রাঙামাটির বাঘাইছড়ির সাজেকের রুইলুই ভ্যালি পর্যটনকেন্দ্রে ঢুকতেই নাকে পোড়া গন্ধ এসে লাগে। পর্যটনকেন্দ্রের শিবমন্দির এলাকা থেকে গির্জা পর্যন্ত প্রায় আড়াই শ মিটার এলাকায় রিসোর্ট-কটেজ, বসতঘর ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণ পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। সড়কের দুই পাশে কোনো কিছু অবশিষ্ট নেই। কেবল ছড়িয়ে আছে পোড়া টিন, আসবাব, হাঁড়ি-পাতিল, গ্যাস সিলিন্ডার। রিসোর্টের পাশাপাশি পুড়েছে হেডম্যানসহ স্থানীয় বাসিন্দাদের বাড়িঘর, রেস্তোরাঁ ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান।

হেডম্যানের পুড়ে যাওয়া দোতলা বাড়ির পাশ ঘেঁষেই ছিল স্থানীয় বাসিন্দা থাংয়া লুসাইয়ের বাড়ি। আগুনে তাঁর বাড়ি একেবারে মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। তবু ধ্বংসস্তূপ তন্নতন্ন করে খুঁজে দেখছিলেন তিনি কোনো একটা জিনিস অক্ষত রয়েছে কি না। অনেকক্ষণ খুঁজেও কিছুই পেলেন না তিনি। ক্লান্ত-বিধ্বস্ত এই প্রৌঢ় শূন্য চোখে তাকাচ্ছিলেন চারপাশে। বললেন, কিছুই নেই। সব পুড়ে গেছে।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে রুইলুই ভ্যালিতে দাঁড়িয়ে কথা হয় তাঁর সঙ্গে। পোড়া বসতঘরের সামনে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, তাঁর দুটি রিসোর্ট, দুটি দোকান ও বসতবাড়ি পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। তাঁর স্ত্রী, ছেলের স্ত্রী, নাতনিসহ পরিবারের ১৩ জন সদস্য এক কাপড়ে বের হয়ে এসেছেন। আপাতত একটা ঝুপড়িতে উঠেছেন সবাই মিলে। কী করবেন বুঝে উঠতে পারছেন না। এই ক্ষতি কীভাবে সামলে উঠবেন জানেন না তিনি।

থাংয়া লুসাই সব হারালেও মেঘলা ত্রিপুরা কিছু প্লাস্টিকের চেয়ার, হাঁড়ি-পাতিল ও প্লেট-বাসন রক্ষা করতে পেরেছেন। রুইলুই পর্যটনকেন্দ্রের ফটকের পাশেই মেঘপাই নামের তাঁর একটি রেস্তোরাঁ ছিল। সেটিসহ তাঁর বসতঘর পুরোটাই পুড়ে গেছে। সামান্য জিনিসপত্র নিয়ে তিনি আশ্রয় নিয়েছেন গাছতলায়।

রুইলুই ভ্যালির পূর্ব অংশে চিকনলতা ত্রিপুরা ও তাঁর মেয়ে জুয়েলি ত্রিপুরা পুড়ে যাওয়া বসতঘরে একটা টিন দিয়ে আচ্ছাদনের মতো তৈরি করেছেন। তার আড়ালে মানুষের দিয়ে যাওয়া ভাত খাচ্ছিলেন মা-মেয়ে। গতকালের আগুনে তাঁদের বসতঘরের সঙ্গে একটি রিসোর্টও পুড়ে গেছে। আয়ের উৎস হারিয়ে দুজনই এখন নিঃস্ব।

রুইলুই ভ্যালির সড়কের দুই পাশে আগুনের ধ্বংসস্তূপ। সেখানে পড়ে আছে পোড়া টিন, আসবাব, গ্যাস সিলিন্ডার। আজ দুপুরে রাঙামাটির বাঘাইছড়ির সাজেকের রুইলুই পর্যটনকেন্দ্রে.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

পুরীর আদলে পশ্চিমবঙ্গের দীঘায় জগন্নাথ মন্দির, উদ্বোধন আজ

ভারতের ওডিশা রাজ্যের পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের আদলে পশ্চিমবঙ্গের দীঘার সমুদ্রতীরে তৈরি করা হয়েছে জগন্নাথ মন্দির। আজ বুধবার এ মন্দিরের দেবতার প্রাণ প্রতিষ্ঠা হবে। সেই সঙ্গে হবে মন্দিরের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন। উদ্বোধন করবেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ইতিমধ্যে দীঘায় এসে পৌঁছেছেন সাধুসন্তরা।

দীঘার এই মন্দির নির্মাণ করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। খরচ হয়েছে ২৫০ কোটি রুপি। মন্দিরের উদ্বোধনকে ঘিরে গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে শুরু হয়েছে মহাযজ্ঞ, চলে বিকেল পর্যন্ত। এতে অংশ নেন পুরীর মন্দিরের পুরোহিতসহ সাধুসন্তরা, ছিলেন ইসকনের সাধুসন্তরাও।

এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে পুরীর মন্দিরের ধাঁচে দীঘার সমুদ্রতীরে। দীঘা রেলস্টেশনের একেবারে কাছে নিউ দীঘা ও ওল্ড দীঘার মাঝপথে। রাজস্থানের গোলাপি বেলেপাথর দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে এই মন্দির। রাজস্থানের ৮০০ দক্ষ কারিগর মন্দির নির্মাণে অংশ নেন। অযোধ্যার রামমন্দির নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত কিছু কারিগরও এ মন্দির নির্মাণে ছিলেন।

দীঘার মন্দিরের তিন বিগ্রহ তৈরি করা হয়েছে পাথর দিয়ে। পুরীর মন্দিরের মতো ভোগ মণ্ডপ, নাটমন্দির, জগমোহন ও গর্ভগৃহ রয়েছে। আছে ব্যাঘ্রদ্বার, হস্তিদ্বার ও অশ্বদ্বার। দেবতার স্থাপত্যও স্থান পেয়েছে। আরও থাকছে লক্ষ্মীমন্দির, গুন্ডিচার মাসিবাড়ি। মাসিবাড়ি করা হয়েছে দীঘার আদি জগন্নাথ দেবের মন্দিরকে।

পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব মেদিনীপুর জেলার পর্যটনকেন্দ্র দীঘাকে পুরীর পর্যটনকেন্দ্রের মতো গড়ে তোলার অংশ হিসেবে এই জগন্নাথ মন্দির নির্মাণ করা হয়েছে। মূল মন্দিরটি ২১৩ ফুট উঁচু। মন্দিরের মেঝের মারবেল পাথর আনা হয়েছে ভিয়েতনাম থেকে। ২২ একর জমিতে গড়ে উঠেছে দীঘার জগন্নাথ ধাম।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পুরীর আদলে পশ্চিমবঙ্গের দীঘায় জগন্নাথ মন্দির, উদ্বোধন আজ