তামিমের সতর্ক বার্তা: প্রত্যেক ক্রিকেটার যেন পুরো টাকা পায়
Published: 1st, March 2025 GMT
বিকেল নাগাদ তামিম ইকবালসহ ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগের (ডিপিএল) ১২টি ক্লাবের অধিনায়কদের পদচারণায় মুখরিত হোম অব ক্রিকেট খ্যাত শের-ই-বাংলা। এমন আয়োজন ছিল না বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগেও (বিপিএল)।
শনিবার (১ মার্চ) বিকেলে ঢাকা লিগের ট্রফি উন্মোচনের আয়োজন করে ক্রিকেট কমিটি অব ঢাকা মেট্রোপোলিস। বিকাল ৪টার দিকে মাঠে হাজির ১২ দলের ১২ অধিনায়ক। সবার পরনে ক্লাবের জার্সি। মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের অধিনায়ক তামিম মেতেছিলেন খুনসুটিতে। সবার উপস্থিতিতে হয় ট্রফি উন্মোচন।
তবে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হতেই তামিম হয়ে যান সিরিয়াস। ক্রিকেটার পাওনা নিয়ে সরব এই তারকা ক্রিকেটার। ৩ মার্চ থেকে মাঠে গড়াবে এবারের আসর। তার একদিন আগে যেন কড়া বার্তা দিয়ে দিলেন তামিম। স্পষ্টভাবে বলে দিয়েছেন তার প্রধান প্রায়োরিটি ক্রিকেটারদের পাওনা।
আরো পড়ুন:
প্রিমিয়ার লিগে মোস্তাফিজের অনাগ্রহ কেন?
ম্যানসিটিতে ‘নতুন মেসি’ নিয়ে আসলেন গার্দিওলা
“খেলা ভালো হোক, আম্পায়ারিং ভালো হোক-এগুলো সব ঠিক আছে। প্লেয়ার্স পেমেন্টটা যেন সব ক্লাব নিশ্চিত করে-যে প্রত্যেকটা প্লেয়ার পেমেন্ট পাচ্ছে।এটা আমার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ আমরা জানি আমাদের দেশের পরিস্থিতিটা একটু ভিন্ন।”
পাওনা নিয়ে কোয়াবের সঙ্গে গতকাল শুক্রবার বৈঠক করেন ক্রিকেটাররা। প্রতিবারই পাওনা না দেওয়া নিয়ে একটা ইস্যু থাকে। ঠিকঠাকভাবে শুরু হলেও সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ক্রিকেটারদের সরব হতে দেখা যায়। তবে এবার আগে থেকেই সতর্ক ক্রিকেটাররা।
আজ ট্রফি উন্মোচন ছাড়াও আম্পায়ারদের ব্রিফ করে আম্পায়ার্স কমিটি। কারণ এই লিগে আম্পায়ারদের মান নিয়ে বারবার প্রশ্ন ওঠে। তামিমের কাছেও ঢাকা লিগের আম্পায়ারিং নিয়ে প্রশ্ন ছুটে যায়। এই উত্তর দিতে গিয়েও মোহামেডান অধিনায়ক টেনেছেন পাওনার কথা।
“আম্পায়ারিং নিয়ে যে সব অভিযোগ থাকে সেগুলো বোর্ড টেককেয়ার করুক, ভালোভাবে আমরা টুর্নামেন্টটা শেষ করি। আবারও বললাম আমার মেইন প্রায়োরিটি প্লেয়াররা যেন পুরো পেমেন্ট পায়।”
সবশেষ বিপিএলে ক্রিকেটারদের পাওনা নিয়ে ভুগতে হয়েছে। তামিমের এটা অজানা নয়। আর ঢাকা লিগে বকেয়া যেন অলিখিত নিয়ম।
তামিম বলেন, “বিপিএল বলেন, ডিপিএল বলেন ক্রিকেটাররা আর্থিকভাবে অনেক ভুগেছে। আমি আশা করব ক্লাবগুলো যে কমিটমেন্ট করেছে, এই ক্লাবগুলোর প্রত্যেকটা টাকা যেন প্রত্যেকটা খেলোয়াড় পায়- এটাই আমার জন্য মূল প্রায়োরিটি। দেন অবশ্যই ক্রিকেটটা ভালো হোক।”
টুর্নামেন্ট শুরুর আগে প্রায় সব ক্লাবই চুক্তি অনুযায়ী টাকা কাটছাঁটের বার্তা দেয়। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রায় সকলেই মেনে নিয়েছেন।তবে ব্যতিক্রম ছিলেন আফিফ হোসেন। আবাহনীর সঙ্গে চুক্তির পরও তিনি পরবর্তীতে যান লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জে। একই কারণে লিটন দাস কোন ক্লাবে খেলবেন এখন পর্যন্ত অজানা।
ঢাকা/রিয়াদ
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
জুমার দিনের করণীয় ও বর্জনীয়
জুমার দিন—মুসলমানদের জন্য এক বিশেষ বরকতময় দিন।
এটি শুধু সাপ্তাহিক নামাজের দিন নয়, বরং আত্মশুদ্ধি, সামাজিক সংহতি ও আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের মহান সুযোগ।
নবীজি (সা.) বলেছেন—“জুমার দিনই দিনসমূহের মধ্যে শ্রেষ্ঠ দিন। এ দিনেই আদম (আ.) সৃষ্টি হয়েছেন, এ দিনেই জান্নাতে প্রবেশ করেছেন, এবং এ দিনেই পৃথিবীতে প্রেরিত হয়েছেন।” (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৮৫৪)
অতএব, জুমা শুধু ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়—এটি ইসলামি সভ্যতার একটি কেন্দ্রবিন্দু।
এই দিনে কিছু কাজকে বিশেষভাবে উৎসাহিত করা হয়েছে, আবার কিছু কাজ থেকে কঠোরভাবে বারণ করা হয়েছে।
আরও পড়ুনইসলামোফোবিয়া মোকাবিলায় মুসলিম নারীর করণীয়২৬ আগস্ট ২০২৫জুমার দিনের করণীয়১. গোসল করা
নবীজি (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি জুমার দিনে গোসল করে, উত্তমভাবে পবিত্রতা অর্জন করে, তারপর মসজিদে আসে, নীরবে খুতবা শোনে ও নামাজ পড়ে, তার এক জুমা থেকে পরের জুমা পর্যন্ত গুনাহ মাফ করা হয়।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৮৮৩)
জুমার দিনের এই গোসল বিশেষ ইবাদত হিসেবে গণ্য হয়।
২. পরিচ্ছন্ন পোশাক ও সুগন্ধি ব্যবহার
জুমার নামাজে যাওয়ার আগে মুসলমানকে সুন্দর পোশাক পরা ও সুগন্ধি ব্যবহার করতে উৎসাহিত করা হয়েছে।
নবীজি (সা.) বলেছেন, “জুমার দিনে তোমাদের জন্য সুন্দর পোশাক পরা এবং সুগন্ধি ব্যবহার করা উত্তম।” (মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ১৫২৪৮)
এটি সামাজিক মর্যাদা ও আধ্যাত্মিক পবিত্রতার প্রতীক।
৩. তাড়াতাড়ি মসজিদে যাওয়া
জুমার নামাজে আগে পৌঁছানোর জন্য বড় ফজিলত রয়েছে।
নবীজি (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি প্রথম ঘণ্টায় জুমার জন্য যায়, সে যেন উট কোরবানি করল; দ্বিতীয় ঘণ্টায় গেলে গরু কোরবানি করল; তৃতীয় ঘণ্টায় গেলে ভেড়া কোরবানি করল; চতুর্থ ঘণ্টায় গেলে মুরগি কোরবানি করল; আর পঞ্চম ঘণ্টায় গেলে ডিম দান করল।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৮৮১)
অর্থাৎ, যত আগে যাবে, তত বেশি সওয়াব।
৪. খুতবা মনোযোগ দিয়ে শোনা
নবীজি (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি খুতবা চলাকালীন তার সঙ্গীকে বলে ‘চুপ করো’, সে-ও অনর্থক কথা বলল।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৯৩৪)
খুতবা চলাকালীন কথা বলা, ফোন ব্যবহার করা বা অমনোযোগ হওয়া নিষিদ্ধ।
৫. সুরা কাহফ তেলাওয়াত করা
জুমার দিনে সূরা কাহফ পড়ার বিশেষ ফজিলত রয়েছে।
নবীজি (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি জুমার দিনে সূরা কাহফ তেলাওয়াত করবে, তার জন্য দুই জুমার মধ্যবর্তী সময় আলোকিত হয়ে যাবে।” (মুসতাদরাকে হাকিম, হাদিস: ৩৩৯২)
৬. দোয়া করা ও দরুদ পাঠ করা
জুমার দিনে এমন একটি সময় আছে, যখন দোয়া কবুল হয়।
নবীজি (সা.) বলেন, “জুমার দিনে এমন একটি মুহূর্ত আছে, যেখানে কোনো মুসলমান নামাজে দাঁড়িয়ে আল্লাহর কাছে কিছু চাইলে আল্লাহ তা অবশ্যই কবুল করেন।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৯৩৫)
অনেক আলেমের মতে, এই সময়টি আসরের পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত।
এছাড়া, জুমার দিনে বেশি বেশি দরুদ পাঠ করার নির্দেশও এসেছে, “তোমরা জুমার দিনে আমার প্রতি বেশি দরুদ পাঠ করো, কারণ তোমাদের দরুদ আমার কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়।” (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ১৫৩১)
আরও পড়ুনপ্রাকৃতিক দুর্যোগে করণীয় আমল২২ আগস্ট ২০২৪জুমার দিনের বর্জনীয়১. জুমার নামাজ ত্যাগ করা
নবীজি (সা.) কঠোরভাবে সতর্ক করেছেন, “যে ব্যক্তি অলসতা বা উদাসীনতার কারণে তিনটি জুমা ত্যাগ করে, আল্লাহ তার হৃদয় সিল করে দেন।” (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ১০৫২)
অর্থাৎ, ইচ্ছাকৃতভাবে জুমা বাদ দেওয়া ইমানের জন্য ভয়ংকর বিপদ।
২. জুমা বাদ দিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্যে ব্যস্ত থাকা
কোরআনে আল্লাহ বলেন, “হে মুমিনগণ! যখন জুমার আহ্বান দেওয়া হয়, তখন আল্লাহর স্মরণে ছুটে যাও এবং ক্রয়-বিক্রয় বন্ধ করো।” (সুরা আল-জুমা, আয়াত: ৯)
জুমার সময় ব্যবসা-বাণিজ্য, অনলাইন কেনাকাটা বা অন্য ব্যস্ততা বড় গোনাহ।
৩. উচ্চৈঃস্বরে কথা বলা
মসজিদে অন্যদের বিরক্ত করা, ফোনে কথা বলা, এমনকি নামাজের আগে অপ্রয়োজনে গল্প করা জুমার আদববিরোধী কাজ।
৪. খুতবার সময় চলাফেরা করা
খুতবা চলাকালে যেকোনো অযথা নড়াচড়া বা সামনে যাওয়া, নবীজি (সা.) বলেছেন, এতে “সওয়াব নষ্ট হয়।” (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৮৫৭)
৫. নামাজ শেষে গাফেল থাকা
জুমার পরপরই নামাজ বা দোয়া না করে তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে যাওয়া উচিত নয়। আল্লাহ বলেন, “যখন নামাজ শেষ হবে, তখন পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ো এবং আল্লাহর অনুগ্রহ অন্বেষণ করো, কিন্তু আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ করো।” (সুরা জুমা, আয়াত: ১০)
অর্থাৎ, কাজ করবে ঠিকই, কিন্তু মনে যেন আল্লাহর স্মরণ থাকে।
জুমার দিনের তাৎপর্য
জুমা মুসলমানদের জন্য সামাজিক ঐক্যের প্রতীক। এদিনে মসজিদগুলোতে ধনী-গরিব, নেতা-জনতা, শিক্ষিত-অশিক্ষিত সবাই এক কাতারে দাঁড়ায়।
নবীজি (সা.) বলেছেন, “জুমার দিনে একবার নামাজ আদায় করা সাত দিনের গোনাহ মাফের সমান।” (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৮৫৬)
জুমার দিন আমাদের আত্মার পরিশুদ্ধি, সমাজের ঐক্য এবং আল্লাহর রহমত লাভের সোনালি সুযোগ।
এই দিনে গোসল, পরিষ্কার পোশাক, সময়মতো নামাজে যাওয়া, খুতবা শোনা, সূরা কাহফ পাঠ ও দোয়া করা—সবই মুসলিম জীবনের সৌন্দর্য বাড়ায়।
অন্যদিকে অলসতা, ব্যবসা, ও অমনোযোগিতা আমাদের ইমানকে দুর্বল করে।
অতএব, প্রতিটি মুসলমানের উচিত জুমাকে কেবল ছুটির দিন নয়, বরং “আত্মার নবজাগরণের দিন” হিসেবে পালন করা।
আরও পড়ুনসাহাবিদের প্রতি মহানবী (সা.)-এর শেষ উপদেশ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫