রাজধানীর গণপরিবহনে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় রাজনৈতিক দলগুলোর হস্তক্ষেপ জরুরি: রোড সেফটি ফাউন্ডেশন
Published: 24th, February 2025 GMT
রাজধানীর গণপরিবহনে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর হস্তক্ষেপ জরুরি বলে মনে করে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন। দুর্ঘটনা নিয়ে কাজ করা বেসরকারি এ সংগঠনের পক্ষ থেকে আজ দেওয়া এক বিবৃতিতে এ কথা বলা হয়েছে।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ আই মাহবুব উদ্দিন আহমেদ, ভাইস চেয়ারম্যান সৈয়দ জাহাঙ্গীর, অধ্যাপক হাসিনা বেগম, কামরান উল বাসেত, আবদুল্লাহ মো.
বিবৃতিদাতারা বলেন, রুট ফ্রাঞ্চাইজ পদ্ধতিতে বাস সার্ভিস পরিচালনা ছাড়া রাজধানীর গণপরিবহনে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা এবং যানজট নিয়ন্ত্রণের সহজ কোনো ব্যবস্থা নেই। তবে এ জন্য সরকারের নিজস্ব বাস থাকতে হবে। নগরের পরিবহন ব্যবস্থা সব সময় সরকারের নিয়ন্ত্রণেই থাকতে হয়। রাজধানীর যানজট নিয়ন্ত্রিত হলে কর্মঘণ্টা বাঁচবে, জ্বালানি সাশ্রয় হবে, অর্থিক কর্মকাণ্ডে গতি আসবে, মানুষের মানসিক এবং শারীরিক অসুস্থতা কমবে। সবকিছু মিলিয়ে একটি স্বস্তির পরিবেশ গড়ে উঠবে।
বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, ঢাকা ট্রান্সপোর্ট কো-অর্ডিশেন অথরিটির (ডিটিসিএ) রাজধানীতে রুট ফ্রাঞ্চাইজ পদ্ধতিতে বাস সার্ভিস পরিচালনার উদ্যোগ গ্রহণ করলেও পরিবহনসংশ্লিষ্ট ক স্বার্থবাদী গোষ্ঠী রাজনৈতিক পৃষ্টপোষকতায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। এই প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত গণপরিবহনে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়ে বিআরটিএ এবং ডিটিসিএর পাশে দাঁড়িয়ে উদ্যোগটি সফল করা। রাজনৈতিক দলসমূহ ঐক্যবদ্ধভাবে সরকারি উদ্যোগে সমর্থন জানালে স্বার্থবাদী গোষ্ঠীর অপতৎপরতা ব্যর্থ হবে।
বিবৃতিদাতারা বলেন, গণপরিবহনে বিশৃঙ্খলাজনিত সমস্যাটি আসলে রাজনৈতিক। তাই রাজনৈতিক দলগুলোকে এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে হবে।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
৯ ঘণ্টা ধরে শাহবাগ অবরোধ, জনভোগান্তি চরমে
জুলাই ঘোষণাপত্র ও জুলাই সনদ বাস্তবায়ন এবং দ্রুত স্থায়ী বিধানে যুক্ত করার দাবিতে রাজধানীর শাহবাগ মোড় ৯ ঘণ্টা ধরে অবরোধ করে রেখেছেন ‘জুলাই যোদ্ধারা’। আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে জুলাই শহীদ পরিবার ও জুলাই যোদ্ধাদের (আহত) ব্যানারে তাঁরা এ ‘অবস্থান কর্মসূচি’ পালন করছেন।
রাজধানীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই মোড় দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এর প্রভাব পড়ে আশপাশের সড়কগুলোতে। এসব সড়কে দিনভর ব্যাপক যানজট তৈরি হয়। ফলে বৃষ্টির মধ্যে জীবনের তাগিদে ঘর থেকে বের হওয়া মানুষদের বেশ ভোগান্তি পোহাতে হয়। বাধ্য হয়ে বিকল্প পথে চলে গণপরিবহন, অনেক যাত্রীকে গন্তব্যে পৌঁছাতে দেখা গেছে হেঁটে হেঁটে। বিশেষ করে অফিসফেরত মানুষকে বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হয়।
বেলা ১১টায় শাহবাগ মোড়ের সঙ্গে যুক্ত সব সড়কের মুখ আটকে দিয়ে সড়কের মাঝখানে অবস্থান নেন অবরোধকারীরা। এ সময় তাঁরা জুলাই সনদ দ্রুত বাস্তবায়নসহ বিভিন্ন দাবি জানান। অবরোধকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জুলাই যোদ্ধা সংসদ নামে একটি প্ল্যাটফর্ম ওই কর্মসূচির উদ্যোগ নেয়। এ সময় অবরোধকারীরা ‘জুলাই নিয়ে টালবাহানা, চলবে না চলবে না’, ‘জুলাইয়ের চেতনা দিতে হবে ঘোষণা’, ‘জুলাই সনদ দিতে হবে, দিতে হবে, দিতে হবে’ স্লোগান দিতে থাকেন।
বন্ধ হয়ে পড়ে শাহবাগ থেকে ফার্মগেট, সায়েন্স ল্যাব ও গুলিস্তানগামী প্রধান সড়কগুলোও। ফলে সকাল থেকেই এসব এলাকায় যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। এসব সড়কে চলাচলকারী গণপরিবহনগুলো বিকল্প পথে চলাচল করে।
বেলা তিনটার দিকে দেখা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ–সংলগ্ন মূল সড়কে পুলিশের ব্যারিকেড ও বাঁশ ব্যবহার করে সড়ক আটকে রেখেছেন অবরোধকারীরা। শাহবাগ থানার সামনের সড়কেও প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেন তাঁরা।
বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা ষাটোর্ধ্ব নূরে আলম বলেন, ‘কেরানীগঞ্জে যাব। কোনো বাস পাচ্ছি না। রিকশায় যে কিছু দূর যাব, তারাও ভাড়া বেশি চাচ্ছে।’ একপর্যায়ে হেঁটেই রওনা দেন তিনি।
এক পথচারী ইমরান হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘দুই দিন পরপর সড়ক অবরোধ হয়। এর ভোগান্তি পোহাতে হয় আমাদের মতো সাধারণ মানুষদের।’
বেলা সাড়ে তিনটার দিকে শাহবাগ থানার সামনে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডা হতে দেখা যায় মোটরবাইক আরোহীদের। শাহবাগ থানার সামনে সিএনজিচালিত একটি অটোরিকশাকে বাধা দিলে চালক বলেন, ‘এত দাবিদাওয়া এত দিন আছিলো কই।’ তবে গণপরিবহন আটকে দেওয়া হলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যানবাহন এবং তাদের ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল করতে দেখা গেছে। এ ছাড়া রোগী বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স শুরু থেকেই চলাচল করতে দেখা গেছে।
অবরোধকারীদের দাবি
অবরোধকারীদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে জুলাই শহীদ ও জুলাই যোদ্ধাদের স্বীকৃতি; শহীদ পরিবার ও আহতদের আজীবন সম্মান; চিকিৎসা, শিক্ষা ও কল্যাণের পূর্ণ নিশ্চয়তা প্রদান করা; শহীদ পরিবার ও আহতদের প্রতি দায়িত্ব গ্রহণ করা; আহতদের চিকিৎসা, পুনর্বাসন, কর্মসংস্থান ও কল্যাণমূলক ব্যয় রাষ্ট্রকে বহন করা; আহত ও শহীদ পরিবারের জন্য আজীবন সম্মানজনক ভাতা নিশ্চিত করা; শহীদ পরিবার ও আহতদের জন্য বিশেষ আইনি সুরক্ষা ও সহায়তাকেন্দ্র গঠন করা; শহীদ ও আহতদের ওপর সংগঠিত দমন-পীড়নের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে বিচারকাজ সম্পন্ন করা এবং একটি স্বাধীন সত্য ও ন্যায় কমিশন গঠন করা।
শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খালিদ মনসুর বলেন, সকাল থেকেই শাহবাগে অবরোধের কারণে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। শাহবাগ থানা-পুলিশ আলোচনার মাধ্যমে অবরোধকারীদের সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন।
তবে জুলাই যোদ্ধা সংসদের মুখ্য সংগঠক মাসুদ রানা জানান, তাঁদের আন্দোলন চলছে। সনদ ঘোষণা না আসা পর্যন্ত তাঁরা এখানেই থাকবেন।