নিউজপ্রিন্টের শুল্ক ও ভ্যাট কমানোর দাবি নোয়াবের
Published: 23rd, February 2025 GMT
নিউজপ্রিন্ট আমদানিতে শুল্ক ও ভ্যাট কমানোর দাবি জানিয়েছে সংবাদপত্র মালিকদের সংগঠন নোয়াব।
রোববার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সঙ্গে প্রাক–বাজেট বৈঠকে নোয়াব জানিয়েছে, বেশ কয়েক বছর সরকার তাদের কোনো প্রস্তাব বিবেচনায় নেয় নি। সংবাদপত্র শিল্প কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। অনেক বেশি হারে শুল্ক, ভ্যাট, অগ্রিম আয়কর এবং করপোরেট কর এ শিল্পের বিকাশে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রোববার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এনবিআরের সম্মেলন কক্ষে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে সবাপতিত্ব করেন এনবিআর চেয়ারম্যান মো.
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, কর–জিডিপি অনুপাত বাড়াতে সচেতনতামূলক সংবাদ প্রচার করছে গণমাধ্যম। ভবিষ্যতে গণমাধ্যম আরও ভূমিকা রাখবে বলে তিনি বিশ্বাস করেন। তিনি বলেন, এসডিজির লক্ষমাত্রা অর্জনের জন্য রাজস্ব আয় বাড়াতে হবে। তাই রাষ্ট্রের উপকার হবে সেই সিদ্ধান্ত থেকে পিছপা হবে না এনবিআর। এতে যদি ব্যক্তি বা এনবিআরেরও ক্ষতি হয়, হোক। সবক্ষেত্রে নৈতিকতা দিয়ে হবে না আইনেরও প্রয়োগ করতে হবে।
লিখিত প্রস্তাবে নোয়াব সভাপতি বলেন, সাম্প্রতিক কালে সংবাদপত্র শিল্প একটা কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। একদিকে বিভিন্ন ধরণের ডিজিটাল মাধ্যমের বহি:প্রকাশ এবং অন্যান্য মাধ্যমের অপ্রতিরোধ্য অগ্রগতি যেমন সংবাদপত্র শিল্পকে বিরূপ পরিস্থিতির মুখোমুখি করেছে, তেমন বিভিন্ন শুল্ক, ভ্যাট, কর্পোরেট ট্যাক্স এই শিল্পের বিকাশে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া বিশ্ব অর্থনীতির বর্তমান অবস্থা বিশেষ করে ডলারের দর বৃদ্ধি এ শিল্পকে নতজানু করে ফেলছে।
নোয়াব সভাপতি বলেন, কয়েক বছর আগে এক টন নিউজপ্রিন্টের দাম ছিল ৬০০ ডলারের কম, এখন ৭০০ ডলার ছাড়িয়ে গেছে। এর অন্যতম প্রধান কারণ টাকা-ডলারের বিনিময় হার। বর্তমানে নিউজপ্রিন্টের আমদানি শুল্ক ৫ শতাংশ হলেও এর সাথে ১৫ শতাংশ ভ্যাট, অগ্রিম আয়কর ও পরিবহন বীমা সহ ল্যান্ডেড ব্যয় দাঁড়ায় প্রায় ৩০ শতাংশ।
নিউজপ্রিন্টের আমদানি শুল্ক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২ শতাংশ এবং ভ্যাট ১৫ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব দিয়েছে নোয়াব। এছাড়া সংবাদপত্র শিল্পকে সেবামূলক শিল্প হিসেবে বিবেচনা করে কর্পোরেট কর সর্বনিম্ন নির্ধারণ অথবা অবলোপন করার অনুরোধ করেছে। লিখিত প্রস্তাবে বলা হয়, সরকার সংবাদপত্রকে সেবা শিল্প হিসেবে ঘোষণা করেছে। সাংবাদিক বাদেও মুদ্রণ, বিপণন, বিতরণ ও বিজ্ঞাপন সহ অগণিত মানুষ এ শিল্পের ওপর নির্ভরশীল। এর অব্যাহত অগ্রগতি ও পরিচালনার জন্য শুল্ক ও কর নীতি প্রয়োগের বিপুল সংস্কার তথা সহায়ক ভূমিকা প্রয়োজন।
নোয়াব সভাপতি বলেন, বিগত বেশ কয়েক বছর সরকার সংবাদপত্র শিল্প বিকাশে এ খাতের উদ্যোক্তাদের কোনো প্রস্তাব বা প্রয়োজনীয়তার কথা বিবেচনায় নেয়নি। এখন যেহেতু রাজনৈতিক সরকার নেই, তাই আগামী বাজেটে প্রস্তাবিত বিষয়গুলো বিবেচনায় নেওয়ার জন্য বিশেষ অনুরোধ করেন তিনি।
নোয়াবের সাবেক সভাপতি ও প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান বলেন, বিগত কয়েক বছরের তুলনায় এই মূহুর্তে সংবাদপত্র শিল্প সবচেয়ে গভীর সংকটে পড়েছে। এর প্রধান কারণ একদিকে সংবাদপত্রের পাঠক কমেছে, অন্যদিকে ভিডিও-অডিও মাধ্যমের প্রসার বাড়ছে। তিনি বলেন, সংবাদপত্রের মূল কাঁচামাল নিউজপ্রিন্ট । এক সময় প্রতি টন নিউজপ্রিন্টের দর ছিল ৫০০ থেকে ৬০০ ডলার। এখন দাম বেড়ে ৭০০ ডলার ছাড়িয়েছে। কালির দামও বেড়েছে। এর সঙ্গে ডলারের দাম বাড়ার কারণে বাড়তি খরচ হচ্ছে। সংবাদপত্রের মূল আয় বিজ্ঞাপন। নানা কারণে এখন ব্যক্তিখাতের বিকাশ কিছুটা হলেও আটকে আছে। সরকারি বিজ্ঞাপন কিছু পাওয়া গেলেও বছরের পর বছর সেগুলোর বিল আটকে থাকে।
তিনি বলেন, গত ১৬ বছর সংবাদপত্র শিল্প কোনো সাহায্য-সহযোগিতা পায়নি। এমন কি এ শিল্পের কারো সাথে কোনো বৈঠকও করা হতো না। কখনও আলোচনা করা হলেও সরকার একপেশে সিদ্ধান্ত দিতো। ফলে এ শিল্প ভালো কিছু পায়নি। বরং সংবাদপত্র শিল্প আক্রমণের শিকার হয়েছে। মামলা-মোকাদ্দমা, চাপ এবং ভয়-ভীতি দেখানো হয়েছে। বিগত সরকার অনেক পত্রিকার বিজ্ঞাপন বন্ধ করে দিয়েছে। শুধু সরকারি নয়, বড় বড় ব্যক্তিখাতের বিজ্ঞাপনও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। ফলে সামগ্রিকভাবে এ খাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এনবিআরকে উদ্দেশ করে মতিউর রহমান বলেন, সংবাদপত্র একটা রুগ্ন শিল্প। পোশাক শিল্পে করপোরেট কর ১২ শতাংশ। অথচ সংবাদপত্রে শিল্পে সাড়ে ২৭ শতাংশ। কয়টা পত্রিকা লাভ করে? এনবিআরের কাছে সব ফাইলপত্র যায়। এনবিআর সব কিছুই জানে। তাই এ খাতে করপোরেট কর না রাখলেও হয়। আর যদি রাখতেই হয় তাহলে যৌক্তিক হওয়া উচিত। ৫ বা ১০ শতাংশ করা উচিত। যারা সৎভাবে কর দিতে চায় তাদের জন্য বর্তমান করপোরটে করহার জুলুম।
ফাইন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের সম্পাদক শামসুল হক জাহিদ বলেন, কয়েকদিন আগে নিউজপ্রিন্ট আমদানি করেছেন সাড়ে ৭শ ডলারে। কিন্তু এনবিআরে কাস্টমসে নির্ধারিত থাকে ৮৪০ বা ৮৫০ ডলার। ফলে সাড়ে ৭শ ডলারে আমদানি করলেও ট্যারিফ ভ্যালু অনুযাযী শুল্ক দিতে হয়েছে, যা অযৌক্তিক।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স ব দপত র শ ল প প র ট কর র জন য বছর স আমদ ন করপ র সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
আয়কর রিটার্নে ভুল হলে কীভাবে ঠিক করবেন
বার্ষিক আয়কর বিবরণী বা রিটার্ন জমায় ইচ্ছায় হোক আর অনিচ্ছায় হোক, ভুল হতেই পারে। করের হিসাবেই বেশি ভুল হয়। কর রেয়াতের হিসাবেও ভুল করেন অনেক করদাতা। এ ছাড়া করদাতারা এমনিতেই আয়কর নিয়ে ভয় ও শঙ্কায় থাকেন।
যদি কোনো কারণে রিটার্ন ভুল হয়ে যায়, তাহলে আপনার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়বে না। আপনি রিটার্ন জমার পরও তা সংশোধন করতে পারবেন। দুশ্চিন্তার কারণ নেই।
এবার দেখা যাক, কীভাবে রিটার্নের ভুল সংশোধন করবেন।
তিন ভুল সংশোধন করা যাবে
রিটার্নে তিন ধরনের ভুল সংশোধন করা যাবে। রিটার্ন দাখিলের পর যদি করদাতার কাছে প্রতীয়মান হয় যে তাঁর প্রদেয় কর সঠিকভাবে পরিগণিত হয়নি বা সঠিক অঙ্কে পরিশোধিত হয়নি, তাহলে তিনি সংশোধিত রিটার্ন দাখিল করতে পারবেন। যেসব ভুল সংশোধন করা যাবে, তা হলো—১. প্রদর্শিত আয়, ২. দাবি করা কর অব্যাহতি বা ক্রেডিট ও ৩. অন্য যেকোনো যৌক্তিক কারণে ভুল।
যাঁরা ভুল সংশোধন করতে পারবেন না
রিটার্নে তিন ধরনের কারণে ভুল সংশোধন করা যাবে না। এগুলো হলো—১. রিটার্ন দাখিল করার তারিখ থেকে ১৮০ দিন শেষ হওয়ার পর, ২. সংশোধিত রিটার্ন প্রথমবার দাখিলের পর ও ৩. মূল রিটার্নটি নিরীক্ষার জন্য নির্বাচিত হওয়ার পর।
অনলাইনে সংশোধিত রিটার্ন
করদাতাদের জন্য অনলাইনে সংশোধিত রিটার্ন জমার সুবিধা চালু করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এ জন্য ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে সংশোধন অপশন ব্যবহার করতে হবে। সংশোধনী রিটার্নে যদি করের পরিমাণ বাড়ে, তাহলে নিয়ম অনুসারে বাড়তি করসহ জরিমানা দিতে হবে।
যেসব করদাতা অনলাইনে মূল আয়কর রিটার্ন দাখিলের পর ভুলত্রুটির কারণে অনলাইনে সংশোধিত রিটার্ন দাখিল করতে চান, তাঁদের জন্য অনলাইনে সংশোধিত আয়কর রিটার্ন দাখিলের ব্যবস্থা চালু আছে। যাঁরা সংশোধন অপশন ব্যবহারের জন্য অনলাইনে প্রবেশ করবেন, তাঁদের অবশ্যই সংশোধিত রিটার্ন দাখিল করতে হবে।
আয়কর দিবস–পরবর্তী সময়েও বছরব্যাপী অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল করার সুবিধাও চালু আছে।
সরাসরি রিটার্ন দাখিল
আয়কর আইনে কর কার্যালয়ে গিয়েও ভুল সংশোধনী রিটার্ন দেওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে। সর্বজনীন স্বনির্ধারণী পদ্ধতিতে কোনো করদাতা রিটার্ন দেওয়ার পর যদি দেখেন যে অনিচ্ছাকৃত ভুলে রিটার্নে কম আয় দেখিয়েছেন, কম কর পরিশোধ করেছেন কিংবা বেশি কর রেয়াত, কর অব্যাহতি বা অন্য কোনো কারণে কম কর পরিশোধ করেছেন। হিসাবের ভুলেও এমন হতে পারে। তাহলে সংশ্লিষ্ট উপকর কমিশনারের কাছে এই রিটার্ন জমা দিতে হয়।
আপনি ভুল সংশোধনী রিটার্ন জমার পর উপকর কমিশনার যদি সন্তুষ্ট হন যে সব শর্ত পূরণ করা হয়েছে, তাহলে তিনি রিটার্নটি গ্রহণ করবেন। প্রাপ্তি স্বীকার রসিদ দেবেন।