জাটকা রক্ষায় দেশে ইলিশের পাঁচটি অভয়াশ্রমে সব ধরনের মাছ আহরণে নিষেধাজ্ঞা শুরু হয়েছে আজ শনিবার। মধ্যরাত থেকে শুরু দুই মাসের এ নিষেধাজ্ঞা শেষ হবে আগামী ৩০ এপ্রিল।
মৎস্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, জাটকাকে (১০ ইঞ্চির কম দৈর্ঘ্য) ইলিশে পরিণত হওয়ার সুযোগ নিশ্চিতে দেশের মোট ৬টি অভয়াশ্রমে প্রতিবছর এই সময় ২ মাস মাছ আহরণ বন্ধ রাখা হয়। এর মধ্যে পাঁচটি অভয়াশ্রমে নিষেধাজ্ঞা থাকে মার্চ ও এপ্রিলে। মেঘনা, পদ্মা ও তেঁতুলিয়া নদীর অভয়াশ্রমের মোট জলসীমা ৩৯২ কিলোমিটার। বাকি আরেকটি পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার সাগর-সংলগ্ন আন্ধারমানিক নদীর ৪০ কিলোমিটার অভয়াশ্রমে এই নিষেধাজ্ঞা চলে ১ নভেম্বর থেকে ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত।

নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হওয়া পাঁচ অভয়াশ্রমের সীমানা হচ্ছে– ভোলার চর ইলিশার মদনপুর থেকে চর পিয়াল পর্যন্ত মেঘনা নদীর শাহাবাজপুর চ্যানেলের ৯০ কিলোমিটার; ভোলার ভেদুরিয়া থেকে পটুয়াখালীর চর রুস্তম পর্যন্ত তেঁতুলিয়া নদীর ১০০ কিলোমিটার; চাঁদপুরের ষাটনল থেকে লক্ষ্মীপুরের চর আলেকজান্ডার পর্যন্ত মেঘনা নদীর ১০০ কিলোমিটার; শরীয়তপুরের নড়িয়া থেকে ভেদরগঞ্জ পর্যন্ত পদ্মার ভাটিতে ২০ কিলোমিটার এবং বরিশাল সদর উপজেলার কালাবদর নদীর হবিনগর পয়েন্ট থেকে মেহেন্দীগঞ্জের বামনীরচর, মেহেন্দীগঞ্জের গজারিয়া নদীর হাটপয়েন্ট থেকে হিজলা লঞ্চঘাট, হিজলার মৌলভীরহাট পয়েন্ট থেকে মেহেন্দীগঞ্জ-সংলগ্ন মেঘনার দক্ষিণ-পশ্চিম জাঙ্গালিয়া পয়েন্ট পর্যন্ত মোট ৮২ কিলোমিটার নদ-নদী। 
মৎস্য অধিদপ্তরের বরিশালের উপপরিচালক নৃপেন্দ্রনাথ বিশ্বাস বলেন, এ নিষেধাজ্ঞার মূল উদ্দেশ্য জাটকা নিধন বন্ধ করে বড় ইলিশে পরিণত হওয়ার সুযোগ দেওয়া। তবে অন্য মাছ ধরার অজুহাতে জেলেরা নদীতে নেমে জাটকা ধরেন। এ জন্য এই সময় সব ধরনের জেলে নৌকা নিষিদ্ধ করা হয়। 

গতকাল সরেজমিন চাঁদপুর সদর উপজেলার আনন্দবাজার, শহরের টিলাবাড়ি, বড় স্টেশন মোলহেড, পুরান বাজার রনাগোয়াল, দোকানঘর, বহরিয়া, হরিণা ও আখনের হাট জেলেপল্লিতে দেখা যায়, অধিকাংশ জেলে মাছ ধরার নৌকা তীরে উঠিয়ে রেখেছেন। অনেকে জাল মেরামতের কাজ শুরু করেছেন। কেউ প্রস্তুতি নিচ্ছেন নৌকা মেরামতের। 
এদিকে জাটকা ধরায় নিষেধাজ্ঞা কার্যকরে সরকার জেলেদের মধ্যে সভা, মাইকিং ও লিফলেট বিতরণের মতো বিভিন্ন সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালায়। নদীতে নামলে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার ও জরিমানাও করা হয়। নিবন্ধিত জেলেদের নিষেধাজ্ঞার আগে-পরে মিলিয়ে চার মাস দেওয়া হয় ৩০ কেজি করে চাল। এর পরও প্রতিবছর অনেক জেলে সুযোগ পেলেই জাটকা নিধন করে। এ নিয়ে জেলেদের অভিযোগ, সরকার যে সহায়তা দেয় তা প্রয়োজনের তুলনায় সামান্য। 
চাঁদপুর বহরিয়া এলাকার জেলে মফিজ গাজী বলেন, আমরা অন্য কোনো কাজ জানি না। সরকার নিষেধাজ্ঞা দিছে, আমরা তা মানি। তবে দুই মাসের অভিযান মানতে গিয়ে খুব কষ্ট হয়ে যায়। সরকারের যে চাল পাই, তা দিয়ে সংসার চলে না। চাল ছাড়াও একটা সংসার চালাতে আরও অনেক কিছুই লাগে। সন্তানদের পড়ালেখা আছে, কিস্তি আছে। তাই চালের পাশাপাশি আর্থিক সহযোগিতার আবেদন করছি সরকারের কাছে।
চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা গোলাম মেহেদী হাসান বলেন, জেলেদের জন্য খাদ্য সহায়তার বরাদ্দকৃত চাল এরই মধ্যে চলে এসেছে। এ ছাড়া ঋণ দেওয়া সংস্থাগুলোকে এই সময়ে কিস্তির টাকা আদায় না করতে বলা হয়েছে।
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

সাগরে ইলিশ মিলছে কম, চড়া দাম আড়তে

নিষেধাজ্ঞা শেষে দীর্ঘ বিরতির পর আবারও সরগরম হয়ে উঠেছে দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম বৃহত্তম সামুদ্রিক মৎস্য আড়ত কেবি বাজার। সাগরে প্রায় দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ায় আবারও সরগরম হয়ে উঠেছে বাগেরহাটের ভৈরবতীরের এ মাছ বাজার। 

সাগরে মাছ আহরণ শেষে শুক্রবার ভোরে কেবি বাজার ঘাটে দুটি ট্রলার ভেড়ে। তবে মাছের পরিমাণ চাহিদার তুলনায় অনেক কম। ব্যবসায়ীরা জানান, ৫৮ দিনের অবরোধ শেষে সাগর থেকে এই প্রথম দুটি ট্রলার এসেছে। তবে এসব ট্রলারে মাছের পরিমান খুবই কম। ফলে দাম অনেক বেশি। 

জেলে রুহুল জানান, তাদের ট্রলার সাগরে যাওয়ার পরে মাত্র কয়েকবার জাল ফেলতে পেরেছেন। এতে অল্প কিছু ইলিশসহ নানা ধরনের মাছ পেয়েছেন। পরে ট্রলারে সমস্যা হওয়ায় চলে আসতে বাধ্য হয়েছেন। 

শুক্রবার বাজারে ২০০ থেকে ৩০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ প্রতি কেজি ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, আধা কেজি থেকে ৮০০ গ্রামের ইলিশ ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা কেজি এবং এক কেজি ওজনের ইলিশ ২ হাজার থেকে ২৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।

এ ছাড়া রূপচাঁদা আকার ভেদে প্রতিকেজি ৫০০ থেকে ১২০০ টাকা, কঙ্কন, তুলারডাটি, ঢেলা চ্যালা, ভেটকি, লইট্টা, ছুরি, জাবা, বিড়াল জাবাসহ বিভিন্ন ধরনের মাছ একশ থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। সাগর থেকে বেশি করে ট্রলারের আগমন ও মাছের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে দাম কমবে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। 

মোরেলগঞ্জ থেকে মাছ কিনতে আসা তৈয়ব মুন্সি বলেন, সাগরে মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা চলাকালে তিনি বাজারে আসেননি। অনেক দিন পরে আজই বাজারে এসেছেন, তবে দাম অনেক বেশি। তারপরও কিছু মাছ কিনেছেন। বেশি দামে মাছ কিনে এলাকায় বিক্রি করে লোকসানের শঙ্কা জানান তিনি। 

কেবি বাজার আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক অনুপ কুমার বিশ্বাস বলেন, নিষেধাজ্ঞার পর শুক্রবার প্রথমবারে সাগর থেকে ট্রলার এসেছে। জেলেরা তেমন মাছ পায়নি। তবে বিভিন্ন স্থান থেকে অনেক পাইকার আসছে। যার কারণে দাম কিছুটা বেশি। সাগরে বেশি পরিমাণ মাছ ধরা পড়লে দাম কিছুটা কমবে বলে জানান তিনি।

সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এবার ১৫ এপ্রিল থেকে ১১ জুন মধ্যরাত পর্যন্ত সাগরে মাছ আহরণ নিষিদ্ধ ছিল।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দেশে ১৪ দিনে এল ১১৪ কোটি ডলার রেমিট্যান্স
  • সাগরে ইলিশ মিলছে কম, চড়া দাম আড়তে