হত্যারচেষ্টা মামলায় ছাত্রসহ দু’জনকে ফাঁসানোর অভিযোগ
Published: 23rd, February 2025 GMT
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার এক বিএনপি নেতা ও একই দলের অপর এক নেতার কলেজপড়ুয়া ছেলেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় হত্যাচেষ্টার মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল রোববার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে তারা এমন তথ্য জানিয়েছেন।
রাজধানীর রামপুরা থানায় ২৩ সেপ্টেম্বর ওই মামলাটি করেন সিরাজগঞ্জের বাসিন্দা আব্দুল্লাহ আল মামুন। তিনি রাজধানীর বনশ্রীতে থাকতেন। গত বছরের ১৯ জুলাই বিকেলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় বনশ্রী হাসপাতালের সামনের রাস্তায় গুলিবিদ্ধ হন তিনি।
মামলায় ৩৯ জনকে এজাহারভুক্ত আসামি করা হয়। প্রধান আসামি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ছাড়া আসামি তালিকায় রয়েছে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক ডিবিপ্রধান হারুন অর রশীদের নামও। এ মামলার ৯ নম্বর আসামি রূপগঞ্জের তারাব পৌর বিএনপির সহসভাপতি জাহাঙ্গীর আলম ভূঁইয়া। ২৫ নম্বর আসামি তাঁর প্রতিবেশী ও ৪ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক আব্দুল বারেকের ছেলে ইয়ামিন প্রধান।
সংবাদ সম্মেলনে আব্দুল বারেক বলেন, তিনি বিএনপির রাজনীতিতে সম্পৃক্ত থাকলেও ছেলে কোনো দলেই যুক্ত নয়। তাঁর ভাষ্য, ‘আমার ছেলে রূপগঞ্জের সরকারি মুড়াপাড়া কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্র। সে কোনো রাজনীতি বা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে যুক্ত নয়। আন্দোলনে আমি বা আমার পরিবারের কেউ পক্ষে বা বিপক্ষে কোনোটাতেই ছিলাম না। মামলায় আসামি হওয়ার পর থেকে আতঙ্কে আমার ছেলে বাড়িছাড়া। আমরাও ভয়ে আছি। কী কারণে একজন অচেনা লোক আমার ছেলেকে আসামি করল, তা বুঝতে পারছি না।’
মামলার অপর আসামি জাহাঙ্গীর আলম ও আব্দুল বারেকের দাবি, তারা বাদিকে চেনেন না। কখনও নাম পর্যন্ত শোনেননি। মামলার পর পুলিশ তাদের খোঁজখবর নিতে বাড়িতে এলে বিষয়টি জানতে পারেন। পরে আদালতের মাধ্যমে কাগজপত্র সংগ্রহ করে বাদীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দেন। কিন্তু অসুস্থতার অজুহাত দিয়ে কোনো কথা বলেননি বাদী আব্দুল্লাহ আল মামুন। এ ঘটনার পেছনে অন্য কারও ইন্ধন আছে কিনা, সে ব্যাপারেও নিশ্চিত নন তারা।
মামলার এজাহারে দেওয়া বাদী আব্দুল্লাহ আল মামুনের মোবাইল ফোনে কল দিয়ে সমকালের পরিচয় দেওয়া হলে তিনি নিজেকে সাংবাদিক হিসেবে পরিচয় দেন। পরে ‘এখন ব্যস্ত, পরে কথা বলব’ জানিয়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
এ বিষয়ে কথা হয় রামপুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতাউর রহমান আকন্দের সঙ্গে। তিনি বলেন, সারাদেশেই (এমন) অভিযোগ উঠেছে। অনেককে মিথ্যা অভিযোগে বিভিন্ন মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। মামলাগুলোর সঠিক তদন্ত ও নিরপরাধ ব্যক্তির হয়রানি ঠেকাতে প্রধান উপদেষ্টা ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার নির্দেশনাও আছে। পুলিশ সেভাবেই কাজ করছে।
ওসি আতাউর রহমান আরও বলেন, ‘মামলা যে কারও নামেই হতে পারে। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে যদি তথ্য-প্রমাণ না মেলে, সে ক্ষেত্রে নাম চার্জশিটে থাকবে না। তা ছাড়া শুধু মামলায় নাম থাকার কারণে আমরা কাউকে হয়রানিও করছি না।’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব এনপ
এছাড়াও পড়ুন:
সিদ্ধিরগঞ্জে সেনাবাহিনীর উদ্ধারকৃত ডিএনডি খাল দখল করে চাঁদাবাজি!
সিদ্ধিরগঞ্জের হীরার্ঝিল আবাসিক এলাকায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উদ্ধারকৃত ডিএনডি (ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা) খাল দখল করে দোকান বসিয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে কয়েকজন বাড়ির মালিকের বিরুদ্ধে। এর ফলে ডিএনডি খালটি ফের সংকুচিত হতে শুরু করেছে। পাশাপাশি তৈরি হচ্ছে জলাবদ্ধতা।
এদিকে এই এলাকাটি শিমরাইল পাম্প স্টেশনের নিকটবর্তী এলাকা হওয়ায় দোকানগুলোর কারণে ঠিকমতোন পানি সরবরাহ হতে পারছে না। তবে প্রশাসনের ভাষ্য, খুব শিগগিরই এখানে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে।
বুধবার (৩০ জুলাই) বিকেলে নাসিক ১নং ওয়ার্ডের হীরাঝিল আবাসিক এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বালু খালপাড় দখল করে হরেক রকমের ছোট-বড় প্রায় ২৫টি দোকান বসানো হয়েছে। হাবিবুল্লাহ হবুলের মালিকানাধীন হাবিবুল্লাহ টাওয়ার থেকে শুরু করে মোক্তার হোসেন সরকারের মালিকানাধীন বিএম ভবন, সিদ্দিকুর রহমানের মালিকানাধীন মমতাজ ভিলা, নূর মোহাম্মদ টাওয়ার, নুরুল হুদা’র বাড়ির সামনে এসব স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে।
এর বিনিময়ে প্রতি দোকান থেকে টাকা তুলছেন স্ব স্ব বাড়ির মালিকরা। চাঁদা তোলার বিষয়টি কয়েকজন বাড়িওয়ালা অকপটে স্বীকারও করেছেন।
এদিকে, দোকানগুলোর কারণে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নির্মিত ওয়াকওয়ে দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে পথচারীদের চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে। পাশাপাশি হীরাঝিল এলাকাবাসীকেও ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, হীরাঝিল আবাসিক এলাকা একটি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। যানবাহন ও মানুষের চাপ বেশি থাকায় এই এলাকায় সবসময় যানজট লেগেই থাকে। চলাচলের সুবিধার্তে এলাকাবাসী ডিএনডি খালের পাড় দিয়ে নিজ নিজ গন্তব্যস্থলে যেতেন। কিন্তু কয়েকজন বাড়িওয়ালা এহেন কর্মকান্ডের কারণে হাজার হাজার মানুষ দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছেন।
এসব দোকানের কারণে খালের সৌন্দর্য নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি পানি নিষ্কাশন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ এবং চাঁদাবাজি প্রশাসন বন্ধ করতে না পারলে আগামীতে ফের বন্যা হওয়ার শঙ্কা তৈরি হচ্ছে। তাই এ বিষয়ে প্রশাসনের দ্রুত প্রদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি।
এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে ‘কাবাব বাড়ি’ ভবনের মালিক মো. রফিক বলেন, আমার বাড়ির সামনে ডিএনডি খাল দখল করে আমি কোনো দোকান বসাই নি। আমি নিজেও চাই এখানে কোনো দোকান না বসুক। কিন্তু আমি যতটুকু শুনেছি টিএইচ তোফা নামের এক ব্যক্তি এই দোকানগুলো বসিয়েছেন। আমি অনেক চেষ্টা করেছে দোকানগুলো সরিয়ে দেওয়ার। আর এখানে দোকান বসিয়ে টাকা তোলার প্রশ্নই উঠে না।
একই অভিযোগ স্বীকার করে মমতাজ ভিলার মালিক সিদ্দিকুর রহমান বলেন, অন্যসবাই দোকান বসিয়েছে। আমি তা দেখাদেখি ২টি দোকান বসিয়েছি। এটা আমার অপরাধ হয়েছে তা আমি নিজেও বুঝি। আমি মূলত সবার দেখাদেখি দোকান বসিয়েছি।
নুরুল হুদা নামের আরেক বাড়িওয়ালা বলেন, আমি দোকান বসিয়েছি। কিন্তু ওইখান থেকে কোনো অর্থ আদায় করি না। চাইলে এ বিষয়ে তদন্ত করা হতে পারে। আর এখানে দীর্ঘদিন ধরেই দোকান ছিল।
নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাফর সাদিক চৌধুরী বলেন, এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহিনূর আলম বলেন, চাঁদাবাজির বিষয়টি আমাদের জানা নেই। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
নারায়ণগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শুভ আহমেদ বলেন, এ বিষয়ে আমি অবগত ছিলাম না। তবে অভিযোগ যেহেতু পেয়েছি তাহলে অবশ্যই ঘটনাস্থলে লোক পাঠানো হবে। ডিএনডি খালপাড় থেকে স্থাপনা সরিয়ে নেওয়ার জন্য প্রথমে আমরা একাধিকবার তাদের নোটিশ পাঠাবো।
যদি তারা কথা না শোনেন তাহলে আইন অনুযায়ী উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে। খাল দখলের বিরুদ্ধে আমরা সবসময় জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করছি।
নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক (ডিসি) জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে আমরা এরই মধ্যে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন খাল পরিষ্কার করা শুরু করেছি। ডিএনডি খালসহ যেকোনো খাল এভাবে দখল হয়ে থাকলে দখলকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমি শিগগিরই এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছি।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে ৮ ডিসেম্বর ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা (ডিএনডি) পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নয়নে ডিএনডি প্রকল্প হাতে নেয় পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। শুরুতে প্রকল্পের বাজেট ৫৫৮ কোটি টাকা ধরা হলেও তা বাস্তবায়নে সবমোট ১৩০০ কোটি টাকা খরচ হয়।
২০২৫ সালের জুন মাসে এই প্রকল্পের কাজ শেষ করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। সেনাবাহিনীর প্রকল্প বাস্তবায়ন করাকালে তখন খালটি দখল না হলেও প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার পর পরই হীরাঝিল এলাকার কয়েকজন বাড়িওয়ালা ডিএনডি খাল দখল করে দোকান বসানো শুরু করে।