ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের তৃতীয় বর্ষপূতিতে জাতিসংঘে ভোটাভুটি হলে তাতে দু’বার রাশিয়ার পাশে দাঁড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ও নিরাপত্তা কাউন্সিলে রাশিয়ার পক্ষে ভোট দিয়েছে। এর মাধ্যমে ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের অবস্থান আবারও সামনে এলো। সেই সঙ্গে ট্রাম্প যে তাঁর পূর্বসূরি জো বাইডেনের উল্টো পথে হাঁটছেন, সেটাও পরিষ্কার হলো। ওয়াশিংটনের এ অবস্থানকে সমর্থন জানিয়েছে মস্কো। 

নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ইউক্রেনের অখণ্ডতার সমর্থন ও মস্কোর কার্যক্রমের নিন্দা জানিয়ে একটি খসড়া প্রস্তাব আনে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। যুক্তরাষ্ট্র এ প্রস্তাবের বিরোধিতা করে রাশিয়া, উত্তর কোরিয়া ও বেলারুশের সঙ্গে ভোট দেয়। পরে আরেকটি প্রস্তাবে মস্কোকে সমর্থন জানায় ওয়াশিংটন। প্রস্তাবটি জাতিসংঘের নিরাপত্তা কাউন্সিলে উত্থাপন করা হয়। যুক্তরাষ্ট্র উত্থাপিত ওই প্রস্তাবে ইউক্রেনে যুদ্ধের অবসান চাওয়া হলেও সেখানে রাশিয়ার কোনো সমালোচনা ছিল না। এ প্রস্তাবটি নিরাপত্তা কাউন্সিলে পাস হয়েছে। কিন্তু এতে যুক্তরাষ্ট্রের দুই গুরুত্বপূর্ণ মিত্র– যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স ভোটদান থেকে বিরত থাকে। 

গতকাল মঙ্গলবার বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, এমন সময়ে জাতিসংঘের এসব প্রস্তাব তোলা হয়েছে, যখন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ হোয়াইট হাউস সফর করছেন। আগামী বৃহস্পতিবার ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারেরও নতুন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাৎ করা কথা রয়েছে। ট্রাম্প ওভাল অফিসে প্রবেশের পর ইউরোপের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের দূরত্ব বেড়েছে। ইউরোপকে পাশ কাটিয়েই মস্কোর সঙ্গে সম্পর্ক বাড়াচ্ছেন ট্রাম্প। 

গত সোমবার ১৯৩ সদস্যের জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে মার্কিন কূটনীতিক রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতে প্রাণহানি নিয়ে শোক প্রকাশ করেন এবং শিগগির যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানান। কিন্তু ইউরোপের কূটনীতিকরা পুরো ঘটনার জন্য রাশিয়াকে দোষারোপ করেন। সাধারণ পরিষদে রাশিয়ার নিন্দা জানিয়ে তাদের তোলা প্রস্তাব ৯৩টি ভোট পায়। বিস্ময়করভাবে যুক্তরাষ্ট্র ভোটদান থেকে বিরত না থেকে বিরোধিতায় ভোট দেয়। রাশিয়া, ইসরায়েল, উত্তর কোরিয়া, সুদান, বেলারুশ, হাঙ্গেরি ও আরও ১১টি দেশের সঙ্গে ভোট দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ৬৫ দেশ ভোটদান থেকে বিরত ছিল।

অন্যদিকে, জাতিসংঘের শক্তিশালী ১৫ সদস্যের নিরাপত্তা কাউন্সিলে ইউক্রেন যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটাতে যুক্তরাষ্ট্রের তোলা শিরোনামহীন প্রস্তাবের পক্ষে ১০টি ভোট পড়ে। যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, ডেনমার্ক, গ্রিস ও স্লোভানিয়া ভোটদান থেকে বিরত থাকে। জাতিসংঘে মার্কিন দূত ডরোথি ক্যামিলে শিয়া এ প্রস্তাবকে ‘ঐতিহাসিক’ বলে বর্ণনা করেছেন। রুশ বার্তা সংস্থা তাস জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানকে স্বাগত জানিয়েছেন জাতিসংঘে রাশিয়ার স্থায়ী প্রতিনিধি ভ্যাসিলি বেবেনজিয়া। তিনি বলেন, এটাকে সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধানে অধিকতর চেষ্টার সূচনা হিসেবে দেখছে রাশিয়া। 

এদিকে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার দখলকৃত এলাকায় মূল্যবান খনিজ সম্পদ অনুসন্ধানে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রবেশের অনুমোদন দিতে তিনি সম্মত। এমন এক সময় পুতিন এ প্রস্তাব দিলেন, যখন ইউক্রেনকে সমর্থন জানানোর জন্য ট্রাম্প কিয়েভের কাছে কিছু খনিজ পদার্থ নেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছেন। ইউক্রেনের এক মন্ত্রী জানান, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি চুক্তি এরই মধ্যে চূড়ান্ত হয়েছে। 

ফক্স নিউজ জানায়, চলমান পরিস্থিতিতে ইউক্রেনে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তির সম্ভাবনা জোরালো হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র সফররত ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ বলেছেন, ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে একটি চুক্তি আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই হতে পারে। হোয়াইট হাউসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে আলাপ থেকে তিনি এ তথ্য জানান। তবে মাখোঁ এও বলেছেন, তিনি আরও ৩০ জন ইউরোপীয় নেতার সঙ্গে কথা বলেছেন, যারা ইউক্রেনের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা চেয়েছেন। সংঘাত বন্ধে শান্তি প্রতিষ্ঠা মানে ইউক্রেনের আত্মসমর্পণ করা নয়– বলেও মন্তব্য করেন তিনি।


 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইউক র ন র বল ছ ন ইউর প

এছাড়াও পড়ুন:

কার্টুন, মিমে অভ্যুত্থানের ভিন্ন ধারার দৃশ্যায়ন

টাকার বস্তার ভেতর থেকে মাথা উঁচিয়ে আছেন শুভ্র কেশ, সফেদ দাড়ি, চশমা পরিহিত এক লোক। তাঁর ছবি দেখে তো বটেই, এই বর্ণনা থেকেও তাঁকে চিনবেন দেশবাসী। বর্তমানে কারাগারের বাসিন্দা পতিত স্বৈরশাসকের এই উপদেষ্টা বলছেন, ‘টাকার ওপর আমার বিশ্বাস উঠে গেছে।’ এই ছবির পাশেই এক কাটআউট। সেখানে ‘শেখ হাসিনা পালায় না’ বলতে বলতে দৌড়ে পালাচ্ছেন ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতার মসনদ থেকে উৎপাটিত শেখ হাসিনা।

এমন মজার মজার কার্টুন, মিম, গ্রাফিতি, ভিডিও স্থাপনাকর্মসহ বৈচিত্র্যময় সৃজনসম্ভার নিয়ে শুরু হয়েছে ‘বিদ্রূপে বিদ্রোহ’ নামের ব্যতিক্রমী এক প্রদর্শনী। আয়োজন করেছে অনলাইনভিত্তিক স্যাটায়ার সাময়িকী ‘ইয়ারকি’। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ধানমন্ডির আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের লা গ্যালারিতে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে ছয় দিনের এ প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। চলবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত। সবার জন্য প্রতিদিন বেলা তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা।

গত বছর ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে উত্তাল ছিল জুলাই। একটি বৈষম্যহীন, উদার গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য পথে নেমেছিলেন অগণিত মানুষ। শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী সরকারকে উৎখাত করতে জীবন উৎসর্গ করেছেন তাঁদের অনেকে। আহত হয়েছেন বেশুমার। রক্তরঞ্জিত রাজপথ বেয়ে এসেছে জনতার বিজয়।

প্রদর্শনীতে প্রবেশপথটির দুই পাশে লাল রঙের পটভূমিতে বড় বড় ডিজিটাল পোস্টার। সেখানে ২ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিদিনের বিভিন্ন ঘটনার আলোকচিত্র, সংবাদপত্র, অনলাইন পোর্টাল, টেলিভিশনের রিপোর্ট, ছবি, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমের পোস্ট—এসব তুলে আনা হয়েছে এ পোস্টারগুলোতে। প্রবেশপথটিও লাল রঙের। ‘জুলাই করিডর’ নামে এই রক্তিম পথটি বেয়ে দর্শনার্থীরা প্রদর্শনীতে প্রবেশের সময় অভ্যুত্থানের উত্তাল দিনগুলোর উত্তাপ ফিরে পাবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ