জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি আজ শুক্রবার দুপুরে কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবির পরিদর্শন করেছেন। সেখানকার আশ্রয়শিবিরে পৃথক তিনটি বৈঠকে রোহিঙ্গা নেতারা তাঁদের জন্মভূমি মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে ফেরার (প্রত্যাবাসন) ক্ষেত্রে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা এবং থাকার পরিবেশ নিশ্চিতে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মহলের সহযোগিতা চেয়েছেন।

রাখাইন রাজ্যের ৮০ শতাংশ এলাকা দখলে রাখা দেশটির সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির (এএ) সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের সম্পর্ক উন্নয়ন ও যোগাযোগ প্রতিষ্ঠার কথাও তুলে ধরেন রোহিঙ্গা নেতারা।

জবাবে ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি রোহিঙ্গা নেতাদের উদ্দেশ্যে বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন এবং শরণার্থী সংকট নিয়ে আরকান আর্মির সঙ্গে যদি বাংলাদেশ সরকার সংলাপ করে, দুই পক্ষের দূরত্ব কমিয়ে আনার চেষ্টা করে—সে ক্ষেত্রে জাতিসংঘ অবশ্যই সহযোগিতা করবে। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে কথা বলে এসব কথা জানা গেছে।

চার দিনের সফরে গত বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশে আসেন ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি। বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীতে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড.

মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তিনি।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আজ সকাল ৯টায় ঢাকা থেকে উড়োজাহাজে কক্সবাজার বিমানবন্দরে পৌঁছে সড়কপথে ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি যান ৪৫ কিলোমিটার দূরে উখিয়ার বালুখালী (ক্যাম্প-১২) আশ্রয়শিবিরে। এই শিবিরে ৭২ হাজার রোহিঙ্গার বসবাস। বেলা ১১টার দিকে ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডির নেতৃত্বে আসা জাতিসংঘের প্রতিনিধি দলটি বালুখালী আশ্রয়শিবিরে ইউএনএইচসিআর পরিচালিত নিবন্ধন সেন্টারের কার্যক্রম পরিদর্শন করেন।

সেখান থেকে পাশের বালুখালী ক্যাম্প-৮ আশ্রয়শিবিরে গিয়ে পর্যবেক্ষণ টাওয়ারে ওঠে ক্যাম্প পরিস্থিতি দেখেন। দুপুরে কুতুপালং আশ্রয়শিবিরের ( ক্যাম্প-১ পশ্চিম) একটি সেন্টারে বিভিন্ন বয়সী রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ, মসজিদের ইমাম, ধর্মীয় নেতা, সম্প্রতি মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ, কমিউনিটিভিত্তিক সুরক্ষা দল ও রোহিঙ্গা নেতাদের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেন।

বৈঠকে আশ্রয়শিবিরের নিরাপত্তা, ত্রাণতৎপরতা, সমস্যা, বর্তমান রাখাইন পরিস্থিতি ও প্রত্যাবাসন নিয়ে কথা বলেন। বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩ আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা ১৩ লাখের বেশি। এর মধ্যে ৮ লাখ এসেছে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পরের কয়েক মাসে। এ পর্যন্ত একজনকেও প্রত্যাবাসন করা সম্ভব হয়নি।

বেলা দেড়টার দিকে মধুরছড়া আশ্রয়শিবিরের (ক্যাম্প-৪ ওয়েস্ট) বিভিন্ন সেবা কার্যক্রম পরিদর্শন করে কক্সবাজার শহরের দিকে রওনা দেন জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার। এ সময় সঙ্গে ছিলেন ইউএনএইচসিআরের রিজওনাল ব্যুরো অব এশিয়া অ্যান্ড প্যাসিফিকের পরিচালক হ্যাই ক্যুন জুন, শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) ও অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ মিজানুর রহমান প্রমুখ।

বিকেলে কক্সবাজার শহরে ফিরে এসে আরআরআরসি কার্যালয়ে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান এবং জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি। রাতে তিনি ঢাকায় ফিরে যান।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, রোহিঙ্গাদের স্বার্থে প্রত্যাবাসন নিয়ে ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি তাঁদের সঙ্গে কথা বলেছেন। রোহিঙ্গাদের সঙ্গে পৃথক তিনটি বৈঠকে তিনি ( ফিলিপ্পো) প্রত্যাবাসন নিয়ে কথা বলেছেন। সমস্যার কথা শুনেছেন। রোহিঙ্গারা তাঁকে জানিয়েছেন, রাখাইন রাজ্যে নির্যাতনের শিকার হয়ে তাঁরা বাংলাদেশের আশ্রয়শিবিরে পালিয়ে এসেছেন। এখন আরাকান আর্মি রোহিঙ্গাদের ওপর অত্যাচার নির্যাতন চালাচ্ছে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: শরণ র থ র খ ইন

এছাড়াও পড়ুন:

বছরে ৬ লাখ অপরিণত শিশুর জন্ম

দেশে বছরে গড়ে জন্ম নিচ্ছে প্রায় ৬ লাখ অপরিণত (প্রিম্যাচিওর) শিশু। জন্মের সময় গর্ভকাল পূর্ণ না হওয়ায় এসব নবজাতকের ঝুঁকি থাকে নানা জটিলতায় পড়ার, এমনকি মৃত্যুর আশঙ্কাও থাকে বেশি। তাই নবজাতকদের মৃত্যু হ্রাসে অপরিণত নবজাতক জন্ম প্রতিরোধে সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। 

সোমবার শহীদ ডা. মিল্টন হলে বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের নিওন্যাটোলজি বিভাগ ও সেভ দ্যা চিলড্রেন আয়োজিত সভায় এই তথ্য জানানো হয়। 

স্বাগত বক্তব্য রাখেন সহযোগী অধ্যাপক ডা. সাদেকা চৌধুরী মনি। সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সহযোগী অধ্যাপক ডা. ইসমত জাহান। তিনি বলেন, মা ও অপরিণত নবজাতকদের জীবন রক্ষাকারী প্রকল্প সেভিং উইমেন এন্ড প্রিমেচিউর বেবিজ বা সোয়াপের মাধ্যমে দেশের পাচঁটি হাসপাতাল  মা ও নবজাতক সেবা দেওয়া হচ্ছে। এই প্রকল্পের আওতায় ১ লাখ ৬৫ হাজার গর্ভবতী মা ও ৮৭ হাজার নবজাতককে সেবা পেয়েছে। দেড় হাজার স্বাস্থ্যকর্মীকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। এই প্রকল্পের উল্লেখযোগ্য অর্জন হলো ভায়ু বাবল সিপ্যাপ, ফ্যামিলি সেন্টার কেয়ার, ক্যাঙ্গারু মাদার কেয়ার, নিওনেটালি লাইভ ইত্যাদিকে সফলভাবে প্রয়োগ করে নবজাতকদের জীবন রক্ষায় ইতিবাচক ফলাফল পাওয়া গেছে।

বিএমইউর নিওনাটোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. আব্দুল মান্নান বলেন, বাংলাদেশে বছরে ৩০ লাখ নবজাতকের জন্ম হয়। যার মধ্যে শতকরা ২০ শতাংশই অপরিণত নবজাতক এবং বিশ্বের মধ্যে এই হার সর্বোচ্চ। সেই হিসেবে বছরে অপরিণত ৬ লাখ শিশু জন্মায়। নবজাতকের মৃত্যুহার হ্রাস পেলেও লক্ষ্যমাত্রা পূরণ অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং। বিশেষ করে ২০৩০ সালের মধ্যে প্রতি হাজার জীবিত জন্মে বর্তমানে নবজাতকের মৃত্যুহার ২০ জন থেকে ১২ জনে কমিয়ে আনা। যদিও এই প্রকল্পের কার্যক্রমসহ সামগ্রিক প্রচেষ্টায় নবজাতকের মৃত্যুহার ২০ জনে কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে।

বিএমইউর ফিটোম্যাটার্নাল মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. তাবাসসুম বলেন, নবজাতকের মৃত্যুর অন্যতম কারণ হলো অপরিণত নবজাতকের জন্ম দান। বাংলাদেশে প্রতি বছর ৩০ লাখ নবজাতকের জন্ম হয়। যার মধ্যে শতকরা ২০ শতাংশই অপরিণত নবজাতক এবং বিশ্বের মধ্যে এই হার সর্বোচ্চ। গত ১০ বছর ধরে এমন পরিস্থিতি দেখা যায়। এটি প্রতিরোধে আমাদের উদ্যোগ নেই। কেনো কমানো যাচ্ছে না এবিষয়েও কোনো গবেষণা হয় না। তবে সচেতনতা, প্রসূতি সেবা এবং মাতৃস্বাস্থ্য কার্যক্রম জোরদার করলে এ সমস্যা অনেকাংশে কমানো সম্ভব। অপরিণত শিশুর জন্মের পেছনে রয়েছে মাতৃস্বাস্থ্যের অবনতি, অপুষ্টি, সময়মতো প্রসবপরিচর্যার অভাব, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও প্রসবকালীন জটিলতা। এ ছাড়া ধূমপান, অনিয়ন্ত্রিত ওষুধ সেবন এবং অল্প বয়সে গর্ভধারণও অন্যতম কারণ।

সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএমইউ) এর ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলম বলেন, সোয়াপের মাধ্যমে নবজাতকদের পরিবার কেন্দ্রিক চিকিৎসা (ফ্যামিলি সেন্টারড কেয়ার-এফসিসি) মা ও শিশুর জীবন রক্ষায় বিরাট অবদান রাখছে। এই পদ্ধতিকে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে বৃহৎ আকারে কাজে লাগাতে পারলে সমগ্র স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থায় ইতিবাচক পরিবর্তনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর  অধ্যাপক ডা. মো. আবুল কালাম আজাদ, প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর গবেষণা ও উন্নয়ন অধ্যাপক ডা. মো. মুজিবুর রহমান হাওলাদার, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. নাহরীন আখতার, শিশু অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. মো. আতিয়ার রহমান।

সম্পর্কিত নিবন্ধ