। তবে শুল্ক নিয়ে ট্রাম্প যে কেবল ভারতের ওপর চড়াও হচ্ছেন, এমনটা নয়। এরই মধ্যে চীনের পণ্যে তিনি ১০ থেকে ১৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন। প্রতিবেশী কানাডা ও মেক্সিকোর পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়ে তা এক মাসের জন্য স্থগিত করেছেন। ইউরোপকে হুমকি দিয়েছেন শুল্কের। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে পাল্টা পদক্ষেপও নিচ্ছে বিভিন্ন দেশ। এরই মধ্যে চীন মার্কিন পণ্যে ১০-১৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। আরও কয়েকটি দেশ কঠোর হওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে। এ অবস্থায় অঘোষিতভাবে বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু হয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
ট্রাম্প মূলত ‘যুক্তরাষ্ট্র প্রথম’ নীতি নিয়ে এগোচ্ছেন। তিনি যে রাজনীতি করছেন, তা তাঁর পূর্বসূরিদের চেয়ে বেশ ভিন্ন। তাঁর প্রশাসন বিদেশি ব্যয় কমিয়ে দিয়েছে, যা বিশ্বজুড়ে নানা সংকট তৈরি করেছে। বিশ্বব্যাপী ইউএসএআইডির মতো প্রতিষ্ঠানের সহায়তা বন্ধ করে দিয়েছে। এতে এমন অনেক প্রতিষ্ঠানে ধাক্কা লেগেছে, যেগুলো মানবিক সহায়তা দিয়ে থাকে। ট্রাম্প যুদ্ধ চান না; যুক্তরাষ্ট্রকে আর্থিকভাবে শক্তিশালী দেখতে চান।
তুহিন তৌহিদ: জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক, দৈনিক সমকাল
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
বিজয়-সাদমানের শতরানের জুটি, প্রথম সেশন বাংলাদেশের
চট্ট্রগ্রাম টেস্টের দ্বিতীয় দিনের প্রথম সেশনটা দুর্দান্ত কেটেছে বাংলাদেশ। ৯ উইকেটে ২২৭ রানে দিন শুরু করে জিম্বাবুয়ে। দিনের প্রথম বলেই সফরকারীদের শেষ উইকেটটি তুলে নেন তাইজুল। ৬০ রানে ৬ উইকেট নিয়ে প্রথম ইনিংসের সেরা বোলার টাইগার এই স্পিনার।
জিম্বাবুয়েকে ২২৭ রানে গুটিয়ে দিয়ে ইতিবাচক শুরু করেন দুই ওপেনার এনামুল হক বিজয় ও সাদমান ইসলাম। কোনো উইকেট না হারিয়েই প্রথম সেশন শেষ করেন তারা। বিজয় ৩৮ এবং সাদমান ৬৬ রানে ব্যাট করছেন। ২৬ ওভারে বাংলাদেশ করে বিনা উইকেটে ১০৫ রান। এরপরই মধ্যাহ্নভোজে যায় দুই দল। ২০২২ সালের ডিসেম্বরের পর এবারই প্রথম টেস্টের ওপেনিং জুটিতে পঞ্চাশ রান তুলতে পারল বাংলাদেশ। শুধু তাই নয় ৩২ ইনিংস পর বাংলাদেশ পেয়েছে ওপেনিং জুটিতে শতরানের জুটি।
সাদমানের ফিফটি
সিলেট টেস্টে ব্যাট হাতে আলো ছড়াতে পারেননি সাদমান। তবে চট্টগ্রামে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। ৭৮ বলে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন তিনি। ক্যারিয়ারে এটি তার ষষ্ঠ হাফ সেঞ্চুরি। ২৩ ওভার শেষে বাংলাদেশ কোনো উইকেট না হারিয়ে ৮৬ রান। সাদমান ৫০ রানে এবং বিজয় ৩৬ রানে ব্যাট করছেন।
সাদমান-বিজয়ের জুটির ফিফটি
সাদমান ইসলাম এবং এনামুল হক বিজয়ের ব্যাটে ইতিবাচক সূচনা পেয়েছে বাংলাদেশ। ১৩.৪ ওভারে বিনা উইকেটে ৫০ রান করেছে স্বাগতিকরা। ১২ ইনিংস পর পঞ্চাশ পেরোনো শুরুর জুটি পেল তারা। ভারতের বিপক্ষে গত বছর সেপ্টেম্বরে শেষবার ৬২ রানের জুটি গড়েছিলেন সাদমান ও জাকির হাসান।
প্রথম বলেই তাইজুলের আঘাত, ২২৭ রানে অলআউট জিম্বাবুয়ে
প্রথম দিনের দুই সেশনে দাপট দেখালেও শেষ সেশনে ব্যাটিং ধসে পড়ে জিম্বাবুয়ের ব্যাটিং লাইনআপ। ২ উইকেটেই ১৭৭ রান থেকে জিম্বাবুয়ে দিনশেষ করে ৯ উইকেটে ২২৭ রানে। তাইজুল ইসলাম ৫ উইকেট নিয়ে গতকাল তাদের এলোমেলো করে দিয়েছিলেন।
দ্বিতীয় দিন বাংলাদেশের লক্ষ্য ছিল যত দ্রুত সফরকারীদের অলআউট করা যায়। এই লক্ষ্যে দিনের প্রথম বলেই মুজারাবানিকে ফেরায় তাইজুল। এতে প্রথম ইনিংসে ২২৭ রানেই অলআউট জিম্বাবুয়ে। ৬০ রানে ৬ উইকেট নিলেন তাইজুল।
তাইজুলের ঘূর্ণিতে প্রথম দিন বাংলাদেশের