আগামী বছর থেকে অনলাইনে রিটার্ন জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক হবে
Published: 23rd, February 2025 GMT
আগামী অর্থবছর থেকে অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করা হবে বলে জানিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান।
আবদুর রহমান খান বলেছেন, চলতি অর্থবছরে পরীক্ষামূলকভাবে কিছু খাতের জন্য অনলাইনে রিটার্ন দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল। আগামী অর্থবছর থেকে সবার জন্য এটি বাধ্যতামূলক করা হবে। ব্যক্তিশ্রেণির আয়করের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানের (করপোরেট কর) রিটার্নও অনলাইনে দেওয়া যাবে।
আজ রোববার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মিলনায়তনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন সংস্থাটির চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন।
অনুষ্ঠানে এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান জানান, ভালো (কমপ্লায়েন্ট) করদাতারা যেন অকারণ হয়রানির শিকার না হন, সেই চেষ্টা করছে এনবিআর। এ জন্য আয়কর নথির নিরীক্ষার ভিত্তি হবে ঝুঁকিভিত্তিক (রিস্কবেজড) ও স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে। এটা করতে অনলাইনে রিটার্ন নেওয়া লাগবে।
আবদুর রহমান খান বলেন, ‘চলতি অর্থবছরে পরীক্ষামূলকভাবে কিছু খাতের জন্য অনলাইনে আয়কর রিটার্ন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এতে বেশ ভালো সাড়া পেয়েছি। এখন এর অসুবিধাগুলো চিহ্নিত করা হবে। এক-দুই সপ্তাহের মধ্যে শুধু অনলাইন জমায় কী ধরনের সমস্যা হয়েছে, তা জানার জন্য একটা সেমিনার করা হবে; যাতে আগামী অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে আমরা আমাদের অনলাইন রিটার্নকে পুরোপুরি বাধ্যতামূলক করে দিতে পারি।’
আবদুর রহমান খান আরও বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানের (করপোরেট কর) রিটার্নকেও স্বয়ংক্রিয় করার কাজ করছে এনবিআর। আশা করি আগামী বছর থেকে আপনারা করপোরেট রিটার্নও অনলাইনে দিতে পারবেন।’
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, গতবারের চেয়ে এ বছর তিন গুণ বেশি করদাতা অনলাইনে রিটার্ন জমা দিয়েছেন। এ বছর নির্ধারিত সময়ে ১৪ লাখ ৩১ হাজার ৩৫৪ জন করদাতা নিজেদের আয়-ব্যয়ের খবর জানিয়ে অনলাইনে রিটার্ন দেন। গতবার এই সংখ্যা ছিল ৫ লাখ ১৮ হাজার ৯০১। এ বছর অনলাইনে রিটার্নকারীদের কাছ থেকে মাত্র ১৫৮ কোটি টাকা পাওয়া গেছে। কর কর্মকর্তারা জানান, অনলাইনে রিটার্ন জমা দেওয়া বেশির ভাগই শূন্য রিটার্ন জমা দিয়েছেন।
এবারের মৌসুমে কিছু খাতে অনলাইনে জমা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। যেমন ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর সিটি করপোরেশন এলাকার সরকারি কর্মকর্তা, তফসিল ব্যাংক, মুঠোফোন অপারেটর কোম্পানির কর্মকর্তাসহ বেশ কয়েকটি বহুজাতিক কোম্পানির কর্মকর্তাদের অনলাইনে রিটার্ন দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। বহুজাতিক কোম্পানিগুলো হলো ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেড, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ কোম্পানি লিমিটেড, ম্যারিকো বাংলাদেশ লিমিটেড, বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ লিমিটেড, বাটা সু কোম্পানি (বাংলাদেশ) লিমিটেড ও নেসলে বাংলাদেশ পিএলসি।
এ বছর সব মিলিয়ে ৩৯ লাখ ৭৩ হাজার ৭৫৭ জন করদাতা রিটার্ন দিয়েছেন। এনবিআর কর পেয়েছে মাত্র ৩ হাজার ১৪৪ কোটি টাকা। গতবারের চেয়ে এবার রিটার্ন জমাকারীর সংখ্যা ১ লাখের মতো কমেছে।
বর্তমানে ১ কোটি ১১ লাখ কর শনাক্তকরণ নম্বর বা টিআইএনধারী আছেন। প্রতিবছর গড়ে ৪০ লাখ রিটার্ন জমা পড়ে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন আবদ র রহম ন খ আবদ র রহম ন খ ন বছর থ ক র জন য করপ র এ বছর করদ ত
এছাড়াও পড়ুন:
সুদ পরিশোধে ব্যয় বাড়ছে
সুদ পরিশোধে সরকারের ব্যয় বাড়ছে। এ ব্যয় বহন করতে রীতিমত হিমশিম খেতে হচ্ছে। বাজেটে সরকারের সুদ পরিশোধ সংক্রান্ত পূর্বাভাসে দেখা যাচ্ছে, আগামী বছরগুলোতে সুদ ব্যয় ক্রমাগত বৃদ্ধি পাবে।
পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের প্রায় ১৫ ভাগ অর্থই সুদ খাতে খরচ করতে হচ্ছে এখন। এ পরিস্থিতিতে আগামী তিন অর্থবছরে সুদ খাতেই ব্যয় করতে হবে চার লাখ ১০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। পাঁচ অর্থবছরের ব্যবধানে সুদ ব্যয় বাড়ছে ৩৩ শতাংশ। এর মধ্যে শতাংশের হিসাবে বৈদেশিক ঋণের সুদ ব্যয় সবচেয়ে বেশি বাড়বে।
অর্থ বিভাগের করা ‘মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতি-২০২৫-২০২৬ থেকে ২০২৭-২০২৮’ এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয় হয়েছিল এক লাখ ১৪ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ খাতে সুদ ব্যয় ছিল ৯৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকা এবং বিদেশি ঋণের সুদ ব্যয় গেছে ১৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা।
চলতি ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে (যা চলতি জুনের ৩০ তারিখে শেষ হয়ে যাবে) মূল বাজেটে সুদ খাতে ব্যয় বরাদ্দ ছিল এক লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু বছর শেষে এই সীমায় সুদ ব্যয় ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। ফলে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে ব্যয় বাড়িয়ে ধরা হয়েছে এক লাখ ২১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এ হিসাবের মধ্যে ছিল অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ ব্যয় ৯৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা এবং বিদেশী ঋণের ২২ হাজার কোটি টাকা।
একইভাবে আগামী তিন অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয়েরও একটি প্রক্ষেপণ করেছে অর্থ বিভাগ। এই হিসেবে দেখা যায় আগামী ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয় হবে এক লাখ ২২ হাজার কোটি টাকা (অভ্যন্তরীণ এক লাখ কোটি টাকা , বিদেশি ঋণের সুদ ব্যয় ২২ হাজার কোটি টাকা)। একইভাবে এর পরের অর্থবছর ২০২৬-২০২৭ অর্থবছরে একলাখ ৩৬ হাজার ২০০ কোটি টাকা(অভ্যন্তরীণ এক লাখ ১২ হাজার কোটি টাকা এবং বিদেশি ঋণের ২৪ হাজার ২০০ কোটি টাকা) এবং ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয়ের প্রক্ষেপণ করা হয়েছে ১ লাখ ৫২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।
অর্থ বিভাগ থেকে বলা হয়েছে, মোট সুদ ব্যয়ের সিংহভাগই অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ পরিশোধ। অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ পরিশোধ ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ৯৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে এক লাখ ২৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকা গিয়ে পৌঁছাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু মোট বাজেটের অনুপাতে অভ্যন্তরীণ সুদ পরিশোধের হার ২০২৩ -২০২৪ অর্থবছরে ১৬ দশমিক ২৯ শতাংশ থেকে কমে ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে ১২ দশমিক ৭৫ শতাংশে হ্রাস পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যদিও বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধ মোট সুদ ব্যয়ের তুলনায় কম, তবে এটি উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। ফলে এটি ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ১৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে ২৭ হাজার ১০০ কোটি টাকায় উন্নীত হতে পারে। মোট বাজেটের অনুপাতে বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধ এ সময়কালে ২ দশমিক ৪৭ শতাংশ থেকে বেড়ে ২ দশমিক ৭৬ শতাংশে উন্নীত হতে পারে।
বিদেশি ঋণের সুদ ব্যয় নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে অর্থ বিভাগ থেকে বলা হয়েছে, বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধের কার্যকর ব্যবস্থাপনা শুধু আর্থিক শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্যই নয়, বরং এটি সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রক্ষা, টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা, আন্তর্জাতিক ঋণমান বজায় রাখা এবং ভবিষ্যতের উন্নয়ন সম্ভাবনা সুরক্ষিত রাখার জন্য অপরিহার্য।