‌‘অন্তহীন বিতর্কযাত্রা: একটি আত্মজীবনীর খসড়া’ বলা যেতে পারে, একটি প্রথাবিরোধী বিতর্ক বিষয়ক বায়োফিকশন। এই ফিকশনের মূল চরিত্র বাংলাদেশের একটি জেলা শহরে বেড়ে ওঠা এক স্বপ্নাতুর কিশোর। শহরের ভেতর দিয়ে বয়ে গেছে ছোট্ট একটা নদী। সেখানে রয়েছে নাগরিক সুযোগ-সুবিধা, একই সাথে আছে গ্রামের সহজিয়া জীবনবোধ। ইলেকট্রিসিটি চলে গেলে অজানা গন্তব্য থেকে আলো হাতে ছুটে আসে অগণিত জোনাকি। শহরটিতে রয়েছে নদীর মতোই বহমান সাংস্কৃতিক জীবন। অনেকটা নিভৃতে, এই শহর কিশোরটিকে স্বপ্ন দেখায়। 

১৯৯০-এর দশকের বাংলাদেশে বিতর্কের যে ধারা জনপ্রিয়তা পায়, তা পরবর্তীকালে ক্রমশই বদলে যেতে থাকে। দেখা যায়, ছোট্ট এক মফস্বল শহর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে কিশোরটি বিতর্কচর্চার বিরাট এক বর্ণিল জগতকে খুঁজে পায়। এবং সে অজস্র স্বপ্নের ভেতর দিয়ে নিজেকেই অতিক্রম করতে থাকে; দেখা পায় দিগন্তরেখার। বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে ছেলেটির প্রেম হয়, জীবনে আসে ঝকঝকে স্বপ্নাচ্ছন্ন এক তরুণী। কিন্তু বিতর্কের নেশা তার ব্যক্তিজীবনকে এক জটিল বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয়। 

এই বায়োফিকশন আসলে নব্বইয়ের দশকে বেড়ে ওঠা বিতর্ক অন্তঃপ্রাণ এক তরুণের প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির গাঁথা। তবে মোটাদাগে এই  স্মৃতিগদ্যের ভেতর দিয়ে ২০২৫ কিংবা অনাগত সময়ের কোন কিশোর বা তরুণ বিতর্কের মৌলিক দর্শনকে জীবনে অনুবাদ করতে সক্ষম হবে। বইটির লেখকের অন্তত এমনটাই প্রত্যাশা। বইটি পাওয়া যাবে এবারের বইমেলার ৪৮০-৪৮২ নম্বর স্টলে।

‘অন্তহীন বিতর্কযাত্রা: একটি আত্মজীবনীর খসড়া’ বইটির লেখক বুলবুল হাসান। তিনি বাংলাদেশ ডিবেট ফেডারেশন ও ঢাকা ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং সোসাইটির সাবেক সভাপতি। ১৯৯০-এর দশকের দ্বিতীয়ার্ধে তিনি আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় ও টেলিভিশন বিতর্কসহ জাতীয় পর্যায়ে একাধিকবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিত্ব করেন, নেতৃত্ব দেন। ২০০০ সালে স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত একুশতম বিশ্ববিতর্ক প্রতিযোগিতায় তিনি বিচারকের দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও লন্ডন স্কুল অব ইকোনোমিক্স (এলএসই) ডিবেটিং সোসাইটির সদস্য ছিলেন তিনি। বিচারক হিসেবে অংশ নিয়েছেন মর্যাদাপূর্ণ কেমব্রিজ আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় বিতর্ক প্রতিযোগিতায়।

বুলবুল হাসান তার দীর্ঘ ও বিস্তৃত অভিজ্ঞতায় বিতর্কের প্রথাগত সাফল্যকে স্পর্শ করেছেন বহুমাত্রিক ব্যঞ্জনায়। কিন্তু ঐ সমস্ত বৈষয়িক প্রাপ্তি কিংবা সফলতার স্বীকৃতিকে কখনোই বড়ো করে দেখতে চান নি তিনি। সর্বাগ্রে প্রাধান্য দিতে চেয়েছেন বিতার্কিকের সামাজিক দায়বদ্ধতার বিষয়টিকে। সে লক্ষ্যে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে, সেই তরুণ বয়সে ছুটে বেড়িয়েছেন প্রান্তিক জনপদে। যে জনগোষ্ঠী সাধারণত থাকে পাদপ্রদীপের আড়ালে, সেই মানুষদেরকে, কিশোর ও তরুণদেরকে নিয়ে তিনি গড়ে তুলতে চেয়েছেন যুক্তিবাদী এক প্রজন্ম। শহুরে তারণ্যের একমুখী ভাবনার বিপরীতে অন্তর্ভুক্তিমূলক বুদ্ধিবৃত্তিক ভাবাবেগকে জাগিয়ে তুলতে চেয়েছেন। 

বিতর্কের ব্যপ্তি বা প্রভাব বলয়কে তিনি গভীরভাবে উপলব্ধি করতে পারতেন। সেই অনুভবের তীব্র আকুতি নিয়ে তিনি দেশজুড়ে চালু করেছিলেন বুনিয়াদী প্রশিক্ষণ কর্মসূচি 'বিডিএফ স্কুল অব ডিবেট', জাতীয় পর্যায়ে বিতর্ক বিষয়ক প্রথম নিয়মিত প্রকাশনা 'সংলাপ'-এর আত্মপ্রকাশ ঘটে তাঁর হাত ধরেই। এছাড়া সমাজের ডমিনেন্ট ডিসকোর্স নিয়ে নিয়মিত পলিসি বিতর্ক, গোলটেবিল আলোচনা, এমনকি গণতান্ত্রিক জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে শীর্ষ পর্যায়ের রাজনীতিকদের নিয়ে নির্বাচনী বিতর্কেরও উদ্যোগ গ্রহণ করেন তিনি। 

গত দুই দশক ধরে বুলবুল হাসান লন্ডনে সাংবাদিকতা করছেন। থিয়েটারের জন্য বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় নাটক লিখছেন নিয়মিত। সাংবাদিকতার অভিজ্ঞতার পাশাপাশি বৃটিশ গণতান্ত্রিক সংস্কৃতিকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন তিনি। লেখকের ভাষ্যমতে, প্রাচ্য ও প্রতীচ্যের অভিজ্ঞতায় ভর করে বিতর্কের আধার ও আধেয়কে ভিন্ন আলোয় ব্যাখ্যা করবার একটি প্রয়াস 'অন্তহীন বিতর্কযাত্রা'। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: বইম ল ফ কশন

এছাড়াও পড়ুন:

নায়িকা হতে আসিনি, তবে...

গুটি, সুড়ঙ্গ, মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন থেকে ওমর—সব সিনেমা-সিরিজেই প্রশংসিত হয়েছে আইমন শিমলার অভিনয়। অল্প সময়ের উপস্থিতিতেও নিজের ছাপ রাখতে পেরেছেন এই তরুণ অভিনেত্রী। ধূসর চরিত্রেও তিনি সাবলীল, অন্য তরুণ অভিনেত্রীদের থেকে এখানেই আলাদা শিমলা। তবে একটা কিন্তু আছে। এখন পর্যন্ত তাঁর অভিনীত আলোচিত চরিত্রগুলোর সবই চাটগাঁইয়া। শিমলা নিজে চট্টগ্রামের মেয়ে, একটা সময় পর্যন্ত বন্দরনগরীর বাইরে চেনাজানা ছিল সীমিত। এক সিরিজে তাঁর চাটগাঁইয়া ভাষা আলোচিত হওয়ায় পরপর আরও কাজে তাঁকে চাটগাঁইয়া চরিত্রের জন্য ভেবেছেন নির্মাতা।

এ প্রসঙ্গ দিয়েই অভিনেত্রীর সঙ্গে আলাপের শুরু করা গেল। শিমলা জানালেন, এ নিয়ে তাঁর নিজেরও অস্বস্তি আছে। চেষ্টা করছেন ‘চাটগাঁইয়া দুনিয়া’র বাইরে যেতে। সঙ্গে এ–ও জানিয়ে রাখলেন, ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে তাঁর নিজের চরিত্র পছন্দ করে নেওয়ার সুযোগ কমই ছিল।

‘বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই শুটিংয়ের ঠিক আগে জেনেছি চরিত্রটি সম্পর্কে। তখন তো কিছু করার থাকে না। তবে যেসব কাজ করেছি, সবই আলোচিত পরিচালক আর অভিনয়শিল্পীদের সঙ্গে; এ অভিজ্ঞতার মূল্যও কম নয়। শিহাব (শিহাব শাহীন) ভাইয়ের সঙ্গে মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন, কাছের মানুষ দূরে থুইয়া, রবিউল আলম রবি ভাইয়ের সঙ্গে ফরগেট মি নট আমাকে সমৃদ্ধ করেছে। এ ছাড়া (শহীদুজ্জামান) সেলিম ভাইয়ের কথা বিশেষভাবে বলব। সুড়ঙ্গ ও ওমর—দুই সিনেমায় তিনি আমাকে অনেক সাহায্য করেছেন,’ বলছিলেন তিনি।

ঈদে মুক্তি পাওয়া এম রাহিমের সিনেমা জংলিতেও আছেন শিমলা। এ ছবিতে অবশ্য তাঁর চরিত্রটি চাটগাঁইয়া ভাষায় কথা বলে না। সে জন্য সিনেমাটি নিয়ে তিনি বেশি উচ্ছ্বসিত। ‘মুক্তির পর থেকে সিনেমা তো বটেই, আমার অভিনীত চরিত্রটি নিয়ে প্রশংসা পাচ্ছি কিন্তু দুঃখের কথা, আমি নিজেই এখনো দেখতে পারিনি। ব্যক্তিগত ঝামেলা, শুটিংয়ে ব্যস্ততার কারণে সম্ভব হয়নি। শিগগিরই আমার টিমের সঙ্গে দেখতে চাই,’ বলছিলেন তিনি।

আইমন শিমলা

সম্পর্কিত নিবন্ধ