আজ খতমে তারাবিহতে সুরা বাকারার ২০৪ থেকে সুরা আলে ইমরানের ৯১ নম্বর আয়াত পর্যন্ত পড়া হবে। পারা হিসেবে দ্বিতীয় পারার শেষার্ধ ও তৃতীয় পারার পুরো অংশ তিলাওয়াত করা হবে। এই অংশে মদ, জুয়া, এতিমদের সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা, আল্লাহর মহত্ত্ব, সুদ, স্ত্রীর অধিকার, ঈসা (আ.)-এর জন্ম, রাত ও দিনের বিবর্তন, জীবন ও মৃত্যুর রহস্য, মাতৃগর্ভে মানুষের আকার-আকৃতি, তালুত (আ.
নারীর মর্যাদা ও অধিকার
এই সুরার ২২২ থেকে ২৪২ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তাআলা নারীসম্পর্কিত বিধিবিধান, নারীর মর্যাদা ও অধিকারের কথা বলেছেন। ঋতু চলাকালে স্বামী-স্ত্রীর মেলামেশা নিষেধ করেছেন। আল্লাহ তাআলার কাছে তালাক ঘৃণিত বিষয় হওয়া সত্ত্বেও বিশেষ অবস্থায় একান্ত বাধ্য হলে তালাকের অনুমোদন দিয়েছেন। স্ত্রীর অধিকার হিসেবে মোহর নির্ধারণ করেছেন। নারীদের জীবজন্তুর মতো বেচাকেনা হতো। তাদের স্বাধীনতা ছিল না। বিয়ের ব্যাপারে তাদের মতামত কিংবা পছন্দের মূল্য ছিল না। সম্পদ বা মিরাসের উত্তরাধিকারী পেত না। ধর্ম-কর্মেও তাদের অংশ ছিল না। নিজ ঘরেই পরিত্যক্ত আসবাবের মতো বিবেচিত হতো। তাদের নিজস্ব স্বত্ব বলতে কিছু ছিল না। ইসলাম এসে নারীকে মর্যাদা ও অধিকারের মসনদে বসিয়েছে। তাকে স্বাধীনতা দিয়েছে। সম্পদের উত্তরাধিকারী বানিয়েছে। ধর্ম-কর্মে উৎসাহিত করেছে।
আরও পড়ুনইফতারের দোয়া২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪তাকে মানুষ হিসেবে সম্মানিত করেছে। সংসারজীবনে স্ত্রীর ওপর যেমন স্বামীর অধিকার আছে, তেমনি স্বামীর ওপর আছে স্ত্রীরও। স্ত্রীর প্রতি স্বামীর যেমন কিছু কর্তব্য আছে, স্বামীর প্রতি আছে স্ত্রীরও। সম্মান উভয়ের আছে। আল্লাহ বলেন, ‘আর পুরুষদের যেমন স্ত্রীদের ওপর অধিকার রয়েছে, তেমনিভাবে স্ত্রীদেরও অধিকার রয়েছে পুরুষদের ওপর নিয়ম অনুযায়ী।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ২২৮)
শ্রেষ্ঠ আয়াত আয়াতুল কুরসি
সুরা বাকারার ২৫৫ নম্বর আয়াতের নাম আয়াতুল কুরসি। এটি কোরআনের সর্বশ্রেষ্ঠ আয়াত। (মুসলিম, হাদিস: ১৩৯৬) এর মধ্যে ৫০টি শব্দ ও ১০টি বাক্য আছে। এ আয়াতে আল্লাহর একত্ববাদ, মর্যাদা ও গুণের বর্ণনা রয়েছে। এ আয়াত পাঠে অনেক ফজিলত আছে। আছে জান্নাতে যাওয়ার সুসংবাদ। এটি অভাব দূর হওয়ার পাথেয়। শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে বেঁচে থাকার পথ্য।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি নিয়মিত পাঠ করে, তার জন্য জান্নাতে প্রবেশের পথে একমাত্র মৃত্যু ছাড়া অন্য কোনো বাধা থাকে না।’ (নাসায়ি, হাদিস: ৯৯২৮)
কোরআনের ২৮২ আয়াতে অর্থনৈতিক লেনদেনের কথা রয়েছে । এ আয়াতে ব্যবসা-বাণিজ্য, পরস্পর লেনদেন ও বন্ধকের বিধানের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের আলোচনা রয়েছে। যেমন এক. বাকিতে লেনদেন হলে কাগজে লিখে নিতে হবে। দুই. বাকিতে লেনদেনের ক্ষেত্রে মেয়াদ সুস্পষ্ট করে ঠিক করে নিতে হবে। তিন. লেখার কিছু না পেলে কোনো কিছু বন্ধক রাখতে হবে। চার. নগদ লেনদেনে লেখার প্রয়োজনীয়তা নেই।
আরও পড়ুনরোজার নিয়ত২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪সুরা আলে ইমরানে ইমরান পরিবারের গল্প
কোরআনের তৃতীয় সুরা আলে ইমরান। এটি মদিনায় অবতীর্ণ। এ সুরার আয়াতের সংখ্যা ২০০। আলে ইমরান অর্থ ইমরানের পরিবার। ইমরান (আ.)-এর পরিবার ও বংশধর সম্পর্কে এই সুরায় বিশেষভাবে বর্ণনা রয়েছে, সেই দৃষ্টিকোণ থেকে এর নাম রাখা হয়েছে আলে ইমরান। আল্লাহকে যে পেতে চায়, তার জন্য মহানবী (সা.)-এর আদর্শের বিকল্প নেই। আল্লাহকে ভালোবাসার পূর্বশর্ত হলো তাঁর অনুসরণ। হজরত মুহাম্মদ (সা.) পৃথিবীর ইতিহাসে সেরা মানুষ। তিনি উত্তম চরিত্রের অধিকারী। পৃথিবীর সব মানুষের জন্য তাঁর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ। তাঁর আদর্শের অনুসরণ ও অনুকরণে জীবন বড় সুন্দর হয়। জীবনে কল্যাণ হয়।
পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘বলুন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাস, তাহলে আমাকে অনুসরণ কোরো, যাতে আল্লাহও তোমাদের ভালোবাসেন...।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ৩১)
অলৌকিক তিন ঘটনা
এই সুরার ৩০-৬২ নম্বর আয়াতে শিক্ষণীয় তিনটি অলৌকিক ঘটনার উল্লেখ করা হয়েছে।
এক. মরিয়ম (আ.)-এর জন্ম:
মরিয়ম (আ.)-এর পিতা ইমরান ছিলেন নেক ও পরহেজগার মানুষ। তাঁর মা হান্নাহ বিনতে ফাকুজ সচ্চরিত্রা ও সতীসাধ্বী নারী ছিলেন। তাঁরা দুজনই সৎকাজ এবং ভালো আচরণের জন্য বনি ইসরায়েলে সুবিদিত ছিলেন। কিন্তু দুজনকেই সন্তান না হওয়ার অপূর্ণতা কষ্ট দিত। দুজনই সন্তানের আকাঙ্ক্ষা করতেন। হান্নাহ একদিন এক পাখিকে তার বাচ্চাকে খাবার খাওয়াতে দেখলেন। এই দৃশ্য দেখে তাঁর ভেতর সন্তানের আগ্রহ তীব্র হয়ে উঠল। আল্লাহর কাছে কাকুতি-মিনতি করে দোয়া করলেন। মানত করলেন, সন্তান হলে মসজিদুল আকসার খেদমতে ওয়াকফ করে দেবেন। (তাফসিরে আনওয়ারুল কোরআন, মাওলানা আবুল কালাম মাসুম, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ৪৫১)
আরও পড়ুনরমজানে ওমরাহর আমল০৮ মার্চ ২০২৪আল্লাহ দোয়া কবুল করলেন। এক কন্যাসন্তানের জন্ম হলো। নাম রাখলেন মরিয়ম। কিন্তু মেয়েকে তো বায়তুল মাকদিসে খাদেম হিসেবে নেওয়া হয় না। হান্নাহ চিন্তায় পড়ে গেলেন। এর মধ্যে ইমরানও মারা গেলেন। এদিকে আল্লাহ মরিয়মের মাধ্যমে কোনো নারীকে মসজিদুল আকসার জন্য এই প্রথম কবুল করে নিলেন। সে যুগের সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ জাকারিয়া (আ.) পেলেন মরিয়মের ভরণপোষণ ও লালন-পালনের দায়িত্ব।
দুই. জাকারিয়া (আ.)-এর সন্তানলাভ:
মরিয়ম (আ.)-এর জন্য জান্নাত থেকে খাবার আসত। ফলমূল আসত। তিনি দিনমান আল্লাহর ইবাদতে মশগুল থাকতেন। এসব অলৌলিক কর্মকাণ্ড দেখে জাকারিয়া (আ.) বিমুগ্ধ ও বিস্মিত হলেন। তাঁর ভেতর সন্তানের প্রবল আগ্রহ জেগে উঠল। তাঁরও কোনো সন্তান ছিল না। আল্লাহর কাছে সন্তান চাইলেন। অথচ তিনি শতবর্ষী বৃদ্ধ। তাঁর স্ত্রীও বৃদ্ধা, উপরন্তু বন্ধ্যা। কিন্তু আল্লাহ তাঁর দোয়া কবুল করে তাঁদের একটি পুত্রসন্তান দিলেন। নামও রেখে দিলেন ইয়াহইয়া।
তিন. ঈসা (আ.)-এর জন্ম:
মরিয়ম (আ.) তখন প্রাপ্তবয়স্ক নারী। আল্লাহ তাঁর মাধ্যমে পৃথিবীতে পিতা ছাড়া সন্তান জন্মদানের ইচ্ছা করলেন। জিবরাইল (আ.)-কে তাঁর কাছে পাঠালেন। মরিয়ম (আ.) জিবরাইলকে দেখে ভয় পেয়ে বসলেন। জিবরাইল তাঁকে আল্লাহর ইচ্ছা জানালেন। তিনি অবাক হলেন। মানুষের সংযোগ ছাড়া সন্তান জন্মের ব্যাপারটি তিনি মেনে নিতে পারছিলেন না। কিন্তু আল্লাহর ইচ্ছায় তিনি গর্ভবতী হলেন। ঈসা (আ.)-এর জন্ম হলো। বনি ইসরাইল মরিয়মের ওপর অপবাদের তির ছুড়ল। এক দিনের শিশু ঈসা মায়ের পবিত্রতার ঘোষণা দিলেন।
রায়হান রাশেদ: লেখক ও আলেম
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আল ল হ ত র জন য র জন ম পর ব র ল নদ ন র আয় ত ক রআন করল ন র ওপর ইমর ন
এছাড়াও পড়ুন:
নড়াইলে সরকারি গাছ বিক্রির অভিযোগে চেয়ারম্যানসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা
নড়াইল সদর উপজেলার শাহাবাদ ইউনিয়নে সড়কের পাশে সরকারি গাছ চুরি করে বিক্রির অভিযোগে মামলা হয়েছে। গতকাল বুধবার রাতে শাহবাদ ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মশিউর রহমান বাদী হয়ে সদর থানায় মামলাটি করেন।
মামলায় ওই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমানসহ ১৩ জন আসামি করা হয়েছে। অন্য আসামিরা হলেন প্রশিকা নড়াইল উন্নয়ন এলাকা ব্যবস্থাপক শাহাব উদ্দিন ও প্রশিকার গঠিত সংগঠন প্রভাতী যুব সংঘের সভাপতি নড়াইল সদর উপজেলার তুজরডাঙ্গা এলাকার মুজিবুর রহমান, সদস্য একই এলাকার জরিনা বেগম, রজব আলী, মো. আজিবর, মো. ইলিয়াছ, ইমান আলী, মো. ওমর, মো. হায়দার, আবু সাঈদ, মো. এনামুল ও মো. শরিফুল।
এ বিষয়ে আজ বৃহস্পতিবার সকালে নড়াইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজেদুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারি গাছ চুরি করে বিক্রির অভিযোগে একটি মামলা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
মামলার এজহারে বাদী অভিযোগ করেছেন, গত ২৯ এপ্রিল নড়াইল সদর উপজেলার শাহাবাদ বাজার থেকে হাজির বটতলা পর্যন্ত সরকারি রাস্তার জায়গা থেকে গাছ কাটা ও চুরি করে বিক্রির সংবাদ পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে যান। উপস্থিত হয়ে দেখেন, কাটা গাছবোঝাই একটি ট্রাক এবং নছিমন জব্দ করেছেন নড়াইল সদর উপজেলা ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার দেবাশীষ অধিকারী। তখন ঘটনাস্থলে শ্রমিকদের জিজ্ঞাসাবাদ ও খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, মামলার আসামিরা কোনো ধরনের অনুমতি ছাড়াই খাসজমি থেকে গাছ কেটে বিক্রি করেছেন। এর আগেও একবার তাঁরা ওই জমি থেকে গাছ বিক্রি করেছিলেন। জব্দ করা গাছের লগ, ডালপালা এবং আগে কাটা গাছের অবশিষ্ট ভূমিসংলগ্ন গুঁড়ি পর্যবেক্ষণ করে বোঝা গেছে, ওই স্থান থেকে আনুমানিক পাঁচ লাখ টাকার অধিক গাছ চুরি করে কাটা ও বিক্রি হয়েছে।
প্রশিকা নড়াইল উন্নয়ন এলাকার ব্যবস্থাপক শাহাব উদ্দিন বলেন, ২০০৯ সালে প্রশিকা, ইউনিয়ন পরিষদ ও প্রভাতী যুব সংঘের যৌথ উদ্যোগে একটি চুক্তির মাধ্যমে সড়কের পাশে গাছগুলো রোপণ করেছিল। সে সময় সড়কটি খাস খতিয়ানভুক্ত ছিল না। বর্তমানে তা সরকারের আওতায় পড়ায় গাছ কাটার অনুমতি চেয়ে ইউএনওর কাছে আবেদন করা হয়েছিল, তবে প্রশাসন কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি। কিছুদিন আগে ইউপি সদস্য ইব্রাহিম তাঁকে ফোনে জানান, বিদ্যুৎ বিভাগের কাটা ডালপালা বিক্রি করতে চান চেয়ারম্যান। বিদ্যুৎ বিভাগের কাটা ডালপালাগুলো পড়ে থেকে নষ্ট হবে ভেবে তিনি বিক্রিতে সম্মতি দেন। পরে গাছ কীভাবে বা কারা কেটেছে, তা তিনি জানেন না।
মামলা করার আগে অবৈধভাবে গাছ কাটার অভিযোগের ব্যাপার জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান বলেছিলেন, প্রশিকার সঙ্গে চুক্তির একটি পক্ষ ছিল ইউনিয়ন পরিষদ। সেই হিসেবে গাছ কাটার অনুমতি নিতে ইউএনও বরাবর প্রশিকার আবেদন তিনি চেয়ারম্যান হিসেবে সুপারিশ করেছিলেন। তবে গাছ কেটেছে প্রশিকা আর তাদের সংগঠন। এখানে চেয়ারম্যান-মেম্বরের কিছু নেই।
নড়াইল সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) দেবাশীষ অধিকারী বলেন, প্রশিকার চুক্তির সময় সড়কটি ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিতে ছিল, পরে ২০১৫ সালে এটি খাস খতিয়ানভুক্ত হয়। খাসজমি থেকে গাছ কাটা বেআইনি। এ কারণে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।