ইউক্রেনের প্রতি যুক্তরাজ্যের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। ডাউনিং স্ট্রিটে এক বৈঠকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে এভাবেই আশ্বস্ত করেছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার।

জবাবে স্টারমারকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেছেন, এমন বন্ধু থাকায় তাঁর দেশ খুব খুশি।

হোয়াইট হাউসে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বিবাদপূর্ণ এক বৈঠক শেষে যুক্তরাষ্ট্র থেকে লন্ডনে এসেছেন জেলেনস্কি।

ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে বাগ্‌বিতণ্ডার পর কোনো চুক্তি সই না করেই জেলেনস্কিকে চলে আসতে হয়েছে।

তবে লন্ডনে স্টারমার-জেলেনস্কি ২২৬ কোটি পাউন্ডের একটি চুক্তি সই করেছেন। যুদ্ধে রুশ বাহিনীকে প্রতিহত করতে সামরিক সহায়তা হিসেবে ইউক্রেনকে ওই অর্থ ঋণ হিসেবে দেবে যুক্তরাজ্য। রুশ বাহিনী ইউক্রেনে আক্রমণ করার পর রাশিয়ার যেসব সম্পদ জব্দ করা হয়, যুক্তরাজ্য সেগুলোর মুনাফা থেকে ওই ঋণ পরিশোধ করে নেবে।

গতকাল শনিবার জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকের পর স্টারমার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁর সঙ্গে কথা বলেছেন।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ অবসানের পথ খুঁজে পেতে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে আজ রোববার লন্ডনে ইউরোপের নেতাদের একটি শীর্ষ বৈঠক হবে। সেখানে ইউরোপজুড়ে প্রতিরক্ষা বিষয়েও আলোচনা হবে।

এ ছাড়া জেলেনস্কি ব্রিটিশ রাজা চার্লসের (তৃতীয়) সঙ্গে দেখা করবেন।

এসব বৈঠকে স্বাভাবিকভাবেই ওয়াশিংটনের ঘটনাবলির ছায়া পড়বে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন বাড়ার কারণে যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে, সেটা নিয়েও আলোচনা হবে।

কয়েক সপ্তাহ ধরে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্টারমার নিজেকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের মধ্যে সেতুবন্ধ হিসেবে দেখাতে এবং কাজ করতে চাইছেন। জেলেনস্কির সঙ্গে ট্রাম্পের শুক্রবারের বৈঠকের এক দিন আগে স্টারমার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ বৈঠক করেছিলেন। ওই বৈঠকে তিনি ট্রাম্পের হাতে রাজা চার্লসের একটি আমন্ত্রণপত্র তুলে দেন। ওই চিঠিতে ট্রাম্পকে দ্বিতীয়বার রাষ্ট্রীয় সফরে যাওয়ার আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্টারমার জেলেনস্কিকে বলেন, ‘যুক্তরাজ্যের জনগণ এগিয়ে আসছে, দেখাতে চাইছে তারা আপনাকে কতটা সমর্থন করে, তারা ইউক্রেনকে কতটা সমর্থন করে। যত দিন প্রয়োজন পড়বে, আমরা তত দিন আপনার এবং ইউক্রেনের পাশে আছি।’

জবাবে জেলেনস্কি বলেন, ‘আমি দেখতে পাচ্ছি, অনেক মানুষ এবং আমি আপনাকে, যুক্তরাজ্যের জনগণকে ধন্যবাদ জানাতে চাই এই যুদ্ধের একেবারে শুরু থেকে আমাদের এত বৃহৎ সমর্থন দিয়ে যাওয়ার জন্য।’

জেলেনস্কি আরও বলেছেন, রোববার রাজার সঙ্গে বৈঠক করার সুযোগ পেয়ে তিনি খুব খুশি হয়েছেন এবং ইউরোপীয় শীর্ষ বৈঠক আয়োজনের জন্য তিনি কৃতজ্ঞ।

ধারণা করা হয়, জেলেনস্কির অনুরোধেই যুক্তরাজ্য সরকার রাজা চার্লসের সঙ্গে তাঁর বৈঠকের আয়োজন করেছে। স্টারমারের সঙ্গে বৈঠকের পর যুক্তরাজ্যের ‘অসাধারণ’ সমর্থনের প্রশংসা করেছেন জেলেনস্কি। বিশেষ করে তিনি ২২৬ কোটি পাউন্ডের ঋণ রাশিয়ার জব্দ করা সম্পদের মুনাফা থেকে শোধ করে নেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করেন।

জেলেনস্কি আরও বলেন, ইউক্রেনে অস্ত্র তৈরি করতে ওই তহবিল ব্যবহার করা হবে।
ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করেন, ‘এটা সত্যিকারের ন্যায়বিচার। যিনি যুদ্ধ শুরু করেছেন, তাঁকেই এর মূল্য দিতে হবে।’

গত বছর অক্টোবরে যুক্তরাজ্য প্রথম (ইউক্রেনকে) এই ঋণ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল।

আরও পড়ুনআমরা ইউক্রেনের সঙ্গে আছি, লন্ডনে বৈঠকে জেলেনস্কিকে বললেন স্টারমার৯ ঘণ্টা আগে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইউক র ন র প কর ছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

এই সরকারও আমলাতন্ত্রের চাপে!

চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান নতুন যে জন-আকাঙ্ক্ষা তৈরি করেছে, সেখানে নিশ্চিত করেই জনপ্রশাসন সংস্কারের প্রশ্নটি নাগরিকদের কেন্দ্রীয় একটি চাহিদা। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার যেভাবে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মতোই পদ ছাড়া পদোন্নতি দিচ্ছে, তাতে উদ্বিগ্ন না হওয়ার কোনো কারণ নেই। কেননা, আগের সরকার কর্তৃত্ববাদী ও স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছিল যে কয়টা স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে, তার অন্যতম আমলাতন্ত্র।

জনপ্রশাসনকে রাজনীতিকরণের বৃত্ত ভেঙে জনবান্ধব করার একটা বড় সুযোগ এনে দিয়েছিল অভ্যুত্থান। কিন্তু শুরু থেকেই অন্তর্বর্তী সরকার আমলাতন্ত্রের ওপর অতিনির্ভরশীল হয়ে ওঠায় সেই সুযোগ অনেকটাই হাতছাড়া হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের বিরোধিতার কারণে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের বড় কোনো সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে পারেনি সরকার। অন্যদিকে বেতন বাড়াতে গঠন করা হয়েছে বেতন কমিশন। কিছু মুখকে সরিয়ে দেওয়া ছাড়া জনপ্রশাসনে সেই পুরোনো চর্চা অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে পদ ছাড়া পদায়নের ক্ষেত্রে জনপ্রশাসনে যেভাবে আগের সরকারের চর্চার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হয়েছে, সেটা যারপরনাই দুঃখজনক।

প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, উপসচিব স্তরে যেখানে আগে থেকেই পদের চেয়ে ৬০০ কর্মকর্তা বেশি রয়েছেন, সেখানে আগস্ট মাসে নতুন করে ২৬৮ জনকে এই পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব পদেও পদোন্নতির আলোচনা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক সরকারের আমলে জনপ্রশাসনে হরেদরে পদোন্নতি দেওয়ার অনেক নজির আছে। এর কারণ একটাই, আমলাতন্ত্রকে তুষ্ট রাখা। অন্তর্বর্তী সরকার এই চর্চায় ছেদ ঘটাতে পারবে, সেটাই সবাই প্রত্যাশা করেছিল।

পরিহাসের বিষয় হচ্ছে, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়ার পর বেশির ভাগ কর্মকর্তাকে আগের জায়গাতেই রেখে দেওয়া হয়। এর মানে হচ্ছে তাঁরা আগের দায়িত্বই পালন করেন, কিন্তু মাঝখান থেকে বেতন-ভাতা বাড়ে। উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা তিন বছর চাকরি পাওয়ার পর বিনা সুদে গাড়ি কেনার জন্য ঋণসুবিধা পান। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে অবসরে যাওয়া সরকারি কর্মকর্তাদের যেভাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, তার দৃষ্টান্তও খুব বেশি নেই। অবসরে যাওয়া প্রশাসন ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৬৪ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে ও অন্য ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৮ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়েছে।

জনপ্রশাসনের মেধাবী ও যোগ্য কর্মকর্তারা পদোন্নতি পেয়ে পরের ধাপে যাবেন, সেটা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু পদ না থাকার পরও কেন পদায়ন করা হবে? এ ক্ষেত্রে সরকারকে পর্যালোচনা করে দেখা প্রয়োজন, জনপ্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে পদ বাড়ানো যায় কি না। আবার যেখানে এমনিতেই পদের বিপরীতে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সংখ্যা বেশি, সেখানে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া কতটা যৌক্তিক?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও জনপ্রশাসনবিশেষজ্ঞ সালাউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান বলেছেন, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়া যায় না। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে মেধাবীদের পদোন্নতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এরপরও কেন এমন পদোন্নতি—সেই ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, সরকার সম্ভবত আমলাতন্ত্রের চাপে রয়েছে। এই ধারণা শুধু তাঁর একার নয়, নাগরিক পরিসরের
বিস্তৃত একটি ধারণাও। অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই এর পরিষ্কার ব্যাখ্যা হাজির করা উচিত।

মাথাভারী আমলাতন্ত্র সরকারি সেবা নাগরিকের কাছে ঠিকভাবে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বড় একটা বাধা। অন্যদিকে সরকারকে এখানে বিশাল ব্যয়ের বোঝা বহন করতে হয়। ফলে মাঠ প্রশাসন থেকে শুরু করে সিনিয়র সচিব পর্যন্ত একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ ও গতিশীল জনপ্রশাসনই সবাই প্রত্যাশা করে। জনপ্রশাসনের সব স্তরে পদোন্নতি রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়, মেধার ভিত্তিতেই হতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ