ন্যাটোয় ইউক্রেনের সদস্যপদের বিনিময়ে প্রেসিডেন্ট পদ ছাড়তে রাজি জেলেনস্কি
Published: 24th, February 2025 GMT
ইউক্রেন পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্য পদ পেলে দেশটির প্রেসিডেন্ট পদ ছাড়তে আগ্রহী ভলোদিমির জেলেনস্কি। গতকাল রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেছেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জেলেনস্কিকে একজন ‘স্বৈরশাসক’ আখ্যায়িত করার পর তাঁর এমন আগ্রহের কথা সামনে এল।
সংবাদ সম্মেলনে জেলেনস্কি বলেন, ‘আপনারা যদি আমাকে এই চেয়ার থেকে সরে যেতে বলেন, তা করতে আমি প্রস্তুত রয়েছি। আর ন্যাটোয় ইউক্রেনের সদস্যপদের বিনিময়েও আমি তা করতে পারি।’ ট্রাম্পের মন্তব্যের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘(তাঁর ওই মন্তব্যের কারণে) আমি বিরক্ত হয়নি, তবে একজন স্বৈরাচারী শাসক বিরক্ত হতেন।’
২০১৯ সালে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট হিসেবে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত হন ভলোদিমির জেলেনস্কি। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়ার অভিযান শুরুর পর ইউক্রেনে সামরিক শাসন জারি করা হয়। বাতিল করা হয় নির্বাচন। জেলেনস্কি বলেন, বর্তমানে তিনি ইউক্রেনের নিরাপত্তার দিকে নজর দিচ্ছেন। এক দশক ধরে প্রেসিডেন্ট থাকা তাঁর ‘স্বপ্ন’ নয়।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতায় বসার পর থেকেই ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে বিভিন্ন তৎপরতা শুরু করেছেন ট্রাম্প। সম্প্রতি সৌদি আরবে রাশিয়ার সঙ্গে বৈঠক করেছেন তাঁর প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা। তবে ওই আলোচনায় ইউক্রেনকে যুক্ত করা হয়নি। দেশটির প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিকে নিয়ে বিভিন্ন আক্রমণাত্মক কথা বলেছেন ট্রাম্প।
আরও পড়ুনরাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইউক্রেনকে দেওয়া অর্থ ফেরত চান ট্রাম্প২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫এমন পরিস্থিতিতে আজ সোমবার ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে যাওয়ার কথা রয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন দেশের নেতাদের। সেখানে তাঁরা ইউক্রেনকে সমর্থন এবং দেশটির নিরাপত্তার নিশ্চয়তা নিয়ে কথা বলবেন। জেলেনস্কি বলেছেন, ওই আলোচনায় ইউক্রেনের ন্যাটোতে যোগদানের বিষয়টি তোলা হবে। তবে এ আলোচনা কত দূর এগোবে, তা জানেন না তিনি।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে জেলেনস্কি বলেন, তিনি ট্রাম্পকে ইউক্রেনের একজন অংশীদার হিসেবে দেখতে চান। তিনি চান কিয়েভ ও মস্কোর মধ্যে একজন মধ্যস্থতাকারীর চেয়ে বড় ভূমিকা রাখুক মার্কিন প্রেসিডেন্ট। জেলেনস্কি বলেন, ‘আমি আসলেই চাই, এটা মধ্যস্থতার চেয়ে বেশি কিছু হোক.
সম্প্রতি ইউক্রেনকে একটি খনিজ চুক্তি করার প্রস্তাব দেন ট্রাম্প। ওই চুক্তি অনুযায়ী ইউক্রেনের বিরল খনিজ সম্পদ যুক্তরাষ্ট্রকে সরবরাহ করবে কিয়েভ। সংবাদ সম্মেলনে এ প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে জেলেনস্কি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমাদের অগ্রগতি হয়েছে। আমরা (খনিজ সম্পদ) দিতে প্রস্তুত।’ তবে এই চুক্তির আগে রাশিয়া যুদ্ধ থামাবে—যুক্তরাষ্ট্রের কাছে এমন নিশ্চয়তা চান তিনি।
আরও পড়ুনযুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান উল্টে দিয়ে ট্রাম্পের মুখে রাশিয়ার প্রতিধ্বনি২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য় ইউক র ন ইউক র ন র
এছাড়াও পড়ুন:
৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে
বান্দরবানের থানচি উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার মানুষের একমাত্র ভরসার জায়গা ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সংকটে এই হাসপাতাল কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। বর্তমানে পুরো হাসপাতাল চালাচ্ছেন মাত্র একজন চিকিৎসক। গত পাঁচবছরে চিকিৎসাধীন ও রেফার্ড করা ২৪ জন রোগী মারা গেছেন।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, ১৯৯৫ সালে ৩১ শয্যার থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যাত্রা শুরু করে। পরে এটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১২ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র দুইজন। তাদের মধ্যে একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন। এ কারণে রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ১৮ জন নার্স পদে রয়েছেন মাত্র চারজন। চারজন মিডওয়াইফ থাকার কথা, নেই একজনও।
আরো পড়ুন:
ফরিদপুরে পাগলা ঘোড়ার কামড়ে আহত ২০
বক্তব্য দেওয়ার সময় অসুস্থ হয়ে পড়লেন কাদের সিদ্দিকী
প্রাথমিক থেকে শুরু করে জরুরি চিকিৎসার জন্য এই হাসপাতালে ছুটে যান পাহাড়ি ও বাঙালিরা। তাদের অভিযোগ, হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা যোগ হয়নি। প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক না থাকায় গর্ভবতী নারী, শিশু ও বৃদ্ধ রোগীরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন।
দুর্গম এলাকার রোগীরা অনেক সময় নদীপথ কিংবা পাহাড়ি রাস্তা পাড়ি দিয়ে হাসপাতালে এলেও কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা পান না। বরং তাদের বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। অনেক সময় বান্দরবানে যাওয়ার পথে রোগীরা মারা যান। এ কারণে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন তারা।
হাসপাতালের পরিসংখ্যানবীদ পঙ্কজ বড়ুয়া জানান, ২০২০ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত এখানে ভর্তি হয়েছেন ৫ হাজার ১৯৮ জন রোগী। এর মধ্যে ৪৫৬ জনকে রেফার্ড করা হয় বান্দরবান সদর হাসপাতালে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ১৭ জন রোগী।
থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স চালক মংক্যসিং মারমা বলেন, “২০১৯ সালে চাকরিতে যোগদান করার পর থেকে অন্তত সাতজন রেফার্ড করা রোগী মাঝপথে আমার গাড়িতেই মারা গেছেন।”
শৈসাই মং মারমা তিন বছর আগে বিনা চিকিৎসায় তার মাকে মারা যেতে দেখেছেন। তিনি জানান, তার মা শৈমেপ্রু মারমা (৩৪) অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর হঠাৎ তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। রেমাক্রী বাজার থেকে নদীপথে থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান মাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাকে জেলা সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। ভাড়া গাড়িতে জেলা হাসপাতালে যাওয়ার সময় চিম্বুক বারো মাইল এলাকায় তার মা মারা যান।
লেংরু ম্রো নামে চার সন্তানের মা হারিয়েছেন স্বামীকে। তিনি জানান, তার স্বামী রেং য়ুং ম্রো (৪৫) কিডনি জটিলতা নিয়ে থানচি হাসপাতালে যান। সঙ্গে সঙ্গে সেখান থেকে তাকে বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। থানচি থেকে বান্দরবান যাওয়ার মাঝপথে মারা যান তার স্বামী।
স্থানীয় বাসিন্দা মংমে মারমা বলেন, “হাসপাতালে চিকিৎসক, ওষুধ ও যন্ত্রপাতির সংকট দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বদলি হলেও অনেকেই থানচিতে যোগ দেন না, ডিপুটেশনে থেকে যান সদর হাসপাতালে। ফলে এ অঞ্চলের পাহাড়ি ও বাঙালি প্রায় ৩০ হাজার মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।”
রিয়েং ম্রো নামে অপর বাসিন্দা বলেন, “পাহাড়ে বসবাসকারীদের অধিকাংশ গরিব। জেলা সদর হাসপাতালে রোগী নিয়ে যাওয়া ব্যয়বহুল ও কষ্টকর। রেমাক্রি, বড় মোদক, তিন্দু থেকে থানচি সদরে রোগী আনতেই অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। এরপর আবার বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করলে সাধারণ মানুষ কীভাবে চিকিৎসা করাবে?”
থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. মো. ওয়াহিদুজ্জামান মুরাদ বলেন, “বর্তমানে হাসপাতালে আমিসহ দুইজন চিকিৎসক রয়েছেন। একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাধীন। তিন রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ফলে পুরো হাসপাতাল পরিচালনার দায়িত্ব আমাকে একাই সামলাতে হচ্ছে।”
তিনি আরো বলেন, “জনবল ও সরঞ্জাম সংকটের কারণে গুরুতর রোগীদের রেফার্ড করা ছাড়া উপায় থাকে না। দীর্ঘ পথের কারণে অনেকেই জীবিত অবস্থায় সদর হাসপাতালে পৌঁছাতে পারেন না।”
বান্দরবান জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ শাহীন হোসাইন চৌধুরী বলেন, “শুধু বান্দরবান নয়, পুরো তিন পার্বত্য জেলাতেই চিকিৎসক সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। নতুন করে ৪৮তম বিসিএসের ডাক্তার পদায়ন না হওয়া পর্যন্ত এই সংকট পুরোপুরি সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও বিভাগীয় প্রধানকে বিষয়টি চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের আট-দশজন চিকিৎসককে বান্দরবানে বদলি করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”
ঢাকা/মাসুদ