Samakal:
2025-05-01@05:32:51 GMT

ব্যতিক্রমী চলচ্চিত্র নির্মাতা 

Published: 28th, February 2025 GMT

ব্যতিক্রমী চলচ্চিত্র নির্মাতা 

সৃজনশীল মানুষের প্রস্থান এক ধরনের শূন্যতা তৈরি করে। এই তালিকায়  যুক্ত হলো জাহিদুর রহিম অঞ্জনের নাম। তিনি ছিলেন স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাতা, স্ক্রিপ্ট রাইটার, বড় পর্দার চলচ্চিত্র পরিচালক ও সংগঠক। অসামান্য প্রতিভার অধিকারী জাহিদুর রহিম অঞ্জনের স্বপ্ন চিন্তা, সৃষ্টি, অনন্য পরিকল্পনা তাঁর সমসাময়িক নির্মাতাদের থেকে পৃথক করে রাখবে। তাঁর বর্ণাঢ্য জীবন ছিল আনন্দ-বেদনায় ভরপুর। তিনি আধুনিক ধারার চলচ্চিত্র নির্মাতাদের অগ্রগামীদের অন্যতম। আজিজ মার্কেট, পাবলিক লাইব্রেরি, চারুকলা অনুষদ ও জাতীয় জাদুঘরে তাঁর সরব উপস্থিতি ছিল নজর-কাড়া। আড্ডা, হইহুল্লোড় ও প্রাণখোলা হাসি, পোশাক, অলংকার ধারণ ছিল  নিজস্বতা প্রকাশের বাহক। তিনি সবার মনোযোগের কেন্দ্রে এসেছিলেন। ছিলেন আড্ডার মধ্যমণি। তাঁর আনন্দ-বেদনার কত কাহিনি আজও অজানা থেকে গেল! 

ভারতের পুনে ফিল্ম ইনস্টিটিউট থেকে চলচ্চিত্র বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে তিনি বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের শ্রুতিচিত্রণ কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেন। তাঁর পূর্বসূরি ছিলেন মিশুক মুনীর। মিশুক সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করেন, আর জাহিদুর রহিম অঞ্জন লিভারের জটিলতায় ২৪ ফেব্রুয়ারি ভারতের বেঙ্গালুরুতে চিরঅনন্তের উদ্দেশে যাত্রা করেন।
জাহিদুর রহিম অঞ্জন স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া অ্যান্ড স্টাডিজ বিভাগে শিক্ষক হিসেবেও সংযুক্ত হন। ফিল্ম তৈরির নেশায় জড়িয়ে পড়েন। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত ফিল্ম তৈরিতে তাঁর সৃজন ও দক্ষতার পরিচয় রেখে গেছেন।

তিনি শর্টফিল্ম ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন। তিন দশক শর্টফিল্ম নির্মাণে তাঁর অসামান্য অবদান স্মরণীয়। ২০০৪ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ শর্টফিল্ম ফোরামের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন নিষ্ঠার সঙ্গে।

অঞ্জন ১৯৯০ সালে আন্তন চেকভের গল্প অবলম্বনে স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘মর্নিং’ পরিচালনা করে পাদপ্রদীপের আলোয় আসেন। প্রথম স্বল্পদৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্র হলেও তা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয়। পরে তিনি বিশিষ্ট চিন্তক অতীশ দীপংকরের জীবনীকে চলচ্চিত্রে রূপ দেন ‘শ্রীজ্ঞান অতীশ দীপংকর’ নির্মাণ করে।
তিনি আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ‘রেইনকোট’ অবলম্বনে পরিচালনা করেন ‘মেঘমল্লার’। পটভূমি ১৯৭১। কলেজ শিক্ষক নুরুল হুদার জীবনের ঘটনা, মনোস্তত্ত্ব ও সমাজ-বাস্তবতা নিয়ে চলচ্চিত্রের আখ্যানভাগ নির্মিত। মূল চরিত্রে শহীদুজ্জামান সেলিম অসাধারণ অভিনয় দক্ষতায় দর্শকদের মুগ্ধ করেন। ‘মেঘমল্লার’ ২০১৫ মালের ১৫ সেপ্টেম্বর কানাডার টরন্টো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব ও ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বাংলা চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয়। ২০১৬ সালে ৩৯তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অনুষ্ঠানে শ্রেষ্ঠ  পরিচালক ও শ্রেষ্ঠ সংলাপ রচয়িতা সম্মানে ভূষিত হন তিনি।
জাহিদুর রহিম অঞ্জন প্রথাবিরোধী চলচ্চিত্র নির্মাতা ছিলেন। সরকারি অনুদানে তাঁর নির্মিত ‘চাঁদের অমাবস্যা’ একটি অসাধারণ সৃষ্টি। দেশের সার্বিক অবস্থা ও নিজের অসুস্থতার কারণে চলচ্চিত্রটি মুক্তি পায়নি। তাঁর বন্ধু, স্বজন ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা চলচ্চিত্রটির নির্মাণ কুশলতা ও কারিগরি দিক পর্যবেক্ষণ করেছেন। ‘চাঁদের অমাবস্যা’ মুক্তির অপেক্ষায়।
জাহিদুর রহিম অঞ্জন ৬১ বছর এই পৃথিবীর সৌন্দর্য, আনন্দ-বেদনাকে স্পর্শ করেছেন। তাঁর প্রতিটি সময় ছিল সৃজনমুখর। শুধু চলচ্চিত্র নির্মাতা নন, একজন ভালো মানুষ হিসেবে তিনি তাঁর পরিমণ্ডল ছেড়ে পরিচিত মানুষের প্রিয় ও গ্রহণযোগ্য ছিলেন; বেঁচে থাকবেন স্মরণে, স্মৃতিতে। প্রকাশক, গবেষণা প্রতিষ্ঠানকে জাহিদুর রহিম অঞ্জনের রচনাসমগ্র প্রকাশের অনুরোধ জানাচ্ছি। তাঁর জীবন ও কর্ম নিয়ে নির্মাণ করা হোক বিশেষ ডকুমেন্টারি।

জাহিদুর রহিম অঞ্জন অসংখ্য নির্মাতার পথপ্রদর্শক। তাঁর জীবনসংগ্রাম, সৃষ্টির ইতিহাস নিয়ে ‘স্মারকগ্রন্থ’ প্রকাশিত হবে। তিনি আর থাকবেন না বাস্তবে; অবচেতনে তাঁর অবস্থান অমোচনীয়। জাহিদুর রহমান অঞ্জনকে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার সঙ্গে স্মরণ করছি।

সাইফুজ্জামান: প্রাবন্ধিক; জাতীয় জাদুঘরের কর্মকর্তা

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: চলচ চ ত র ন র ম ত র জ বন

এছাড়াও পড়ুন:

এবার লন্ডনে পুরস্কার জিতল ‘প্রিয় মালতি’

শঙ্খ দাশগুপ্তের প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘প্রিয় মালতি’। এটি অভিনেত্রী মেহজাবীন চৌধুরীরও প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমা। গত ডিসেম্বরে ঢাকা চলচ্চিত্র উৎসবে বাংলাদেশ প্যানোরামা সেকশনে সেরা সিনেমার পুরস্কার পায় সিনেমাটি। এবার লন্ডন বাঙালি চলচ্চিত্র উৎসবের অষ্টম আসরে দর্শক পুরস্কার অর্জন করেছে ‘প্রিয় মালতি’।

 গত ২২ থেকে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হওয়া এই উৎসবে ‘প্রিয় মালতি’ দর্শকদের কাছ থেকে দারুণ সাড়া পায়।

সামাজিক মাধ্যমে খবরটি জানিয়ে শঙ্খ দাসগুপ্ত লিখেছেন, “আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি যে, ‘প্রিয় মালতি’ লন্ডন বাঙালি চলচ্চিত্র উৎসবের দর্শক পুরস্কার জিতেছে। আমাদের গল্পে যারা বিশ্বাস রেখেছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা। আপনাদের ভালোবাসা আর সমর্থনেই এটা সম্ভব হয়েছে। চলুন আরও এমন গল্প তৈরি করি, যা সীমানার গণ্ডি পেরিয়ে মানুষের হৃদয়কে যুক্ত করে।”

‘প্রিয় মালতী’ নির্মাণের পাশাপাশি এর গল্পকার ও চিত্রনাট্যকার শঙ্খ দাশগুপ্ত নিজেই। সিনেমায় বাস্তব জীবনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে নির্মিত ‘প্রিয় মালতি’ একটি গভীর আবেগঘন নাটকীয় চলচ্চিত্র, যেখানে এক গর্ভবতী নারীর হঠাৎ ঘটে যাওয়া নাটকীয় জীবনের মোড়ের গল্প তুলে ধরা হয়েছে।

অভিনেত্রী মেহজাবীন চৌধুরীর পাশাপাশি এতে অভিনয়ে করেছেন নাদির চৌধুরী, আজাদ আবুল কালাম, মোমেনা চৌধুরী, সমু চৌধুরী, আনিসুল হক বোরুন, শাহজাহান সম্রাট এবং রিজভী রিজুসহ আরও অনেকে।

প্রসঙ্গত, গত বছরের ২২ এপ্রিল বার্বিকান সিনেমায় উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ছবিটি প্রদর্শিত হয়। এছাড়া ‘কায়রো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব’ ও ভারতের ‘গোয়া আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব’-এ অফিসিয়ালি প্রদর্শিত হয়। আন্তর্জাতিক উৎসবে ঘুরে আসার পর গত ২০ ডিসেম্বর বাংলাদেশে মুক্তি পায় সিনেমাটি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনবার দায়িত্ব পালনের দাবি ট্রাম্পের
  • জবি ছাত্রীর আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলায় আটক তরুণ
  • সুইডেনে বন্দুকধারীর হামলায় নিহত ৩
  • চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরও লিভারপুলের কোন খেলোয়াড়েরা পদক পাবেন না
  • বিশ্বের বড় বড় উৎসব কোথায় হয়
  • প্রাগে পুরস্কৃত ‘নট আ ফিকশন’,অনলাইনে মুক্তি ১ মে
  • ফসলের ক্ষেতে আশার আলো
  • ১৪ বছরে বদলে যাওয়া জোভান
  • কানে ‘আলী’, দায়িত্ব নিলো সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়
  • এবার লন্ডনে পুরস্কার জিতল ‘প্রিয় মালতি’