আনাতোলি কারপভ একবার বলেছিলেন, দাবায় সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন বলে কিছু হয় না। বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন খেতাব আসলে সারা জীবনের। বরিস স্পাসকিও তাই মনে করতেন। এক সাক্ষাৎকারে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের এই দাবাড়ু কারপভের উক্তি টেনে বলেছিলেন, আসলে এভাবে বলা উচিত ‘আমি যেমন ১০ম বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন, মিখাইল তাল ৮ম বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন।’

আরও পড়ুনএই প্রথম সাঁতারে তিন বিদেশি কোচ আনা হচ্ছে১৬ ঘণ্টা আগে

১৯৬৯ সালে দাবায় বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়া সেই স্পাসকি বৃহস্পতিবার মস্কোয় মারা গেছেন। তাঁর মৃত্যু সংবাদ নিশ্চিত করেছে আন্তর্জাতিক দাবা ফেডারেশন। স্পাসকির মৃত্যুর খবর শুনে তাঁকে তাঁর বলা কথামতোই স্মরণ করেছেন রাশিয়ার আরেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন গ্যারি কাসপরভ।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ গ্যারি একটি ছবি পোস্ট করেছেন। তরুণ গ্যারি দাবার চালে নিমগ্ন। তাঁর পেছনে দাঁড়িয়ে ধ্যানমগ্ন ঋষির দৃষ্টিতে দাবার ৬৪ ঘরের দুনিয়ায় তাকিয়ে স্পাসকি। ছবির ক্যাপশনে লেখা, ‘শান্তিতে ঘুমান ১০ম বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন, বরিস স্পাসকি। ১৯৮৫ সালে হাবনেরের সঙ্গে ম্যাচ আমার কাঁধের ওপর দিয়ে তিনি দেখছেন.

..প্রতিভা হিসেবে আবির্ভূত হয়ে দ্বিতীয় প্রচেষ্টায় অজেয় পেত্রোসিয়ানের কাছ থেকে (বিশ্বসেরার) মুকুট জয় এবং দশকের পর দশক তার অভিজাত ঘরানার খেলা প্রায়ই ১৯৭২ সালে ববি ফিশারের কাছে সেই হারে ঢাকা পড়ে যায়।’

গ্যারি নির্ভেজাল সত্যটাই বলেছেন। দাবায় অমিত প্রতিভাধর স্পাসকি বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হিসেবে যতটা না বিখ্যাত হয়েছিলেন, আইসল্যান্ডের রিকজাভিকে ‘শতাব্দীর সেরা ম্যাচ’ নামের সে লড়াইয়ে হার মেনে যেন আরও বেশি খ্যাতি কুড়িয়েছিলেন! যুক্তরাষ্ট্র ও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে সে সময়ের শীতল যুদ্ধের চূড়ান্ত প্রকাশ ছিল দাবার বোর্ডের ওই ম্যাচটি। বলা হয়, দাবায় আর কোনো ম্যাচ এত নজর কাড়েনি সংবাদমাধ্যম থেকে বাকি সবার মধ্যে, যতটা সেই ‘ম্যাচ অব দা সেঞ্চুরি।’

আরও পড়ুনবিশ্ব জুনিয়র দাবায় মননের ড্র, তাহসিন পেলেন ওয়াকওভার২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

২০০৮ সালে ফিশার মারা যাওয়ার পর আইসল্যান্ডে তাঁর সমাধির সামনে দাঁড়িয়ে চোখ দুটো মুছে মজা করে স্পাসকি বলেছিলেন, ‘তার পাশে একটু জায়গা হবে কি?’ এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার শেষ ধাপ গতকাল সমাপ্ত করেছেন স্পাসকি। রাশিয়ার দাবা ফেডারেশন জানিয়েছে, ৮৮ বছর বয়সে মারা গেছেন এই বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। তবে ঠিক কী কারণে এবং কখন তিনি মারা গেছেন বিবৃতিতে তা জানানো হয়নি, ‘দশম বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন স্পাসকি ৮৮ বছর বয়সে মারা গেছেন। দেশের জন্য বিশাল ক্ষতি।’

১৯৩৭ সালে তৎকালীন লেনিনগ্রাদে (সেন্ট পিটার্সবার্গ) জন্ম নেওয়া স্পাসকির দাবা খেলার শুরু পাঁচ বছর বয়সে। প্রতিভার দ্যুতি ছড়িয়েছিলেন শৈশবেই। জুনিয়র পর্যায়ে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ খেতাব জেতার পাশাপাশি ১৮ বছর বয়সে গ্র্যান্ডমাস্টার হয়েছিলেন, যা তখনকার সময়ে সবচেয়ে কম বয়সে গ্র্যান্ডমাস্টার হওয়ার রেকর্ড। স্পাসকি নিজেই বলে গেছেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নাৎসি বাহিনীর হাত থেকে বাঁচতে পরিবার নিয়ে লেনিনগ্রাদ থেকে পালিয়ে একটি এতিমখানায় দাবা খেলা শিখেছিলেন। আক্রমণাত্মক ও ‘স্যাক্রিফাইসিং’ খেলায় দ্রুতই নজর কেড়ে নেওয়া স্পাসকি ১৯৬১ সালে জেতেন সোভিয়েত চ্যাম্পিয়নশিপ। আট বছর পর স্বদেশি টাইগ্রান পেত্রোসিয়ানকে হারিয়ে জেতেন বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের মুকুট। কিন্তু সে মুকুট টিকেছিল মাত্র তিন বছর।

পশ্চিম ও প্রাচ্যের মধ্যে তুঙ্গে ওঠা শীতল যুদ্ধকে অন্য মাত্রা দিয়েছিল ১৯৭২ সালে ফিশার-স্পাসকির সেই ম্যাচ। স্পাসকি শুরুটা ভালো করলেও শেষ পর্যন্ত জিতেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের কিংবদন্তি ফিশার। এর মধ্য দিয়ে ভেঙে গিয়েছিল ১৯৪৮ সাল থেকে দাবায় শুরু হওয়া সোভিয়েত বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের অপরাজেয় যাত্রা। সেই হারে সাবেক সোভিয়েত প্রশাসন বড় ধাক্কা খেলেও হাঁপ ছেড়ে বাঁচেন স্পাসকি। ম্যাচটির প্রায় চার দশক পর বলেছিলেন, ‘ফিশার আমার কাছ থেকে খেতাবটা নেওয়ার পর বোঝাতে পারব না নিজেকে কতটা ভারমুক্ত মনে হয়েছিল।’ আইকনিক সেই ম্যাচ নিয়ে বই লেখার পাশাপাশি থেকে তথ্যচিত্রও বানানো হয়েছে। এ নিয়ে লেখক ওয়াল্টার টেভিসের ‘দা কুইনস গ্যাম্বিট’ বই থেকে ২০২০ সালে নেটফ্লিক্সে সিরিজও মুক্তি দেওয়া হয়।

সাবেক সোভিয়েত প্রশাসনের তেমন একটা সুনজরে ছিলেন না স্পাসকি। ফিশারের কাছে হারের চার বছর পর ফ্রান্সে চলে যান। ফরাসি এক নারীকে বিয়ে করে দুই বছর পর দেশটির নাগরিকত্বও পান। এরপর বেশ কয়েক বছর জনসম্মুখে আসেননি স্পাসকি। ১৯৯২ সালে সাবেক যুগোস্লাভিয়ায় আরেকবার ফিশারের মুখোমুখিও হয়েছিলেন। অনানুষ্ঠানিক সেই ম্যাচেও অবশ্য হেরেছিলেন স্পাসকি।

বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, তাঁর জীবনের শেষ দিনগুলো কেটেছে অসুস্থতায় এবং রহস্যজনক পারিবারিক বিরোধে। দুবার স্ট্রোক করার পর ২০১২ সালে তিনি রাশিয়ায় ফিরে যান এক স্পনসরের সহায়তায়। যদিও তখন তাঁর রাশিয়ায় ফেরায় স্ত্রী ও বোনের মত ছিল না। স্পাসকি মস্কোতেই থাকতেন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: বছর বয়স বল ছ ল ন হয় ছ ল

এছাড়াও পড়ুন:

ইরানের হামলায় ২০ ইসরায়েলি নিহত: বিবিসি

ইসরায়েলের সঙ্গে ইরানের পাল্টাপাল্টি হামলা চারদিন ধরে চলছে। এসব হামলায় উভয় দেশের মধ্যে নিহতের সংখ্যা বেড়েই চলছে। ইসরায়েলের জাতীয় পরিষেবা জানিয়েছে, আজ সোমবার ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলে পাঁচজন নিহত হয়েছেন। ফলে গত শুক্রবার থেকে আজ সোমবার পর্যন্ত ইসরায়েলে নিহতের সংখ্যা কমপক্ষে ২০ জনে পৌঁছেছে। আজ সোমবার এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা বিবিসি।

অন্যদিকে আল জাজিরা বলছে, ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি বিমান হামলায় রোববার পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২২৪ জনে পৌঁছেছে।

আজ সোমবার আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের অ্যাম্বুলেন্স ও ব্লাড ব্যাংক সংস্থাগুলো বলছে, এসব হামলায় ২৯ জন আহত হয়েছেন।

বিবিসির খবরে বলা হয়, ইসরায়েলের জাতীয় জরুরি পরিষেবার প্রধান ম্যাগেন ডেভিড অ্যাডম জানান, মধ্য ইসরায়েলজুড়ে ইরানের হামলায় চারজন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে দুইজন নারী, একজন পুরুষ। 

এর আগে সিএনএন ইসরায়েলের ১৫ জন নিহত হওয়ার খবর দেয়। ইসরায়েলের সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম কানের খবর বলছে, ইসরায়েলের মধ্যাঞ্চলে হামলায় একজন গুরুতর আহত হয়েছেন। এছাড়াও বন্দরনগরী হাইফায় অন্তত দুইজন আহত হয়েছেন। এছাড়াও সেখান আরও তিনজন নিখোঁজ রয়েছেন।

এর আগে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছিল, ইরান থেকে নতুন করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু হয়েছে। একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত করেছে ইসরায়েল। বর্তমানে হামলা প্রতিহত করার কাজ চলছে বলে জানিয়েছে আইডিএফ।

আজ সিএনএনের এক খবরে বলা হয়েছে, তেল আবিব ও জেরুজালেমসহ ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরে জরুরি সতর্ক সংকেত (সাইরেন) বাজতে শুরু করেছে। আইডিএফ সতর্ক করে বলেছে, তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পুরোপুরি অভেদ্য নয়।

সিএনএনের একজন প্রযোজক জেরুজালেমে সাইরেন এবং একাধিক বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন। তার তোলা ভিডিওতে আকাশে বহু ক্ষেপণাস্ত্র ছুটে যেতে দেখা গেছে।

ইসরায়েলের জরুরি পরিষেবা সংস্থা ম্যাগেন ডেভিড আদোম জানিয়েছে, তাদের দলগুলো আক্রান্ত এলাকার দিকে রওনা দিয়েছে।

সারা দেশের নাগরিকদের আশ্রয়কেন্দ্রে ঢুকতে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সেখানে থাকার আহ্বান জানিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এক্সে দেওয়া এক পোস্টে বলেছে, বর্তমানে বিমানবাহিনী হামলা প্রতিহত করার পাশাপাশি পাল্টা হামলা চালানোর কাজ করছে।

ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম ওয়াইনেট নিউজ জানিয়েছে, মধ্য ইসরায়েলের পেতাহ টিকভা শহরের একটি ভবনে একটি ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি আঘাত হেনেছে। হামলার ফলে ওই স্থানে আগুন ধরে যায়। তবে এ ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

এদিকে মধ্য ইরানে একাধিক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। দেশটির সেনাবাহিনী এ তথ্য জানিয়েছে। আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেনাবাহিনীর দাবি, বিভিন্ন ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালানো হয়েছে।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ইসরায়েলি বিমানবাহিনী সফলভাবে মধ্য ইরানে অবস্থিত একাধিক স্থাপনায় আঘাত হেনেছে। আমাদের গোয়েন্দা তথ্য বলছে, এসব স্থাপনা থেকে ইসরায়েলের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হচ্ছিল।’

তবে ইসরায়েলের এই হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইরান এখনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি।

এদিকে ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি বিমান হামলায় রোববার পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২২৪ জনে পৌঁছেছে।

বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিহতদের মধ্যে ৯০ শতাংশেরও বেশি বেসামরিক নাগরিক। হামলায় ১ হাজার ২৭০ জনেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন।

এপির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গত ১৩ জুন ইরানে বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েল। ওই হামলায় ইরানের নাতাঞ্জ ও ইসফাহান অঞ্চলের পারমাণবিক স্থাপনা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা ও পারমাণবিক বিজ্ঞানী নিহত হন। ইরানে বর্তমানে মসজিদ ও মেট্রো স্টেশনগুলোকে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।

ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলের তিন শিশুসহ অন্তত ১৫ জন নিহত হয়েছেন। রোববার ইসরায়েল সরকারের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম সিএনএন।

ইসরায়েল কর্তৃপক্ষ বলেছে, এছাড়া ইরানের হামলায় কমপক্ষে ৩৮৫ জন আহত হয়েছেন, যার মধ্যে সাত জনের অবস্থা গুরুতর।

এদিকে ইসরায়েলি পুলিশের বরাতে আল জাজিরা জানিয়েছে, তেল আবিবের দক্ষিণে অবস্থিত বাত ইয়াম শহরে ৬ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে দুই শিশু রয়েছে। এছাড়া সাতজন এখনও নিখোঁজ। ধ্বংসস্তূপের মধ্যে উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছেন জরুরি সেবাদানকারীরা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ