ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে ৬ মার্চ অনুষ্ঠেয় বিশেষ ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে, যেখানে ইউক্রেনের জন্য সম্ভাব্য ইউরোপীয় ‘নিরাপত্তা নিশ্চয়তা’ নিয়ে আলোচনা হবে। ইউরোপীয় কাউন্সিলের সভাপতি আন্তোনিও কস্তা বৃহস্পতিবার এই তথ্য জানিয়েছেন। খবর এএফপির।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন কিয়েভ ও তার ইউরোপীয় মিত্রদের পাশ কাটিয়ে ইউক্রেন যুদ্ধ অবসানে রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছেন, তখন ইউরোপ তাদের অবস্থান স্পষ্ট করার জন্য তৎপর হয়ে উঠেছে।

ব্রাসেলসে আগামী সপ্তাহে অনুষ্ঠেয় বৈঠকে কিয়েভকে সহায়তা এবং ইউরোপের প্রতিরক্ষাব্যবস্থা শক্তিশালী করার বিষয়ে আলোচনা হবে।

আরো পড়ুন:

ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে জরুরি সম্মেলনে বসছেন ইউরোপীয় নেতারা

প্রথম ইউরোপীয় দেশ হিসেবে ডিসপোজেবল ই-সিগারেট নিষিদ্ধ করল বেলজিয়াম

এ ছাড়া ইউক্রেনের জন্য নতুন অস্ত্র সরবরাহ চুক্তির বিষয়ে সমঝোতা হওয়া নিয়েও আশাবাদ রয়েছে।

২৭ সদস্যবিশিষ্ট ইইউ কাউন্সিলের প্রধান কস্তা নেতাদের উদ্দেশে এক আমন্ত্রণপত্রে লিখেছেন, ইউক্রেন সংকটের ‘নতুন গতি’ যেন একটি ‘সামগ্রিক, ন্যায়সঙ্গত ও স্থায়ী শান্তি’ প্রতিষ্ঠায় সহায়ক হয়। সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে তিনি জেলেনস্কিকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন বলেও উল্লেখ করেছেন।

কস্তা আরো উল্লেখ করেন, ইইউ ও এর সদস্য রাষ্ট্রগুলো ইউরোপের নিরাপত্তার জন্য আরো বেশি দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত।

কাউন্সিলের প্রধান বলেন, “ইইউকে অবশ্যই প্রস্তুত থাকতে হবে, যাতে ইউক্রেনে স্থায়ী শান্তি নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা নিশ্চয়তায় ইউরোপীয় অবদান রাখা যায়।”

অন্যদিকে ইইউর শীর্ষ কূটনীতিক কায়া কালাস দ্রুত ইউক্রেনের জন্য একটি বড় অস্ত্র সহায়তা প্যাকেজ দেওয়ার প্রস্তাব করেছেন, যার মধ্যে রয়েছে বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, কামানের গোলা ও ক্ষেপণাস্ত্র। তবে ট্রাম্প ও রাশিয়ার ঘনিষ্ঠ দেশ হাঙ্গেরি এই প্যাকেজের বিরোধিতা করতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে।

প্রতিরক্ষা বিষয়ে কস্তা জানিয়েছেন, এই বৈঠকের লক্ষ্য ‘প্রাথমিক সিদ্ধান্ত’ নেওয়া, যাতে ইউরোপ ‘আরো স্বাধীন, অধিক সক্ষম ও নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ভালোভাবে সজ্জিত’ হতে পারে।

এদিকে রাশিয়ান সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, রাশিয়ান এবং মার্কিন কর্মকর্তারা মস্কো-ওয়াশিংটনের কূটনৈতিক সমস্যা সমাধানের জন্য আজ বৃহস্পতিবার তুরস্কে বৈঠকে বসছেন। দেশ দুটি সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে কাজ করছে।

এর আগে গত সপ্তাহে সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে বৈঠকে বসেছিলেন রাশিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্র। ইউক্রেন ইস্যুতে তিন বছর ধরে চলা বৈরিতার পর, যা ছিল যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার প্রথম সরাসরি প্রচেষ্টা। আজ বৃহস্পতিবার তুরস্কের ইস্তাম্বুলে মার্কিন কনসাল জেনারেলের বাসভবনে যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়ার শীর্ষ কর্মকর্তারা ফের বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন।

টানা তিন বছর ধরে রাশিয়ার আগ্রাসনের শিকার ইউক্রেনকে সামরিক ও অর্থনৈতিক সহায়তা দিয়ে আসছিল যুক্তরাষ্ট্র। সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও কিয়েভের পাশে থাকার অঙ্গীকার করেছিলেন। তবে গত মাসে ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের ইউক্রেন নীতিতে নাটকীয় পরিবর্তন এসেছে।

ট্রাম্প স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেবে না। বুধবার এক বিবৃতিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব ইউরোপের নেওয়া উচিত।

ট্রাম্প এই মন্তব্য শুধু ইউক্রেন ইস্যুতেই নয়, বরং ন্যাটো মিত্রদের নিরাপত্তা নিশ্চয়তা সম্পর্কেও ইউরোপের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।

ঢাকা/ফিরোজ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইউক র ন ইউক র ন র ন র জন য ন শ চয়ত ইউর প য় ইউর প র আমন ত

এছাড়াও পড়ুন:

সাকিবের পথে হাঁটছেন মিরাজ

সাকিব আল হাসানের সঙ্গে নিজের তুলনাকে মেহেদী হাসান মিরাজ হয়তো উপভোগই করেন। কারণ, তাঁর স্বপ্ন সাকিবের মতো বিশ্বনন্দিত অলরাউন্ডার হয়ে ওঠা। সেই পথে বোধ হয় গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে টেস্টে দেশে-বিদেশে সম্প্রতি ভালো করছেন। পাকিস্তানে দারুণ প্রশংসিত ছিলেন অলরাউন্ড পারফরম্যান্স করে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই টেস্টের হোম সিরিজে উভয় টেস্টে নিজেকে ছাপিয়ে গেলেন। সিলেটের হারের ম্যাচেও ১০ উইকেট ছিল তাঁর। চট্টগ্রামে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট নিয়ে সাকিব ও সোহাগ গাজীর কাতারে নাম লেখালেন। মূলত মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ইনিংস ব্যবধানে টেস্ট জেতা সম্ভব হয়। 

গতকাল শতকের ঘরে যেতে কম কসরত করতে হয়নি তাঁর। নব্বইয়ের ঘরে গিয়ে তো অনিশ্চয়তায় পড়ে গিয়েছিলেন হাসানের আউটের শঙ্কায়। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হওয়ায় দ্বিতীয় শতকের দেখা পান তিনি। ২০২১ সালে এই চট্টগ্রামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি ছিল মিরাজের। গতকালের পারফরম্যান্স নিয়ে টাইগার এ অলরাউন্ডার বলেন, ‘ব্যাটিংয়ের সময় চেষ্টা করেছিলাম ২ রান নিয়ে ১০০ রানে যেতে। সেভাবে দৌড় দিয়েছিলাম। কিন্তু ফিল্ডারের হাতে বল চলে গিয়েছিল (হাসি)। তার পর তো আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়েছিলাম। হাসান অনেক ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তানজিমও ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তাইজুল ভাইও। এই তিনজনকেই অনেক অনেক ধন্যবাদ। কারণ, ওদের জন্যই আমি ১০০ রান করতে পেরেছি।’ 

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে করা সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট প্রাপ্তিকে নিজের সেরা পারফরম্যান্স দাবি মিরাজের, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে ১০০ করেছিলাম, ৩ উইকেট নিয়েছিলাম। অল্পের জন্য ৫ উইকেট হয়নি। হলে ভালো লাগত। ওই ম্যাচ হেরেছিলাম এই মাঠে। সে জিনিসটা মাথায় ছিল। ভালো লাগছে ম্যাচটি জিতেছি।’ মিরাজ ১৬২ বলে ১১টি চার ও একটি ছয় মেরে ১০৪ রান করেন। ২১ ওভারে ৩২ রান দিয়ে নেন পাঁচ উইকেট।

টেস্টে এ রকম অলরাউন্ড পারফরম্যান্স বাংলাদেশে আর দু’জনের আছে। সাকিব আল হাসান দু’বার ম্যাচে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট পেয়েছেন ২০১১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে মিরপুরে আর ২০১৪ সালে খুলনায়। সোহাগ গাজী নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট শিকার করেন চট্টগ্রামে। সেই মাইলফলক ছোঁয়া মিরাজকে সম্প্রতি অলরাউন্ডার ক্যাটেগরিতে ফেলা হয়। সাকিবের বিকল্প ভাবা হয় তাঁকে এখন। 

এ ব্যাপারে মিরাজের অভিমত, ‘দেখেন একটা জিনিস, যখন সাকিব ভাই ছিলেন, ভিন্ন রোল ছিল। এখন ভিন্ন রোল। যেহেতু টিম ম্যানেজমেন্ট, সবাই ব্যাটিংয়ে আস্থা রাখে। আমিও ভেবেছি আমার ব্যাটিংটা গুরুত্বপূর্ণ। এখন হয়তো আমি লিডিং রোল প্লে করছি, আগে সাকিব ভাই করত। এখন আমাদের দায়িত্ব আরও বেশি।’ 

সিলেটে দুই ইনিংসে পাঁচ উইকেট করে নিয়েও দলকে জেতাতে পারেননি মিরাজ। চট্টগ্রামে সাদমান, তাইজুলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ম্যাচ জয়ের নায়ক হন। এই সাফল্য নিয়ে বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে, প্রথম ম্যাচ হারার পর যেভাবে কামব্যাক করেছি, এটা খুবই দরকার ছিল। আমাদের সবাই ভেবেছিল, আমরা ভালো করব।’ মিরাজ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন কোচিং স্টাফ ও সতীর্থের কাছে। আর তাঁর কাছে কৃতজ্ঞতা পুরো দলের।

সম্পর্কিত নিবন্ধ