ইউক্রেন তাদের খনিজ সম্পদ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি বড় ধরনের চুক্তির শর্তাবলীর বিষয়ে রাজি হয়েছে। এ সপ্তাহেই আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিষয়টি নিয়ে চুক্তি সাক্ষর হতে পারে। 

কিয়েভের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার বরাত দিয়ে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।

ওই কর্মকর্তা বলেন, “বেশ কিছু ভালো সংশোধনী নিয়ে আমরা একমত হয়েছি এবং এটিকে একটি ইতিবাচক ফল হিসেবেই দেখছি।” তবে ওই কর্মকর্তা এ ব্যাপারে বিস্তারিত বলেননি।

আরো পড়ুন:

ইউক্রেন ইস্যুতে জাতিসংঘে রাশিয়ার পক্ষ নিল যুক্তরাষ্ট্র

ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শেষ হতে পারে এই সপ্তাহে: হোয়াইট হাউজ

সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র প্রাথমিকভাবে ইউক্রেনের ৫০০ বিলিয়ন ডলারের প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর যে অধিকার দাবি করেছিল সেটি থেকে সরে এসেছে। তবে একই সঙ্গে যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনকে নিরাপত্তা নিশ্চয়তাও দিচ্ছে না তারা, অথচ এটি ইউক্রেনের মূল দাবির একটি ছিল।

ওভাল অফিসে ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, তিনি আশা করছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ওয়াশিংটনে এসে এ সপ্তাহেই চুক্তিতে স্বাক্ষর করবেন। এর আগে দুই সপ্তাহ ধরে তারা একে অপরকে বিরুদ্ধে উত্তপ্ত মন্তব্য করেছিলেন।

সমঝোতায় উপনীত হবার বিষয়টি নিশ্চিত না করেই ট্রাম্প মঙ্গলবার বলেন, চুক্তির বিনিময়ে ইউক্রেন লড়াই চালিয়ে যাবার অধিকার পাবে।

তিনি বলেন, “তারা খুব সাহসী। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র, এর অর্থ ও সামরিক উপকরণ ছাড়া এই যুদ্ধ অল্প সময়ের মধ্যেই শেষ হয়ে যেতো।”

ইউক্রেনে মার্কিন সরঞ্জাম এবং গোলাবারুদ সরবরাহ অব্যাহত থাকবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,  “হয়তো রাশিয়ার সঙ্গে আমাদের একটি চুক্তি হওয়া পর্যন্ত.

..আমাদের একটি চুক্তিতে পৌঁছানো দরকার, না হয় এটা চলতে থাকবে।”

ট্রাম্প আরো বলেন, “শান্তি চুক্তির পর ইউক্রেনে ‘কোনো এক ধরনের শান্তিরক্ষা’ কার্যক্রমের প্রয়োজন হবে, তবে তা সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হতে হবে।”

ইউক্রেনের কাছে লিথিয়াম ও টাইটানিয়ামসহ গুরুত্বপূর্ণ উপাদান এবং খনিজ পদার্থের মজুদ রয়েছে, সেইসঙ্গে বিপুল পরিমাণে কয়লা, গ্যাস, তেল এবং ইউরেনিয়ামের মজুদ রয়েছে। 

ট্রাম্প দাবি করেছেন, এই চুক্তির ফলে ইউক্রেন যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র যে ব্যয় করেছে তার চেয়ে বেশি পাবে।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ের একটি সূত্রের মতে, চুক্তির নতুন শর্তগুলো ইউক্রেনের জন্য অনেক ভালো।

ইউক্রেনের উপ-প্রধানমন্ত্রী ওলহা স্টেফানিশিনা বলেছেন, এই চুক্তি কিয়েভ ও ওয়াশিংটনের মধ্যে আরো সহযোগিতার পথ প্রশস্ত করবে।

গত সপ্তাহেই ট্রাম্প জেলেনস্কিকে একজন ‘স্বৈরশাসক’ হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন এবং যুদ্ধ শুরুর জন্য অনেকটা ইউক্রেনকেই দোষ দিয়েছেন। এর আগে জেলেনস্কি ইউক্রেনের ৫০০ বিলিয়ন ডলারের খনিজ সম্পদের যে দাবি যুক্তরাষ্ট্র করেছিল তা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।

তিনি বলেছিলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ‘বিভ্রান্তির জগতে’ বাস করছেন, যা রাশিয়ার তৈরি।

রাশিয়ার আগ্রাসনের পর সামরিক ও অন্য যেসব সহায়তা যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে দিয়েছে তার পরিবর্তে ইউক্রেনের খনিজ সম্পদের ওপর অধিকার দিতে চাপ দিয়ে আসছিলেন ট্রাম্প।

এর প্রতিক্রিয়ায় জেলেনস্কি বলেছিলেন, “আমি আমার দেশ বিক্রি করতে পারি না।”

মঙ্গলবার ট্রাম্প বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে তিনশ থেকে সাড়ে তিনশ বিলিয়ন ডলার দিয়েছে। আমরা সেই অর্থ ফেরত চাই। আমরা বড় সমস্যায় থাকা দেশকে সাহায্য করেছি.. কিন্তু মার্কিন করদাতারা এখন তাদের অর্থ ফেরত পেতে চায়।” 

কিয়েভ আশা করছে, যুদ্ধবিরতি স্বাক্ষরের পর যদি এই যুদ্ধ আবার শুরু হয়, তাহলে খনিজ সম্পদ চুক্তি হোয়াইট হাউজকে ইউক্রেনকে রক্ষা করার একটি কারণ দিতে পারে।

অনেকেই মনে করছেন, ইউক্রেনের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির নতুন মোড়ের সূচনা হতে যাচ্ছে। আগামী চার বছরে ট্রাম্প ও তার বৈদেশিক নীতি বিষয়ক দল ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির প্রয়োগ করবে বলে মনে করা হচ্ছে।

 

মঙ্গলবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, তিনি রাশিয়া-অধিকৃত ইউক্রেন অঞ্চলসহ পুরো রাশিয়ায় খনিজ সম্পদে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রবেশাধিকার দিতে প্রস্তুত। তিনি আরো দাবি করেন, রাশিয়ায় ইউক্রেনের চেয়ে বেশি বিরল খনিজ রয়েছে। 

ইউক্রেন ও তার ইউরোপিয়ান সহযোগীদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়ার মধ্যে সাম্প্রতিক ঘনিষ্ঠতা নিয়ে উদ্বেগ আছে। সৌদি আরবে গত সপ্তাহে দেশ দুটি বৈঠকে বসেছিল।

এ নিয়ে কিয়েভ ও ইউরোপের মধ্যে এই উদ্বেগ আছে যে, তাদের বাদ দিয়েই দেশ দুটি শান্তি চুক্তিতে এগিয়ে যেতে পারে।

ঢাকা/ফিরোজ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইউক র ন ইউক র ন র কর ছ ল র একট

এছাড়াও পড়ুন:

পঞ্চগড় সীমান্তে গুলিবিদ্ধ যুবকের মৃত্যু

পঞ্চগড় সীমান্তে গুলিবিদ্ধ যুবক মারা গেছেন। শনিবার (১৪ জুন) দিবাগত রাত ৩টার দিকে সদর উপজেলার হাড়িভাসা ইউনিয়নের ঘাগড়া সীমান্তে গুলিবিদ্ধ হন তিনি। পরে আহতাবস্থায় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে তিনি মারা যান।

নিহতের নাম রাজু ইসলাম (৩৫)। তার বাড়ি হাড়িভাসা ইউনিয়নের ঝুলিপাড়া গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের আব্দুল কুদ্দুসের ছেলে। রাজু সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে ভারতীয় গরু পারাপারের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।

এলাকাবাসী অভিযোগ করেন, ঘাগড়া সীমান্তের মেইন পিলার ৭৫১ এর বিপরীতে ভারতীয় এলাকার কিছু যায়গায় কাঁটাতারের বেড়া না থাকায় এলাকাটি ভারতীয় গরু পারাপারের গুরুত্বপূর্ণ রুট হিসেবে ব্যবহার করে আসছে চোরাকারবারিরা। শনিবার মধ্যরাতে এই মেইন পিলারের ৩ নম্বর সাব পিলার সংলগ্ন এলাকায় গুলিবিদ্ধ হন রাজু। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) কাঞ্চনজঙ্ঘা ক্যাম্পের সদস্যরা তার দুই পায়ে গুলি করে। ঘটনাস্থলের পাশেই রাজুর বাড়ি হওয়ায় গুলিবিদ্ধ অবস্থাতেই রাজু বাড়ি ফেরেন। পরে আহতাবস্থায় পরিবারের সদস্যরা তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে তিনি মারা যান। রবিবার দুপুরে মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে পাঠায় পুলিশ।

আরো পড়ুন:

কুষ্টিয়ায় সাপের কামড়ে গৃহবধূর মৃত্যু

হবিগঞ্জে বজ্রপাতে কৃষকের মৃত্যু

এদিকে রাজুর মৃত্যু বিএসএফের গুলিতে নয়, হার্ট অ্যাটাকে হয়েছে বলে দাবি করেছেন নীলফামারী ৫৬ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল শেখ মো. বদরুদ্দোজা। নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকেও একই দাবি করা হয়েছে বলে জানান তিনি। তবে পুলিশ বলছে, প্রাথমিক সুরতহালে মরদেহের পায়ে গুলির চিহ্ন পাওয়া গেছে।

স্থানীয় ইউপি সদস্য হাসিবুল ইসলাম বলেন, ‘‘রাজুর হৃদরোগ থাকলেও তার মৃত্যু বিএসএফের গুলিতে হয়েছে। তার দুই পায়ে গুলির চিহ্ন রয়েছে।’’

হাড়িভাসা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইয়েদ নূর-ই-আলম বলেন, ‘‘খবর পেয়ে রাজুর বাড়িতে পাই। তার দুই পায়ে ক্ষত চিহ্ন দেখেছি। ধারণা করছি, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়েছে। গত কয়েক বছরে ঘাগড়া সীমান্তে এমন পাঁচ জনের মৃত্যু হলো।’’

নীলফামারী ৫৬ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল শেখ মো. বদরুদ্দোজা বলেন, ‘‘গত রাতে বর্ডারে কোনো গোলাগুলি হয়নি- এটা আমরা নিশ্চিত হয়েছি। সেখানে বিজিবির পেট্রোল টিম ছিল, আশপাশে বাড়িঘর ছিল। বিএসএফ গুলি করলে শব্দ শোনা যেত, তারা কেউ কোনো শব্দ শোনেনি। চোরাকারবারি দমনে বিএসএফ অনেক সময়েই ফায়ার করে, আমরা সব সময় এসবের প্রতিবাদ করি। যদিও তারা বিভিন্ন সময় বলে, আত্মরক্ষার্থে ফায়ার করে। এ ক্ষেত্রে ফায়ারের শব্দ অনেক দূর পর্যন্ত শোনা যায়। কিন্তু, গত রাতে কোনো শব্দ শোনা যায়নি। আমরা বিএসএফের সঙ্গেও কথা বলেছি, তারাও জানিয়েছে কোনো ফায়ার হয়নি। এরপরও সৌজন্য সাক্ষাতে এ বিসয়ে আমরা তাদের আরো জিজ্ঞেস করব।’’

তিনি আরো বলেন, ‘‘রাজুর মৃত্যুর খবর পেয়ে তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তারা আমাদের জানিয়েছেন, রাজু হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন। অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়েছে। পরবর্তীতে জেনেছি, তার পায়ে নাকি গুলির চিহ্ন রয়েছে। কিন্তু, এ বিষয়ে তারা আমাদের কিছুই জানায়নি।’’

এ বিষয়ে পঞ্চগড়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. শইমী ইমতিয়াজ বলেন, ‘‘নিহতের দুই পায়ে গুলির চিহ্ন রয়েছে। মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। হার্ট অ্যাটাকের বিষয়টি চিকিৎসক বলতে পারবেন। এছাড়া, মৃত্যুর সঠিক কারণ ময়নাতদন্তের পর বিস্তারিত বলা যাবে।’’

এ বিষয়ে জানতে রাজুর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

ঢাকা/নাঈম/রাজীব

সম্পর্কিত নিবন্ধ