মার্কিন প্রেসিডেন্টদের প্রেম নিয়ে বই, আছেন কেনেডি থেকে শুরু করে জর্জ এইচ ডব্লিউ বুশ
Published: 4th, March 2025 GMT
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ আইজেনহাওয়ার, জন এফ কেনেডি থেকে শুরু করে প্রেসিডেন্ট জর্জ এইচ ডব্লিউ বুশ পর্যন্ত প্রেসিডেন্টদের একটি প্রজন্মের ওপর প্রভাব ফেলেছিল। স্টিভেন এম গিলন নামের এক লেখকের নতুন প্রকাশিত ‘প্রেসিডেন্টস অ্যাট ওয়্যার’ নামের বইতে এ তথ্য উঠে এসেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মিলার সেন্টারের সিনিয়র ফেলো গিলন। তিনি বলেন, তাঁর বইতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ কীভাবে প্রেসিডেন্টদের ওপর প্রভাব ফেলেছিল এবং বিশ্বকে রূপ দিয়েছিল, তা উঠে এসেছে। এর পাশাপাশি পর্দার পেছনের অনেক তথ্যও বইটিতে তুলে ধরা হয়েছে এর মধ্যে রয়েছে ডেনমার্ক ও যুক্তরাষ্ট্রের সাংবাদিক ইনগা আরভাডের সঙ্গে তরুণ জন এফ কেনেডির প্রেমের মতো বিষয়ও।
গিলনের তথ্য অনুযায়ী, কেনেডি নৌ গোয়েন্দা কার্যালয়ে কর্মরত থাকার সময় ১৯৪১ সালে ওয়াশিংটন টাইমস হেরাল্ড–এর কলামিস্ট আরভাডের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। প্রেমে পড়ার পর সেনাবাহিনীতে তাঁর চাকরি যেতে বসেছিল।
গিলন লিখেছেন, কেনেডি তাঁর অবসর সময়ের সবটুকুই প্রায় আরভাডের সঙ্গে কাটাতেন; কিন্তু এফবিআই আরভাডকে জার্মান গুপ্তচর বলে সন্দেহ করেছিল। কারণ, অন্য পশ্চিমা সাংবাদিকেরা যখন হিটলারের কাছে যেতে পারেননি, তখন আরভাড তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। ১৯৩৬ সালে গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকে হিটলারের অতিথি ছিলেন আরভাড।
গিলন লিখেছেন, আরভাডের বিয়ের সময় হিটলার উপস্থিত ছিলেন। তাই প্রেসিডেন্ট রুজভেল্টের সরাসরি অনুমতি নিয়ে এফবিআই ইনগা আরভাডের ফোনে আড়ি পাতে। তাঁর মেইল খতিয়ে দেখার পাশাপাশি কড়া নজরদারিতেও রাখে।
১৯৪২ সালে এফবিআই কেনেডি ও ইনগার প্রেমের বিষয়টি নিউইয়র্ক ডেইলি মিররের কলাম লেখক ওয়াল্টার উইনশেলের কাছে ফাঁস করে দেয়। ওই সময় দক্ষিণ ক্যারোলাইনার চার্লসটাউন নেভি ইয়ার্ডে একটি চাকরি নিয়েছিলেন কেনেডি। গিলন বলেন, নৌবাহিনীর কর্মকর্তারা কেনেডিকে বরখাস্ত করতে চেয়েছিলেন; কিন্তু পারিবারিক প্রভাব থাকায় তাঁর চাকরি টিকে যায়। গিলন বলেন, ইনগা যে গোয়েন্দা ছিলেন, এমন কোনো প্রমাণ শেষ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। কেনেডি যুক্তরাষ্ট্রের ৩৫তম প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগেই প্রেমের সম্পর্কের ইতি ঘটে। কেনেডি সম্পর্ক আবার ঠিক করার চেষ্টা করেছিলেন, তবে ইনগা আরভাড আর ফিরে আসেননি।
কেনেডি যখন পূর্ব জার্মানির আরেক তরুণী এলেন রোমেৎসের প্রেমে পড়েন তখন সম্পর্ক আরও জটিল হয়ে পড়ে। গিলনের মতে, ১৯৬৩ সালের জুলাই মাসে এফবিআই অ্যাটর্নি জেনারেল রবার্ট এফ কেনেডিকে তাঁর ভাইয়ের সম্ভাব্য কেলেঙ্কারি বিষয়ে সতর্ক করে। তাঁকে জন এফ কেনেডির সঙ্গে জার্মান তরুণীর প্রেমের গুঞ্জন সম্পর্ক জানিয়ে দেয়। এফবিআই এলেন রোমেৎমকেও গুপ্তচর বলে সন্দেহ করে।
গিলন বলেন, ওই সময় অনেক সংবাদ প্রকাশিত হতে থাকে যাতে বলা হয়, কেনেডি প্রশাসনের ক্ষমতাশালী এক সদস্যের সঙ্গে এক গুপ্তচরের প্রেমের সম্পর্ক চলছে। তখন কেউ সন্দেহ করেনি যে প্রেসিডেন্ট নিজেই প্রেমে জড়িয়েছেন। কংগ্রেস বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করে। রোমেৎসকে জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হওয়ার আগেই হোয়াইট হাউস দ্রুত তাঁকে আড়াল করে ফেলে। গিলনের মতে, রোমেৎস ছিলেন এলিজাবেথ টেলরের মতো দেখতে। সিনেট সেক্রেটারি ববি বেকারের মাধ্যমে কেনেডির সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হয়েছিল। গুঞ্জন ছিল, তিনি নিয়মিত হোয়াইট হাউসে যেতেন এবং পুল পার্টিতে অংশ নিতেন।
গিলন বলেন, যখন প্রেসিডেন্ট আরভাডকে খবরের বাইরে রাখতে চাইছিলেন জেনারেল ডোয়াইট আইজেনহাওয়ার সাবেক মডেল কে সামারসবের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক লুকানোর চেষ্টা করেননি। গিলন লিখেছেন, গাড়িচালক কে আইজেনহাওয়ার ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে পদোন্নতি পেয়েছিলেন। গিলনের মতে, সামারসবি পরে তাঁর স্মৃতিকথায় প্রকাশ করেছিলেন, তাঁদের মধ্যে আবেগের সম্পর্ক ছিল। গিলন তাঁর বইতে আরও লিখেছেন, এ উদাহরণগুলো দেখায়, সেরা কিছু প্রেসিডেন্টেরও দুর্বল কিছু মুহূর্ত ছিল; কিন্তু এসব দুর্বলতা তাঁদের সর্বশ্রেষ্ঠ প্রজন্মের সদস্য হিসেবে সুনাম নষ্ট করতে খুব একটা পারেনি।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: এফ ক ন ড কর ছ ল ন বল ন
এছাড়াও পড়ুন:
‘কার কপালে বাড়ি মারলাম, কে বারবার এই ক্ষতিটা করে’
৯ মাস আগে বিধবা লাকি রানী দের (৪০) গোয়ালঘরের তালা কেটে দুর্বৃত্তরা চারটি গরু চুরি করে নিয়ে যায়। এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর কানাডাপ্রবাসী এক ব্যক্তি তাঁকে একটি গাভি কিনে দেন। পরে গাভিটি একটি বাছুরের জন্ম দেয়। বাছুরটির বয়স হয়েছিল প্রায় সাত মাস। গতকাল শুক্রবার রাতে দুর্বৃত্তরা আবারও তাঁর গোয়ালঘরের দরজার তালা লাগানোর শিকল কেটে বাছুরসহ গাভিটি চুরি করে নিয়ে গেছে।
লাকি রানীর বাড়ি মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার পশ্চিম জুড়ী ইউনিয়নের উত্তর ভবানীপুর গ্রামে। তাঁর স্বামী প্রশান্ত দে প্রায় চার বছর আগে হঠাৎ হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। লাকির দুই মেয়ে। বড় মেয়ে রিয়া রানী দে স্থানীয় তৈয়বুন্নেছা খানম সরকারি কলেজে একাদশ শ্রেণিতে পড়ছেন। ছোট মেয়ে রুহি রানী দে পঞ্চম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা দিয়েছে। স্বামীর অকালমৃত্যুর পর সংসারের হাল ধরেন লাকি। পাঁচটি গরু লালন-পালন করছিলেন। গরু বিক্রি করে সংসার আর দুই মেয়ের লেখাপড়ার খরচ চালাবেন ভেবেছিলেন। একটি গরু বিক্রিও করেন। এরই মধ্যে গত মার্চ মাসে বাকি চারটি গরু চুরি হয়ে যায়।
আজ শনিবার বিকেলে সরেজমিনে লাকির বাড়িতে গেলে তিনি জানান, গতকাল শুক্রবার ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে ঘুম থেকে জেগে দেখেন, গোয়ালঘরের দরজায় তালা লাগানোর শিকল কাটা। ভেতরে গরু–বাছুর কোনোটাই নেই। জুড়ী থানার পুলিশের এক কর্মকর্তার মুঠোফোনের নম্বর ছিল তাঁর কাছে। ওই নম্বরে কথা বলে তাঁকে ঘটনাটি জানান। পরে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে লাকি রানী বলেন, ‘গাইটা (গাভি) পাইয়া মনে কিছু শান্তি ফিরিয়া আইছিন। একটা বাছুরও পাইলাম। মনে করছিলাম, বাছুরটার বয়স ৯-১০ মাস হইলে বিক্রি করি দিমু। ৫০ হাজার টাকা লোন (ঋণ) করছিলাম বেশ আগে। ২০-২৫ হাজার টাকা পরিশোধের বাকি। বাছুর বিক্রি করে এই টাকাটা পরিশোধ করার চিন্তাভাবনা করছিলাম। চোর আমারে আবার পথে নামাই দিল। কার কপালে বাড়ি মারলাম, কে বারবার এই ক্ষতিটা করে?’
এ বিষয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ করেননি লাকি। তিনি বলেন, ‘আগেরবার চুরির পরেও পুলিশরে জানাইয়া কোনো লাভ হইছে না। খামাখা করিয়া লাভ কিতা হইব? তবে কাইল (শুক্রবার) খবর জানানির পর তারা (পুলিশ) আইয়া খোঁজাখুঁজি করছে, চেষ্টা করছে।’
লাকি বলেন, ‘সংসারের নানা খরচ আছে। মেয়েরার লেখাপড়ায়ও খরচ লাগে। এইটা তো চালানি লাগব। এসএসসি পাসের পর আমার বিয়া হই গেছে। ৩-৪ হাজার টাকা বেতনের একটা চাকরি পাইলে করতাম। কিন্তু এসএসসি পাসে তো চাকরি পাওয়াও কঠিন। কিতা করতাম, কিলা চলতাম—এইটাই খালি ভাবি। ঘরে বেকার বসি থাকলে সংসার চলব কেমনে?’
আরও পড়ুনশূন্য গোয়ালের সামনে কাঁদতে কাঁদতে লাকী রানী বললেন, ‘চোরে মরা মানুষরে মারিয়া গেল’০৩ মার্চ ২০২৫জুড়ী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. ফরহাদ মিয়া বলেন, খবর পেয়ে তিনিসহ থানার আরেক এসআই মুজিবুর রহমান লাকি রানীর বাড়িতে যান। খোঁজাখুঁজি করেও চুরি হওয়া গরু ও বাছুরের সন্ধান মেলেনি। তবে তাঁদের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।