ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) কার্ড বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ তুলে যশোরের মনিরামপুরে সড়ক অবরোধ ও ঘেরাও করেছে হাজারো জনতা। গতকাল সোমবার দুপুরে পৌর ভবনের সামনে এ বিক্ষোভ হয়। এ সময় বক্তারা অনিয়মের জন্য পৌরসভার প্রশাসকের দায়িত্বে থাকা ইউএনও নিশাত তামান্নাকে দায়ী করে দ্রুত সময়ের মধ্যে তাঁকে প্রত্যাহারের দাবি তোলেন। পরবর্তী সময়ে যৌথ বাহিনীর সদস্যরা বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে আনেন। এ ঘটনায় সোমবার কোনো পণ্য বিক্রি করতে পারেনি টিসিবি। এ নিয়ে সুবিধাভোগীদের মধ্যেও অসন্তোষ দেখা দেয়। 
পৌরসভা সূত্র জানায়, মনিরামপুর পৌর এলাকায় টিসিবির পণ্য বিক্রির জন্য তিনজন ডিলারকে ২ হাজার ৭৭২টি কার্ড বরাদ্দ করা হয়। সোমবার সকাল থেকে নির্দিষ্ট জায়গায় প্রতি কার্ডের বিপরীতে ৫৪০ টাকার বিনিময়ে পাঁচ কেজি চাল, এক কেজি চিনি, দুই লিটার তেল ও দুই কেজি ডাল বিক্রির কথা ছিল। ভোর থেকেই নির্ধারিত জায়গাগুলোতে পণ্য নেওয়ার জন্য বাড়তি মানুষের ভিড় হয়। যে কারণে দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা পণ্যসামগ্রী বিক্রি বন্ধ করে দেন। এ সময় মানুষের মাঝে চরম অসন্তোষ দেখা দেয়।  
পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর ও উপজেলা বিএনপির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মফিজুর রহমানসহ কয়েকজন জানিয়েছেন, ইতোপূর্বে এখানে কার্ড বরাদ্দ হয়েছিল ৩ হাজার ৩০০টি। এবার বিতরণ করা হয়েছে ১ হাজার ৮২২টি কার্ড। এ কারণে কার্ড না পাওয়া মানুষের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়। হাজারো নারী-পুরুষ সোমবার দুপুর ১২টার দিকে পৌরসভা ভবন ঘেরাও করেন। পরে তারা যশোর-সাতক্ষীরা মহাসড়ক অবরোধ করেন। তারা এ ঘটনার জন্য দোষারোপ করেন পৌর প্রশাসক ও ইউএনও নিশাত তামান্নাকে। তাঁর প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয় বিক্ষোভে।
সমাবেশে দেওয়া বক্তব্যে বিএনপি নেতা মফিজুর রহমান ইউএনওকে স্বৈরাচারের দোসর আখ্যা দিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তোলেন। সেখানে আরও বক্তব্য দেন পৌর যুবদলের আহ্বায়ক আব্বাস উদ্দিনসহ অন্যরা। সড়ক অবরোধের কারণে দু’পাশে যানজট 
দেখা দেয়। পরে পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) নিয়াজ মাখদুম, থানার ওসি নূর মোহাম্মদ গাজী, উপজেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট শহীদ ইকবাল হোসেনসহ সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। 
ইউএনও নিশাত তামান্না এ বিষয়ে বলেন, ২ হাজার ৬৭৬টি টিসিবির কার্ড পাওয়া গেছে। এটি বিতরণ করা হয়েছে ১ হাজার ৮২২ জনের মধ্যে। অবশিষ্ট কার্ড বিতরণ না করায় ভুক্তভোগীদের মাঝে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। শিগগিরই যাচাই-বাছাই শেষে বিষয়টি সুরাহার আশ্বাস দেন তিনি। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স মব র র জন য অবর ধ প রসভ ব তরণ

এছাড়াও পড়ুন:

‘লাল পরি’ হয়ে ঘরে ফিরল হারিয়ে যাওয়া শিশুটি

ঠিকমতো চোখে দেখে না আট বছরের শিশু মরিয়ম। মাদ্রাসা থেকে ঘরে ফেরার পথে নিখোঁজ হয় সে। নানা ঘটনাচক্রে একসময় পৌঁছায় কক্সবাজার সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার ( ইউএনও) কার্যালয়ে। পরে ইউএনওর সহায়তায় ঘরে ফিরেছে শিশুটি। ঘরে ফেরার আগে তার ‘লাল পরি’ সাজার ইচ্ছাপূরণও হয়েছে।

শিশু মরিয়মের বাড়ি কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলায় পূর্ব পোকখালী চরপাড়া গ্রামে তার বাড়ি। সেখানেই একটি মাদ্রাসায় পড়ালেখা করে। গত বুধবার মাদ্রাসা ছুটির পর মায়ের জন্য অপেক্ষায় ছিল সে। তবে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে এক ব্যক্তি তাকে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায় কক্সবাজার সদরে।

ইউএনও কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মরিয়ম কক্সবাজার পৌরসভার কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকায় চোখেমুখে ভয় আর আতঙ্কের ছাপ নিয়ে হাঁটাহাঁটি করছিল। কৌতূহলী এক পথচারী কথা বলে তার নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি জানতে পারেন। ওই পথচারী মরিয়মকে নিয়ে যান তিন কিলোমিটার দূরে উপজেলা পরিষদের কার্যালয়ে। সেখান থেকে এক আনসার সদস্য মরিয়মকে ইউএনও কার্যালয়ে নিয়ে আসেন।

ইউএনও নিলুফা ইয়াছমিন চৌধুরী এ সময় শিশু মরিয়মের সঙ্গে কথা বলে তার বিস্তারিত ঠিকানা জানার চেষ্টা করেন। শিশুটি কেবল তার বাড়ি ঈদগাঁওয়ের পোকখালী এতটুকুই বলতে পারছিল। পরে ঈদগাঁওয়ের ইউএনওর মাধ্যমে শিশুটির বাড়ির ঠিকানা নিশ্চিত হওয়া যায়।

কাপড় কিনে দেওয়ার সময় মরিয়ম বলল, সে লাল পরি সেজে বাড়ি ফিরবে। তাকে লাল জামা, লাল চুড়ি, লাল লিপস্টিক ও লাল ওড়না দিয়ে লাল পরি সাজানো হয়। নিলুফা ইয়াছমিন চৌধুরী, ইউএনও, কক্সবাজার সদর উপজেলা

শিশুটি প্রথমে পাচারকারীদের খপ্পরে পড়েছিল বলে সন্দেহ ইউএনও নিলুফা ইয়াছমিনের। তিনি বলেন, আলাপে শিশুটি জানায়, সে তার তিন-চার বছর বয়স পর্যন্ত ভালোভাবেই চোখে দেখত। এরপর থেকে ক্রমে তাঁর চোখের আলো ঝাপসা হতে শুরু করে। এখন সে তেমন দেখতে পায় না। তার বাবা মারা গেছেন। মা ও বড় ভাই অন্ধ। পরিবারে অষ্টম শ্রেণিপড়ুয়া একটি বোন আছে, সে–ই কেবল চোখে দেখতে পায়। ঘরের কাজ সব বোনই সামলায়। তাদের পরিবার থাকে সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে।

শিশুটির কাছ থেকে চোখের বিষয়টি জেনে তাকে কক্সবাজার শহরের পানবাজার এলাকার কমিউনিটি চক্ষু হাসপাতালে নেওয়া হয় বলে জানান ইউএনও। তিনি বলেন, ‘শিশুটির সঙ্গে কথা বলে মনে হলো তার চোখের সমস্যা এত জটিল না। হাসপাতালে নেওয়ার পর চক্ষুবিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বিমল চৌধুরী তার চোখের পরীক্ষা করেন। এরপর বিনা মূল্যে শিশু মরিয়মকে চশমা ও এক মাসের ওষুধ কিনে দেওয়া হয়। চশমা চোখে দিয়ে সে জানিয়েছে, আগের চেয়ে অনেক ভালো দেখতে পাচ্ছে।’

শিশুটিকে মায়ের হাতে তুলে দেন কক্সবাজার সদরের ইউএনও নিলুফা ইয়াছমিন চৌধুরী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘লাল পরি’ হয়ে ঘরে ফিরল হারিয়ে যাওয়া শিশুটি