নিরাপত্তা নিশ্চয়তার আলোচনায় জেলেনস্কিকে ইইউ’র আমন্ত্রণ
Published: 27th, February 2025 GMT
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে ৬ মার্চ অনুষ্ঠেয় বিশেষ ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে, যেখানে ইউক্রেনের জন্য সম্ভাব্য ইউরোপীয় ‘নিরাপত্তা নিশ্চয়তা’ নিয়ে আলোচনা হবে। ইউরোপীয় কাউন্সিলের সভাপতি আন্তোনিও কস্তা বৃহস্পতিবার এই তথ্য জানিয়েছেন। খবর এএফপির।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন কিয়েভ ও তার ইউরোপীয় মিত্রদের পাশ কাটিয়ে ইউক্রেন যুদ্ধ অবসানে রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছেন, তখন ইউরোপ তাদের অবস্থান স্পষ্ট করার জন্য তৎপর হয়ে উঠেছে।
ব্রাসেলসে আগামী সপ্তাহে অনুষ্ঠেয় বৈঠকে কিয়েভকে সহায়তা এবং ইউরোপের প্রতিরক্ষাব্যবস্থা শক্তিশালী করার বিষয়ে আলোচনা হবে।
আরো পড়ুন:
ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে জরুরি সম্মেলনে বসছেন ইউরোপীয় নেতারা
প্রথম ইউরোপীয় দেশ হিসেবে ডিসপোজেবল ই-সিগারেট নিষিদ্ধ করল বেলজিয়াম
এ ছাড়া ইউক্রেনের জন্য নতুন অস্ত্র সরবরাহ চুক্তির বিষয়ে সমঝোতা হওয়া নিয়েও আশাবাদ রয়েছে।
২৭ সদস্যবিশিষ্ট ইইউ কাউন্সিলের প্রধান কস্তা নেতাদের উদ্দেশে এক আমন্ত্রণপত্রে লিখেছেন, ইউক্রেন সংকটের ‘নতুন গতি’ যেন একটি ‘সামগ্রিক, ন্যায়সঙ্গত ও স্থায়ী শান্তি’ প্রতিষ্ঠায় সহায়ক হয়। সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে তিনি জেলেনস্কিকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন বলেও উল্লেখ করেছেন।
কস্তা আরো উল্লেখ করেন, ইইউ ও এর সদস্য রাষ্ট্রগুলো ইউরোপের নিরাপত্তার জন্য আরো বেশি দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত।
কাউন্সিলের প্রধান বলেন, “ইইউকে অবশ্যই প্রস্তুত থাকতে হবে, যাতে ইউক্রেনে স্থায়ী শান্তি নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা নিশ্চয়তায় ইউরোপীয় অবদান রাখা যায়।”
অন্যদিকে ইইউর শীর্ষ কূটনীতিক কায়া কালাস দ্রুত ইউক্রেনের জন্য একটি বড় অস্ত্র সহায়তা প্যাকেজ দেওয়ার প্রস্তাব করেছেন, যার মধ্যে রয়েছে বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, কামানের গোলা ও ক্ষেপণাস্ত্র। তবে ট্রাম্প ও রাশিয়ার ঘনিষ্ঠ দেশ হাঙ্গেরি এই প্যাকেজের বিরোধিতা করতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে।
প্রতিরক্ষা বিষয়ে কস্তা জানিয়েছেন, এই বৈঠকের লক্ষ্য ‘প্রাথমিক সিদ্ধান্ত’ নেওয়া, যাতে ইউরোপ ‘আরো স্বাধীন, অধিক সক্ষম ও নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ভালোভাবে সজ্জিত’ হতে পারে।
এদিকে রাশিয়ান সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, রাশিয়ান এবং মার্কিন কর্মকর্তারা মস্কো-ওয়াশিংটনের কূটনৈতিক সমস্যা সমাধানের জন্য আজ বৃহস্পতিবার তুরস্কে বৈঠকে বসছেন। দেশ দুটি সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে কাজ করছে।
এর আগে গত সপ্তাহে সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে বৈঠকে বসেছিলেন রাশিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্র। ইউক্রেন ইস্যুতে তিন বছর ধরে চলা বৈরিতার পর, যা ছিল যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার প্রথম সরাসরি প্রচেষ্টা। আজ বৃহস্পতিবার তুরস্কের ইস্তাম্বুলে মার্কিন কনসাল জেনারেলের বাসভবনে যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়ার শীর্ষ কর্মকর্তারা ফের বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন।
টানা তিন বছর ধরে রাশিয়ার আগ্রাসনের শিকার ইউক্রেনকে সামরিক ও অর্থনৈতিক সহায়তা দিয়ে আসছিল যুক্তরাষ্ট্র। সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও কিয়েভের পাশে থাকার অঙ্গীকার করেছিলেন। তবে গত মাসে ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের ইউক্রেন নীতিতে নাটকীয় পরিবর্তন এসেছে।
ট্রাম্প স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেবে না। বুধবার এক বিবৃতিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব ইউরোপের নেওয়া উচিত।
ট্রাম্প এই মন্তব্য শুধু ইউক্রেন ইস্যুতেই নয়, বরং ন্যাটো মিত্রদের নিরাপত্তা নিশ্চয়তা সম্পর্কেও ইউরোপের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
ঢাকা/ফিরোজ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইউক র ন ইউক র ন র ন র জন য ন শ চয়ত ইউর প য় ইউর প র আমন ত
এছাড়াও পড়ুন:
কার্টুন, মিমে অভ্যুত্থানের ভিন্ন ধারার দৃশ্যায়ন
টাকার বস্তার ভেতর থেকে মাথা উঁচিয়ে আছেন শুভ্র কেশ, সফেদ দাড়ি, চশমা পরিহিত এক লোক। তাঁর ছবি দেখে তো বটেই, এই বর্ণনা থেকেও তাঁকে চিনবেন দেশবাসী। বর্তমানে কারাগারের বাসিন্দা পতিত স্বৈরশাসকের এই উপদেষ্টা বলছেন, ‘টাকার ওপর আমার বিশ্বাস উঠে গেছে।’ এই ছবির পাশেই এক কাটআউট। সেখানে ‘শেখ হাসিনা পালায় না’ বলতে বলতে দৌড়ে পালাচ্ছেন ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতার মসনদ থেকে উৎপাটিত শেখ হাসিনা।
এমন মজার মজার কার্টুন, মিম, গ্রাফিতি, ভিডিও স্থাপনাকর্মসহ বৈচিত্র্যময় সৃজনসম্ভার নিয়ে শুরু হয়েছে ‘বিদ্রূপে বিদ্রোহ’ নামের ব্যতিক্রমী এক প্রদর্শনী। আয়োজন করেছে অনলাইনভিত্তিক স্যাটায়ার সাময়িকী ‘ইয়ারকি’। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ধানমন্ডির আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের লা গ্যালারিতে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে ছয় দিনের এ প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। চলবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত। সবার জন্য প্রতিদিন বেলা তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা।
গত বছর ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে উত্তাল ছিল জুলাই। একটি বৈষম্যহীন, উদার গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য পথে নেমেছিলেন অগণিত মানুষ। শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী সরকারকে উৎখাত করতে জীবন উৎসর্গ করেছেন তাঁদের অনেকে। আহত হয়েছেন বেশুমার। রক্তরঞ্জিত রাজপথ বেয়ে এসেছে জনতার বিজয়।
প্রদর্শনীতে প্রবেশপথটির দুই পাশে লাল রঙের পটভূমিতে বড় বড় ডিজিটাল পোস্টার। সেখানে ২ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিদিনের বিভিন্ন ঘটনার আলোকচিত্র, সংবাদপত্র, অনলাইন পোর্টাল, টেলিভিশনের রিপোর্ট, ছবি, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমের পোস্ট—এসব তুলে আনা হয়েছে এ পোস্টারগুলোতে। প্রবেশপথটিও লাল রঙের। ‘জুলাই করিডর’ নামে এই রক্তিম পথটি বেয়ে দর্শনার্থীরা প্রদর্শনীতে প্রবেশের সময় অভ্যুত্থানের উত্তাল দিনগুলোর উত্তাপ ফিরে পাবেন।