যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির নজিরবিহীন বাগ্‌বিতণ্ডার পর ইউক্রেন সংকট সমাধানের আশা অনেকটাই মিইয়ে এসেছিল। হোয়াইট হাউস থেকে একেবারে খালি হাতে ফিরে লন্ডনে ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলেন জেলেনস্কি। তবে ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের বিষয়ে আবারও এক টেবিলে বসার ইঙ্গিত দিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। তিনি বলেছেন, ইউক্রেন ও রাশিয়া—দুই পক্ষই আলোচনায় না বসলে যুদ্ধ থামবে না।

সংবাদমাধ্যম এবিসি নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এমন আশার কথা শুনিয়েছেন রুবিও। রোববার দেওয়া ওই সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, হোয়াইট হাউসে শুক্রবার ট্রাম্প-জেলেনস্কি বিতণ্ডার পর থেকে ইউক্রেনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের আর কথা হয়নি। যুদ্ধ থামানোর জন্য রাশিয়াকে আলোচনার টেবিলে আনতে হবে। তবে তাদের প্রতি বৈরী মনোভাব রাখলে, মস্কোকে আলোচনায় যুক্ত করা সম্ভব হবে না। কোনো চুক্তি করার ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই মনোভাবই দেখিয়ে আসছেন।

শুক্রবারের ঘটনার পরও যুদ্ধ বন্ধে আবার যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের আলোচনায় বসার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান রুবিও। তিনি বলেন, ‘আমি আশা করি, সবকিছু আবার শুরু হতে পারে। আশা করি, তিনি (জেলেনস্কি) এটা বুঝতে পারবেন যে আমরা আসলে আরও হাজার হাজার মানুষের মৃত্যুর আগে, তাঁর দেশকে সাহায্যের চেষ্টা করছি।’

তবে রুবিও জেলেনস্কির সঙ্গে আলোচনা শুরুর ইঙ্গিত দিলেও সম্পূর্ণ বিপরীত কথা বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়ালৎস। শান্তিচুক্তির জন্য জেলেনস্কিকে পদত্যাগ করতে হতে পারে—এমন কথা উল্লেখ করে রোববার সিএনএনকে ওয়ালৎস বলেন, ‘(ইউক্রেনের) একজন নেতা প্রয়োজন, তিনি আমাদের সঙ্গে কাজ করতে পারবেন, শেষ পর্যন্ত রাশিয়ার সঙ্গে কাজ করতে পারবেন এবং এই যুদ্ধ থামাতে পারবেন।’

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় বসার পরই ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে তৎপর হয়েছেন ট্রাম্প। সৌদি আরবে রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনায় বসেছে তাঁর প্রশাসন। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ফোনালাপও করেছেন তিনি। তবে এসব আলোচনায় ইউক্রেনকে যুক্ত করেননি ট্রাম্প। এমন পরিস্থিতিতে একপ্রকার চাপের মুখে গত শুক্রবার হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে বসেন জেলেনস্কি। সেখানে কথোপকথনের এক পর্যায়ে দুজনের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়। সেদিন দুই পক্ষের মধ্যে একটি চুক্তি হওয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা আলোর মুখ দেখেনি।

খনিজ চুক্তি করতে প্রস্তুত জেলেনস্কি

হোয়াইট হাউসে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের মধ্যে যে চুক্তি সই হওয়ার কথা ছিল, সেটি খনিজ সম্পদবিষয়ক। ওই চুক্তির মাধ্যমে ইউক্রেনের বিরল খনিজ সম্পদে যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা হবে। গত শুক্রবারের সেই বিতণ্ডার পর আবার চুক্তিটি করতে প্রস্তুত ভলোদিমির জেলেনস্কি। যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনে সম্মেলন শেষে রোববার বিবিসিকে এ কথা জানিয়েছেন তিনি।

চুক্তিটির ভবিষ্যৎ নিয়ে জানতে চাওয়া হলে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘খনিজ চুক্তিটি (যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের) মন্ত্রীদের সইয়ের জন্য প্রস্তুত রয়েছে। আমরা এটি সই করতে প্রস্তুত।’ তিনি আরও বলেন, ‘যদি সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো প্রস্তুত থাকে, তাহলে টেবিলে যে চুক্তিটি রয়েছে, তা সই করা হবে।’

আসলে এই চুক্তি নিয়ে আগে থেকেই বড় চাপের মুখে ছিলেন জেলেনস্কি। রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়তে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কাছ থেকে তিনি যে পরিমাণ সহায়তা পেয়েছিলেন, ট্রাম্প ক্ষমতায় বসার পর তা শঙ্কার মুখে পড়েছে। যুদ্ধ বন্ধের তৎপরতায় বাইডেনের নীতির বিপরীত পথে হেঁটে রাশিয়া ও পুতিনের দিকে ঝুঁকেছেন ট্রাম্প। এখন ইউক্রেন চাইছে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে খনিজ সম্পদ চুক্তি করে ট্রাম্পকে হাতে রাখতে। এতে করে যুদ্ধ বন্ধে রাশিয়ার সঙ্গে যেকোনো শান্তিচুক্তির ক্ষেত্রে শক্ত অবস্থানে থাকতে পারবে কিয়েভ।

আংশিক যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব

রোববারের লন্ডন সম্মেলন পূর্বনির্ধারিত ছিল। তবে ট্রাম্প-জেলেনস্কির বিতণ্ডার পর ওই সম্মেলনের গুরুত্ব বেড়ে যায়। সম্মেলনে ইউক্রেনের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দেন ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ও জোটের নেতারা। পরে এক সংবাদ সম্মেলনে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার জানান, কিয়েভের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে চারটি পদক্ষেপের বিষয়ে একমত হয়েছেন তাঁরা।

লন্ডন সম্মেলনে উপস্থিত ইউরোপীয় নেতাদের মধ্যে ছিলেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁও। সেদিনই ফরাসি দৈনিক লে ফিগারোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেনের মধ্যে এক মাসের আংশিক যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দেবে ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য। তবে এই যুদ্ধবিরতির আওতায় স্থলযুদ্ধ পড়বে না। আকাশ, সমুদ্র ও জ্বালানি অবকাঠামোতে হামলার ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য হবে।

মাখোঁর ভাষ্যমতে, আংশিক যুদ্ধবিরতির সময় মস্কো ও কিয়েভের মধ্যে শান্তিচুক্তির বিষয়ে আলোচনা হবে। এই আলোচনায় কয়েক সপ্তাহ লাগবে। আলোচনা শেষে শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার পর ইউক্রেনে ইউরোপের স্থলসেনা মোতায়েন করা হবে।

‘পশ্চিমে ভাঙন শুরু হয়েছে’

গত শুক্রবার হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প-জেলেনস্কির বিতণ্ডার ঘটনায় বেশ খুশি হয়েছিল মস্কো। অন্তত ওই ঘটনার পর রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা যে বিবৃতি দিয়েছিলেন, তাতে তা স্পষ্ট। ট্রাম্প ক্ষমতায় বসার পর পশ্চিমা মিত্রদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কে যে দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে, তা ইউক্রেন যুদ্ধে কাজে লাগাতে চাইছে রাশিয়া।

এরই মধ্যে সোমবার নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, ‘আমরা যেমন দেখেছিলাম, (রাশিয়ার বিরুদ্ধে) পশ্চিমারা ঐক্যবদ্ধ ছিল, তবে সেই ঐক্য কমে এসেছে। পশ্চিমাদের ঐক্যে ভাঙন শুরু হয়েছে। আর পশ্চিমের বিভিন্ন দেশের এবং বিভিন্ন দেশ নিয়ে গঠিত জোটের মধ্যে আরও বিভেদ দেখা দিচ্ছে।’

রোববারের লন্ডন সম্মেলন নিয়ে পেসকভ বলেন, এখনো কয়েকটি দেশ ইউক্রেনের পাশে রয়ে গেছে। মনে হচ্ছে তারা যুদ্ধের পক্ষে রয়েছে। এই দেশগুলো যুদ্ধ চালিয়ে যেতে ইউক্রেনকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে এবং অস্ত্র সরবরাহ করছে।

এমন পরিস্থিতিতে লক্ষ্য অর্জন না হওয়া পর্যন্ত ইউক্রেনে রাশিয়ার বিশেষ সামরিক অভিযান চলবে বলে জানান ক্রেমলিনের মুখপাত্র। এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শান্তিচুক্তির প্রক্রিয়া কোন পর্যায়ে আছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে এখনো কোনো ‘সমন্বিত পদক্ষেপ’ নেওয়া হয়নি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইউক র ন র প য দ ধ বন ধ শ ক রব র প রব ন র জন য মন ত র ইউর প

এছাড়াও পড়ুন:

নোয়াখালীর কৃষকেরা কেন হাইব্রিড ধানবীজ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন

দুই একর জমিতে জিংকসমৃদ্ধ ব্রি-৭৪ জাতের ধান চাষ করেছেন নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলার পূর্ব চরবাটা এলাকার কৃষক মো. মোস্তফা। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট-ব্রি উদ্ভাবিত এই জাতের প্রতি হেক্টরে ফলন হয়েছে ৯ দশমিক ২৩ মেট্রিক টন, যা বাজারে থাকা যেকোনো হাইব্রিড ধানের চেয়ে বেশি।

নিজের খেতে চোখজুড়ানো সোনালি ধান দেখে অনেক বেশি উচ্ছ্বসিত কৃষক মোস্তফা। কারণ, বাজার থেকে কেনা হাইব্রিড ধান থেকে বীজ করা যায় না। কিন্তু ব্রি উদ্ভাবিত এই ধান থেকে অনায়াসে বীজ তৈরি করতে পারবেন তিনি। এতে থাকবে না বীজ কেনা নিয়ে দুশ্চিন্তা। সেই সঙ্গে ধানগুলো জিংকসমৃদ্ধ হওয়ায় পরিবারের জিংকের ঘাটতিও দূর হবে। মোস্তফা বলেন, আগামী দিনে তিনি আরও বেশি পরিমাণ জমিতে এই ধান চাষ করবেন।

মোস্তফার মতো একই এলাকার আরেক কৃষক ওমর ফারুকও বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট(ব্রি) উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান ব্রি-৯২ চাষ করেছেন দুই একর জমিতে। বীজ ও সারসহ এ পর্যন্ত তাঁর খরচ হয়েছে ৬২ হাজার টাকা। খেতের ধান এরই মধ্যে পাকা শুরু করেছে। ফলনের যে অবস্থা দেখছেন, তাতে মনে হচ্ছে, একরে ফলন হবে কমপক্ষে ১৭০ মণ। যার বাজারমূল্য দেড় লাখ টাকার বেশি।

ওমর ফারুকের খেতে ব্রির এই উচ্চ ফলনশীল ধানের আবাদ দেখে এরই মধ্যে আশপাশের এলাকার অনেক কৃষক যোগাযোগ করেছেন বীজ নেওয়ার জন্য। কারণ, তাঁরা হাইব্রিড চাষ করে ঝুঁকিতে পড়তে চান না। নিজের বীজে নিজেই স্বয়ংসম্পন্ন হতে চান। তাই ওমর ফারুক ঠিক করেছেন, উৎপাদিত ধান থেকে ২৫ মণ রেখে দেবেন বীজের জন্য। এই বীজ বিক্রি করে বাড়তি আয় হবে তাঁর।

শুধু কৃষক হাজি মোস্তফা কিংবা ওমর ফারুকই নন, নোয়াখালীর সুবর্ণচরসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলার কৃষকেরা চলতি বোরো মৌসুমে ব্রি উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান চাষ করে সফলতার মুখ দেখেছেন। পাচ্ছেন হাইব্রিড ধানের চেয়েও বেশি ফলন। এর মধ্যে মোহাম্মদপুর গ্রামের কৃষক মাহফুজা বেগম ও আশরাফ হোসেন দম্পতির খেতে চাষ করা ডায়াবেটিক রোগীদের সহনীয় ব্রি-১০৫ জাতের ধানের ফলন পাওয়া গেছে হেক্টরপ্রতি ৮ দশমিক ২ টন, যা বাজারের হাইব্রিড বীজের সমান। এই ধানেরও বীজ সংরক্ষণ করতে পারবেন কৃষকেরা।

চলতি বোরো মৌসুমে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বৃহত্তর নোয়াখালী অঞ্চলে নতুন জাতের ব্রি ধানের ৪৯০টি প্রদর্শনী খামার করেছে। পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন-পিকেএসএফের স্থানীয় সহযোগী প্রতিষ্ঠান সাগরিকা সমাজ উন্নয়ন সংস্থার মাধ্যমে এসব প্রদর্শনীতে ব্রি উদ্ভাবিত ৮ জাতের ধান চাষ করা হয়েছে। এই জাতের ধানগুলো উচ্চ ফলনশীল, রোগ প্রতিরোধী এবং বিভিন্ন পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ।

কৃষকেরা জানান, এত দিন তাঁরা বাজার থেকে বিভিন্ন কোম্পানির হাইব্রিড ও দেশীয় উফশী (উচ্চ ফলনশীল) জাতের ধানের বীজ কিনে আবাদ করে আসছেন। এবার এসবের বাইরে ব্রি উদ্ভাবিত উফশী ২৮, ২৯, ৫০ ও ৫৫ ধান আবাদ করেছেন অনেকে। এর মধ্যে হাইব্রিড বীজের প্রতি কেজির দাম ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকা। আর ব্রির উফশী ধানের বীজ ৫০-১০০ টাকায় পাওয়া যায়। এর মধ্যে প্রতি একর জমিতে চাষ করতে হাইব্রিড ধানের বীজ লাগে ৬ কেজি এবং উফশী জাতের বীজ লাগে ১০ কেজি। এসব বীজের মধ্যে হাইব্রিড প্রতি একরে উৎপাদন হয় ৯০ মণ, উফশী (উচ্চ ফলনশীল) ব্রি-২৮, ২৯, ৫০ ও ৫৫ উৎপাদন হয় ৭০-৭৫ মণ।

পিকেএসএফের কৃষি ইউনিট পরিচালিত সাগরিকা সমাজ উন্নয়ন সংস্থার কৃষিবিদ শিবব্রত ভৌমিক প্রথম আলোকে বলেন, নোয়াখালী অঞ্চলের ৯৫ শতাংশ কৃষক বোরো মৌসুমে মূলত বাজারের হাইব্রিড ধানের ওপর নির্ভর থাকেন। আর দেশীয় উদ্ভাবিত ব্রি ধান জাত আবাদ করেন মাত্র ৫ শতাংশ কৃষক। সাম্প্রতিক সময়ে দেখা গেছে, হাইব্রিড ধান রোগবালাইয়ে আক্রান্ত হচ্ছে বেশি। এতে অনেক কৃষকই লোকসানের মুখে পড়ছেন। তবে এ ক্ষেত্রে ব্রি উদ্ভাবিত নতুন ব্রি-ধানগুলোর ফলন হাইব্রিডের মতো ফলন দেয় এবং কিন্তু রোগবালাই নেই বললেই চলে। এতে কৃষকের খরচ কমে। লাভ হয়, আর বীজও থাকে নিজের হাতে।

ব্রির উচ্চফলনশীল জাতের নতুন জাতের ধান চাষের কথা বলতে গিয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মীরা রানী দাশ প্রথম আলোকে বলেন, ব্রি-উদ্ভাবিত বিভিন্ন পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ ধানগুলো চাষাবাদে কৃষকদের মধ্যে তাঁরা ব্যাপক আগ্রহ লক্ষ করছেন। এর প্রধান কারণ হলো, এসব ধান চাষ করলে একদিকে পুষ্টির ঘাটতি পূরণ হবে, অন্যদিকে কৃষকেরা নিজেরা নিজেদের বীজ সংরক্ষণ করতে পারবেন। তা ছাড়া ব্রি উদ্ভাবিত এসব ধানে রোগবালাইয়ের আক্রমণ হাইব্রিডের তুলনায় কম এবং ফলন হাইব্রিডের সমান কিংবা ক্ষেত্রবিশেষে হাইব্রিড থেকেও বেশি।

এ বিষয়ে ব্রির ফেনীর সোনাগাজীর আঞ্চলিক কার্যালয়ের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আমিনুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ব্রি এ পর্যন্ত ১১৫টি জাত আবিষ্কার করেছে। আগে আমাদের উদ্দেশ্য ছিল খাদ্যের অভাব দূর করা, ফলন বাড়ানো। বর্তমানে আমাদের উদ্দেশ্য খাদ্য ও পুষ্টির নিরাপত্তা। খাবার যাতে পুষ্টিমানসম্পন্ন হয়। অধিকাংশই আমিষ ও ভিটামিনের উৎস মাছ, মাংস, ডিম এবং ফলমূল। কিন্তু এসব সবাই কিনে খেতে পারেন না। যেহেতু ভাত প্রধান খাদ্য, এখন আমাদের যে জাতগুলো, এগুলো উদ্ভাবনে পুষ্টির দিকে বেশি মনোযোগ দেওয়া হয়েছে।’ নতুন জাতগুলো পুষ্টিনিরাপত্তা নিশ্চিত করবে, সেই সঙ্গে হাইব্রিডের প্রতি নির্ভরতা কমাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলে তাঁরা আশা করছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ