কক্সবাজারের টেকনাফ স্থলবন্দরের সঙ্গে মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুন ও আকিয়াব বন্দরের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য প্রায় দেড় মাস ধরে বন্ধ রেখেছে সে দেশের সরকার। কারণ, ইয়াঙ্গুন ও আকিয়াব বন্দর থেকে টেকনাফে আসার পথে পণ্যবাহী নৌযানগুলো আটকে দেয় দেশটির বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির (এএ) সদস্যরা।

টেকনাফভিত্তিক আমদানি–রপ্তানিকারকেরা জানান, গত ১৬ জানুয়ারি তিনটি নৌযান আটকের পর ইয়াঙ্গুন ও আকিয়াব বন্দর থেকে আজ শনিবার দুপুর পর্যন্ত কোনো পণ্যবাহী নৌযান টেকনাফে আসেনি। ওই ঘটনার চার দিন পর পণ্যবাহী দুটি নৌযান ছেড়ে দেওয়া হয়। অন্যটি ছাড়ে ১৬ দিন পর। এ ছাড়া গত ১০ ফেব্রুয়ারি শাহপরীর দ্বীপের গোলারচর থেকে স্পিডবোটে ধাওয়া করে কাঠবোঝাই একটি ট্রলার অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে নিয়ে যায় আরাকান আর্মি। সেটি এখনো ছাড়েনি তারা। তবে আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রিত রাখাইন রাজ্যের মংডু টাউনশিপের সঙ্গে টেকনাফ স্থলবন্দরের বাণিজ্য সীমিত পরিসরে চালু রয়েছে।

স্থলবন্দরের কাস্টমস কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীরা বলেন, মিয়ানমারের জান্তা বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহী আরাকান আর্মির সংঘাতের কারণে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে দুই দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে। এতে টেকনাফের ব্যবসায়ীরা বেকায়দায় ও বিপাকে পড়েছেন।

টেকনাফ স্থলবন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এহতেশামুল হক বাহাদুর বলেন, নাফ নদী ও সাগরে আরাকান আর্মি পণ্যবাহী নৌযান আটেক দেওয়ায় টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে সীমান্ত বাণিজ্য প্রায় দেড় মাস ধরে বন্ধ রেখেছে মিয়ানমার সরকার।

এদিকে সরেজমিনে টেকনাফ স্থলবন্দরে গিয়ে দেখা গেছে, শ্রমিক ও ব্যবসায়ীদের কোনো কর্মব্যস্ততা নেই। জেটিতে শুধু চালভর্তি একটি ট্রলার রয়েছে। আরেকটি ট্রলারে সিমেন্ট ও পানির বোতল ভর্তি করে রাখা হয়েছে।

স্থলবন্দরের শ্রমিকনেতা আজগর আলী বলেন, ‘শুধু মংডুর সঙ্গে টেকনাফের বাণিজ্য থেমে থেমে চলছে। গত দুই দিনে মংডু থেকে ৪ হাজার ৩০০ বস্তা চাল নিয়ে দুটি ট্রলার এসেছে। কোনো পণ্য না আসায় বসে থাকতে হচ্ছে। আমাদের আর কোনো আয়-রোজগারও নেই। খুব বেকায়দায় আছি আমরা।’

শুল্ক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, মিয়ানমার থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশে ৪৯ হাজার মেট্রিক টন পণ্য আমদানি হয়েছে। এর বিপরীতে ২৯৫ কোটি টাকার রাজস্ব পেয়েছে সরকার। সর্বশেষ ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ১১ হাজার মেট্রিক টন পণ্য আমদানির বিপরীতে ৯১ কোটি টাকার রাজস্ব পায় সরকার। রাখাইনে সংঘাতের কারণে পণ্য আমদানি কম হওয়ায় রাজস্ব আদায় কমে গেছে। অন্যদিকে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রায় এক কোটি টাকার পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এর আগের অর্থবছরে রপ্তানি হয়েছিল দুই কোটি টাকা মূল্যের ১ হাজার ৮২৮ মেট্রিক টন পণ্য।

টেকনাফ স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানিকারক এনাম এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী ব্যবসায়ী এনামুল হক বলেন, সীমান্ত বাণিজ্য মূলত ইয়াঙ্গুন ও আকিয়াব বন্দরের সঙ্গে হয়। কিন্তু দুঃখজনভাবে গত দেড় মাস ধরে সীমান্ত বাণিজ্য বন্ধ রেখেছে মিয়ানমার সরকার। তিনি আরও বলেন, ‘দেশটিতে সংঘাতের কারণে উভয় দেশের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি সীমান্ত বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এতে ব্যবসায়ীরা হতাশ।

মাছ আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান সুফিয়া এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী এম কায়সার জুয়েল বলেন, ‘মিয়ানমারের রুই, কাতলা ও ইলিশসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছের চাহিদা রয়েছে বাংলাদেশে। বিশেষ করে রমজানে বছরের অন্য সময়ের চেয়ে চাহিদা বৃদ্ধি পায়; কিন্তু এবার কোনো মাছই আসছে না। বিদ্যমান সমস্যার সমাধানে দুই দেশের সরকারের এগিয়ে আসা উচিত।’

টেকনাফ স্থলবন্দর পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড ল্যান্ড পোর্ট টেকনাফ লিমিটেডের ব্যবস্থাপক ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘গত দেড় মাসে ইয়াঙ্গুন-আকিযাব বন্দর থেকে টেকনাফ স্থলবন্দরে কোনো পণ্যবাহী নৌযান আসেনি। তবে মংডু টাউনশিপ থেকে বিভিন্ন পণ্য আমদানি-রপ্তানি থেমে থেমে হচ্ছে। তা–ও আবার সীমিত পরিসরে।’

স্থলবন্দরের শুল্ক কর্মকর্তা বিএম আব্দুল্লাহ আল মাসুম বলেন, মিয়ানমার থেকে পণ্য আসা বন্ধ থাকায় দৈনিক ৪ কোটি টাকার বেশি রাজস্ব আদায় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।

মিয়ানমার থেকে সাধারণত ছোলা, পিঁয়াজ, রসুন, জিরা, হিমায়িত মাছ, শুঁটকি, আচার, শুকনা সুপারি ও নারকেলসহ বিভিন্ন ধরনের ভোগ্যপণ্য আমদানি হয়।

জানতে চাইলে টেকনাফর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, মিয়ানমারের জলসীমায় সে দেশের বিদ্রোহী আরাকান আর্মি তল্লাশির নামে পণ্যবাহী জাহাজ আটকে দেয়। এতে টেকনাফ স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আর ক ন আর ম র সরক র ব যবস য়

এছাড়াও পড়ুন:

তৃতীয় প্রান্তিকে মুনাফা কমেছে স্কয়ার ফার্মার

চলতি অর্থবছরের তৃতীয় প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) মুনাফা কমেছে স্কয়ার ফার্মার। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ওয়েবসাইটের ঘোষণায় জানা গেছে, তৃতীয় প্রান্তিকে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি আয় বা ইপিএস হয়েছে ৬ দশমিক ৮৩ টাকা; ২০২৪ সালের একই সময় যা ছিল ৫ দশমিক ৫৫ টাকা। অর্থাৎ জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে ইপিএস বেড়েছে প্রায় ২৩ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ।

সামগ্রিকভাবে চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত স্কয়ার ফার্মার মুনাফা বেড়েছে। জুলাই ২০২৪ থেকে মার্চ ২০২৫ পর্যন্ত ৯ মাসে কোম্পানিটির সম্মিলিত ইপিএস দাঁড়িয়েছে ২১ দশমিক ১৫ টাকা; জুলাই ২০২৩ থেকে মার্চ ২০২৪ সময় যা ছিল ১৮ দশমিক ২৪ টাকা। এ সময় কোম্পানিটির ইপিএস বেড়েছে ১৫ দশমিক ৯৫ শতাংশ।

অর্থবছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে স্কয়ার ফার্মার শেয়ারপ্রতি নিট অপারেটিং ক্যাশ ফ্লো বা নগদ প্রবাহ কমেছে। এই সময় নগদ প্রবাহ ছিল ১১ টাকা ৯০ পয়সা; আগের অর্থবছরের একই সময়ে অর্থপ্রবাহ ছিল ১৭ দশমিক ৩২ টাকা। ৩১ মার্চ ২০২৪ তারিখে শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য ছিল ১৫১ দশমিক ৯৪ টাকা। ২০২৪ সালের ৩০ জুন তারিখে যা ছিল ১৪২ দশমিক শূন্য ৫ টাকা।

২০২৩ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের জুলাই পর্যন্ত দেশে শেয়ারপ্রতি নিট অপারেটিং নগদ প্রবাহ বেড়ে যাওয়ার কারণ সম্পর্কে বলা হয়েছে, ওই সময় দেশীয় ক্রেতাদের অতিরিক্ত ঋণসুবিধা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় কোম্পানি বিমা দাবি পেয়েছে। সেই সব কারণ এখন আর নেই। ফলে তা কমে এসেছে।

গত অর্থবছর রেকর্ড লভ্যাংশ দিয়েছে দেশের স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস। গত জুনে সমাপ্ত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য কোম্পানিটি শেয়ারধারীদের ১১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে। গত বুধবার কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের সভায় লভ্যাংশের এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আজ বৃহস্পতিবার স্টক এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের এ তথ্য জানিয়েছে কোম্পানিটি।

২০২৩-২৪ অর্থবছরে সব ধরনের খরচ ও কর বাদ দেওয়ার পর স্কয়ার ফার্মা প্রকৃত মুনাফা করেছে ২ হাজার ৯৩ কোটি টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছরে এই মুনাফার পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৮৯৮ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে স্কয়ার ফার্মার মুনাফা ১৯৫ কোটি টাকা বা সোয়া ১০ শতাংশের বেশি বেড়েছে। গত জুনে সমাপ্ত অর্থবছর শেষে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় বা ইপিএস বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৩ টাকা ৬১ পয়সায়। আগের বছর যার পরিমাণ ছিল ২১ টাকা ৪১ পয়সা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বিদেশি ঋণ পরিশোধ বেড়েছে ২৪ শতাংশ
  • হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে এল ২১ টন কচুর মুখি
  • ভারত থেকে এল ১২ টন কচুরমুখি 
  • তৃতীয় প্রান্তিকে মুনাফা কমেছে স্কয়ার ফার্মার
  • তেঁতুলিয়ায় বিরল প্রজাতির শকুন উদ্ধার
  • ৯ মাসে ১৪ হাজার কোটি টাকার ব্যবসা
  • আখাউড়া দিয়ে ভারত থেকে এলো সাড়ে ১২ টন জিরা
  • শিক্ষার মানোন্নয়নে জিডিপির ৪ শতাংশ বরাদ্দ প্রয়োজন
  • ৯ মাসে ৪,৬০০ কোটি টাকার ব্যবসা ওয়ালটনের
  • যমুনা অয়েলের মুনাফা বেড়েছে ৩৮ শতাংশ