এটা স্বীকার করতে হবে যে অপরাধ দমনে সরকারের নেওয়া আগের পদক্ষেপগুলো যথাযথ ছিল না। এমনকি বহু ঢাকঢোল পিটিয়ে যে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ বা দুষ্কৃতীবিরোধী অভিযান চালানো হলো, গত দুই সপ্তাহেও সেটা ইতিবাচক বার্তা দিতে পারেনি।

এত দিন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সন্তোষজনক বলে দাবি করে আসছেন, বাস্তবের সঙ্গে এর কোনো মিল নেই। পুলিশের বরাতে ডেইলি স্টার-এর প্রতিবেদনে ২০২০ থেকে ২০২৫ সালের জানুয়ারি মাসের অপরাধের তুলনামূলক পরিসংখ্যান তুলে ধরেছে।

এতে দেখা যায়, ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে ডাকাতি ঘটেছে ৩৯টি আর ২০২৫ সালে ৭১টি। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে ছিনতাই হয়েছে ১১৪টি আর একই সময়ে ২০২৫ সালে হয়েছে ১৭১টি। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে খুনের ঘটনা ছিল ২৩১টি। ২০২৫ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৯৪টি। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে অপহরণের সংখ্যা ছিল ৫১, ২০২৫ সালে ১০৫।

এখানে বলা জরুরি যে উল্লিখিত তথ্যের কোনোটি বিশ্বাসযোগ্য নয়। ১৭ কোটি মানুষের দেশে অপরাধের মাত্রা এত কম হলে তো জননিরাপত্তা নিয়ে ভাবতে হতো না। এত অভিযানেরও দরকার পড়ত না। মামলা কম হওয়ার কারণ পুলিশ ও বিচার বিভাগের প্রতি মানুষের আস্থার অভাব। তাঁরা মনে করেন, থানা-পুলিশের কাছে গিয়ে তেমন লাভ হবে না। দ্বিতীয়ত, থানায় মামলা করতে গেলেও নানা রকম হয়রানির শিকার হতে হয়। অনেক ভুক্তভোগী জানিয়েছেন, তঁারা থানায় ছিনতাইয়ের ঘটনার মামলা করতে গেলে দায়িত্বরত কর্মকর্তা মামলা নেননি। বলেছেন, ছিনতাই লেখা যাবে না, বলতে হবে চুরি হয়েছে। থানায় কম মামলা হলে পুরস্কার পাওয়া যায়, বেশি হলে তিরস্কার। তাহলে কর্মকর্তারা কেন তিরস্কৃত হতে যাবেন?

রাজনৈতিক পালাবদলের পর থেকে পুলিশ নিষ্ক্রিয় ছিল—এই যুক্তি সরকারের সাড়ে ছয় মাস পর খাটে না। পুলিশের পাশাপাশি আরও কয়েকটি বাহিনী আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজে নিয়োজিত আছে। বিচারিক ক্ষমতা নিয়ে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজে নিয়োজিত আছেন। এরপরও কেন এত খুন, ডাকাতি, ছিনতাই ও নারী নিগ্রহের ঘটনা?

সর্বশেষ গত সোমবার সন্ধ্যা থেকে পুলিশ, সেনাবাহিনী, বিজিবি ও নৌবাহিনী যৌথ টহল শুরু করেছে। ঢাকা শহরে অনেক জায়গায় তল্লাশিচৌকি বসানো হয়েছে। এর আগে সোমবার বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেছেন, ‘সন্ধ্যার পর থেকে পরিস্থিতি টের পাবেন।’

এর আগে সচিবালয়ে সরকার আইনশৃঙ্খলাবিষয়ক কোর কমিটির বৈঠক হয়। এই তল্লাশি কেবল ঢাকায় সীমিত থাকবে, না দেশের অন্যান্য স্থানেও চলবে, সেটি পরিষ্কার হওয়া প্রয়োজন। কোনো অভিযান বিশেষ এলাকায় সীমিত থাকলে আইনশৃঙ্খলার সার্বিক উন্নতি আশা করা যায় না।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজটি এতটাই জটিল যে কেবল স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করে না। এই কাজে নিয়োজিত বাহিনীগুলোর সব সদস্যকেই সততা, নিষ্ঠা ও সক্ষমতার সঙ্গে কাজ করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির এই অবনতির পেছনে রাজনৈতিক দলগুলোরও দায় কম নয়। চাঁদাবাজি, দখলবাজির বিস্তর অভিযোগ রয়েছে নেতা–কর্মীদের বিরুদ্ধে। দল থেকে বহিষ্কার করার পরেও পরিস্থিতি উন্নতি হয়নি। এ পরিস্থিতির সুযোগ নিচ্ছে সাধারণ অপরাধীরা। এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোকেও আরও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।

অপরাধীদের পাকড়াও করতে সরকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সক্ষমতা বাড়ানোর কথা বলেছে। এগুলো ইতিবাচক বলে ধারণা করি। কিন্তু অভিযান শুরু করার আগেই যদি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ‘আত্মতৃপ্তিতে’ ভোগেন, তাহলে পরিস্থিতির উন্নতির সম্ভাবনা কম। আর যদি অপরাধ দমনকে ‘কর্তব্য’ হিসেবে নেন, তাহলে ইতিবাচক ফল পাওয়ার সম্ভাবনা আছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ২০২৪ স ল র জ ন য় র ত ২০২৫ স ল র জন ত ক পর স থ ত অপর ধ সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

নির্বাচন উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রস্তুতি রয়েছে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রস্তুতি রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

রোববার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ঈদ পরবর্তী সৌজন্য সাক্ষাৎ এবং কোর কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।

লন্ডনে তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠকে নির্বাচনের একটা সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, সে অনুযায়ী নির্বাচন হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রস্তুতি আছে কিনা জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘নির্বাচনের তারিখ দেবে নির্বাচন কমিশন। তারা যে সময়ে নির্বাচনের ডেট ঠিক করবে, আমার মনে হয় আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সেই সময়ের প্রস্তুতি আছে। আমাদের পুলিশও প্রস্তুত আছে।’

এখনও পুলিশ সচল হয়নি- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘এ কথা কে বলেছে! আপনারা যদি আগের ১৫ বছরের মতো ভাবেন, গেলেই পুলিশ পিটুনি দেবে, আমরা তো সেই পুলিশ চাচ্ছি না। আমরা মানবিক পুলিশ চাচ্ছি। যারা সবার সঙ্গে ভালো আচরণ করবে।’

জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘এখনের পুলিশ হচ্ছে মানবিক পুলিশ। তারা এখন ভালো ব্যবহার করে দেখেই সাধারণ জনগণ ভাবছে পুলিশ সচল হয়নি। পুলিশ কিন্তু আগের থেকে আরও বেশি একটিভ।’

তিনি বলেন, ‘আজকে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়ের জন্য সবাই একসঙ্গে হয়েছি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবার সন্তোষজনক ছিল। এটা আপনারাও লিখেছেন।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • চট্টগ্রামে সাংবাদিক পরিচয়ে হোটেল কক্ষে তল্লাশি, সমালোচনা 
  • খেলাপি ঋণ ৪ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে
  • ভারতে কোনো বাংলাদেশি থাকলে উপযুক্ত চ্যানেলে পাঠাতে হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • নির্বাচনের জন‌্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রস্তুত: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • নির্বাচন উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রস্তুতি রয়েছে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • সুদ পরিশোধে ব্যয় বাড়ছে
  • গাজীপুরে ছাঁটাইয়ের প্রতিবাদে কারখানার কর্মকর্তাদের অবরুদ্ধ করে মারধর, আটক ৪৩
  • সংশোধিত সাইবার অধ্যাদেশও আন্তর্জাতিক মানের হয়নি
  • কয়েক দশকের ছায়াযুদ্ধ থেকে এবার প্রকাশ্য সংঘাতে ইরান-ইসরায়েল
  • দীর্ঘ ছুটি শেষে জীবিকার তাগিদে ঢাকায় ফিরছে মানুষ