দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ আইজেনহাওয়ার, জন এফ কেনেডি থেকে শুরু করে প্রেসিডেন্ট জর্জ এইচ ডব্লিউ বুশ পর্যন্ত প্রেসিডেন্টদের একটি প্রজন্মের ওপর প্রভাব ফেলেছিল। স্টিভেন এম গিলন নামের এক লেখকের নতুন প্রকাশিত ‘প্রেসিডেন্টস অ্যাট ওয়্যার’ নামের বইতে এ তথ্য উঠে এসেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মিলার সেন্টারের সিনিয়র ফেলো গিলন। তিনি বলেন, তাঁর বইতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ কীভাবে প্রেসিডেন্টদের ওপর প্রভাব ফেলেছিল এবং বিশ্বকে রূপ দিয়েছিল, তা উঠে এসেছে। এর পাশাপাশি পর্দার পেছনের অনেক তথ্যও বইটিতে তুলে ধরা হয়েছে এর মধ্যে রয়েছে ডেনমার্ক ও যুক্তরাষ্ট্রের সাংবাদিক ইনগা আরভাডের সঙ্গে তরুণ জন এফ কেনেডির প্রেমের মতো বিষয়ও।

গিলনের তথ্য অনুযায়ী, কেনেডি নৌ গোয়েন্দা কার্যালয়ে কর্মরত থাকার সময় ১৯৪১ সালে ওয়াশিংটন টাইমস হেরাল্ড–এর কলামিস্ট আরভাডের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। প্রেমে পড়ার পর সেনাবাহিনীতে তাঁর চাকরি যেতে বসেছিল।

গিলন লিখেছেন, কেনেডি তাঁর অবসর সময়ের সবটুকুই প্রায় আরভাডের সঙ্গে কাটাতেন; কিন্তু এফবিআই আরভাডকে জার্মান গুপ্তচর বলে সন্দেহ করেছিল। কারণ, অন্য পশ্চিমা সাংবাদিকেরা যখন হিটলারের কাছে যেতে পারেননি, তখন আরভাড তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। ১৯৩৬ সালে গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকে হিটলারের অতিথি ছিলেন আরভাড।

গিলন লিখেছেন, আরভাডের বিয়ের সময় হিটলার উপস্থিত ছিলেন। তাই প্রেসিডেন্ট রুজভেল্টের সরাসরি অনুমতি নিয়ে এফবিআই ইনগা আরভাডের ফোনে আড়ি পাতে। তাঁর মেইল খতিয়ে দেখার পাশাপাশি কড়া নজরদারিতেও রাখে।

 ১৯৪২ সালে এফবিআই কেনেডি ও ইনগার প্রেমের বিষয়টি নিউইয়র্ক ডেইলি মিররের কলাম লেখক ওয়াল্টার উইনশেলের কাছে ফাঁস করে দেয়। ওই সময় দক্ষিণ ক্যারোলাইনার চার্লসটাউন নেভি ইয়ার্ডে একটি চাকরি নিয়েছিলেন কেনেডি। গিলন বলেন, নৌবাহিনীর কর্মকর্তারা কেনেডিকে বরখাস্ত করতে চেয়েছিলেন; কিন্তু পারিবারিক প্রভাব থাকায় তাঁর চাকরি টিকে যায়। গিলন বলেন, ইনগা যে গোয়েন্দা ছিলেন, এমন কোনো প্রমাণ শেষ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। কেনেডি যুক্তরাষ্ট্রের ৩৫তম প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগেই প্রেমের সম্পর্কের ইতি ঘটে। কেনেডি সম্পর্ক আবার ঠিক করার চেষ্টা করেছিলেন, তবে ইনগা আরভাড আর ফিরে আসেননি।

কেনেডি যখন পূর্ব জার্মানির আরেক তরুণী এলেন রোমেৎসের প্রেমে পড়েন তখন সম্পর্ক আরও জটিল হয়ে পড়ে। গিলনের মতে, ১৯৬৩ সালের জুলাই মাসে এফবিআই অ্যাটর্নি জেনারেল রবার্ট এফ কেনেডিকে তাঁর ভাইয়ের সম্ভাব্য কেলেঙ্কারি বিষয়ে সতর্ক করে। তাঁকে জন এফ কেনেডির সঙ্গে জার্মান তরুণীর প্রেমের গুঞ্জন সম্পর্ক জানিয়ে দেয়। এফবিআই এলেন রোমেৎমকেও গুপ্তচর বলে সন্দেহ করে।

গিলন বলেন, ওই সময় অনেক সংবাদ প্রকাশিত হতে থাকে যাতে বলা হয়, কেনেডি প্রশাসনের ক্ষমতাশালী এক সদস্যের সঙ্গে এক গুপ্তচরের প্রেমের সম্পর্ক চলছে। তখন কেউ সন্দেহ করেনি যে প্রেসিডেন্ট নিজেই প্রেমে জড়িয়েছেন। কংগ্রেস বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করে। রোমেৎসকে জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হওয়ার আগেই হোয়াইট হাউস দ্রুত তাঁকে আড়াল করে ফেলে। গিলনের মতে, রোমেৎস ছিলেন এলিজাবেথ টেলরের মতো দেখতে। সিনেট সেক্রেটারি ববি বেকারের মাধ্যমে কেনেডির সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হয়েছিল। গুঞ্জন ছিল, তিনি নিয়মিত হোয়াইট হাউসে যেতেন এবং পুল পার্টিতে অংশ নিতেন।

গিলন বলেন, যখন প্রেসিডেন্ট আরভাডকে খবরের বাইরে রাখতে চাইছিলেন জেনারেল ডোয়াইট আইজেনহাওয়ার সাবেক মডেল কে সামারসবের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক লুকানোর চেষ্টা করেননি। গিলন লিখেছেন, গাড়িচালক কে আইজেনহাওয়ার ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে পদোন্নতি পেয়েছিলেন। গিলনের মতে, সামারসবি পরে তাঁর স্মৃতিকথায় প্রকাশ করেছিলেন, তাঁদের মধ্যে আবেগের সম্পর্ক ছিল। গিলন তাঁর বইতে আরও লিখেছেন, এ উদাহরণগুলো দেখায়, সেরা কিছু প্রেসিডেন্টেরও দুর্বল কিছু মুহূর্ত ছিল; কিন্তু এসব দুর্বলতা তাঁদের সর্বশ্রেষ্ঠ প্রজন্মের সদস্য হিসেবে সুনাম নষ্ট করতে খুব একটা পারেনি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: এফ ক ন ড কর ছ ল ন বল ন

এছাড়াও পড়ুন:

দহন থেকে  জংলি

‘আমি নিয়মিত অনেক চিত্রনাট্য পাচ্ছি। নিয়মিত সেসব সিনেমা করলে প্রচুর টাকা কামাতে পারব। ফিন্যান্সিয়ালি জায়গাটা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু দর্শক আমাকে যেভাবে দেখতে চাচ্ছেন, তেমন গল্প পাচ্ছি না। দর্শক-প্রত্যাশার চেয়ে ভালো কিছু দিতে চাই। যখন সামগ্রিক চিন্তা করি, তখন ভাবতে হয় আমি কতটা আয় করলাম তার চেয়েও দর্শকের সামনে কীভাবে আসছি, সেটি মুখ্য। এটি একটি প্যাকেজ। মাঝে একটি-দুটি গল্প পছন্দ হয়। সেসব টিমের যে অবস্থা, বাজেট সামগ্রিকভাবে দেখতে গেলে ভালো গল্প তুলে আনা কঠিন হবে। তখন আমি না করে দিই। আমি চাইছি নিজের মতো করে কাজ করতে। জীবনে অনেক সিনেমা করতে হবে, এমন চিন্তা নেই। আমার মতো করে অল্প কিছু কাজ করে যেতে চাই।’ বলছিলেন সিয়াম আহমেদ।

গেল ঈদে মুক্তি পেয়েছে সিয়াম আহমেদ অভিনীত সিনেমা ‘জংলি’। যে সিনেমার সঙ্গে জড়িয়ে আছে নায়কের আবেগ ও পরিশ্রমের দীর্ঘ গল্প। সিনেমাটি করতে একচুলও ছাড় দেননি সিয়াম। ফলাফল হিসেবে পেয়েছেন দর্শকের অবারিত ভালোবাসা। জংলি মুক্তির পর তাই গল্পটি হয়ে উঠেছে সবার। দর্শকরা হলে গিয়ে কেঁদেছেন, গল্পে বুঁদ হয়ে থেকেছেন। করেছেন সিয়াম ও তাঁর টিমের প্রশংসা। 

সিয়াম বললেন, ‘এ সিনেমায় আমি দীর্ঘ সময় দিয়েছি। সিনেমার জন্য চুলদাড়ি বড় করেছি। একটি সিনেমার জন্য আমার পাগলামি নিয়ে মা-বাবার মনে হয়তো প্রশ্ন ছিল, ছেলেটি চুল-দাড়ি বড় করে কী করছে? কী করেছি, এটি তো তাদের বোঝানো যায় না। তবে আমার আত্মবিশ্বাস ছিল, সিনেমাটি মুক্তির পরে গল্পটি তাদের টাচ করবে। কারণ, গল্পটিই এমন, এটি প্রথম যদি কাউকে টাচ করে, সেটি সন্তানের মা-বাবাদের। যে কারণে তাদের একসঙ্গে হলে নিয়ে কাছ থেকে অনুভূতি জানার চেষ্টা করেছি। এখন পর্যন্ত মা-বাবার কাছ থেকে সেরা ফিডব্যাক পেয়েছি। বাবা-মেয়ের গল্পটি দেখে তারা ইমোশনাল হয়ে গিয়েছিলেন। শুধু আমার বাবা-মা নন, অন্য মা-বাবাদের কাছেও গল্পটি নিজেদের হয়ে উঠেছে। তারা সিনেমাটি দেখে কেঁদেছেন। হল রিঅ্যাকশনের সেসব ভিডিও সবাই দেখেছেন। সব মিলিয়ে আমরা সফল। আমাদের জংলি সফল।’

মুক্তির পর থেকে ‘জংলি’ সিনেমার এগিয়ে যাওয়ার গ্রাফ দেখলে শুধু দর্শকের ভালোবাসায় সফল নয়, ব্যবসায়িকভাবেও সিনেমাটি যে সফল তার চিত্র বিদ্যমান। মাত্র ৮টি শো দিয়ে শুরু হওয়া সিনেমাটি ঈদের এতদিন পরও মাল্টিপ্লেক্সে ত্রিশটির মতো শো নিয়ে দাপিয়ে চলছে। দেশ ছাড়িয়ে বিদেশের মাটিতেও জংলি হয়ে উঠেছে দর্শকদের সিনেমা।  

প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান টাইগার মিডিয়ার কর্ণধার জানিয়েছেন, জংলি প্রায় ছয় কোটির (গ্রস) ক্লাবে প্রবেশ করেছে। 

ঈদে মুক্তির পর থেকে ক্রমশ দর্শকপ্রিয় হয়ে ওঠে ‘জংলি’। এমনকি, দেশের সিনেমাপ্রেমীদের মন জয় করে কানাডা, আমেরিকা ও ইউকে’র ৪০টি থিয়েটারে মুক্তি পেয়েছে ‘জংলি’। গত ২৫ এপ্রিল থেকে স্বপ্ন স্কেয়ারক্রো-এর পরিবেশনায়, ঈদের সিনেমাগুলোর মধ্যে দেশের বাইরে সবচেয়ে বেশি থিয়েটারে একযোগে মুক্তি পেয়েছে এ সিনেমাটি। কানাডা ও আমেরিকার বক্স অফিসে প্রথম ৩ দিনের গ্রস ৩৫,০০০ ডলার আয় করে শুভসূচনা করেছে ‘জংলি’।

ঈদে আরও অনেক ছবি মুক্তি পেয়েছে। সেগুলোর মধ্যে জংলি বিশেষ হয়ে উঠেছে কেবল বাবা-মেয়ের গল্পের কারণে। সঙ্গে সিয়ামের নজরকাড়া অভিনয়। নৈঋতার পাখি হয়ে ওঠার দারুণ চেষ্টা। দিমিত্রি থে স্টোনহার্ট নামে এক মনীষী বলেছেন, ‘একজন বাবা বলেন না যে তিনি তোমাকে ভালোবাসেন; বরং তিনি দেখিয়ে দেন যে, তিনি তোমাকে ভালোবাসেন’ জংলি সিনেমায় সিয়াম সেটি বোঝাতে পেরেছেন। ফলে সিনেমাটি হয়ে উঠেছে সবার।

প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ বলেছেন– ‘পৃথিবীতে আসার সময় প্রতিটি মানুষই একটি করে আলাদিনের প্রদীপ নিয়ে আসে, কিন্তু খুব কম মানুষই সেই প্রদীপ থেকে ঘুমন্ত দৈত্যকে জাগাতে পারে।’ 
সিয়াম তাঁর জীবনের সেই দৈত্যকে জাগাতে পেরেছেন। পেরেছেন বলেই হয়তো আজ তিনি সাধারণ সিয়াম থেকে নায়ক সিয়াম হয়ে উঠেছেন। সিয়ামের যাত্রাটা শুরু বেশ আগে হলেও পুরোপুরি শুরু হয় ‘দহন’ সিনেমার মাধ্যমে। রায়হান রাফী পরিচালিত এ সিনেমাটির মাধ্যমে সিয়াম নাটক থেকে পুরোপুরি চলচ্চিত্রের মানুষ হয়ে ওঠেন। সে যাত্রা এখনও চলছে। প্রথম সিনেমায় যে সিয়ামকে সবাই  দেখেছেন, জংলির সেই সিয়াম যেন আকাশ-পাতাল। তখন সিয়াম ছিলেন তরুণ, এই সিয়াম এখন বাবা। পর্দায় ও বাস্তবে দুই জায়গাতে দারুণ এক বাবা হয়ে উঠেছেন তিনি। নিজের অভিনয় ক্যারিয়ার নিয়ে আগামী পরিকল্পনা কী? প্রশ্ন রাখলে নায়ক বলেন, ‘আমি নিজের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে চাই। যারা আমার আগের কাজ দেখেছেন, তারা যেন বলেন, আগের কাজকে ছাড়িয়ে যেতে পেরেছি। আরেকজনকে ছাড়িয়ে যাওয়ার চেয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়া কঠিন।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ