তুরস্কে রুশ-মার্কিন বৈঠক, ‘গা জ্বলছে পশ্চিমা এলিটদের’
Published: 27th, February 2025 GMT
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য দুই পক্ষ আগেই তুরস্কে আলোচনার টেবিলে বসেছিল। তখন ভূমিকা রেখেছিলেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। তবে যুদ্ধ এখনো থামেনি। এবার একই দেশে রুশ-মার্কিন বৈঠকে জেগেছে নতুন আশা, অগ্রগতিও ভালো বলছে উভয় পক্ষ। অবশ্য এই বৈঠক দেখে পশ্চিমা এলিটদের গা জ্বলছে বলে মন্তব্য করে পুতিন বলছেন, তারা সব ভণ্ডুল করার চেষ্টা করছে।
যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার কূটনৈতিক কর্মকর্তারা বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) তুরস্কের ইস্তাম্বুলে দীর্ঘ ছয় ঘণ্টা আলোচনা করেছেন। উভয় পক্ষ আলোচনাকে ‘ফলপ্রসূ’ বলে বর্ণনা করেছেন।
আরো পড়ুন:
রুশ ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইউক্রেনে নিহত ১৩, আহত ৩০
রুশ পারমাণবিক সুরক্ষা বাহিনীর প্রধানকে হত্যার দায় স্বীকার ইউক্রেনের
তুরস্কের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ও রাশিয়ার তাস এবং বিবিসি বৈঠকের বিষয়ে বিস্তারিত খবর দিয়েছে।
এই বৈঠকের লক্ষ্য- যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যকার দূরত্ব ঘুচিয়ে ইউক্রেনকে যুদ্ধবিরতির মঞ্চে আনা। এখানেও নেপথ্য নায়ক সেই এরদোয়ান, যিনি যুদ্ধবিরতির জন্য দীর্ঘদিন ধরে মধ্যস্থতা করে আসছেন। যুদ্ধের প্রথম বছরেই দুই দেশের যুদ্ধবিরতির কাছাকাছি পৌঁছানোর আশা দেখিয়েছিলেন এরদোয়ান।
এমন সময় এরদোয়ানের দেশে রাশিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বৈঠক হলো যখন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি যুক্তরাষ্ট্র সফর করছেন।
এই সফরে ইউক্রেনের খনিজ সম্পদ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের চুক্তি হওয়ার কথা। চুক্তিতেও সম্মত দুই দেশ। তবে শুধু কি খনিজ চুক্তি? আভাস মিলেছে, মূল কথা হবে যুদ্ধবিরতি নিয়ে। জেলোনস্কিকে যুদ্ধ বন্ধে চাপ দেবেন ট্রাম্প। যদিও জেলেনস্কি বলছেন, ইউক্রেনের সুরক্ষার নিশ্চয়তা না পেলে চুক্তি হবে না।
রাশিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক স্বাভাবিক হওয়া মানে ইউক্রেনকে যুদ্ধবিরতিতে রাজি করানো। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের অভিযোগ, এমন আভাস পেয়ে পশ্চিমা এলিটদের ‘গা জ্বলছে’।
বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, কারও নাম উচ্চারণ না করে পুতিন বলেছেন- যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্কোন্নয়নের বার্তা পেয়ে আলোচনা ভণ্ডুল করার চেষ্টা করছে পশ্চিমা এলিটরা।
পুতিনের অভিযোগের তীর কি যুক্তরাজ্যে প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের দিকে? কারণ, তিনিও হোয়াইট হাউসের আমন্ত্রণে যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাচ্ছেন। জানা গেছে, এই সফরে তার প্রধান অ্যাজেন্ডা ইউক্রেনের জন্য সামরিক সহায়তা অব্যাহত রাখতে ট্রাম্পকে রাজি করানো।
বিবিসি লিখেছে, কিয়ার স্টারমার ব্রিটিশ সৈন্যদের শান্তিরক্ষী হিসিবে ইউক্রেনে মোতায়েনের প্রস্তাব করেছেন। ইউক্রেন ও ইউরোপের প্রতিরক্ষার বিষয়ে অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন স্টারমার।
ইউক্রেনের পক্ষে দ্ব্যর্থহীন সমর্থন বজায় রাখার কথা বলেছেন নবনির্বাচিত জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মেৎস ও বিদীয় চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ। বিষয়গুলো পুতিনের নজরে রয়েছে, যা তার বক্তব্য থেকে পরিষ্কার। কারণ, ইস্তাম্বুলে মার্কিন কর্মকর্তাদের বৈঠকের পরই পুতিন কথা বলেছেন।
তবে এখন পর্যন্ত যতটুকু অগ্রগতি, তাতে যুক্তরাষ্ট্র আর সামরিক সহায়তা না দিলে ইউক্রেনের এই যুদ্ধে টিকে থাকা অসম্ভব প্রায়। ফলে ইউরোপ যা-ই বলুক, যুদ্ধবিরতির ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে ট্রাম্পের ওপর। জেলোনস্কির হোয়াইট হাউস সফরেই আসতে পারে যুদ্ধবিরতির চূড়ান্ত রূপরেখা।
তিন বছরের এই যুদ্ধে বহু মানুষ প্রাণ হারিয়েছে, উভয় দেশের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে; প্রভাব পড়েছে বিশ্ব অর্থনীতি ও রাজনীতিতে। ইউক্রেন যুদ্ধ ২৪ ঘণ্টায় বন্ধ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতায় আসা ট্রাম্প এক মাস পার হয়ে গেলেও কার্যত কোনো সিদ্ধান্তে আনতে পারেননি দুই দেশকে। এখন যুদ্ধবিরতির জন্য মরিয়া হয়ে চেষ্টা করছেন তিনি।
ঢাকা/রাসেল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র শ য় ইউক র ন য দ ধ ইউক র ন ইউক র ন র এরদ য় ন র জন য কর ছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
আজও আছে পরতে পরতে সৌন্দর্য
কারুকার্যখচিত বিশাল ভবন। দেয়ালের পরতে পরতে মনোহর সৌন্দর্য। মনোরম পরিবেশে ভবনের চারপাশে দাঁড়িয়ে সুন্দরী পরীর আবক্ষ মূর্তি। ছবির মতো সাজানো ‘পাকুটিয়া জমিদারবাড়ি’ এখন কালের সাক্ষী।
মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া থেকে ১২ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে টাঙ্গাইলের নাগরপুরের কলমাই নদীতীরে ১৫ একর জমিতে জমিদারবাড়িটি। ঢুকতেই চোখে পড়ে পুরোনো মন্দির। লোকমুখে প্রচলিত, শরতের দিনে দেবী দুর্গার প্রতিমা তৈরিতে এখানে ব্যস্ত থাকতেন ভারতবর্ষের নামকরা কারিগররা। কালের বিবর্তনে স্থানটি এখন নির্জন। নেই আগের গৌরব-আভিজাত্যের ছাপ, এমনকি প্রতিমা তৈরির ব্যস্ততাও।
মন্দির ঘুরে দেখা যায়, এর কোথাও কোথাও ইট খসে পড়েছে। পুরোনো দিনের নকশা হারাচ্ছে তার সৌন্দর্য। মন্দিরের পেছনে বিশাল তিনটি মহল, যা সেকালে তিন তরফ নামে পরিচিত ছিল। মহলগুলোর আলাদা কোনো নাম পাওয়া যায়নি। সবচেয়ে বড় মহলে বর্তমান পাকুটিয়া বিসিআরজি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ পরিচালিত হচ্ছে।
দোতলা ভবনের নির্মাণশৈলী মুগ্ধ করবে সবাইকে। যদিও সংস্কারের অভাবে ভবনটিতে ফাটল দেখা দিয়েছে। পাশেই অপূর্ব লতাপাতার কারুকার্যখচিত বিশাল আরেকটি ভবন, যার মাথায় ময়ূরের মূর্তি। এ ছাড়া কিছু নারী মূর্তিরও দেখা মেলে। জমিদার আমলের টিনের চৌচালা ঘরে অস্থায়ীভাবে সরকারি তহশিল অফিস স্থানান্তর হলেও, সেটি এখন স্থায়িত্ব পেয়েছে।
লতাপতায় আচ্ছন্ন ভবনের একাংশ বর্তমানে উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং আরেকাংশে একটি বেসরকারি দাতব্য সেবা সংস্থা কার্যক্রম চালাচ্ছে। ভবনটির পিলারের মাথায় এবং দেয়ালেও অসাধারণ নকশা মুগ্ধ করে।
দোতল আরেকটি মহল, যার সামনে বিশাল শান বাঁধানো সিঁড়ি। অন্য সব ভবনের সঙ্গে এটির নকশার যথেষ্ট মিল খুঁজে পাওয়া যায়। ভবনটির বারান্দা ও পুরোনো কাঠের দরজা সৌন্দর্য বাড়িয়ে তুলেছে কয়েক গুণ। ভবনটির মাথায় ময়ূরের সঙ্গে দুই পাশে দুই নারী মূর্তির দেখা মেলে। সিঁড়ি বেয়ে ছাদে গেলে গাছগাছালির সবুজে ঘেরা পুরো জমিদারবাড়ির সৌন্দর্য বিমোহিত করতে বাধ্য। যদিও ভবনের ভিন্ন অংশ খসে পড়ছে, হারাচ্ছে রূপ-লাবণ্য।
জমিদারবাড়ির পেছনে রয়েছে দীঘি ও দুটি পরিত্যক্ত কূপ। এ ছাড়া জমিদারবাড়ির বিশাল মাঠের এক কোণে নাটমন্দির। জানা যায়, নাগরপুরের সঙ্গে কলকাতার একটি বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা থেকে আসেন ধনাঢ্য ব্যক্তি রামকৃষ্ণ সাহা মণ্ডল। তিনিই ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরুতে ব্রিটিশদের কাছ থেকে বিপুল অর্থের বিনিময়ে জমি কিনে জমিদারি শুরু করেন।
রামকৃষ্ণ সাহার দুই ছেলে বৃন্দাবন ও রাধাগোবিন্দ। রাধা নিঃসন্তান। তবে বৃন্দাবনের তিন ছেলে– ব্রজেন্দ্র মোহন, উপেন্দ্র মোহন ও যোগেন্দ্র মোহন দীর্ঘকাল রাজত্ব করেন। এভাবে পাকুটিয়া জমিদারবাড়ি তিন ভাইয়ের তরফে বিভক্ত থাকলেও, জমিদাররা সবাই ছিলেন প্রজানন্দিত। বৃন্দাবনের মেজ ছেলে উপেন্দ্রকে কাকা রাধাগোবিন্দ দত্তক নেন। ফলে উপেন্দ্র কাকার জমিদারির পুরো সম্পত্তি লাভ করেন।
দৃষ্টিনন্দন পাকুটিয়া জমিদারবাড়িতে প্রতিনিয়ত পর্যটকের ভিড় বাড়ছে। ইতিহাসের সাক্ষী বাড়িটি সংস্কার না হওয়ায় একদিকে যেমন সৌন্দর্য হারাচ্ছে, অন্যদিকে তরুণ প্রজন্মের কাছে অজানা থেকে যাচ্ছে ইতিহাস। জমিদারবাড়িটি পুরাকীর্তি হিসেবে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের অধীনে নিয়ে সংস্কার ও সংরক্ষণের দাবি জোরালো হচ্ছে।