রমজান মাসে কোন সময় চিয়া সিড খেলে সবচেয়ে বেশি উপকার পাবেন
Published: 3rd, March 2025 GMT
চিয়া সিড খেলে যেহেতু অনেকক্ষণ ক্ষুধা লাগে না, তাই সাহ্রিতে এই বীজ খেলে সারা দিন না খেয়ে থাকা সহজ হবে বলে মনে হতে পারে আপাতদৃষ্টে। আবার ইফতারে চিয়া সিড খেলে পেট ভালো থাকবে, এমনটাও মনে করতে পারেন কেউ কেউ। আদতে কোন সময় চিয়া সিড খাওয়ার জন্য সবচেয়ে ভালো? জানালেন টাঙ্গাইলের সরকারি কুমুদিনী কলেজের গার্হস্থ্য অর্থনীতি বিভাগের প্রধান শম্পা শারমিন খান।
সাহ্রিতে যদি খানসাহ্রিতে আপনাকে অবশ্যই এমন কিছু খেতে হবে, যা থেকে আপনার দেহ সারা দিনের জন্য শক্তি পাবে। ভাত, মাছ, মাংস, দুধ—অনেক কিছুই খাওয়া যেতে পারে এই সময়। চাইলে আপনি নিশ্চয়ই চিয়া সিড ভেজানো পানি সাহ্রিতে খেতে পারেন। কিন্তু এই পানীয় খেলে অন্যান্য খাবার ততটা খেতে পারবেন না, যতটা আপনার প্রয়োজন সারা দিনের শক্তি জোগাতে। চিয়া সিড খাওয়ার ফলে বেশ খানিকটা সময় আপনার ক্ষুধা পাবে না ঠিকই, কিন্তু সূর্যাস্ত পর্যন্ত দেহের যে শক্তি প্রয়োজন, তা গ্রহণ না করায় আপনি সহজেই দুর্বল হয়ে পড়তে পারেন। তাই চিয়া সিডের চেয়ে বরং সাহ্রিতে এমন কিছু খাওয়াই ভালো, যা থেকে আপনি পর্যাপ্ত পুষ্টি এবং শক্তি পাবেন।
আরও পড়ুনচিয়া সিড কতক্ষণ ভিজিয়ে রাখলে সবচেয়ে বেশি উপকার?১৮ নভেম্বর ২০২৪ইফতারে চিয়া সিডইফতারের দারুণ এক উপকরণ হতে পারে চিয়া সিড। আধা ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখলেই হলো। কিংবা এর বদলে একই সময় ধরে ভিজিয়ে রাখা চিয়া সিড সালাদ কিংবা টক দইয়ের সঙ্গে যোগ করেও খেতে পারেন। খাবারে যোগ করতে হলে অবশ্য এক চামচ চিয়া সিড ভেজাতে মাত্র তিন চামচ পানি ব্যবহার করতে হবে। এই অনুপাত খেয়াল রেখে চিয়া সিড ভেজানো হলে তা পানিটুকু শোষণ করে ফুলে ওঠে, বাড়তি পানি রয়ে যায় না। ইফতারে খাবার বা পানীয়ে চিয়া সিড খেলে প্রচলিত ভাজাপোড়া খাবার খাওয়ার পরিমাণ অনেকটাই কমিয়ে আনতে পারবেন। এতে হজমজনিত সমস্যা থেকে বাঁচা সহজ হবে, রক্তের কোলেস্টেরলও থাকবে নিয়ন্ত্রণে। এভাবে চিয়া সিড খাওয়া হলে তা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণেও সহায়ক ভূমিকা রাখে। আর ইফতারে চিয়া সিড খেতে গিয়ে কম ক্যালরি গ্রহণ করা হলেও রাতের খাবারে তা পুষিয়ে নেওয়ার সুযোগ তো থাকেই।
আরও পড়ুনকিডনি ভালো রাখবে সকালের এই ৫ অভ্যাস০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫তাই প্রয়োজন বুঝে…বুঝতেই পারছেন, ইফতারে চিয়া সিড খাওয়া অধিকাংশ মানুষের জন্য ভালো। তবে পবিত্র রমজান মাসে পর্যাপ্ত পানি এবং শাকসবজি না খাওয়ায় কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগতে পারেন কেউ কেউ। সে ক্ষেত্রেও আধা ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখা চিয়া সিডে উপকার মেলে। অর্থাৎ এই একটি কারণে সাহ্রির সময়ই কারও কারও চিয়া সিড ভেজানো পানি খাওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। তবে অবশ্যই খেয়াল রাখুন, পানীয়ের জন্য যাতে সাহ্রিতে পুষ্টির পরিমাণ কমে না যায়। অর্থাৎ খাবারের পরিমাণ খানিকটা কমে গেলেও যেন পুষ্টিকর খাবার বাদ না পড়ে। খাবার খাওয়ার অন্তত ১৫–২০ মিনিট আগে চিয়া সিড ভেজানো পানি খেয়ে নেবেন। আরও একটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে। এই বীজ পানিতে আধা ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখার জন্য কিন্তু আপনাকে একটু আগেভাগেই ঘুম থেকে উঠতে হবে।
আরও পড়ুনযে ৭ কারণে সকালে খাবেন চিয়াসিড ও বিটরুটের পানি২৮ জানুয়ারি ২০২৫.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
‘মুক্তবুদ্ধি ও যুক্তির সাধক ছিলেন লেখক মোতাহের হোসেন চৌধুরী’
লেখক, প্রাবন্ধিক ও চিন্তাবিদ মোতাহের হোসেন চৌধুরী সারা জীবন মুক্তবুদ্ধি ও মুক্তচিন্তার চর্চা করে গেছেন। প্রকৃত মানবতাবাদী দার্শনিক ছিলেন তিনি। এ কারণে তাঁর লেখা, সৃষ্টিকর্ম ও চিন্তা এখনকার মানুষের জন্যও সমান প্রাসঙ্গিক।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে লেখক মোতাহের হোসেন চৌধুরীর ৬৯তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক স্মরণসভায় বক্তারা এ কথা বলেন। লেখকের নিজ জেলা লক্ষ্মীপুরে তাঁকে নিয়ে প্রথম স্মরণসভা ছিল এটি।
রামগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন আয়োজিত এ স্মরণসভায় সভাপতিত্ব করেন রামগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম রবিন শীষ। প্রধান অতিথি ছিলেন লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক রাজীব কুমার সরকার। বক্তব্য দেন প্রবন্ধিক, গবেষক ও শিক্ষক ড. কুদরত-ই-হুদা, যুগান্তরের সাহিত্য সম্পাদক কবি জুননু রাইন, লেখকপুত্র ক্যাপ্টেন সৈয়দ জাহিদ হোসাইন, লক্ষ্মীপুর সাহিত্য সংসদের সাধারণ সম্পাদক গাজী গিয়াস উদ্দিন।
জেলা প্রশাসক রাজীব কুমার সরকার তাঁর বক্তব্যে বলেন, মোতাহের হোসেন চৌধুরী ছিলেন বাংলার একজন উজ্জ্বল প্রাবন্ধিক, মুক্তচিন্তার আলোকবর্তিকা। তাঁর লেখায় যেমন মানবতার বোধ রয়েছে, তেমনি যুক্তি ও প্রগতিশীল চিন্তার শক্ত ভিত্তি রয়েছে। তরুণ প্রজন্মকে তাঁর জীবন ও কর্ম থেকে শিক্ষা নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।
বাবার স্মৃতি নিয়ে কথা বলতে গিয়ে ক্যাপ্টেন সৈয়দ জাহিদ হোসাইন বলেন, ‘আমরা লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা। অথচ দুঃখজনক হলো, এত দিন বাবাকে নিয়ে এ জেলায় আলোচনা বা স্মরণসভা হয়নি। তাঁর মতো মহান প্রাবন্ধিকের জীবন ও দর্শন নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে ধরা জরুরি।’
জাতীয় শিক্ষাক্রম পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের গবেষক ড. কুদরত-ই-হুদা বলেন, মোতাহের হোসেন চৌধুরী ছিলেন চিন্তার দিক থেকে ব্যতিক্রমধর্মী এক ব্যক্তিত্ব। তিনি ছিলেন মুক্তবুদ্ধির সাধক, মানবতাবাদী দার্শনিক ও সাহিত্যপ্রেমী। তাঁর প্রবন্ধ আজও পাঠককে সত্য, সুন্দর ও ন্যায়ের পথে চলার প্রেরণা দেয়।
সাহিত্য, দর্শন ও সমাজচিন্তায় মোতাহের হোসেন গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন বলে জানান কবি জুননু রাইন। তিনি বলেন, মোতাহের হোসেন চৌধুরীর লেখনী আজও প্রজন্মকে চিন্তার খোরাক জোগান।
মোতাহের হোসেন চৌধুরী ১ এপ্রিল ১৯০৩ সালে তৎকালীন নোয়াখালী জেলা এবং বর্তমানে লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ থানার কাঞ্চনপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। কাজী আবদুল ওদুদ, আবুল হুসেন, কাজী মোতাহার হোসেন, আবুল ফজল, আবদুল কাদিরের সঙ্গে যৌথভাবে বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলন গড়ে তোলেন তিনি। বের করেন ‘শিখা’ নামের পত্রিকা। তাঁর রচিত প্রবন্ধ সংকলন ‘সংস্কৃতি কথা’ পাঠকমহলে সমাদৃত হয়েছে। ১৯৫৬ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামে মৃত্যুবরণ করেন তিনি।