নিত্যপণ্যের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ও নির্বাচনী রূপরেখা ঘোষণাসহ বিভিন্ন দাবিতে চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিএনপির সমাবেশে হট্টগোল, চেয়ার–ছোড়াছুড়ির ঘটনা ঘটেছে। এ সময় সমাবেশস্থলের পাশে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এতে প্রায় ১৫ মিনিট সমাবেশ বন্ধ ছিল। মঙ্গলবার বিকেলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর পার্কে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

সরেজমিনে দেখা যায়, বিকেল চারটায় শুরু হয় সমাবেশ। এতে চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ আশপাশ এলাকা থেকে অসংখ্য নেতা–কর্মী অংশ নেন। সমাবেশ চলাকালে বিকেল ৫টা ২৫ মিনিটের দিকে মঞ্চে উপজেলা পর্যায়ের এক নেতার বক্তব্য দেওয়া নিয়ে জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম ও সদস্যসচিব রফিকুল ইসলামের মধ্যে বাগ্‌বিতণ্ডা শুরু হয়। এ সময় উভয় পক্ষের সমর্থকেরা মাঠেও উত্তেজিত হয়ে পড়েন। একে অপরের দিকে চেয়ার ছুড়ে মারেন এবং ভাঙচুর করেন।

এ সময় সমাবেশস্থল থেকে নেতা–কর্মীরা দিগ্‌বিদিক ছোটাছুটি শুরু করেন। দুয়েকজনের হাতে দেশীয় অস্ত্র দেখা যায়। মঞ্চের নেতারা বিশৃঙ্খলাকারী নেতা–কর্মীদের বারবার শান্ত করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। ফলে প্রায় ১৫ মিনিটের জন্য সমাবেশের কার্যক্রম বন্ধ ছিল।

ঘটনার বিষয়ে জেলা বিএনপির সদস্যসচিব রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, প্রধান অতিথির বক্তব্যের আগে শিবগঞ্জের একজন বিতর্কিত নেতা সন্ত্রাসী হিসেবে অভিযুক্ত আশরাফুল ইসলামকে বক্তব্য দিতে সুযোগ দেওয়ার জন্য চাপ দিতে থাকেন জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম। এটি ছিল সভার নিয়মনীতির বাইরে। একটু আগেই তিনি বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি (রফিকুল ইসলাম) ওই নেতার উচ্চ পদে অবস্থান করছেন। অথচ তাঁর নিচের পদের নেতাকে বক্তব্য দেওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করেন। এ নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়। ফলে আশরাফুল ইসলামের সমর্থক নেতা-কর্মীরা সমাবেশস্থলে হট্টগোল সৃষ্টি করেন। এতে করে কিছুক্ষণ সমাবেশ বন্ধ ছিল।

অভিযোগের বিষয়ে রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আশরাফুল ইসলাম শিবগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক। তাঁকে বক্তব্য দেওয়ার জন্য দর্শকসারি থেকে তাঁর সমর্থকরা চিৎকার চেঁচামেচি করছিল। আমি হট্টগোল এড়াতেই তাঁকে বক্তব্য দেওয়ার জন্য সদস্যসচিবকে অনুরোধ করছিলাম। এতে প্রটোকল যদি একটু ভঙ্গও হতো হোক। সম্ভাব্য হট্টগোল এড়াতে আমি এ অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু তা উপেক্ষা করায় সমাবেশে হট্টগোলের ঘটনা ঘটেছে।’

পরে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.

) শরীফ উদ্দীন বক্তব্য দিতে শুরু করেন। তাঁর বক্তব্য চলাকালে সমাবেশস্থলের প্রায় ২০০ মিটার দূরে বড় ইন্দারা মোড় এলাকায় পরপর দুটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে। তবে এতে কেউ হতাহত হয়নি।

বক্তব্য দিতে গিয়ে হট্টগোল প্রসঙ্গে শরীফ উদ্দীন বলেন, ‘এর আগে এমন ঘটনার সম্মুখীন হইনি। এমন ঘটতে পারে কল্পনাতীত ছিল।’ তিনি কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘অন্তর্দ্বন্দ্ব থাকতেই পারে। তবে বিএনপির বিষয়ে, ধানের শীষের বিষয়ে আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প ইনব বগঞ জ ব এনপ র স

এছাড়াও পড়ুন:

কার্টুন, মিমে অভ্যুত্থানের ভিন্ন ধারার দৃশ্যায়ন

টাকার বস্তার ভেতর থেকে মাথা উঁচিয়ে আছেন শুভ্র কেশ, সফেদ দাড়ি, চশমা পরিহিত এক লোক। তাঁর ছবি দেখে তো বটেই, এই বর্ণনা থেকেও তাঁকে চিনবেন দেশবাসী। বর্তমানে কারাগারের বাসিন্দা পতিত স্বৈরশাসকের এই উপদেষ্টা বলছেন, ‘টাকার ওপর আমার বিশ্বাস উঠে গেছে।’ এই ছবির পাশেই এক কাটআউট। সেখানে ‘শেখ হাসিনা পালায় না’ বলতে বলতে দৌড়ে পালাচ্ছেন ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতার মসনদ থেকে উৎপাটিত শেখ হাসিনা।

এমন মজার মজার কার্টুন, মিম, গ্রাফিতি, ভিডিও স্থাপনাকর্মসহ বৈচিত্র্যময় সৃজনসম্ভার নিয়ে শুরু হয়েছে ‘বিদ্রূপে বিদ্রোহ’ নামের ব্যতিক্রমী এক প্রদর্শনী। আয়োজন করেছে অনলাইনভিত্তিক স্যাটায়ার সাময়িকী ‘ইয়ারকি’। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ধানমন্ডির আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের লা গ্যালারিতে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে ছয় দিনের এ প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। চলবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত। সবার জন্য প্রতিদিন বেলা তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা।

গত বছর ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে উত্তাল ছিল জুলাই। একটি বৈষম্যহীন, উদার গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য পথে নেমেছিলেন অগণিত মানুষ। শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী সরকারকে উৎখাত করতে জীবন উৎসর্গ করেছেন তাঁদের অনেকে। আহত হয়েছেন বেশুমার। রক্তরঞ্জিত রাজপথ বেয়ে এসেছে জনতার বিজয়।

প্রদর্শনীতে প্রবেশপথটির দুই পাশে লাল রঙের পটভূমিতে বড় বড় ডিজিটাল পোস্টার। সেখানে ২ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিদিনের বিভিন্ন ঘটনার আলোকচিত্র, সংবাদপত্র, অনলাইন পোর্টাল, টেলিভিশনের রিপোর্ট, ছবি, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমের পোস্ট—এসব তুলে আনা হয়েছে এ পোস্টারগুলোতে। প্রবেশপথটিও লাল রঙের। ‘জুলাই করিডর’ নামে এই রক্তিম পথটি বেয়ে দর্শনার্থীরা প্রদর্শনীতে প্রবেশের সময় অভ্যুত্থানের উত্তাল দিনগুলোর উত্তাপ ফিরে পাবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ