‘আগামী নির্বাচন গণপরিষদ আবার জাতীয় সংসদ নির্বাচন দুটোই বিবেচিত হতে পারে’
Published: 24th, February 2025 GMT
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেছেন, আগামী নির্বাচন গণপরিষদ আবার জাতীয় সংসদ নির্বাচন দুটোই বিবেচিত হতে পারে। সোমবার সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মুজাফফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে ‘রাষ্ট্র সংস্কারে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ভাবনা ও প্রত্যাশা’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
আসিফ নজরুল বলেন, ‘আগামী ২০২৫ অথবা ২০২৬ সালের নির্বাচনে নির্বাচিতরা সংসদ সদস্য আবার গণপরিষদ সদস্য হতে পারেন। ধরা যাক, সপ্তাহে চারদিন সংসদ সদস্য হিসেবে সংসদের কাজগুলো করব, বাহাত্তরের সংবিধানের যে পরিবর্তন দরকার সেগুলো করে ফেলব। আর নতুন সংবিধান প্রণয়নের জন্য আমরা সপ্তাহে দুইদিন গণপরিষদে বসব, বা সাতদিনই সাংসদ (সংসদ সদস্য) হিসেবে বসা হলো, সন্ধ্যার পরে তিনঘণ্টা গণপরিষদ সদস্য হিসেবে বসব। এগুলো গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি। নেপালে কিছুদিন আগে তাই হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা যদি সত্যি সত্যি চাই এটা (সংস্কার) করব, তাহলে বলতে হবে আমরা একমত হয়েছি তাহলো- অর্ডিন্যান্সের মাধ্যমে হতে পারে। জুলাই চার্টার করে বলতে পারে- আগামী নির্বাচন জাতীয় সংসদ হবে, গণপরিষদ হবে; এই সংস্কারগুলো আমরা করব। আমরা দেখি, রাজনৈতিক দলগুলো সামাজিক সংগঠন যারা আছে তারা বড় পরিবর্তন করতে সম্মত আছে কিনা। বড় পরিবর্তন না হলে আমাদের খুব বেশি পরিবর্তন হবে না। ছোট ছোট পরিবর্তন হবে। তবে ছোট ছোট পরিবর্তনের জন্য এত মানুষ জীবন দেয়নি।’
আসিফ নজরুল বলেন, ‘বাংলাদেশের কোনো রাজনৈতিক দল তাদের নিজস্ব ও দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে চিন্তা করে না। শুধু তাই নয়, দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি জনগণও স্বাধীনতার ৫৩ বছরে নীরব থেকেছে। সামাজিক ও মানবিক বিষয়ে কেউ কথা বলেনি, সবাই রাজনৈতিক চেয়ার ও ক্ষমতা ভাগাভাগি নিয়েই ব্যস্ত ছিল।’
তিনি আরও বলেন, ‘১৯৯১ সাল থেকে জনগণের নির্বাচিত সরকার এসেছে, কিন্তু কোনো দল ১৯৭২ সালের সংবিধানে মৌলিক সংস্কার আনেনি। যারা সংস্কার করেছে, তারা শুধু নিজেদের স্বার্থে এবং নিজেদের এজেন্ডা প্রতিষ্ঠার জন্যই করেছে। এখন সংবিধান এবং রাষ্ট্র ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনার সময় এসেছে। তবে এজন্য দেশের সব রাজনৈতিক দল ও জনগণের সম্মতি প্রয়োজন।’
সভায় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য ড.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
দলগুলোর সঙ্গে কথা বলে মানবিক করিডরের সিদ্ধান্ত নিতে হতো: নাহিদ ইসলাম
মানবিক করিডরের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে অবশ্যই রাজনৈতিক দলগুলো সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রয়োজন ছিল বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।
আজ বুধবার বিকেলে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সঙ্গে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে মতবিনিময় শেষে এক প্রশ্নের জবাবে এনসিপির নাহিদ এ কথা বলেন। রাজধানীর পুরানা পল্টনে ইসলামী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দুই দলের বৈঠক হয়।
জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক বলেন, এই সরকার একটি ঐকমত্যের ভিত্তিতেই তৈরি হয়েছে এবং পরিচালিত হচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে সরকারের প্রতি একটা সমর্থন আছে। ফলে জাতীয় সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করা প্রয়োজন। এই করিডর বা রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনের বিষয়টি কীভাবে থাকবে, তা তারা (এনসিপি) এখনো স্পষ্ট নয়। তবে মানবিক করিডরের বিষয়টি নিয়ে অন্যান্য রাজনৈতিক দল যে বক্তব্য–বিবৃতি দিচ্ছে, তার সঙ্গে তারা একমত।
জুলাই অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা, প্রত্যাশা এবং নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠার জন্য ঐক্যের জায়গাটা ধরে রাখতে হবে উল্লেখ করে নাহিদ ইসলাম বলেন, সে উদ্দেশ্যই মূলত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকে বসা। ইসলামী আন্দোলনের সঙ্গে বিচার, সংস্কার এবং গণপরিষদ নির্বাচনের এজেন্ডা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
এনসিপির এই নেতা বলেন, ‘ইসলামী আন্দোলন নিম্ন ও উচ্চ উভয় কক্ষেই সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনের কথা বলছে। কিন্তু এনসিপি উচ্চকক্ষে সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনের কথা বলেছে। ইসলামী আন্দোলন নিজেদের যুক্তি উপস্থাপন করেছে। আমরা বলেছি, আমরা এ বিষয়ে আলোচনা করব। সংবিধানের মৌলিক সংস্কারের জন্য কেন গণপরিষদ নির্বাচন প্রয়োজন, আমরা সে বিষয়ে ব্যাখ্যা করেছি। উনারা বলেছেন, বিষয়টি ভেবে দেখবেন।’
বৈঠকে দলগতভাবে আওয়ামী লীগকে বিচারের আওতায় আনার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানান নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের বিচার চলার সময় তাদের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা, নিবন্ধন স্থগিত করাসহ বেশ কিছু বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। বেশির ভাগ বিষয়ে দুই দল একমত।
দেশের বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সারা দেশে চাঁদাবাজি, লুটপাট এবং জনগণের অধিকার হরণের মতো কর্মকাণ্ড বেড়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ নতুন বাংলাদেশের জন্য, রাজনৈতিক সংস্কৃতির জন্যই জুলাই অভ্যুত্থানে রাজপথে নেমে এসেছিল। যদি পুরোনো বন্দোবস্তের জন্য কেউ চেষ্টা করে, জনগণ তা মেনে নেবে না।
সভায় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সঙ্গে তিনটি বিষয়ে ঐকমত্য হয় জাতীয় নাগরিক পার্টির।
বিষয়গুলো হলো দ্রুত স্থানীয় নির্বাচনের আয়োজন; গণহত্যা ও ফ্যাসিজমের সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত বিচার করা এবং দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচার ও বিচার চলাকালে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত রাখা এবং সর্বশেষ মৌলিক সংস্কার শেষ করে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করা।
মতবিনিময় সভায় এনসিপির পক্ষ থেকে আরও উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদিব, আতিক মুজাহিদ, সরোয়ার তুষার, আশরাফ উদ্দিন মাহদী, যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক সাদ্দাম হোসেন, কেন্দ্রীয় সদস্য আল আমীন।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের পক্ষে ছিলেন মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুস আহমেদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য মাওলানা মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী, অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, আশরাফুল আলম প্রমুখ।