রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য দুই পক্ষ আগেই তুরস্কে আলোচনার টেবিলে বসেছিল। তখন ভূমিকা রেখেছিলেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। তবে যুদ্ধ এখনো থামেনি। এবার একই দেশে রুশ-মার্কিন বৈঠকে জেগেছে নতুন আশা, অগ্রগতিও ভালো বলছে উভয় পক্ষ। অবশ্য এই বৈঠক দেখে পশ্চিমা এলিটদের গা জ্বলছে বলে মন্তব্য করে পুতিন বলছেন, তারা সব ভণ্ডুল করার চেষ্টা করছে।  

যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার কূটনৈতিক কর্মকর্তারা বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) তুরস্কের ইস্তাম্বুলে দীর্ঘ ছয় ঘণ্টা আলোচনা করেছেন। উভয় পক্ষ আলোচনাকে ‘ফলপ্রসূ’ বলে বর্ণনা করেছেন। 

আরো পড়ুন:

রুশ ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইউক্রেনে নিহত ১৩, আহত ৩০

রুশ পারমাণবিক সুরক্ষা বাহিনীর প্রধানকে হত্যার দায় স্বীকার ইউক্রেনের

তুরস্কের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ও রাশিয়ার তাস এবং বিবিসি বৈঠকের বিষয়ে বিস্তারিত খবর দিয়েছে। 
 
এই বৈঠকের লক্ষ্য- যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যকার দূরত্ব ঘুচিয়ে ইউক্রেনকে যুদ্ধবিরতির মঞ্চে আনা। এখানেও নেপথ্য নায়ক সেই এরদোয়ান, যিনি যুদ্ধবিরতির জন্য দীর্ঘদিন ধরে মধ্যস্থতা করে আসছেন। যুদ্ধের প্রথম বছরেই দুই দেশের যুদ্ধবিরতির কাছাকাছি পৌঁছানোর আশা দেখিয়েছিলেন এরদোয়ান।

এমন সময় এরদোয়ানের দেশে রাশিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বৈঠক হলো যখন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি যুক্তরাষ্ট্র সফর করছেন। 

এই সফরে ইউক্রেনের খনিজ সম্পদ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের চুক্তি হওয়ার কথা। চুক্তিতেও সম্মত দুই দেশ। তবে শুধু কি খনিজ চুক্তি? আভাস মিলেছে, মূল কথা হবে যুদ্ধবিরতি নিয়ে। জেলোনস্কিকে যুদ্ধ বন্ধে চাপ দেবেন ট্রাম্প। যদিও জেলেনস্কি বলছেন, ইউক্রেনের সুরক্ষার নিশ্চয়তা না পেলে চুক্তি হবে না। 

রাশিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক স্বাভাবিক হওয়া মানে ইউক্রেনকে যুদ্ধবিরতিতে রাজি করানো। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের অভিযোগ, এমন আভাস পেয়ে পশ্চিমা এলিটদের ‘গা জ্বলছে’।

বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, কারও নাম উচ্চারণ না করে পুতিন বলেছেন- যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্কোন্নয়নের বার্তা পেয়ে আলোচনা ভণ্ডুল করার চেষ্টা করছে পশ্চিমা এলিটরা।

পুতিনের অভিযোগের তীর কি যুক্তরাজ্যে প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের দিকে? কারণ, তিনিও হোয়াইট হাউসের আমন্ত্রণে যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাচ্ছেন। জানা গেছে, এই সফরে তার প্রধান অ্যাজেন্ডা ইউক্রেনের জন্য সামরিক সহায়তা অব্যাহত রাখতে ট্রাম্পকে রাজি করানো। 

বিবিসি লিখেছে, কিয়ার স্টারমার ব্রিটিশ সৈন্যদের শান্তিরক্ষী হিসিবে ইউক্রেনে মোতায়েনের প্রস্তাব করেছেন। ইউক্রেন ও ইউরোপের প্রতিরক্ষার বিষয়ে অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন স্টারমার।

ইউক্রেনের পক্ষে দ্ব্যর্থহীন সমর্থন বজায় রাখার কথা বলেছেন নবনির্বাচিত জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মেৎস ও বিদীয় চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ। বিষয়গুলো পুতিনের নজরে রয়েছে, যা তার বক্তব্য থেকে পরিষ্কার। কারণ, ইস্তাম্বুলে মার্কিন কর্মকর্তাদের বৈঠকের পরই পুতিন কথা বলেছেন। 

তবে এখন পর্যন্ত যতটুকু অগ্রগতি, তাতে যুক্তরাষ্ট্র আর সামরিক সহায়তা না দিলে ইউক্রেনের এই যুদ্ধে টিকে থাকা অসম্ভব প্রায়। ফলে ইউরোপ যা-ই বলুক, যুদ্ধবিরতির ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে ট্রাম্পের ওপর। জেলোনস্কির হোয়াইট হাউস সফরেই আসতে পারে যুদ্ধবিরতির চূড়ান্ত রূপরেখা। 

তিন বছরের এই যুদ্ধে বহু মানুষ প্রাণ হারিয়েছে, উভয় দেশের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে; প্রভাব পড়েছে বিশ্ব অর্থনীতি ও রাজনীতিতে। ইউক্রেন যুদ্ধ ২৪ ঘণ্টায় বন্ধ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতায় আসা ট্রাম্প এক মাস পার হয়ে গেলেও কার্যত কোনো সিদ্ধান্তে আনতে পারেননি দুই দেশকে। এখন যুদ্ধবিরতির জন্য মরিয়া হয়ে চেষ্টা করছেন তিনি।

ঢাকা/রাসেল  

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র শ য় ইউক র ন য দ ধ ইউক র ন ইউক র ন র এরদ য় ন র জন য কর ছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

কার্টুন, মিমে অভ্যুত্থানের ভিন্ন ধারার দৃশ্যায়ন

টাকার বস্তার ভেতর থেকে মাথা উঁচিয়ে আছেন শুভ্র কেশ, সফেদ দাড়ি, চশমা পরিহিত এক লোক। তাঁর ছবি দেখে তো বটেই, এই বর্ণনা থেকেও তাঁকে চিনবেন দেশবাসী। বর্তমানে কারাগারের বাসিন্দা পতিত স্বৈরশাসকের এই উপদেষ্টা বলছেন, ‘টাকার ওপর আমার বিশ্বাস উঠে গেছে।’ এই ছবির পাশেই এক কাটআউট। সেখানে ‘শেখ হাসিনা পালায় না’ বলতে বলতে দৌড়ে পালাচ্ছেন ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতার মসনদ থেকে উৎপাটিত শেখ হাসিনা।

এমন মজার মজার কার্টুন, মিম, গ্রাফিতি, ভিডিও স্থাপনাকর্মসহ বৈচিত্র্যময় সৃজনসম্ভার নিয়ে শুরু হয়েছে ‘বিদ্রূপে বিদ্রোহ’ নামের ব্যতিক্রমী এক প্রদর্শনী। আয়োজন করেছে অনলাইনভিত্তিক স্যাটায়ার সাময়িকী ‘ইয়ারকি’। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ধানমন্ডির আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের লা গ্যালারিতে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে ছয় দিনের এ প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। চলবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত। সবার জন্য প্রতিদিন বেলা তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা।

গত বছর ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে উত্তাল ছিল জুলাই। একটি বৈষম্যহীন, উদার গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য পথে নেমেছিলেন অগণিত মানুষ। শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী সরকারকে উৎখাত করতে জীবন উৎসর্গ করেছেন তাঁদের অনেকে। আহত হয়েছেন বেশুমার। রক্তরঞ্জিত রাজপথ বেয়ে এসেছে জনতার বিজয়।

প্রদর্শনীতে প্রবেশপথটির দুই পাশে লাল রঙের পটভূমিতে বড় বড় ডিজিটাল পোস্টার। সেখানে ২ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিদিনের বিভিন্ন ঘটনার আলোকচিত্র, সংবাদপত্র, অনলাইন পোর্টাল, টেলিভিশনের রিপোর্ট, ছবি, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমের পোস্ট—এসব তুলে আনা হয়েছে এ পোস্টারগুলোতে। প্রবেশপথটিও লাল রঙের। ‘জুলাই করিডর’ নামে এই রক্তিম পথটি বেয়ে দর্শনার্থীরা প্রদর্শনীতে প্রবেশের সময় অভ্যুত্থানের উত্তাল দিনগুলোর উত্তাপ ফিরে পাবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ