যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া শক্তিশালী করতে বাংলাদেশের কোন সংস্থা ২৯ মিলিয়ন ডলারের (প্রায় ৩৫০ কোটি টাকা) অর্থায়নের জন্য নির্বাচিত হয়েছিল, তা নিয়ে দেশে–বিদেশে আলোচনা চলছে। এ ক্ষেত্রে ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল (ডিআই) নামের যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক

এক বেসরকারি সাহায্য সংস্থার (এনজিও) নাম এসেছে। তবে ডিআইয়ের জন্য এই খাতে চূড়ান্তভাবে ২৯ মিলিয়ন ডলার অনুমোদন হয়েছিল কি না, নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে বাংলাদেশে কোনো বেসরকারি সংস্থার ২৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অনুদান পাওয়া বা ছাড়ের তথ্য পায়নি এনজিও-বিষয়ক ব্যুরো।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিসর শক্তিশালীকরণের (স্ট্রেনদেনিং পলিটিক্যাল ল্যান্ডস্কেপ ইন বাংলাদেশ–এসপিএল) জন্য এই আর্থিক সহায়তা দেওয়ার কথা বলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

বাংলাদেশে সক্রিয় বেসরকারি সাহায্য সংস্থার (এনজিও) বৈদেশিক অনুদান ছাড় করে থাকে এনজিও–বিষয়ক ব্যুরো। ট্রাম্প ওই বক্তব্যের পর গতকাল রোববার দিনভর এনজিও–বিষয়ক ব্যুরো কর্তৃপক্ষ যুক্তরাষ্ট্রের অনুদান যেসব এনজিও পেয়ে থাকে, তাদের তহবিল পর্যালোচনা করে।

এনজিও ব্যুরো সূত্রে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (ইউএসএআইডি) মাধ্যমে বাংলাদেশের ৭৬টি এনজিও অনুদান পায়। সে তালিকা পর্যালোচনা করে গত সাত বছরে বাংলাদেশে কোনো বেসরকারি সংস্থার ২৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অনুদান পাওয়া বা ছাড়ের তথ্য পাওয়া যায়নি।

এনজিও–বিষয়ক ব্যুরোর মহাপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) আনোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের দেওয়া তথ্যের আলোকে আমরা দেখেছি ওই অঙ্কের টাকা বাংলাদেশের কোনো এনজিও পায়নি। সমপরিমাণ টাকা ছাড় হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের অনুদান পাওয়া ৭৬টি এনজিওর তহবিল পর্যালোচনা করে ওই অঙ্কের টাকা ছাড়ের অস্তিত্ব মেলেনি। বিষয়টি সরকারের উচ্চতর মহলে জানানো হয়েছে।’

এদিকে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সূত্রের বরাত দিয়ে একাধিক কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, ইউএসএআইডি বাংলাদেশে সাম্প্রতিক যেসব প্রকল্প পরিচালনা করছে, তার অন্যতম ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের জন্য নির্ধারিত এসপিএল।

ইআরডির গত বছরের ডিসেম্বরের এক পরিসংখ্যানের উল্লেখ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক পরিসর শক্তিশালী করার লক্ষ্য নিয়ে ১৭ জেলায় ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। চুক্তির মেয়াদ ২০২৪ সালের নভেম্বরে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা আরও ১০ মাস বাড়ানো হয়। অর্থাৎ ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের প্রকল্পটি চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে শেষ হওয়ার কথা।

ডেভেলপমেন্ট অবজেকটিভ গ্র্যান্ট অ্যাগ্রিমেন্টের (ডিওএজি) মাধ্যমে বাংলাদেশে প্রতিবছর গড়ে ২০ কোটি (২০০ মিলিয়ন) ডলার অনুদান দিয়ে থাকে ইউএসএআইডি। এই অনুদানটি আসে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ইআরডির মাধ্যমে। জানা গেছে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষিত অঙ্কের (২৯ মিলিয়ন ডলার) কোনো অনুদান ইআরডির মাধ্যমে আসেনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইআরডির যুক্তরাষ্ট্র শাখার অতিরিক্ত সচিব মো.

আবু সাঈদ প্রথম আলোকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া আর্থিক সহায়তায় এমন অঙ্কের (২৯ মিলিয়ন ডলার) বিষয়ে তাঁদের জানা নেই।

প্রসঙ্গত, ১৫ ফেব্রুয়ারি ডিওএজি তাদের ভেরিফায়েড এক্স হ্যান্ডলে জানিয়েছিল, বাংলাদেশ, ভারতসহ বিভিন্ন দেশে নানা প্রকল্পে অর্থায়ন বাতিল করেছে যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশে রাজনৈতিক পরিস্থিতি শক্তিশালী করার লক্ষ্যে নেওয়া প্রকল্প ‘স্ট্রেনদেনিং পলিটিক্যাল ল্যান্ডস্কেপ ইন বাংলাদেশ’-এ ২৯ মিলিয়ন (২ কোটি ৯০ লাখ ডলার) অর্থায়ন বাতিল করা হয়েছে।

ডিওএজি ওই বক্তব্যের পর গত শুক্রবার ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, বাংলাদেশের সার্বিক রাজনীতি শক্তিশালী করতে ২৯ মিলিয়ন ডলার এমন এক সংস্থার কাছে গেছে, যে সংস্থার নাম আগে কেউ শোনেনি। এতে দুজন মাত্র ব্যক্তি কাজ করেন। ছোট একটি সংস্থা, এখান থেকে ১০ হাজার ডলার, সেখান থেকে ১০ হাজার ডলার পায়। সেখানে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কাছ থেকে পেয়েছে ২৯ মিলিয়ন ডলার।

ডোনাল্ড ট্রাম্প সর্বশেষ গত শনিবারও যুক্তরাষ্ট্রে একটি অনুষ্ঠানে এই ২৯ মিলিয়ন ডলারের কথা বলেন। তাঁর দাবি, এই অর্থ বাংলাদেশে দেওয়া হয়েছে একজন ‘উগ্র বাম কমিউনিস্টকে’ ভোট দেওয়ার জন্য।

প্রসঙ্গত, বাইডেন প্রশাসনকে সমালোচনার জন্য ট্রাম্প উগ্র বাম কমিউনিস্ট শব্দবন্ধ ব্যবহার করে থাকেন।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, দুজন ব্যক্তি পরিচালিত প্রতিষ্ঠানে এত বিশাল অঙ্কের টাকা ছাড় হওয়ার সুযোগ নেই। বিদেশি অনুদান বাংলাদেশে আসতে যে আইনি কাঠামো রয়েছে, তা খুবই শক্তিশালী। বিশ্বজুড়ে ইউএসএআইডির তহবিল বন্ধের বৈধতা দিতে ট্রাম্প এমন যুক্তি তুলে ধরেছেন বলে মনে করেন তিনি।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: অন দ ন প র অন দ ন প রকল প ব সরক র ইআরড র র জন য ক পর স পর চ ল

এছাড়াও পড়ুন:

জুলাই–সেপ্টেম্বরে ঋণছাড়ে এগিয়ে বিশ্বব্যাংক ও রাশিয়া, কোনো অর্থ দেয়নি চীন

চলতি অর্থবছরে বিদেশি ঋণছাড়ে পাল্লা দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক ও রাশিয়া। অর্থবছরের তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) সবচেয়ে বেশি ঋণ ছাড় করেছে বিশ্বব্যাংক। এই সংস্থাটি দিয়েছে ৩২ কোটি ২২ লাখ ডলার।

এরপরেই আছে রাশিয়া। দেশটি ওই তিন মাসে ৩১ কোটি ৫৩ লাখ ডলার দিয়েছে। রাশিয়া মূলত পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পে ঋণ দিচ্ছে। তবে চীন গত তিন মাসে কোনো অর্থ দেয়নি।

গত বৃহস্পতিবার অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) জুলাই-সেপ্টেম্বর (প্রথম প্রান্তিক) মাসের বিদেশি ঋণ পরিস্থিতির হালনাগাদ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তাতে এ তথ্য দেওয়া হয়েছে।

এবার দেখা যাক, তিন মাসে কারা কত দিল। বিশ্বব্যাংক ও রাশিয়ার পরে তৃতীয় স্থানে আছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। এডিবি ছাড় করেছে ১৮ কোটি ৭৭ লাখ ডলার। এ ছাড়া জাপান ও ভারত দিয়েছে যথাক্রমে ৪ কোটি ডলার ও ৬ কোটি ডলার।

ইআরডির হিসাব অনুসারে, ঋণ শোধ বেড়েছে। পাশাপাশি অর্থছাড় ও প্রতিশ্রুতিও বেড়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) প্রায় ১১৫ কোটি ডলার দিয়েছে উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা ও দেশ। অন্যদিকে একই সময়ে আগে নেওয়া ঋণের সুদ ও আসল বাবদ প্রায় ১২৮ কোটি ডলার পরিশোধ করতে হয়েছে বাংলাদেশকে।

এদিকে ঋণ পরিশোধের পাল্লা ভারী হচ্ছে। চলতি অর্থবছরে জুলাই-সেপ্টেম্বরে পরিশোধিত ঋণের মধ্যে ৮২ কোটি ডলার আসল এবং ৪৬ কোটি ডলারের বেশি সুদ বাবদ পরিশোধ করা হয়েছে। আগের বছরের একই সময়ে বিদেশি ঋণের সুদাসল বাবদ সরকারকে প্রায় ১১২ কোটি ডলার পরিশোধ করতে হয়েছিল। জুলাই-সেপ্টেম্বর মাসে বিদেশি ঋণের প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে মাত্র ৯১ কোটি ডলারের।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জুলাই–সেপ্টেম্বরে ঋণছাড়ে এগিয়ে বিশ্বব্যাংক ও রাশিয়া, কোনো অর্থ দেয়নি চীন