মুঠোফোনে আর্থিক সেবা বা এমএফএসে লেনদেন চলতি বছর ২৫ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেন, এখন এমএফএসে বছরে ১৭ লাখ কোটি টাকার লেনদেন হয়। এ বছর হয়তো সেটি ২৫ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। তার মানে, এমএফএসে লেনদেনের পরিমাণ জাতীয় বাজেটের প্রায় তিন গুণ অর্থ হবে।

রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে আজ মঙ্গলবার ‘লেনদেনব্যবস্থার রূপান্তর: বিবর্তনের যুগ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। এতে স্বাগত বক্তব্য দেন ডেপুটি গভর্নর জাকির হোসেন চৌধুরী।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ২০১৫ সালে চালু হওয়া ডিজিটাল মাধ্যমে তাৎক্ষণিক লেনদেনব্যবস্থা আরটিজিএসের হালনাগাদ সংস্করণ এনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন আরটিজিএসের মাধ্যমে সপ্তাহের সাত দিনই লেনদেন করা যাবে। উভয় পক্ষকে লেনদেনের বার্তা প্রদান, বিভিন্ন মুদ্রায় লেনদেন, নথি সংরক্ষণ ব্যবস্থাসহ আরও অনেক সুবিধাও নতুন করে যুক্ত হচ্ছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর বলেন, ‘আরটিজিএস ব্যবস্থা চালু করেন সাবেক গভর্নর আতিউর রহমান। তখন আমরা গুরুত্ব দিইনি। তবে পরে দেখলাম এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’ এ সময় নিজের একটি অভিজ্ঞতাও শোনান।

আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘ডিজিটাল লেনদেনব্যবস্থায় ভোক্তা ও ব্যবসায়ীরা সুফল পাচ্ছেন। এতে অর্থনৈতিক কার্যক্রম অনেক উন্নতি হয়েছে। আরটিজিএস ব্যবস্থা হালনাগাদ করার দরকার ছিল, সেটি আমরা করেছি।’ ভবিষ্যতে আরও হালনাগাদ করতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেম বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক মো.

খায়রুল আনাম বলেন, ব্যাংক লেনদেনের ৮৪ শতাংশই বর্তমানে ডিজিটাল মাধ্যমে হয়। তার মধ্যে বিভিন্ন ডিজিটাল মাধ্যমে ৫৬ শতাংশ এবং এমএফএসে ২৮ শতাংশ লেনদেন হয়ে থাকে। অন্যদিকে ডিজিটাল লেনদেনের ৬৯ শতাংশ আরটিজিএস এবং ১১ দশমিক ৯২ শতাংশ ইএফটির মাধ্যমে হয়।

খায়রুল আনাম জানান, টাকা, ডলার পাউন্ডসহ সাতটি মুদ্রায় আরটিজিএস করা যায়। এখন পর্যন্ত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ১১ হাজার ৬২০টি শাখা আরটিজিএসের সঙ্গে সংযুক্ত। এই ব্যবস্থায় বর্তমানে দিনে ৪৮ হাজার ৪১০টি লেনদেন হয়। দৈনিক গড় লেনদেনের পরিমাণ ২২ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা।

আরটিজিএস ব্যবস্থা লেনদেন দ্রুত, সাশ্রয়ী ও নিরাপদ করেছে বলে মন্তব্য করেন ইস্টার্ণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী রেজা ইফতেখার। তিনি বলেন, ‘আমরা প্রতিনিয়ত সাইবার হামলার হুমকি পাচ্ছি। আমরা যত ডিজিটাল ব্যবস্থার দিকে যাব, তত হুমকি বাড়বে। সে জন্য ডিজিটাল ব্যবস্থার আপডেটের পাশাপাশি সুরক্ষা ব্যবস্থাও উন্নত ও শক্তিশালী করতে হবে।’

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন মনট্রান করপোরেশন ইউএসএর জুলিয়া এলিজাবেথ, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান, পরিচালক মো. শারাফাত উল্লাহ খান, এইচএসবিসি বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. মাহবুব উর রহমান প্রমুখ।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব যবস থ

এছাড়াও পড়ুন:

অনলাইন জুয়ার নামে টাকা পাচারের অভিযোগ, বিশেষ সহকারীর হুঁশিয়ারি

সাইবার সুরক্ষা আইন পাস হলে জুয়ার সঙ্গে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে জড়িত কোম্পানিকে শাস্তি দেওয়া এবং বেটিং সাইটগুলো নিষিদ্ধ করার উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যব।

তিনি জানান, কয়েকটি মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে অনলাইন জুয়া, ক্রিপ্টো কারেন্সি এবং ই-কমার্স এমএলএম এর নাম করে অর্থ পাচারের অভিযোগ আছে। সাইবার আইন পাস হওয়ার পরে আমরা বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করব।

সোমবার (২৮ এপ্রিল) ফেসবুকে দেওয়া স্ট্যাটাসে তিনি এ তথ্য জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, “কয়েকদিনের মধ্যেই নতুন সাইবার সুরক্ষা আইনটি পাস হবে বলে আশা করি। এ আইনে সাইবার স্পেসে জুয়া কিংবা অনলাইন জুয়াকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আইন পাস হওয়ার পরে আমরা জুয়ার সঙ্গে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে জড়িত কোম্পানিকে শাস্তি দেওয়া এবং বেটিং সাইটগুলো নিষিদ্ধ করার উদ্যোগ নেব।”

বেটিং সাইটগুলোর সঙ্গে সংযুক্ত এমএফএস কোম্পানিগুলোর সংশ্লিষ্টতা খতিয়ে দেখা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, “বেশ কিছুদিন ধরে কয়েকটি মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল কোম্পানির বিরুদ্ধে অনলাইন জুয়া, ক্রিপ্টো কারেন্সি এবং ই-কমার্স এমএলএম এর নাম করে অর্থ পাচারের অভিযোগ ঘনীভূত হচ্ছে। সাইবার আইন পাস হওয়ার পরে আমরা বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করব।” 

“আমরা মোবাইল ব্যাংকিংসহ ফাইনান্সিয়াল অর্গানাইজেশনগুলোকে আগাম সতর্কতা জানিয়ে রাখি। কেননা সাইবার জুয়া কোম্পানিগুলো মোবাইল ব্যাংকিংসহ ব্যাংক, ফাইনান্সিয়াল হাউজ কিংবা পেমেন্ট গেটওয়ে, এমএফএস, পিএসও বা পিএসপি ইত্যাদির সঙ্গে ইন্টিগ্রেটেড।”

সেখানে তিনি লেখেন, “'মাসের পর মাস নির্দিষ্ট কিছু পুলের মোবাইল ফাইনান্সিয়াল অ্যাকাউন্টে ইরেগুলার, একমুখী এবং অস্বাভাবিক ট্রানজেকশন হচ্ছে। একটা পুল অফ নাম্বারে টাকা যাচ্ছে, সেটা নির্দিষ্ট নাম্বারে গিয়ে ক্যাশ আউট হয়ে বাইরে পাচার হচ্ছে, আপনি দেখেও না দেখার ভান করে বলবেন, আমি জড়িত না! এটা হবে না। সুতরাং অবৈধ জুয়ার জড়িত সবাই সাবধান।”

এদিকে গতকাল রবিবার অনলাইন জুয়া বন্ধে সাত দপ্তরের সাত কর্মকর্তাকে নিয়ে বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠনের আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

আদালত বলেছেন, অনলাইন জুয়ার ওয়েবসাইট, লিংক ও গেটওয়েগুলো কারা কীভাবে চালায়, তা এ কমিটি চিহ্নিত করবে।
অনলাইন জুয়া নিয়ে পত্রিকায় আসা একটি প্রতিবেদন যুক্ত করে এ রিট আবেদন করেন তানজিম রাফিদ নামের এক ব্যক্তি। এতে অনলাইন জুয়া খেলার সব ওয়েবসাইট, লিংক ও গেটওয়ে অবিলম্বে বন্ধের নির্দেশনা চাওয়া হয়।

তারকাদের মাধ্যমে সামাজিক ও মূলধারার মাধ্যমের প্ল্যাটফর্মে অনলাইন জুয়ার প্রচারের বিস্তার রোধে নিষ্ক্রিয়তাকে কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না এবং বিজ্ঞাপন বন্ধে অবিলম্বে পদক্ষেপ নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, রুলে তা জানতে চাওয়া হয়েছে।

ঢাকা/হাসান/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সামাজিক নিরাপত্তা ও বৃত্তির অর্থ যাবে পছন্দের হিসাবে 
  • অনলাইন জুয়ার নামে টাকা পাচারের অভিযোগ, বিশেষ সহকারীর হুঁশিয়ারি