দীর্ঘ ১৯ মাস পর কুয়েত থেকে দেশে আসেন নাইমুল ইসলাম। চট্টগ্রামের জোরারগঞ্জ থানার উত্তর সোনাপাহাড় গ্রামের এই প্রবাসী গতকাল বুধবার দিবাগত রাতে রাজধানীর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। পরে স্বজনদের সঙ্গে ভাড়া করা মাইক্রোবাসে চট্টগ্রামে বাড়িতে ফিরছিলেন। পথে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে তাঁর গাড়িতে হামলা করে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে সর্বস্ব লুট করে নেয় ডাকাত দল।

আজ বৃহস্পতিবার ভোরে চৌদ্দগ্রাম উপজেলার ফালগুনকরা মাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। যে স্থানে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে, সেখান থেকে মাত্র ৫০০ গজ দূরেই চৌদ্দগ্রাম থানা। কিন্তু ডাকাতদের হাত থেকে রক্ষা পাননি ওই প্রবাসী। ডাকাতেরা প্রবাসীকে বহন করা গাড়িও ভাঙচুর করেছে।

চৌদ্দগ্রাম থানার পরিদর্শক (তদন্ত) গুলজার আলম প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনার খবর পাওয়ার পরপরই থানা ও হাইওয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। তবে এর আগেই ডাকাতেরা পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী প্রবাসী বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আট থেকে ১০ জনকে আসামি করে থানায় একটি মামলা করেছেন। পুলিশ ঘটনায় জড়িত ডাকাতদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করার চেষ্টা করছে।

প্রবাসী নাইমুল ইসলাম জানান, ১৯ মাস পর গতকাল রাত ১১টায় কুয়েত থেকে বিমানে তিনি ঢাকায় নামেন। এরপর রাত পৌনে একটার দিকে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ভাড়া করা মাইক্রোবাসে বাড়ির উদ্দেশে রওনা হন। রাত দুইটার পর মেঘনা সেতু পার হয়ে একটি হোটেলে যাত্রাবিরতি দিয়ে আবার রওনা দেন। চৌদ্দগ্রামের ফালগুনকরা মাজার এলাকায় ভোরের দিকে পেছন থেকে একটি অজ্ঞাতনামা পিকআপ বাঁ দিক দিয়ে ঢুকে তাদের মাইক্রোবাসটিকে চাপা দেয়। মাইক্রোবাসের চালক গাড়ি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করলে মুখোশ পরা ৮ থেকে ১০ জনের ডাকাত দল ধারালো অস্ত্র নিয়ে মাইক্রোবাসের দরজা-জানালা ভাঙচুর করে। একপর্যায়ে অস্ত্রের মুখে তাঁকে, তাঁর বাবাকে ও এক স্বজনকে জিম্মি করে প্রবাস থেকে তিনটি কার্টনে আনা মালামাল, লাগেজে থাকা দুই ভরি স্বর্ণালংকার, নগদ টাকা, কুয়েতি দিনার—সব লুট করে নিয়ে যায়। পরে তাঁর এক স্বজন জাতীয় জরুরি সেবা নম্বরে (৯৯৯) কল করলে হাইওয়ে পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে আসে। পরে তাঁদের থানায় নেওয়া হয়।

নাইমুল ইসলাম আক্ষেপ করে বলেন, ‘প্রবাসে এত কষ্টে অর্থ উপার্জন করে মালামাল নিয়ে বাড়িতে ফিরছিলাম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোনো রকমে প্রাণটা নিয়ে শূন্য হাতে ঘরে ফিরতে হচ্ছে।’ প্রবাসীর বাবা আবুল খায়ের বলেন, ডাকাত দলে ৮ থেকে ১০ জন ছিল। তাদের সবার মুখোশ পরা ও হাতে ধারালো দেশি অস্ত্র ছিল। ডাকাতেরা পিকআপে ত্রিপল মোড়ানো অবস্থায় আসায় তাঁরা বিষয়টি আঁচ করতে পারেননি। মুহূর্তেই ছেলের কষ্টের উপার্জন সব লুট করে নিয়ে যায়।

মাইক্রোবাসের চালক শাহাদাত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ডাকাতেরা পিকআপে ত্রিপল মুড়িয়ে এসে ডান দিকে অতর্কিতভাবে ঢুকে মাইক্রোবাসে ধাক্কা দেয়। এতে গাড়ির নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মহাসড়কের পাশে খাদে পড়ার উপক্রম হয়েছিল। তিনি অনেক কষ্টে গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ করেন। এরপর ডাকাতেরা পিকআপ থেকে নেমে গাড়িতে ভাঙচুর করে এবং অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে সব মাল লুট করে নিয়ে যায়।

চৌদ্দগ্রামের মিয়ার বাজার হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জসিম উদ্দিন বলেন, ৯৯৯-এর মাধ্যমে খবর পেয়ে পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে পোঁছানোর আগেই ডাকাতেরা পালিয়ে যায়। তাঁরা মহাসড়ক ও আশপাশের এলাকায় থাকা সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে ডাকাতদের শনাক্ত করার চেষ্টা করছেন। ইতিমধ্যে এ নিয়ে কাজ শুরু করেছে হাইওয়ে পুলিশ।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ল ট কর হ ইওয় প কআপ

এছাড়াও পড়ুন:

ছয় গোলের থ্রিলারে জমজমাট ড্র বার্সেলোনা-ইন্টারের

চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনাল মানেই উত্তেজনার পারদ চড়া—আর বার্সেলোনা ও ইন্টার মিলান মিলে সেটিকে নিয়ে গেল অন্য উচ্চতায়। কাতালানদের ঘরের মাঠ অলিম্পিক স্টেডিয়ামে বুধবার রাতে দর্শকরা উপভোগ করলেন এক দুর্দান্ত গোলবন্যার ম্যাচ। ম্যাচ শেষে ফল—৩-৩ গোলে ড্র।

মৌসুমের রেকর্ড ৫০ হাজার ৩১৪ দর্শকের সামনে ইউরোপীয় ফুটবলের এই মহারণে উভয় দলই তুলে ধরেছে আক্রমণাত্মক ফুটবল। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ সেমিফাইনালের ইতিহাসে ১৯৯৯ সালের পর এটিই প্রথম ম্যাচ যেখানে ছয়টি গোল হয়েছে এবং শেষ হয়েছে ড্রয়ে।

ম্যাচ শুরু হতে না হতেই চমকে দেয় ইন্টার মিলান। ম্যাচের মাত্র প্রথম মিনিটেই ডেনজেল ডামফ্রিজের ব্যাকহিল গোল দলকে এগিয়ে দেন মার্কাস থুরাম। এরপর ২১ মিনিটে আবারও দিমারকোর কর্নার থেকে ফ্রান্সেসকো আকেরবির সহায়তায় শ্বাসরুদ্ধকর অ্যাক্রোব্যাটিকে ব্যবধান বাড়ান ডামফ্রিজ।

তবে ঘুরে দাঁড়াতে দেরি করেনি বার্সা। দুই মিনিট পরই ইয়ামাল ডান দিক থেকে একক নৈপুণ্যে দুর্দান্ত গোল করে ব্যবধান কমান। প্রথমার্ধ শেষের আগে পেদ্রির ফ্লিকে রাফিনিয়ার নিয়ন্ত্রণ এবং তাতে ফেরান তোরেসের শটে গোল করে ২-২ সমতায় ফেরে স্বাগতিকরা।

দ্বিতীয়ার্ধে লাউতারো মার্টিনেজের ইনজুরির পর মাঠে নামেন মেহেদি তারেমি। ৬০ মিনিটে কর্নার থেকে হেড করে নিজের দ্বিতীয় গোল করেন ডামফ্রিজ। কিন্তু দ্রুতই গোল শোধ করে বার্সা—ছোট কর্নার থেকে রাফিনিয়ার শট লাগে পোস্টে, সেখান থেকে গোলরক্ষক সোমারের পিঠে লেগে ঢুকে পড়ে জালে—ফলাফল ৩-৩। ৭৫ মিনিটে হেনরিখ মিখিতারিয়ান গোল করে ইন্টারকে আবারও এগিয়ে দিয়েছিলেন, কিন্তু ভিএআরের চোখে পড়ে সামান্য অফসাইড, বাতিল হয় সেই গোল।

এখন সবকিছু নির্ভর করছে দ্বিতীয় লেগের ম্যাচের ওপর, যা হবে ৬ মে, মঙ্গলবার, ইন্টারের ঘরের মাঠ জিউসেপ্পে মিয়াজ্জায়। ওই ম্যাচেই জানা যাবে ফাইনালে কারা প্যারিস সেইন্ট জার্মেই ও আর্সেনালের মধ্যকার বিজয়ীর মুখোমুখি হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ