বসন্ত শেষে বৈশাখ শুরুর আগেই হঠাৎ ঝড়। অফিস থেকে বের হতেই ঝড়ের মুখোমুখি শিশির। কোনো রকম ছাতাকে ঢাল বানিয়ে এগোতে হচ্ছে। চারদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার। হঠাৎ বিজলির আলোয় একটি মেয়ের দিকে চোখ পড়ল তার। মেয়েটি ভিজে একাকার। সে মেয়েটির কাছে গিয়ে বলল, ‘আপনি চাইলে আমার ছাতাটি নিতে পারেন?’
মেয়েটি ইতস্তত হয়ে বলে, ‘না। লাগবে না।’
‘ভিজে যাচ্ছেন তো! শক্ত গলায় বলল শিশির।’
মেয়েটি ছাতা নিতে উদ্যত হলে চমকে যায় শিশির। তুমি এখানে? একটা জরুরি কাজে বাইরে গিয়েছিলাম। হুট করে বৃষ্টি চলে আসবে বুঝতে পারিনি। মেয়েটি শান্ত গলায় উত্তর দিয়ে জিজ্ঞেস করে, ‘তা তুমি এখানে কী করে?’
– নতুন চাকরি নিলাম। পাশেই অফিস।
– অহ! আচ্ছা।
– এখানে কোথায় থাক?
– এই সামনেই, ৩৩/২ নাম্বার বাড়ি।
প্রতিকূল পরিববেশে নির্জন রাতে কথা বলতে বলতে এগিয়ে যাচ্ছে দু’জন। একটু পরই দু’জন একটি বিশাল পুরোনো বাড়ির সামনে এসে পৌঁছল। মেইন গেটটি ভাঙা। মেয়েটি গেট খুলে শিশিরকে ভেতরে আসার আহ্বান করে বলল, ‘ভেতরে এসো?’
শিশির তাকে থামিয়ে বাড়ি ফেরার তাগাদা দেয়। আজ থাক। অফিসের প্রচুর চাপ। রাতেই একটা রিপোর্ট জমা দিতে হবে। 
–তাহলে শুধু চা?
– না থাক। আরেকদিন সময় নিয়ে সব হবে।
– শোন.

..!
মেয়েটি আরও কিছু বলতে চায় শিশিরকে। কিন্তু শোনা হয়নি আর। ওই মুহূর্তেই একটি গাড়ি পেয়ে যায় শিশির। পরদিন অফিস শেষে মাহমুদকে গতকালের ঘটনা শেয়ার করে শিশির। মাহমুদ তা মানতে নারাজ। এক প্রকার রাগ করে মাহমুদ জিজ্ঞেস করে, ‘কোন নীলার কথা বলছিস বলত?’ 
– আরেহ! আমাদের নীলা। এখন তুই নীলাকেও ভুলে গেলি? গতকাল রাতে অফিস থেকে ফেরার পথে দেখা হলো ওর সঙ্গে। তুমুল বৃষ্টিতে দেখি একা দাঁড়িয়ে ভিজছে। ছাতা দিয়ে বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দিলাম।
– তুই শিওর ওইটা নীলা ছিল?
– হ্যাঁ। মাহমুদ মলিন চেহারায় বিস্ময়ের চোখে তাকায় শিশিরের দিকে। শিশির কিছুটা বিরক্ত হয়ে বলল, ‘তুই এমন ভাব নিচ্ছিস যে আমি নীলাকে নয়, নীলার ভূতকে দেখেছি।’
মাহমুদ শুকনো গলায় কাঁপা কাঁপা স্বরে বলল, ‘নীলা তো রোড এক্সিডেন্টে মারা গেছে দুই বছর হলো!’ v
সুহৃদ সিলেট

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

কার্টুন, মিমে অভ্যুত্থানের ভিন্ন ধারার দৃশ্যায়ন

টাকার বস্তার ভেতর থেকে মাথা উঁচিয়ে আছেন শুভ্র কেশ, সফেদ দাড়ি, চশমা পরিহিত এক লোক। তাঁর ছবি দেখে তো বটেই, এই বর্ণনা থেকেও তাঁকে চিনবেন দেশবাসী। বর্তমানে কারাগারের বাসিন্দা পতিত স্বৈরশাসকের এই উপদেষ্টা বলছেন, ‘টাকার ওপর আমার বিশ্বাস উঠে গেছে।’ এই ছবির পাশেই এক কাটআউট। সেখানে ‘শেখ হাসিনা পালায় না’ বলতে বলতে দৌড়ে পালাচ্ছেন ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতার মসনদ থেকে উৎপাটিত শেখ হাসিনা।

এমন মজার মজার কার্টুন, মিম, গ্রাফিতি, ভিডিও স্থাপনাকর্মসহ বৈচিত্র্যময় সৃজনসম্ভার নিয়ে শুরু হয়েছে ‘বিদ্রূপে বিদ্রোহ’ নামের ব্যতিক্রমী এক প্রদর্শনী। আয়োজন করেছে অনলাইনভিত্তিক স্যাটায়ার সাময়িকী ‘ইয়ারকি’। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ধানমন্ডির আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের লা গ্যালারিতে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে ছয় দিনের এ প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। চলবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত। সবার জন্য প্রতিদিন বেলা তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা।

গত বছর ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে উত্তাল ছিল জুলাই। একটি বৈষম্যহীন, উদার গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য পথে নেমেছিলেন অগণিত মানুষ। শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী সরকারকে উৎখাত করতে জীবন উৎসর্গ করেছেন তাঁদের অনেকে। আহত হয়েছেন বেশুমার। রক্তরঞ্জিত রাজপথ বেয়ে এসেছে জনতার বিজয়।

প্রদর্শনীতে প্রবেশপথটির দুই পাশে লাল রঙের পটভূমিতে বড় বড় ডিজিটাল পোস্টার। সেখানে ২ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিদিনের বিভিন্ন ঘটনার আলোকচিত্র, সংবাদপত্র, অনলাইন পোর্টাল, টেলিভিশনের রিপোর্ট, ছবি, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমের পোস্ট—এসব তুলে আনা হয়েছে এ পোস্টারগুলোতে। প্রবেশপথটিও লাল রঙের। ‘জুলাই করিডর’ নামে এই রক্তিম পথটি বেয়ে দর্শনার্থীরা প্রদর্শনীতে প্রবেশের সময় অভ্যুত্থানের উত্তাল দিনগুলোর উত্তাপ ফিরে পাবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ