চলতি বছরের শেষ দিকে চালু হচ্ছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল। বর্তমানে বিমানবন্দরটি ৮০ লাখ মানুষকে সেবা দিচ্ছে। টার্মিনালটি চালু হলে যাত্রী সেবার সক্ষমতা দাঁড়াবে ১ কোটি ২০ লাখ। বাড়বে ফ্লাইট চলাচল। এদিকে থার্ড টার্মিনাল চালু হওয়াকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ হয়ে ফ্লাইট পরিচালনার আগ্রহ বাড়ছে আন্তর্জাতিক উড়োজাহাজ সংস্থাগুলো।

বিমানবন্দরের কর্মকর্তারা জানান, থার্ড টার্মিনাল চালুর বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে চুক্তির প্রক্রিয়া চলছে। এছাড়া টার্মিনাল চালু হওয়াকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে বাংলাদেশ থেকে ফ্লাইট পরিচালনা করার আগ্রহ বাড়ছে আন্তর্জাতিক উড়োজাহাজ সংস্থাগুলোর। যারা ইতোমধ্যে বাংলাদেশ থেকে ফ্লাইট পরিচালনা করছে, তারা অতিরিক্ত ফ্রিকোয়েন্সির আবেদন করছে। আর অন্যান্যরা আবেদন করছে ফ্লাইট চালুর। এরই মধ্যে ইথুপিয়া এয়ারলাইন্স স্বল্প পরিসরে ফ্লাইট পরিচালনা করছে। অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে আরও বেশ কয়েকটি। 

এ বিষয়ে বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ারভাইস মার্শাল মো.

মঞ্জুর কবীর ভুঁইয়া সমকালকে বলেন, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালের কাজ ৯৯ শতাংশ শেষ হয়েছে। চলতি বছরের শেষে অক্টোবর শুরুতে এটি চালু করা হবে। উন্নত যাত্রীসেবা ও নিরাপত্তায় দক্ষ জনবলের পাশাপাশি থাকছে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা।

তিনি বলেন, এ টার্মিনাল চালু হওয়াকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে ঢাকা থেকে ফ্লাইট পরিচালন করার আগ্রহ বাড়ছে আন্তর্জাতিক উড়োজাহাজ সংস্থাগুলোর। এছাড়া শিগগির চালু হচ্ছে ঢাকা–করাচি সরাসরি ফ্লাইট। এ রুটে ফ্লাইট পরিচালনার জন্য আবেদন করেছে ফ্লাই জিন্নাহ নামে পাকিস্তানের বেসরকারি একটি এয়ারলাইন্স। তাদের অনুমোদনও দেওয়া হয়েছে।

সূত্রে জানা যায়, সম্পর্ক স্বাভাবিক হওয়ার পর চালু হতে যাচ্ছে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা ঢাকা–করাচি রুটও। দুই দেশের ব্যবসায়িকসহ বিভিন্ন সম্পর্ক জোরদার করতে দীর্ঘ সাত বছর পর এ রুটে ফের সরাসরি ফ্লাইট চালুর প্রস্তুতি চলছে। 

এর আগে পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্স ঢাকা–করাচি ফ্লাইট পরিচালনা করলেও এবার ফ্লাইট পরিচালনায় ফ্রিকোয়েন্সি চেয়েছে ‘ফ্লাই জিন্নাহ’ নামে পাকিস্তানের একটি বেসরকারি উড়োজাহাজ সংস্থা। বেবিচক তাদের অনুমোদনও দিয়েছে। 

বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন মো. কামরুল ইসলাম সমকালকে জানান, বর্তমান শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করছে ৩৮ এয়ারলাইন্স। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত বিমান সংস্থা ছাড়াও ৩টি বেসরকারি এয়ারলাইন্স রয়েছে। প্রতিদিন বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের ১৫০টি ফ্লাইট উড্ডয়ন-অবতরণ করে। এ সময় বিমানবন্দর থেকে আন্তর্জাতিক রুটে ৩০ হাজার যাত্রী যাতায়াত করেন।

তিনি বলেন, প্রতিদিন আভ্যন্তরীণ রুটে ১৪০টির অধিক ফ্লাইট পরিচালনা করছে রাষ্ট্রায়ত্ত বিমান ছাড়াও ইউএস বাংলা, নভোএয়ার ও এয়ার অ্যাস্ট্রাসহ দেশীয় ৩টি বেসরকারি এয়ারলাইন্স। প্রতিদিন আভ্যন্তরীণ রুটে অন্তত ৩৫ হাজার যাত্রী যাতায়াত করেন।

কামরুল ইসলাম আরও বলেন, বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালকে কেন্দ্র বিভিন্ন গন্তব্যে সরাসরি ফ্লাইট পরিচালনার আগ্রহ নিয়ে এগিয়ে আসছে বিদেশি নামি-দামি বিভিন্ন এয়ারলাইন্স। এতে করে একদিকে যেমন রাজস্ব আয় বাড়ছে বেবিচকের, অন্যদিকে উন্নত যাত্রীসেবায় দক্ষ জনবলও গড়ে উঠছে বিমানবন্দরে।

বেসরকারি ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সর মহাব্যবস্থাপক ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. কামরুল ইসলাম সমকালকে জানান, দীর্ঘ কয়েক বছর বন্ধ থাকা ঢাকা–করাচি রুটে সরাসরি ফ্লাইট চালুর পরিকল্পনার বিষয়টি উন্নত করবে দুই দেশের এভিয়েশন খাত। এ ছাড়া দুই দেশের মধ্যে উন্নত হবে সম্পর্ক। ভবিষ্যতে এ রুটে ফ্লাইট পরিচালনার পরিকল্পনা রয়েছে ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সেরও।

থার্ড টার্মিনালের সুযোগ–সুবিধা নিয়ে বেবিচকের প্রধান প্রকৌশলী মো. হাবিবুর রহমান সমকালকে বলেন, আধুনিক সুযোগ-সুবিধায় এ টার্মিনালে থাকছে ২৪টি বোর্ডিং ব্রিজ। তবে প্রকল্পের প্রথম ধাপে চালু করা হবে ১২টি বোর্ডিং ব্রিজ। বহির্গমনের জন্য রাখা হবে ১১৫টি চেক-ইন কাউন্টার। এর মধ্যে থাকবে ১৫টি সেলফ সার্ভিস চেক-ইন কাউন্টার। ১০টি স্বয়ংক্রিয় পাসপোর্ট কন্ট্রোল কাউন্টারসহ ডিপারচার ইমিগ্রেশন কাউন্টার থাকবে ৬৬টি। আগমনীর ক্ষেত্রে ৫টি স্বয়ংক্রিয় চেক-ইন কাউন্টারসহ মোট ৫৯টি পাসপোর্ট ও ১৯টি চেক-ইন অ্যারাইভাল কাউন্টার। ১৬টি আগমনী ব্যাগেজ বেল্ট। অতিরিক্ত ওজনের ব্যাগেজের জন্য থাকবে চারটি পৃথক বেল্ট।

টার্মিনালের সঙ্গে থাকবে মাল্টিলেভেল কার পার্কিং ভবন। এতে ১ হাজার ৪৪টি গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা থাকবে। ভবনের অভ্যন্তরে দক্ষিণ পাশে সর্বাধুনিক সুবিধা সম্পন্ন ভিভিআইপি স্পেস থাকবে। ভবনের সঙ্গে ভূ-গর্ভস্থ সুড়ঙ্গ পথ ও উড়ালসেতু নির্মাণ হবে। এর মাধ্যমে মেট্রোরেল ও ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সংযোগ থাকবে। এ ছাড়া থাকছে আন্তর্জাতিক মানের অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা। 

প্রসঙ্গত, শাহজালাল বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালের নির্মাণ শুরু হয় ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে। এর আগে ২০১৭ সালের ২৪ অক্টোবর প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন পায়।
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ফ ল ইট চ শ হজ ল ল ব সরক র চ ক ইন দ র কর ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

দ্রুত প্রকল্প বাস্তবায়নে দক্ষতা ও কার্যকারিতার ওপর গুরুত্বারোপ

দ্রুত প্রকল্প বাস্তবায়নে অধিক দক্ষতা ও কার্যকারিতার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে এডিবি। এ বিষয়ে সংস্থাটির ঢাকাস্থ এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর হোয়ি ইউন জং বলেন, “বাংলাদেশ যখন তার অর্থনীতি বহুমুখীকরণ করছে, সংস্কার বাস্তবায়ন করছে এবং ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উত্তরণের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে, তখন দ্রুত প্রকল্প বাস্তবায়নে অধিক দক্ষতা ও কার্যকারিতার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।”

সোমবার (২৮ এপ্রিল) সকালে রাজধানীর চীন-মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে এডিবি আয়োজিত বিজনেস অপরচুনিটিজ সেমিনার-২০২৫ এ অংশ নিয়ে এ কথা বলেন তিনি।

তিনি বলেন, “আমরা অর্থনৈতিকভাবে দক্ষতা, ন্যায়সঙ্গতা, স্বচ্ছতা, গুণগতমান এবং অর্থের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে প্রকিউরমেন্ট সময় হ্রাস করার লক্ষ্যে অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করছি।”

আরো পড়ুন:

এপ্রিলের ২৬ দিনে রেমিট্যান্স এলো ২২৭ কোটি ডলার

বিএসইসি চেয়ারম্যানের পদত্যাগের গুঞ্জনে সূচকের উত্থান

তিনি বলেন, “এডিবির বেসরকারি খাত সম্প্রসারণের কৌশলের আলোকে এই খাতে ব্যবসার সুযোগও প্রসারিত করছি।”

সেমিনারে ৫০০ এর অধিক পরামর্শক, ঠিকাদার, সরবরাহকারী, সিভিল সোসাইটি সংগঠন, সরকারি কর্মকর্তা, উন্নয়ন সহযোগী, কূটনৈতিক মিশনের কর্মী এবং বিভিন্ন সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের ব্যক্তিরা অংশ নেন।

এডিবির প্রকিউরমেন্ট, পোর্টফোলিও ও ফিন্যান্সিয়াল ম্যানেজমেন্ট বিভাগের পরিচালক জেসপার পেডারসেন মূল বক্তব্য দেন। বক্তব্যে তিনি বলেন, “উন্নয়নশীল সদস্য দেশগুলোর ক্রমবর্ধমান ও পরিবর্তনশীল চাহিদা মেটাতে এডিবি তার প্রক্রিয়াসমূহ আরো উন্নত করছে। এতে টেকসই, স্বচ্ছতা এবং গুণগতমান বজায় রাখার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।”

সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. এহসানুল হক অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কনসালটিং ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যান্ড আর্কিটেক্টস (বেসিয়া), বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কনস্ট্রাকশন ইন্ডাস্ট্রি (বেসিআই) এবং বাংলাদেশ উইমেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (বিডব্লিউসিসিআই) সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

সেমিনারে এডিবি জানিয়েছে, বাংলাদেশের সঙ্গে ৫২ বছরের অংশীদারত্বে এডিবি ৬২ বিলিয়নেরও বেশি ইউএস ডলার ঋণ ও অনুদান (সহ-অর্থায়ন) দিয়েছে, যা দেশের অবকাঠামো, জনসেবা এবং সামাজিক উন্নয়নের মানোন্নয়নে ব্যয় হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশে এডিবির প্রকল্প পোর্টফোলিওতে ৫১টি প্রকল্প ও কর্মসূচি রয়েছে, যার মূল্য ১২ (ইউএস ডলার) বিলিয়নেরও বেশি।

এডিবি জানিয়েছে, তারা স্থানীয় শিল্প খাতের বিকাশে তার প্রতিশ্রুতি অব্যাহত রাখবে এবং বাংলাদেশি ঠিকাদার ও পরামর্শকরা দেশীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে ধারাবাহিকভাবে সফলভাবে চুক্তি অর্জন করে চলেছেন। ভবিষ্যতে এডিবির কার্যক্রম সম্প্রসারিত হওয়ায় এই সুযোগগুলো আরো বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করছে প্রতিষ্ঠানটি।

ঢাকা/হাসনাত/সাইফ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দ্রুত প্রকল্প বাস্তবায়নে দক্ষতা ও কার্যকারিতার ওপর গুরুত্বারোপ