পাঁচ অভয়াশ্রমে মাছ ধরায় দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা শুরু
Published: 28th, February 2025 GMT
জাটকা রক্ষায় দেশে ইলিশের পাঁচটি অভয়াশ্রমে সব ধরনের মাছ আহরণে নিষেধাজ্ঞা শুরু হয়েছে আজ শনিবার। মধ্যরাত থেকে শুরু দুই মাসের এ নিষেধাজ্ঞা শেষ হবে আগামী ৩০ এপ্রিল।
মৎস্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, জাটকাকে (১০ ইঞ্চির কম দৈর্ঘ্য) ইলিশে পরিণত হওয়ার সুযোগ নিশ্চিতে দেশের মোট ৬টি অভয়াশ্রমে প্রতিবছর এই সময় ২ মাস মাছ আহরণ বন্ধ রাখা হয়। এর মধ্যে পাঁচটি অভয়াশ্রমে নিষেধাজ্ঞা থাকে মার্চ ও এপ্রিলে। মেঘনা, পদ্মা ও তেঁতুলিয়া নদীর অভয়াশ্রমের মোট জলসীমা ৩৯২ কিলোমিটার। বাকি আরেকটি পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার সাগর-সংলগ্ন আন্ধারমানিক নদীর ৪০ কিলোমিটার অভয়াশ্রমে এই নিষেধাজ্ঞা চলে ১ নভেম্বর থেকে ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত।
নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হওয়া পাঁচ অভয়াশ্রমের সীমানা হচ্ছে– ভোলার চর ইলিশার মদনপুর থেকে চর পিয়াল পর্যন্ত মেঘনা নদীর শাহাবাজপুর চ্যানেলের ৯০ কিলোমিটার; ভোলার ভেদুরিয়া থেকে পটুয়াখালীর চর রুস্তম পর্যন্ত তেঁতুলিয়া নদীর ১০০ কিলোমিটার; চাঁদপুরের ষাটনল থেকে লক্ষ্মীপুরের চর আলেকজান্ডার পর্যন্ত মেঘনা নদীর ১০০ কিলোমিটার; শরীয়তপুরের নড়িয়া থেকে ভেদরগঞ্জ পর্যন্ত পদ্মার ভাটিতে ২০ কিলোমিটার এবং বরিশাল সদর উপজেলার কালাবদর নদীর হবিনগর পয়েন্ট থেকে মেহেন্দীগঞ্জের বামনীরচর, মেহেন্দীগঞ্জের গজারিয়া নদীর হাটপয়েন্ট থেকে হিজলা লঞ্চঘাট, হিজলার মৌলভীরহাট পয়েন্ট থেকে মেহেন্দীগঞ্জ-সংলগ্ন মেঘনার দক্ষিণ-পশ্চিম জাঙ্গালিয়া পয়েন্ট পর্যন্ত মোট ৮২ কিলোমিটার নদ-নদী।
মৎস্য অধিদপ্তরের বরিশালের উপপরিচালক নৃপেন্দ্রনাথ বিশ্বাস বলেন, এ নিষেধাজ্ঞার মূল উদ্দেশ্য জাটকা নিধন বন্ধ করে বড় ইলিশে পরিণত হওয়ার সুযোগ দেওয়া। তবে অন্য মাছ ধরার অজুহাতে জেলেরা নদীতে নেমে জাটকা ধরেন। এ জন্য এই সময় সব ধরনের জেলে নৌকা নিষিদ্ধ করা হয়।
গতকাল সরেজমিন চাঁদপুর সদর উপজেলার আনন্দবাজার, শহরের টিলাবাড়ি, বড় স্টেশন মোলহেড, পুরান বাজার রনাগোয়াল, দোকানঘর, বহরিয়া, হরিণা ও আখনের হাট জেলেপল্লিতে দেখা যায়, অধিকাংশ জেলে মাছ ধরার নৌকা তীরে উঠিয়ে রেখেছেন। অনেকে জাল মেরামতের কাজ শুরু করেছেন। কেউ প্রস্তুতি নিচ্ছেন নৌকা মেরামতের।
এদিকে জাটকা ধরায় নিষেধাজ্ঞা কার্যকরে সরকার জেলেদের মধ্যে সভা, মাইকিং ও লিফলেট বিতরণের মতো বিভিন্ন সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালায়। নদীতে নামলে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার ও জরিমানাও করা হয়। নিবন্ধিত জেলেদের নিষেধাজ্ঞার আগে-পরে মিলিয়ে চার মাস দেওয়া হয় ৩০ কেজি করে চাল। এর পরও প্রতিবছর অনেক জেলে সুযোগ পেলেই জাটকা নিধন করে। এ নিয়ে জেলেদের অভিযোগ, সরকার যে সহায়তা দেয় তা প্রয়োজনের তুলনায় সামান্য।
চাঁদপুর বহরিয়া এলাকার জেলে মফিজ গাজী বলেন, আমরা অন্য কোনো কাজ জানি না। সরকার নিষেধাজ্ঞা দিছে, আমরা তা মানি। তবে দুই মাসের অভিযান মানতে গিয়ে খুব কষ্ট হয়ে যায়। সরকারের যে চাল পাই, তা দিয়ে সংসার চলে না। চাল ছাড়াও একটা সংসার চালাতে আরও অনেক কিছুই লাগে। সন্তানদের পড়ালেখা আছে, কিস্তি আছে। তাই চালের পাশাপাশি আর্থিক সহযোগিতার আবেদন করছি সরকারের কাছে।
চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা গোলাম মেহেদী হাসান বলেন, জেলেদের জন্য খাদ্য সহায়তার বরাদ্দকৃত চাল এরই মধ্যে চলে এসেছে। এ ছাড়া ঋণ দেওয়া সংস্থাগুলোকে এই সময়ে কিস্তির টাকা আদায় না করতে বলা হয়েছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
প্রস্তাবিত রাজস্ব নীতি বিভাগে সচিব হিসেবে শুল্ক ও কর কর্মকর্তা পদায়নের দাবি
উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদিত রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশের চূড়ান্ত খসড়ার কিছু অংশে আপত্তি জানিয়ে মতামত দিয়েছে ঢাকার বিসিএস (কাস্টমস অ্যান্ড ভ্যাট) অ্যাসোসিয়েশন। প্রস্তাবিত রাজস্ব নীতি বিভাগে লোকবল নিয়োগের শর্ত নিয়ে তাদের এই আপত্তি। গতকাল রোববার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তারা এই আপত্তি জানিয়েছে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সংগঠনটি সাতটি বিষয়ে নিজেদের মতামত প্রকাশ করেছে। উল্লেখ্য, ১৭ এপ্রিল উপদেষ্টা পরিষদের সভায় রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর চূড়ান্ত খসড়া অনুমোদিত হয়।
গণমাধ্যমে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিসিএস (কাস্টমস অ্যান্ড ভ্যাট) অ্যাসোসিয়েশন অধ্যাদেশের যেসব বিষয়ে নিজেদের মতামত দিয়েছে, সেগুলো হলো—এক, বিসিএস (কর) অ্যাসোসিয়েশন ও বিসিএস (কাস্টমস অ্যান্ড ভ্যাট) অ্যাসোসিয়েশন ‘রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিষয়ে বাস্তব অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কর্মরত কর্মকর্তাদের মধ্য হতে’ রাজস্ব নীতি বিভাগের সচিব নিয়োগের মতামত প্রদান করেছিল। কিন্তু খসড়ার অনুচ্ছেদে (৪২৩) ‘উপযুক্ত যোগ্যতাসম্পন্ন যে কোনো সরকারি কর্মকর্তাকে’ রাজস্ব নীতি বিভাগের সচিব বা সিনিয়র সচিব নিযুক্ত করার বিধান রাখা হয়েছে। এতে রাজস্ব নীতি প্রণয়নে বিসিএস (কর) ও বিসিএস (কাস্টমস ও এক্সাইজ) ক্যাডারভুক্ত কর্মকর্তাদের দীর্ঘদিনের প্রত্যক্ষভাবে কাজ করার অভিজ্ঞতাকে বিবেচনায় নেওয়া হয়নি মর্মে প্রতীয়মান। রাজস্ব নীতি প্রণয়নে কর রাজস্ব আহরণের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে রাজস্ব নীতি বিভাগের শীর্ষ পদে পদায়ন করা হলে রাজস্ব বিভাগকে পৃথক করার মূল উদ্দেশ্য অর্জনে সহায়ক হবে।
দুই, রাজস্ব নীতি বিভাগের মৌলিক পদগুলো বিসিএস (কাস্টমস ও এক্সাইজ) ও বিসিএস (কর) ক্যাডার থেকে পূরণের প্রস্তাব করা হলেও খসড়ায় আয়কর, কাস্টমস, ভ্যাট, অর্থনীতি, ব্যবসায় প্রশাসন, গবেষণা পরিসংখ্যান, প্রশাসন, নিরীক্ষা, আইনসংক্রান্ত কাজে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কর্মকর্তা থেকে পূরণের বিধান যুক্ত করা হয়েছে। রাজস্ব আহরণ, ব্যবস্থাপনা ও নীতি প্রণয়নে বাস্তব অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কর্মকর্তাদের রাজস্ব নীতি বিভাগে সুনির্দিষ্টভাবে পদায়নের সুযোগ রাখা হয়নি।
তিন, খসড়ার অনুচ্ছেদ ৯-এ রাজস্ব নীতি বিভাগে জনবল পদায়নের সুপারিশের লক্ষ্যে একটি কমিটির কথা উল্লেখ থাকলেও ধারা ৪(৪)–এ এমন কোনো কমিটির উল্লেখ নেই। উক্ত কমিটির গঠন উল্লেখ করা প্রয়োজন।
চার, খসড়ায় রাজস্ব নীতি বিভাগের কার্যপরিধিতে কর আইন প্রয়োগ ও কর আহরণ পরিস্থিতি পরিবীক্ষণ যুক্ত করা হয়েছে। এ বিধান রাখায় নীতি বিভাগকে ব্যবস্থাপনা বিভাগের কার্যক্রম তদারকির সুযোগ থেকে যায়। এক বিভাগের কার্যক্রম সমমর্যাদাসম্পন্ন অপর বিভাগ কর্তৃক পরিবীক্ষণের বিধান রাখা হলে তা আইনের দৃষ্টিতেও সাংঘর্ষিক বিবেচিত হয়।
পাঁচ, খসড়ার অনুচ্ছেদ ৭(৩)–এ বিসিএস (কর) ও বিসিএস (কাস্টমস ও এক্সাইজ) ক্যাডারের কর্মকর্তাদের থেকে রাজস্ব আহরণে ন্যূনতম ২০ বছরের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কর্মকর্তাকে পালাক্রমে রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগের সিনিয়র সচিব বা সচিব হিসেবে নিয়োগ প্রদান—এই ধারা পরিবর্তনে রাজস্ব আহরণে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কোনো সরকারি কর্মকর্তাকে রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব বা সিনিয়র সচিব হিসেবে নিয়োগের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার প্রদানের বিধান যুক্ত করা হয়েছে। এতে কর-রাজস্ব আহরণে দীর্ঘদিনের অর্জিত বিশেষায়িত জ্ঞান ও দক্ষতাকে কাজে লাগানোর সুযোগ সীমিত করবে।
ছয়, খসড়ায় রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রশাসনিক পদে প্রশাসন ক্যাডার থেকে পদায়ন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। বর্তমানে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের বিভিন্ন প্রশাসনিক পদে বিসিএস (কর) ও বিসিএস (কাস্টমস ও এক্সাইজ) ক্যাডারভুক্ত কর্মকর্তারা পদস্থ রয়েছেন, যা তাঁদের নির্ধারিত পদ।
সাত, সরকার গঠিত রাজস্ব সংস্কারবিষয়ক পরামর্শক কমিটির প্রতিবেদন অন্য সংস্কার কমিশনের মতো জনসমক্ষে প্রকাশ করা সমীচীন বলে বিসিএস (কাস্টমস অ্যান্ড ভ্যাট) অ্যাসোসিয়েশন মনে করে।
এর আগে ২৬ এপ্রিল জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মাল্টিপারপাস হলে বিসিএস কাস্টমস অ্যান্ড ভ্যাট অ্যাসোসিয়েশনের বিশেষ সাধারণ সভা (ইজিএম) অনুষ্ঠিত হয়। অ্যাসোসিয়েশনের আমন্ত্রণে সভায় সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা ও রাজস্ব কর্মকর্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ কাস্টমস অ্যান্ড ভ্যাট অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাকাএভ) নির্বাহী কমিটির একটি প্রতিনিধিদল উপস্থিত ছিল।