বিভাজনের রাজনীতি নয়, ঐক্য ধরে রেখে স্বপ্নের বাংলাদেশ গঠনে সবাইকে নিয়ে এগিয়ে যেতে চায় নতুন ছাত্রসংগঠন বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ। সংগঠনটি বলছে, গণ-অভ্যুত্থানের পর যে সহাবস্থানের রাজনীতি তৈরি হয়েছে, সেই সহাবস্থানের রাজনীতির পক্ষে তাদের অবস্থান।

গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের পরিচিতি সভায় সংগঠনটির নেতারা এ কথাগুলো বলেন। শনিবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যানটিন প্রাঙ্গণে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে ক্যাম্পাসে ক্রিয়াশীল সব ছাত্রসংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা নতুন সংগঠনের নেতাদের জন্য শুভকামনা জানান।

সভায় গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের নেতাদের পরিচয় করিয়ে দেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির মুখ্য সংগঠক তাহমিদ আল মুদাসসির চৌধুরী। পরিচিতি সভা পরিচালনা করেন গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার মুখ্য সংগঠক হাসিব আল ইসলাম ও মুখপাত্র রাফিয়া রেহনুমা হৃদি। গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের পক্ষ থেকে রোববার টিএসসিতে গণ-ইফতার কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়।

গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক আবু বাকের মজুমদার সভায় বলেন, ‘ছাত্ররাজনীতি নয়; বরং লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ চেয়েছিলাম। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর যেই সহাবস্থানের রাজনীতি তৈরি হয়েছে, আমরা সেই সহাবস্থানের রাজনীতির পক্ষে।’ তিনি বলেন, ‘আওয়ামী ফ্যাসিবাদের যে বাইনারি পলিটিকস ছিল, সেখানকার বাইরে গিয়ে আমরা এখানকার ছাত্রদের, এখানকার জনগণের রাজনীতির প্রস্তাব করেছি। আমরা আশাবাদী আমরা যে মধ্যপন্থী রাজনীতির প্রস্তাব দিচ্ছি, সেখানে সবাইকে বাংলাদেশ প্রশ্নে ঐক্যবদ্ধ রাখতে পারব।’

সভার সূচনা বক্তব্যে গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির আহ্বায়ক আবদুল কাদের বলেন, ‘আমি আজ আবেগাপ্লুত। সব ছাত্রসংগঠনের নেতৃবৃন্দ আজ একসঙ্গে বসে আছেন, আমরা এমন একটি বাংলাদেশ, এমন একটি বিশ্ববিদ্যালয়ই চেয়েছিলাম। আমরা এমন একটা ক্যাম্পাস গড়ে তুলব, যে ক্যাম্পাস আমাদের শহীদ ভাইয়েরা স্বপ্ন দেখিয়ে গেছেন। আমরা বিভাজনের রাজনীতি আর চাই না। আগামীর স্বপ্নের বাংলাদেশ নির্মাণে ঐক্য ধরে রেখে আমরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করব।’

গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের কেন্দ্রীয় কমিটির মুখপাত্র আশরেফা খাতুন বলেন, ‘আমাদের রাজনৈতিক সহাবস্থান তত দিন থাকবে, যত দিন পর্যন্ত আমরা অন্যায়ের বিপক্ষে আছি, যত দিন পর্যন্ত আমাদের রাজনীতি হবে শিক্ষার্থীদের কল্যাণ ও মুক্তির স্বার্থে।’ তিনি বলেন, ‘ভুল করলে আমাদের সমালোচনা করবেন। কারণ, আপনাদের যৌক্তিক সমালোচনা আমাদের চলার পথে পাথেয় হবে।’

বিরাজনীতিকরণ কোনো কিছুর সমাধান নয় উল্লেখ করে পরিচিতি সভায় বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সভাপতি মেঘমল্লার বসু বলেন, অভ্যুত্থানের সাত মাসে নানাভাবে বিভিন্ন কিছু মেরুকরণ হয়েছে, হওয়াটাই স্বাভাবিক। মেরুকরণের ফলে বিভিন্ন জায়গায় বিবাদ-বিভাজন হয়েছে। কিন্তু প্রত্যেকের গণতান্ত্রিক যে অধিকার, তা রক্ষায় এক হতে হবে।

ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মানসুরা আলম বলেন, নবগঠিত এ ছাত্রসংগঠন ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদী দুঃশাসনের বিপরীতে মুক্তির আশা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাঁরা আশা, নতুন সংগঠনটি দেশের সব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কাজ করবে। তিনি বলেন, ‘আমরাও তাদের হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করে যাব। তারা সুষ্ঠু ধারার রাজনীতি করবে, এটাই প্রত্যাশা রাখছি।’

ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দীন খান বলেন, জুলাইয়ের আন্দোলনের বড় একটি আবেদন ছিল সবাই কথা বলতে পারবে, মতামত প্রকাশ করতে পারবে। সেই জায়গা থেকে নতুন এই সংগঠ তাদের কাজ করার জন্য আগ্রহ দেখিয়েছে, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে তারা অবদান রেখেছে।

সভায় আরও বক্তব্য দেন গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যসচিব জাহিদ আহসান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির সদস্যসচিব মহির আলম, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক জাবির আহমেদ জুবেল, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সৈকত আরিফ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি সালমান সিদ্দিকী। এ ছাড়া ছাত্র পক্ষ, স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংসদ, ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের নেতারাও তাঁদের বক্তৃতায় বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের জন্য শুভ কামনা জানান।

গত বুধবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়কদের উদ্যোগে গঠিত বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের কেন্দ্রীয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। শনিবার পরিচিতি সভার মাধ্যমে ছাত্রসংগঠনটি আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম শুরু করে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র ক ন দ র য় কম ট র র জন ত র প স গঠনট ক জ কর ব ভ জন আম দ র পর চ ত স গঠন

এছাড়াও পড়ুন:

ছাত্রদলের দেওয়া বিবৃতি গণমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য হুমকি: ডুজা

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) ছাত্রদলের কর্মসূচি নিয়ে সংবাদ প্রকাশের জেরে সংগঠনটির দেওয়া বিবৃতির তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি (ডুজা)।

সোমবার (২৮ এপ্রিল) এক যৌথ বিবৃতিতে ডুজার সভাপতি মহিউদ্দিন মুজাহিদ মাহি ও সাধারণ সম্পাদক মাহাদী হাসান ছাত্রদলের এমন বিবৃতির তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।

বিভিন্ন মহল থেকে চাপ প্রয়োগ করে বিভিন্ন সময়ে সংবাদ সরিয়ে নেওয়া, বিবৃতিতে সংবাদকর্মীদের নিয়ে আপত্তিকর শব্দচয়নের মতো আচরণকে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য হুমকিস্বরূপ বলে দাবি করেছে ডুজা।

আরো পড়ুন:

ঢাবিতে পাণ্ডুলিপিবিষয়ক কর্মশালা শুরু

ঢাবি উপাচার্যের সঙ্গে আইডিইএ পরিচালকের সাক্ষাৎ

সম্প্রতি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) ছাত্রদলের কর্মসূচি নিয়ে ‌‘আওয়ামী এমপিকে পুনর্বাসন/ভাগ বাটোয়ারা দ্বন্দ্বে জাবিতে ভ্যাকসিন কর্মসূচি স্থগিত’ শিরোনামে জাগোনিউজ২৪.কম-এ সংবাদ প্রকাশিত হয়। এ সংবাদকে ঘিরে একটি বিবৃতি দেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রদল। যেখানে স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য হুমকিস্বরূপ কিছু শব্দচয়ন করে সংগঠনটি।

বিবৃতিতে ডুজা নেতৃবৃন্দ বলেন, সম্প্রতি সাংবাদিকতার নীতি-নৈতিকতা মেনে নিউজ করার পরেও দু’একটি গণমাধ্যমের উপর ছাত্রদলের প্রভাব খাটিয়ে সংবাদ সরিয়ে ফেলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। যা স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য হুমকি। গত ৫ আগস্টের পর নতুন বাংলাদেশে গণমাধ্যমের সঙ্গে এ ধরনের আচরণ কোনোভাবেই কাম্য নয়।

বিবৃতিতে আরও বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে আমাদের আকাঙ্ক্ষা ছিল সংবাদ মাধ্যমে উঠে আসা অভিযোগের প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্টরা নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করবেন। কেউ নিজেকে ক্ষতিগ্রস্ত মনে করলে নিয়ম অনুযায়ী প্রতিকার চাইবেন। কিন্তু ছাত্রদলের এ ধরনের আচরণ আমাদের সে আকাঙ্ক্ষাকে আশাহত করেছে।

ডুজা নেতৃবৃন্দ বলেন, প্রতিবেদন প্রকাশের পর জাগোনিউজ২৪.কম-এর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি সৈকত ইসলামকে ‘সময়ের আলো’র স্টাফ রিপোর্টার সাব্বির আহমেদ নামে একজন ফোন দিয়ে চাপ প্রয়োগেরও নিন্দা জানাই।

নেতৃবৃন্দ সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যম কর্তৃক সাব্বির আহমেদের অপেশাদার ও অনৈতিক আচরণের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করেন।

ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ধর্ষকদের শাস্তির দাবিতে তিতুমীরে মানববন্ধন
  • রাজধানীতে পরপর তিন দিনে তিন জনসমাবেশ
  • প্রধান উপদেষ্টার সাক্ষাৎ চেয়ে ইনভেস্টর অ্যাসোসিয়েশনের চিঠি
  • ছাত্রদলের দেওয়া বিবৃতি গণমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য হুমকি: ডুজা