কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজে মসজিদের ইমাম নিয়োগকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয় পক্ষের ১০ জন আহত হয়েছেন।

শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) জুম্মার নামাজের পর ভিক্টোরিয়া কলেজ অনার্স শাখায় এই ঘটনা ঘটে। 

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ১৩ জানুয়ারি কলেজের ডিগ্রি শাখার মসজিদে তাবলিগের বিবদমান দুই পক্ষ মাওলানা সাদ ও জুবায়েরের অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনার জেরে গত ২০ জানুয়ারি মসজিদের সাপ্তাহিক তালিম সাময়িকভাবে বন্ধের ঘোষণা দেন কলেজ অধ্যক্ষ প্রফেসর মো.

আবুল বাসার ভূঁঞা। 

পরে বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘদিনের মতবিরোধে গত ২১ জানুয়ারি সকাল ১১টা ২০ মিনিট থেকে দুপুর ১২টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত অধ্যক্ষকে অবরুদ্ধ করে কলেজের নজরুল হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ও ধর্মপুরের স্থানীয় বাসিন্দারা।

এরপরই ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ইমাম মো. মারুফ বিল্লাহকে নানান অভিযোগ তুলে অব্যাহতি দেয় কলেজ প্রশাসন। কিন্তু এলাকাবাসী ইমামকে পুনর্বহাল চেয়ে দাবি তোলে। পরে ১৮ ফেব্রুয়ারি নতুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। 

ইমামকে চাকরিচ্যুত করার পর থেকেই কলেজে সংঘর্ষ চলে আসছে। প্রতি শুক্রবার নামাজের আগে ইমামকে বহালের দাবি করে আসছে স্থানীয় একটি পক্ষ। এসবের জের ধরে প্রতি শুক্রবারই শিক্ষকদের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে স্থানীয়দের ও কলেজের শিক্ষার্থীদের একটি অংশের।

শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) ভিক্টোরিয়া কলেজ মসজিদে নামাজ পড়াতে আসেন ভিক্টোরিয়া কলেজ নিউ হোস্টেল মসজিদের ইমাম। কিন্তু, স্থানীয়রা এটা মেনে নিতে পারেনি। এতে দুই পক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে হাতাহাতি ও সংঘর্ষ বাঁধে। এ সময় দুই পক্ষেরই অন্তত ১০ জন আহত হন। 

এসময় ভিক্টোরিয়া কলেজ অধ্যক্ষ আবুল বাশার ভূঁইয়ার গায়ে হাত তোলাসহ ভিক্টোরিয়া কলেজ হলের একাধিক শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে আহত করার অভিযোগ উঠেছে এলাকাবাসীর বিরুদ্ধে। 

এদিকে এলাকাবাসীর অভিযোগ, হামলায় জিহাদ নামের এক কিশোরকে এলোপাথাড়ি কিল, লাথি দিয়ে আহত করেছেন ভিক্টোরিয়া কলেজ শিক্ষার্থীরা।

ঘটনার পরপরই ঘটনাস্থলে পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। 

নজরুল হলের একাধিক শিক্ষার্থী জানান, তারা স্বাভাবিকভাবেই শুক্রবারে জুমার নামাজ পড়তে যান। নামাজের শুরুতে প্রিন্সিপাল স্যার নিউ হোস্টেল মসজিদের ইমাম সাহেব নামাজ পড়াবেন এ কথা মাইকে ঘোষণা দিয়েছিলেন। পরে তা নিয়ে এলাকাবাসীরা হট্টগোল শুরু করেন। এক পর্যায়ে তারা প্রিন্সিপালের গায়ে হাত তুলে বসেন। শিক্ষার্থীরা এটা বাধা দিতে গেলে তাদের গায়েও হাত তোলে এলাকাবাসী। এ ঘটনায় নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে শিক্ষার্থীরা। 

এদিকে বেশ কয়েকজন এলাকাবাসী পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, “আমাদের এই এলাকার বেশিরভাগ মানুষই ভিক্টোরিয়া কলেজ মসজিদে নামাজ পড়েন। এখানকার ইমাম সাহেব মারুফ বিল্লাহ অনেক ভালো মানুষ ছিলেন। কিন্তু ভিক্টোরিয়া কলেজ প্রিন্সিপাল বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে উনাকে ইমামের পদ থেকে অব্যাহতি দেন। আজকে আমরা নামাজ পড়তে গিয়ে নতুন ইমামের পিছনে নামাজ পড়তে অপারগতা জানাই। তখন কলেজের হলের কয়েকজন শিক্ষার্থী আমাদের উপর হামলে পড়ে। জিহাদ নামে আমাদের এক ছোট ভাইকে মসজিদের মাঝখানে রেখেই এলোপাতাড়ি লাথি দিতে থাকে তারা। আমরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই এবং অতি দ্রুত আমাদের ইমাম সাহেবকে মসজিদে পুনর্বহাল চাই।” 

এ বিষয়ে কলেজ শিক্ষক পরিষদ সম্পাদক গাজী মুহাম্মদ গোলাম সোহরাব হাসান বলেন, ‘‘হামলায় অধ্যক্ষসহ শিক্ষকরা আহত হয়েছেন। আমাদের অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছিল। মূলত ইমামকে অব্যাহতি দেওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে এই ঘটনা ঘটে।”

ভিক্টোরিয়া কলেজ অধ্যক্ষ আবুল বাশার ভূঁইয়া বলেন, “আমরা সম্পূর্ণ বিষয়টি নিয়েই একাডেমিক কাউন্সিলের সাথে বসে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করব। আমাদের কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছে, তাদেরকে হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করছি।”

কুমিল্লার কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহিনুল ইসলাম বলেন, “ঘটনা জানার পর ঘটনাস্থলে গিয়েছি। দুই পক্ষের আলোচনার মাধ্যমে সমাধান হয়েছে। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।”

ঢাকা/রুবেল/এস

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর এল ক ব স মসজ দ র স ঘর ষ আম দ র কল জ র র ঘটন

এছাড়াও পড়ুন:

কার্টুন, মিমে অভ্যুত্থানের ভিন্ন ধারার দৃশ্যায়ন

টাকার বস্তার ভেতর থেকে মাথা উঁচিয়ে আছেন শুভ্র কেশ, সফেদ দাড়ি, চশমা পরিহিত এক লোক। তাঁর ছবি দেখে তো বটেই, এই বর্ণনা থেকেও তাঁকে চিনবেন দেশবাসী। বর্তমানে কারাগারের বাসিন্দা পতিত স্বৈরশাসকের এই উপদেষ্টা বলছেন, ‘টাকার ওপর আমার বিশ্বাস উঠে গেছে।’ এই ছবির পাশেই এক কাটআউট। সেখানে ‘শেখ হাসিনা পালায় না’ বলতে বলতে দৌড়ে পালাচ্ছেন ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতার মসনদ থেকে উৎপাটিত শেখ হাসিনা।

এমন মজার মজার কার্টুন, মিম, গ্রাফিতি, ভিডিও স্থাপনাকর্মসহ বৈচিত্র্যময় সৃজনসম্ভার নিয়ে শুরু হয়েছে ‘বিদ্রূপে বিদ্রোহ’ নামের ব্যতিক্রমী এক প্রদর্শনী। আয়োজন করেছে অনলাইনভিত্তিক স্যাটায়ার সাময়িকী ‘ইয়ারকি’। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ধানমন্ডির আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের লা গ্যালারিতে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে ছয় দিনের এ প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। চলবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত। সবার জন্য প্রতিদিন বেলা তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা।

গত বছর ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে উত্তাল ছিল জুলাই। একটি বৈষম্যহীন, উদার গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য পথে নেমেছিলেন অগণিত মানুষ। শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী সরকারকে উৎখাত করতে জীবন উৎসর্গ করেছেন তাঁদের অনেকে। আহত হয়েছেন বেশুমার। রক্তরঞ্জিত রাজপথ বেয়ে এসেছে জনতার বিজয়।

প্রদর্শনীতে প্রবেশপথটির দুই পাশে লাল রঙের পটভূমিতে বড় বড় ডিজিটাল পোস্টার। সেখানে ২ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিদিনের বিভিন্ন ঘটনার আলোকচিত্র, সংবাদপত্র, অনলাইন পোর্টাল, টেলিভিশনের রিপোর্ট, ছবি, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমের পোস্ট—এসব তুলে আনা হয়েছে এ পোস্টারগুলোতে। প্রবেশপথটিও লাল রঙের। ‘জুলাই করিডর’ নামে এই রক্তিম পথটি বেয়ে দর্শনার্থীরা প্রদর্শনীতে প্রবেশের সময় অভ্যুত্থানের উত্তাল দিনগুলোর উত্তাপ ফিরে পাবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ