‘বাংলাদেশ টেনিসের ব্র্যান্ড হতে চাই’
Published: 2nd, March 2025 GMT
২০১৯ সালে কোনো এক বিকেলে বন্ধুকে নিয়ে হাঁটছিলেন। ক্লাস ফোরে থাকা অবস্থায় ঝালকাঠি শহরে নিজেদের বাড়ির পাশে গাছে থাকা একটি কাক লক্ষ্য করে বাঁ-হাত দিয়ে ঢিল ছুড়েছিলেন সুমাইয়া আক্তার। তাঁর সেই ঢিলের আঘাতে মাটিতে পড়ে যায় কাকটি। তা দেখে ঝালকাঠি টেনিস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম বুঝেছেন এই মেয়েকে দিয়ে কিছু হবে। সঙ্গে সঙ্গে সুমাইয়াকে টেনিস খেলার প্রস্তাব দেন। তাতে সায় মিলে সুমাইয়ার। এর পর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া এ টেনিসকন্যার। শুক্রবার রমনায় হওয়া জাতীয় টেনিস চ্যাম্পিয়নশিপে নারী এককে শিরোপা জিতেছেন। টেনিসে উঠে আসা ও ভবিষ্যতের স্বপ্ন নিয়ে সুমাইয়া গতকাল কথা বলেছেন সমকালের সঙ্গে। তা শুনেছেন সাখাওয়াত হোসেন জয়
সমকাল: মাত্র ১৪ বছরেই জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জিতেছেন.
সুমাইয়া: এই অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। এটা জাতীয় আসরে প্রথম, তবে বয়সভিত্তিকে আমি আগেও চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলাম। এই টুর্নামেন্টের আগে আমার বিশ্বাস ছিল যে পারব। স্বপ্ন পূরণ হয়েছে বলে ভালো লাগছে।
সমকাল: ক্রিকেট-ফুটবলের বাইরে টেনিসকে বেছে নেওয়ার কারণ কী?
সুমাইয়া: টেনিস খেলা কী, তা আমি জানতামই না। স্যারের (জাহাঙ্গীর) কারণেই আমি এই খেলা শিখেছি। একটা ঘটনা বলি। স্যার একদিন বিকেল ৪টায় টেনিস ক্লাবে যেতে বলেন। আমি এক ঘণ্টা আগেই মাঠে উপস্থিত হই। কীসের জন্য এত আগ্রহ কাজ করেছিল, তা বুঝতে পারছিলাম না। সেদিন স্যার আমাকে খেলা শিখিয়েছেন। আমাকে খুব সাপোর্ট করেন। টেনিস খেলাও আমার ভালো লেগেছে। যার কারণে টেনিস নিয়েই পড়ে আছি।
সমকাল: আপনি বলেছেন, টেনিস খেলা সম্পর্কে জানতেন না। তাহলে অন্য কোনো খেলা খেলেছিলেন?
সুমাইয়া: আমার খেলাধুলার প্রতি আগ্রহ ছিল বলতে বাসার পাশে ক্রিকেট-ফুটবল খেলতাম। কিন্তু এগুলো সেভাবে ফোকাস ছিল না। বরং একদিন টেনিস খেলার পরই আমার ভালো লাগা কাজ করে। এই টেনিসই আমার সব।
সমকাল: টেনিসে আপনি কাকে অনুসরণ করেন?
সুমাইয়া: বাংলাদেশের মধ্যে আইডল বলতে বিকেএসপির জেরিন সুলতানার খেলা আমার ভালো লাগত। আন্তর্জাতিক বলতে সেরেনা উইলিয়ামসকে পছন্দ করি। তাঁর মতো খেলার চেষ্টা করি না। আমি নিজের মতো খেলি। এমনকি ইউটিউবে কারও খেলাই দেখি না।
সমকাল: টেনিস নিয়ে আপনার স্বপ্ন কী?
সুমাইয়া: স্বপ্ন আমার ওয়ার্ল্ডে নাম্বার ওয়ান হওয়া! প্রশাসন, ফেডারেশনসহ সব দিক দিয়ে যদি আমি সাপোর্ট পাই, তাহলে আমার বিশ্বাস, বিশ্বের এক নম্বর প্লেয়ার হতে পারব।
সমকাল: বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে নাম্বার ওয়ান হওয়াটা বলা যায় অসম্ভব।
সুমাইয়া: আমি মনে করি, এটা সম্ভব। আমি যদি সুযোগ-সুবিধা পাই, তাহলে চেষ্টা করলে অবশ্যই পারব।
সমকাল: আপনার কথা অনুযায়ী গ্র্যান্ডস্লামে খেলতে চান?
সুমাইয়া: হ্যাঁ, আমি ওই পর্যায়ে যেতে চাই। বাংলাদেশের অর্ধেক মানুষই টেনিস খেলা সম্পর্কে জানে না। ঢাকার কিছু মানুষ জানলেও গ্রাম অঞ্চলে টেনিস খেলা কী, সেটা কেউ জানেই না। এমন একটা ভাব যে, এই খেলার নাম কেউ শোনেনি। আমি চাই, আমার মাধ্যমে বাংলাদেশের টেনিসে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সাফল্য আসবে। তখন সবাই বাংলাদেশের নাম জানবে এই টেনিসের মাধ্যমে। বিশ্বের মানুষ যেন বলতে পারে বাংলাদেশে একটা প্লেয়ার আছে, যে টেনিস ভালো খেলে। বাংলাদেশের টেনিসের ব্র্যান্ড হতে চাই।
সমকাল: টেনিস খেলা অনেক ব্যয়বহুল। সরঞ্জাম কিনতে অনেক টাকা লাগে।
সুমাইয়া: আমার বাবা থেকে টেনিসে সেভাবে সাপোর্ট পাইনি। কারণ, আমার বাবার র্যাকেট কিনে দেওয়ার সামর্থ্য নেই। স্যারই (জাহাঙ্গীর) সব দিয়েছেন, এখনও দিচ্ছেন। এখন যদি ফেডারেশন থেকে একটু সাপোর্ট পাই, তাহলে আরও ভালো হবে।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
সরকারের ভেতরে একটা অংশ নির্বাচন বানচালের পাঁয়তারা করছে: এনসিপি
সরকারের ভেতরের একটি পক্ষ ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশের বাইরে গিয়ে নিজেরাই ঐকমত্য কমিশন হওয়ার চেষ্টা করছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন। তিনি বলেন, এই চেষ্টার কারণে নির্বাচন ঝুঁকিতে পড়বে।
আজ সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর বাংলামোটরে এনসিপির অস্থায়ী কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে আখতার হোসেন এ কথা বলেন।
আখতার হোসেন বলেন, তাঁদের কাছে স্পষ্টতই প্রতীয়মান যে সরকারের ভেতরের কোনো একটা অংশ সংস্কারকে ভন্ডুল করে নির্বাচন বানচালের পাঁয়তারা করছে।
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ–আলোচনার ভিত্তিতেই কমিশন সুপারিশ উপস্থাপন করেছে উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে এনসিপির সদস্যসচিব বলেন, সেই সুপারিশের ভিত্তিতেই সরকার আদেশ জারি করবে, সেটাই হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু যখন সরকারের তরফ থেকে সংবাদ সম্মেলন করে আরও এক সপ্তাহ রাজনৈতিক দলগুলোকে আলাপ–আলোচনার কথা বলা হয়, তখন মনে হয় যে সরকার আসলে এই সংস্কারের বিষয়গুলো নিয়ে সাপ-লুডো খেলছে। তিনি বলেন, ‘আমরা ৯৬-তে পৌঁছে গিয়েছিলাম, সেটাকে আবার তিনে নিয়ে আসা হয়েছে সাপ কেটে। এ অবস্থায় বাংলাদেশের বর্তমান যে রাজনৈতিক পরিস্থিতি, তাতে সংকট আরও ঘনীভূত হচ্ছে।’
অতি দ্রুত সরকারকে দায়িত্বশীল আচরণ করার আহ্বান জানিয়ে এনসিপির সদস্যসচিব বলেন, সরকারকে নিজেকেই দায়িত্ব নিয়ে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি করতে হবে। সামনের সংসদকে গাঠনিক ক্ষমতা প্রদান করার মধ্য দিয়ে সংবিধান সংস্কার পরিষদ হিসেবে ঘোষণা করতে হবে। গণভোটের মাধ্যমে অর্জিত জনগণের অভিপ্রায় স্বয়ংক্রিয়ভাবে যেন বাস্তবায়িত হয়, সেই সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে হবে।