অঞ্জনের সঙ্গে আমার পরিচয় ১৯৯৬ সালের দিকে, ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে আমাদের অফিসে। আলাপের ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই আমরা ‘আপনি’ থেকে ‘তুমি’তে নেমে পড়ি। বক্তা মূলত অঞ্জনই ছিল, আমি ছিলাম মুগ্ধ শ্রোতা। শিল্প–সাহিত্যের নানা বিষয়ে আমাদের আড্ডা জমে ওঠে। অঞ্জন পুনে ফিল্ম ইনস্টিটিউট থেকে পরিচালনা নিয়ে পড়ে এসেছে জেনে ওর প্রতি আরও আগ্রহী হয়ে উঠলাম।
অঞ্জন তখন জাদুঘরের চাকরি ছেড়ে বোহেমিয়ান জীবনযাপন করছে। আমাদের ধানমন্ডির অফিসে তখন আড্ডার সঙ্গে সঙ্গে থাকা–খাওয়ারও সুবন্দোবস্ত ছিল। অঞ্জন থেকে গেল অফিসে, দিনের পর দিন আড্ডা চলতে থাকল। তারেক শাহরিয়ার, পুলক গুপ্ত, আদিত্য কবির, নূরুল আলম আতিক, মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, আকরাম খানসহ তখনকার সময়ের তুর্কি তরুণেরা এই আড্ডার নিয়মিত সদস্য। আড্ডার মূল বিষয় চলচ্চিত্র। আকিরা কুরোসাওয়া, তারকোভ্‌স্কি, ব্রেসোঁ, কিম কি–দুক, আব্বাস কিয়ারোস্তামি, মজিদ মাজেদি, সত্যজিৎ, ঋত্বিক হয়ে আদুর গোপালকৃষ্ণন পর্যন্ত ঠেকত। এই যে আমার সিনেমার বিশ্বদর্শন, অঞ্জন তার প্রথম সূত্র। আমার স্ত্রী নাসরিন তখন অন্তঃসত্ত্বা। উনি তখন এক মাস ঢাকায় থাকেন তো দুই মাস থাকেন বাবার বাড়িতে। বাসা খালি পড়ে থাকে। অঞ্জনকে প্রস্তাব দিলাম, আমার বাসায় এসে থাকতে। অঞ্জনও রাজি হয়ে গেল।

আমার বাড়িতে আসার পর অঞ্জনের আরেক প্রতিভা আবিষ্কার করলাম। সেটা হলো রান্না। এত ভালো রান্নার হাত আমি আমার জীবনে খুব কম দেখেছি। সে বছর খুব বড় বড় ইলিশ পড়েছিল পদ্মায়। ওর কাছ থেকে ভালো ইলিশ এবং মন্দ ইলিশ চেনা শিখেছি। ইলিশ কাটা নিয়েও ওর ছিল ভীষণ খুতখুতানি। কেমন করে ইলিশ কাটতে হবে, কাটার লোককে সেই নির্দেশনা সে নিজেই দিত। একদিনের কথা মনে আছে, মাছ কাটার লোকটা কাটতে গিয়ে সামান্য ভুল করে ফেলে, এই নিয়ে অঞ্জনের কী রাগ!
সে সময় প্রায় টানা ছয় মাস আমরা একসঙ্গে ছিলাম। আমার চলচ্চিত্র নির্মাতা হয়ে ওঠার পেছনে এই ছয় মাসের ভূমিকা বিরাট। অঞ্জন পুনে ফিল্ম ইনস্টিটিউট থেকে তিন বছর ধরে যে জ্ঞান অর্জন করে এসেছিল, মাত্র ছয় মাসে সেই জ্ঞান আমাকে দান করে গেছে। পরবর্তী সময়ে অঞ্জন শাহীন আপাকে বিয়ে-থা করে থিতু হয়েছে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে চলচ্চিত্রের পাঠদানকে পেশা হিসেবে নিয়েছে। এ তো গেল বন্ধু শিক্ষক অঞ্জনের কথা।


চলচ্চিত্রকার হিসেবে অঞ্জন সম্পর্কে দু–চার কথা বলতে চাই। পুনে ফিল্ম ইনস্টিটিউটের খুব চৌকস ছাত্র ছিল অঞ্জন। তার ডিপ্লোমা ফিল্ম সে সময় পুরো ক্যাম্পাসে হইচই ফেলে দিয়েছিল। ছবিটা দেখার আমার সৌভাগ্য হয়েছিল। সে এক অপূর্ব অভিজ্ঞতা। কোনোভাবেই ছবিটা স্টুডেন্ট ফিল্ম ছিল না। দক্ষ নির্মাতার ছোঁয়া ছিল ছবিটার পরতে পরতে। কাগজের ফুল নামে একটা স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র বানিয়েছিল অঞ্জন; সেটিও বেশ চমৎকার নির্মাণ।

জাহিদুর রহিম অঞ্জন। ফেসবুক.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: চলচ চ ত র

এছাড়াও পড়ুন:

শেফালি আর দীপ্তিতে নতুন মুম্বাইয়ে নতুন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ভারত

নাবি মুম্বাই। নয়া মুম্বাই। নতুন সেই মুম্বাইয়ে কাল নতুন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন পেল মেয়েদের ওয়ানডে বিশ্বকাপ। ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ভারত।

দীপ্তি শর্মার করা ৪৬তম ওভারের তৃতীয় বলে নাদিন ডি ক্লার্কের তোলা ক্যাচটি এক্সট্রা কাভারে ভারত অধিনায়ক হারমানপ্রীত কৌরের হাতে জমা হতেই বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের আনন্দে মাতল পুরো ভারত। দক্ষিণ আফ্রিকা ২৪৬ রানে অলআউট, ভারত ৫২ রানে জয়ী।

ভারতের জয়ের উৎসব অবশ্য শুরু হয়ে গিয়েছিল পাঁচ ওভার আগেই। লরা ভলভার্টকে ফিরিয়ে পথের কাঁটা উপড়ে ফেলেই উদ্‌যাপন শুরু করেছিল ভারতীয়রা। অসাধারণ এক সেঞ্চুরি করে দক্ষিণ আফ্রিকান অধিনায়ক চোখ রাঙাছিলেন ভারতের উৎসব ভন্ডুল করার। কিন্তু সেঞ্চুরি করার পরপরই ক্যাচ তুললেন ভলভার্ট। আর সেই ক্যাচ নিতে গিয়ে আমানজোত কৌর ভারতের প্রায় শত কোটি মানুষের হৃৎস্পন্দন প্রায় থামিয়ে দিয়েছিলেন। একবার নয়, দুবার নয়, তৃতীয়বারের চেষ্টাতেই ক্যাচ নিতে পারেন আমানজোত। এবারও বোলার সেই অফ স্পিনার দীপ্তি শর্মা।

৯৮ বলে ১০১ রান করে ভলভার্ট যখন ফিরলেন দক্ষিণ আফ্রিকার স্কোর ৪১.১ ওভারে ২২০/৭। এরপর শুধু আনুষ্ঠানিকতাই ছেড়েছে ভারত। দীপ্তি আরও ২টি উইকেট নিয়ে পেয়ে গেছেন ৫ উইকেট। আর ভারত হয়ে গেছে চ্যাম্পিয়ন। এর আগে ব্যাট হাতেও ৫৮ বলে ৫৮ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলেছেন দীপ্তি।

ব্যাট হাতে ৮৭ রান করা শেফালি বর্মা বল হাতে নিয়েছেন ২ উইকেট

সম্পর্কিত নিবন্ধ