২০১৯ সালে কোনো এক বিকেলে বন্ধুকে নিয়ে হাঁটছিলেন। ক্লাস ফোরে থাকা অবস্থায় ঝালকাঠি শহরে নিজেদের বাড়ির পাশে গাছে থাকা একটি কাক লক্ষ্য করে বাঁ-হাত দিয়ে ঢিল ছুড়েছিলেন সুমাইয়া আক্তার। তাঁর সেই ঢিলের আঘাতে মাটিতে পড়ে যায় কাকটি। তা দেখে ঝালকাঠি টেনিস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম বুঝেছেন এই মেয়েকে দিয়ে কিছু হবে। সঙ্গে সঙ্গে সুমাইয়াকে টেনিস খেলার প্রস্তাব দেন। তাতে সায় মিলে সুমাইয়ার। এর পর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া এ টেনিসকন্যার। শুক্রবার রমনায় হওয়া জাতীয় টেনিস চ্যাম্পিয়নশিপে নারী এককে শিরোপা জিতেছেন। টেনিসে উঠে আসা ও ভবিষ্যতের স্বপ্ন নিয়ে সুমাইয়া গতকাল কথা বলেছেন সমকালের সঙ্গে। তা শুনেছেন সাখাওয়াত হোসেন জয়

সমকাল: মাত্র ১৪ বছরেই জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জিতেছেন.

..
সুমাইয়া: এই অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। এটা জাতীয় আসরে প্রথম, তবে বয়সভিত্তিকে আমি আগেও চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলাম। এই টুর্নামেন্টের আগে আমার বিশ্বাস ছিল যে পারব। স্বপ্ন পূরণ হয়েছে বলে ভালো লাগছে।

সমকাল: ক্রিকেট-ফুটবলের বাইরে টেনিসকে বেছে নেওয়ার কারণ কী?
সুমাইয়া: টেনিস খেলা কী, তা আমি জানতামই না। স্যারের (জাহাঙ্গীর) কারণেই আমি এই খেলা শিখেছি। একটা ঘটনা বলি। স্যার একদিন বিকেল ৪টায় টেনিস ক্লাবে যেতে বলেন। আমি এক ঘণ্টা আগেই মাঠে উপস্থিত হই। কীসের জন্য এত আগ্রহ কাজ করেছিল, তা বুঝতে পারছিলাম না। সেদিন স্যার আমাকে খেলা শিখিয়েছেন। আমাকে খুব সাপোর্ট করেন। টেনিস খেলাও আমার ভালো লেগেছে। যার কারণে টেনিস নিয়েই পড়ে আছি।

সমকাল: আপনি বলেছেন, টেনিস খেলা সম্পর্কে জানতেন না। তাহলে অন্য কোনো খেলা খেলেছিলেন?
সুমাইয়া: আমার খেলাধুলার প্রতি আগ্রহ ছিল বলতে বাসার পাশে ক্রিকেট-ফুটবল খেলতাম। কিন্তু এগুলো সেভাবে ফোকাস ছিল না। বরং একদিন টেনিস খেলার পরই আমার ভালো লাগা কাজ করে। এই টেনিসই আমার সব।

সমকাল: টেনিসে আপনি কাকে অনুসরণ করেন?
সুমাইয়া: বাংলাদেশের মধ্যে আইডল বলতে বিকেএসপির জেরিন সুলতানার খেলা আমার ভালো লাগত। আন্তর্জাতিক বলতে সেরেনা উইলিয়ামসকে পছন্দ করি। তাঁর মতো খেলার চেষ্টা করি না। আমি নিজের মতো খেলি। এমনকি ইউটিউবে কারও খেলাই দেখি না।

সমকাল: টেনিস নিয়ে আপনার স্বপ্ন কী?
সুমাইয়া: স্বপ্ন আমার ওয়ার্ল্ডে নাম্বার ওয়ান হওয়া! প্রশাসন, ফেডারেশনসহ সব দিক দিয়ে যদি আমি সাপোর্ট পাই, তাহলে আমার বিশ্বাস, বিশ্বের এক নম্বর প্লেয়ার হতে পারব।

সমকাল: বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে নাম্বার ওয়ান হওয়াটা বলা যায় অসম্ভব।
সুমাইয়া: আমি মনে করি, এটা সম্ভব। আমি যদি সুযোগ-সুবিধা পাই, তাহলে চেষ্টা করলে অবশ্যই পারব।

সমকাল: আপনার কথা অনুযায়ী গ্র্যান্ডস্লামে খেলতে চান?
সুমাইয়া: হ্যাঁ, আমি ওই পর্যায়ে যেতে চাই। বাংলাদেশের অর্ধেক মানুষই টেনিস খেলা সম্পর্কে জানে না। ঢাকার কিছু মানুষ জানলেও গ্রাম অঞ্চলে টেনিস খেলা কী, সেটা কেউ জানেই না। এমন একটা ভাব যে, এই খেলার নাম কেউ শোনেনি। আমি চাই, আমার মাধ্যমে বাংলাদেশের টেনিসে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সাফল্য আসবে। তখন সবাই বাংলাদেশের নাম জানবে এই টেনিসের মাধ্যমে। বিশ্বের মানুষ যেন বলতে পারে বাংলাদেশে একটা প্লেয়ার আছে, যে টেনিস ভালো খেলে। বাংলাদেশের টেনিসের ব্র্যান্ড হতে চাই।

সমকাল: টেনিস খেলা অনেক ব্যয়বহুল। সরঞ্জাম কিনতে অনেক টাকা লাগে।
সুমাইয়া: আমার বাবা থেকে টেনিসে সেভাবে সাপোর্ট পাইনি। কারণ, আমার বাবার র‍্যাকেট কিনে দেওয়ার সামর্থ্য নেই। স্যারই (জাহাঙ্গীর) সব দিয়েছেন, এখনও দিচ্ছেন। এখন যদি ফেডারেশন থেকে একটু সাপোর্ট পাই, তাহলে আরও ভালো হবে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আম র ব সমক ল

এছাড়াও পড়ুন:

সিমন্সের চোখে মিরাজের অসুস্থতা ‘মধুর সমস্যা’

গলের মেঘলা আকাশ আর টানা বৃষ্টির মাঝে বাংলাদেশ টেস্ট দলের প্রস্তুতি শুরু হলো রোববার। শুরুর দিনেই একটি দুশ্চিন্তা—অসুস্থতার কারণে অনুশীলনে ছিলেন না ওয়ানডে অধিনায়ক ও অলরাউন্ডার মেহেদী হাসান মিরাজ। তবে প্রধান কোচ ফিল সিমন্সের চোখে এটি আবার ‘মধুর সমস্যা’।

বাংলাদেশ কোচের মতে, মিরাজের সমস্যা সুযোগ করে দেবে অন্য কারও। তবে মিরাজও যে ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছেন, সেটিও জানিয়েছেন সিমন্স। অনুশীলন শেষে সাংবাদিকদের তিনি জানিয়েছেন মিরাজের সর্বশেষ অবস্থা, ‘গত দুই দিনে সে অনেকটাই ভালো আছে। আমরা দেখব সন্ধ্যায় ওষুধের পর সে কেমন থাকে। আশা করি, কাল অনুশীলন করতে পারবে এবং খেলার জন্য প্রস্তুত থাকবে।’

সিমন্স যোগ করেছেন, ‘এটা (মিরাজের অসুস্থতা) নিশ্চয়ই চিন্তার। তবে একজনের সমস্যা অন্যজনের জন্য সুযোগ এনে দেয়। দলের সবাই চায় মিরাজ সুস্থ হয়ে উঠুক, কিন্তু তারা এ–ও জানে, যদি মিরাজ না-ও খেলতে পারে, তাহলে অন্য কাউকে দায়িত্ব নিতে হবে। এটা সমস্যা, তবে সমস্যাটা মধুর।’

মুশফিকের কাছে আলাদা কোনো প্রত্যাশা নেই—সব খেলোয়াড়ের কাছেই আমার চাওয়া একই থাকবেমেহেদী হাসান মিরাজ

এদিন অনুশীলন শেষে সংবাদ সম্মেলনে সিনিয়র ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিমকে নিয়েও কথা বলেন সিমন্স। ২০১৩ সালে গলে ডাবল সেঞ্চুরি করা মুশফিকের কাছে বড় কিছু প্রত্যাশা করছেন না কোচ। তাহলে কী চাওয়া সিমন্সের? বাংলাদেশ কোচ বললেন, ‘আমি চাই সে যেন খেলাটা উপভোগ করে। ওই ইনিংস যেমন সে আনন্দ নিয়ে খেলেছিল, এবারও যেন সেটাই করে, তা-ই চাই। মুশফিকের কাছে আলাদা কোনো প্রত্যাশা নেই—সব খেলোয়াড়ের কাছেই আমার চাওয়া একই থাকবে।’

সম্প্রতি ওয়ানডে অধিনায়কত্বে হঠাৎ পরিবর্তন এনে নাজমুল হোসেনের বদলে মিরাজকে দায়িত্ব দিয়েছে বিসিবি। সিমন্স মনে করেন, টেস্টে এই সিদ্ধান্তের প্রভাব নাজমুলের ওপর পড়বে না, ‘আমি একেবারেই মনে করি না যে এটি ওকে প্রভাবিত করবে। মাঠে নামলে নাজমুল শুধু ক্রিকেট নিয়েই ভাবে, বাইরের বিষয় আমরা দেখি। তাই এটা ওর পারফরম্যান্সে প্রভাব ফেলবে না।’

বাংলাদেশ দলের কোচ ফিল সিমন্স

সম্পর্কিত নিবন্ধ