চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে বাংলাদেশের সব আশাই শেষ হয়ে গেছে। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লক্ষ্যর কথা জানিয়ে দুবাই ও পাকিস্তান গেলেও আদতে প্রথম দুই ম্যাচ খুব বাজেভাবে হেরে গ্রুপপর্ব থেকে বিদায় নিয়েছে বাংলাদেশ। হারটাও যেনতেন হার নয়। স্রেফ অসহায় আত্মসমর্পণ।

আইসিসি ইভেন্টে বাংলাদেশ শেষ কয়েক বছরে অন্তত একটি জয় পেয়েছে। ২০১৫ বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনাল খেলেছে। ২০১৯ বিশ্বকাপে জয় পেয়েছিল তিনটি। ২০২৩ বিশ্বকাপে জয় একটি। ২০১৭ চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে একটি জয়ের সঙ্গে একটিতে পয়েন্ট ভাগাভাগি করে। এবার কি জয় ছাড়াই মিশন শেষ করবে বাংলাদেশ? আগামীকাল বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ পাকিস্তান। রাওয়ালপিন্ডিতে দুই দল মুখোমুখি হবে। পাকিস্তানও কোনো ম্যাচ না জিতে এবারের আসর থেকে বিদায় নিয়েছে।

টুর্নামেন্ট বিবেচনায় ম্যাচটা ডেড রাবার। তবে দুই দল শেষটা ভালো করতে চায় অন্তত একটি জয় নিয়ে। বাংলাদেশের লক্ষ্য যে করেই হোক পাকিস্তানকে হারানো। এজন্য নিজেদের ভুলগুলো শুধরে মাঠ নামার কথা বললেন সহকারী কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন। পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচের আগে সংবাদ সম্মেলনে সালাউদ্দিন বলেছেন, ‘‘আমরা আগে কি করেছি তা নিয়ে মোটেও চিন্তিত নই। আগামীকাল আমাদেরকে ভালো খেলতে হবে।  যেটা আমাদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ।’’

আরো পড়ুন:

আফগানদের ব্রিটিশ বধ

বাংলাদেশের কাছে হারলে অন্যরকম ‘বিব্রতকর’ রেকর্ড গড়বে পাকিস্তান

দুই ম্যাচে ব্যাটিং খরায় ভুগেছে বাংলাদেশ। ব্যাটসম্যানদের পারফরম্যান্স ছিল তালগোল পাকানো। ভারত ও নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে আড়াইশও ছুঁতে পারেনি দলের রান। পাকিস্তানকে হারাতে হলে ব্যাটিংয়ে ভালো করতে হবে বলতে দ্বিধা করলেন না সালাউদ্দিন, ‘‘আমরা দুই ম্যাচেই ব্যাটিং ভালো করিনি। যা আমাদের জন্য উদ্বেগের জায়গা।  প্রথম ম্যাচে আমাদের টপ অর্ডার ভালো করেনি। দ্বিতীয় ম্যাচে আমাদের মিডল অর্ডার ভালো করেনি।  আমাদেরকে অতি দ্রুতই পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে।  উইকেট ভালো আছে।  আমার অনুভব হচ্ছে, কাল ব্যাটসম্যানরা ভালো করবে।  আমার চিন্তার যত কারণ ব্যাটসম্যানদের ব্যাটিং। বোলাররা দুই ম্যাচেই ভালো করেছে। আশা করছি তারা আগামীকালও ভালো করবে।’’

ম্যাচ জয়ের জন্য দুই বিভাগকে সমানতালে জ্বলে উঠার কথা বললেন সালাউদ্দিন, ‘‘আপনি যদি জিততে চান আপনাকে দুই বিভাগে ভালো করতেই হবে। এখন পর্যন্ত আমাদের বোলিং বিভাগ ব্যাটসম্যানদের থেকে অনেক ভালো পারফর্ম করছে। আমি মনে করি আমাদের টপ এবং মিডল অর্ডারের ব্যাটসম্যানদের নিয়মিত রান করতে হবে।  দেখা যাচ্ছে, আমাদের টপ অর্ডার একদিন ভালো করছে। সেদিন মিডল অর্ডার খারাপ করছে। আবার মিডল অর্ডার ভালো করলে টপ অর্ডার খারাপ করছে।  এজন্য দুই বিভাগের পারফরম্যান্সের মেলবন্ধন থাকতে হবে। তাহলেই আমরা এই উইকেটে ৩০০ রান করতে পারব। যদি তা পারি তাহলে বোলার আটকে দিতে পারবে।’’

ঢাকা/ইয়াসিন/আমিনুল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

লবণ শ্রমিকদের নুন আনতে পান্তা ফুরায়

“প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাঠে কাজ করি। লবণ তুলি, বস্তা ভরি। কিন্তু যে মজুরি পাই, তা দিয়ে এক বেলার চাল-ডালও কেনা যায় না। লবণ চাষের কাজ করলেও আমাদের নুন আনতে পান্তা ফুরায়।” 

এ কথা কক্সবাজারের কুতুবদিয়া উপজেলার তাবলেরচর এলাকার লবণ শ্রমিক জাহেদ আলমের। হাজারো লবণ শ্রমিক দিনভর কড়া রোদে ঘাম ঝরালেও মিলছে না ন্যায্য মজুরি। নিদারুণ কষ্টে দিনাতিপাত করছেন জাহেদ আলমের মতো শত শত লবণ শ্রমিক। 

উত্তর ধুরুংয়ের লবণ চাষি রশীদ আহমদ বলেন, “এবার সাড়ে ৫ কানি জমিতে লবণ চাষ করেছি। এই বছর আবহাওয়া ভালো ছিল, উৎপাদনও হয়েছে। কিন্তু দাম পড়ে যাওয়ায় আমরা লোকসানে যাচ্ছি। প্রতিমণ লবণের উৎপাদন খরচ পড়ে ৩৫০ টাকার মতো, অথচ বিক্রি হচ্ছে ১৮০-১৮৫ টাকায়। এই লোকসান শ্রমিকদের মজুরিতেও প্রভাব পড়েছে।”

তিনি জানান, মজুরি দিতে না পারায় একদিকে শ্রমিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, অন্যদিকে চাষিরাও হতাশ হয়ে পড়ছেন।

আরমান হোসেন নামে আরেক শ্রমিক বলেন, “লবণের কাজ করেই জীবিকা নির্বাহ করে আসছি। লবণের দাম কম পেলেই চাষিরা আমাদের পারিশ্রমিকের ওপর লোকসান চাপিয়ে দেয়। এতে আমরা ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হই। এই অনিয়ম দূর হোক।” 

চাষিরা বলছেন, একদিকে জমির ইজারা, পলিথিন, লবণ পরিবহন, শ্রমিক মজুরি-সব খরচ বেড়েছে। অন্যদিকে বাজারে সিন্ডিকেট করে দাম নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে প্রতি মণ লবণে তারা ১৭০ টাকার মতো লোকসান গুণছেন। এই লোকসানের কারণে লবণ শ্রমিকরাও দিশেহারা হয়ে পড়ছেন।

লেমশীখালীর চাষি বেলাল উদ্দিন আকাশ বলেন, ‘‘গত বছর এই সময় প্রতি মণ লবণ বিক্রি করেছি ৪৫০ টাকায়। এখন পাই ১৮৫ টাকা। এতে শ্রমিকের মজুরি দিতেও আমরা হিমশিম খাচ্ছি।” 

চাষি আবুল বশর ও সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘‘সিন্ডিকেট করেই দাম নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে যাতে লবণ উৎপাদন কমে যায়। পরে বিদেশ থেকে লবণ আমদানি করার সুযোগ তৈরি হয়। অথচ এতে মাঠের হাজারো শ্রমিকের জীবিকা হুমকির মুখে পড়ছে।”

মহেশখালী লবণ চাষি ঐক্য সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি শাহাব উদ্দিন বলেন, ‘‘মজুরি না পেয়ে অনেক শ্রমিক লবণের মাঠ ছাড়ছেন। এইভাবে চলতে থাকলে শ্রমিক সংকট হবে।”

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) কক্সবাজার লবণশিল্প উন্নয়ন প্রকল্পের উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. জাফর ইকবাল ভূঁইয়া বলেন, “চাষিদের ন্যায্য দাম না পাওয়ার কারণে উৎপাদনে অনীহা দেখা দিচ্ছে। এর ফলে শ্রমিকদেরও চাহিদা কমে যাচ্ছে। বাজারে দাম কমে যাওয়ার পেছনের কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” 

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে কক্সবাজার জেলার সদর, কুতুবদিয়া, মহেশখালী, পেকুয়া, চকরিয়া, ঈদগাঁও, টেকনাফ এবং চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলায় প্রায় ৬৮ হাজার একর জমিতে লবণ চাষ হচ্ছে। গত ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত এসব অঞ্চলে উৎপাদিত হয়েছে ১ লাখ ৩৫ হাজার মেট্রিক টন লবণ। মৌসুম শেষে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৬ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন, যা দেশের বার্ষিক চাহিদার সমান।

সম্পর্কিত নিবন্ধ