২০৪৭ সালে উন্নত অর্থনীতি হতে চায় ভারত, দরকার ৭.৯% গড় প্রবৃদ্ধি
Published: 4th, March 2025 GMT
২০৪৭ সালের মধ্যে ভারতকে উন্নত অর্থনীতির দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চায় দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার। দেশটির ষোড়শ অর্থ কমিশনের চেয়ারম্যান অরবিন্দ পানাগড়িয়ার মতে, সে জন্য আগামী ২৪ বছর জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার অন্তত ৭ দশমিক ৯ শতাংশ হতে হবে, তবে তা অসম্ভব নয় বলেই মনে করছেন তিনি। যদিও প্রবৃদ্ধির সাম্প্রতিক সরকারি পরিসংখ্যানের কারণে এই উচ্চাশা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
পানাগড়িয়ার হিসাব, এখন ভারতের মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৫৭০ ডলার। উন্নত অর্থনীতি হয়ে উঠতে গেলে তা ১৪ হাজার ডলারে উন্নীত করতে হবে। সে ক্ষেত্রে আগামী ২৪ বছরে মাথাপিছু আয় বাড়তে হবে ৭ দশমিক ৩ শতাংশ হারে। তার অর্থ, ২০৪৭-৪৮ অর্থবছর পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ধরে রাখতে হবে অন্তত ৭ দশমিক ৯ শতাংশ বা তার চেয়ে বেশি।
এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন অসম্ভব নয় বলেই মনে করেন পানাগড়িয়া। গত ২১ বছরে ভারতের গড় প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৭ দশমিক ৮ শতাংশ। তা ১০ ভিত্তি পয়েন্ট বাড়াতে হবে। সে জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার এনে শ্রমনিবিড় ক্ষেত্রের উন্নতি দরকার বলে মনে করেন তিনি। তৈরি করতে হবে শোভন কাজ; এখন যে প্রযুক্তি হাতে আছে, তার সঙ্গে যোগ করতে হবে আরও পুঁজি ও দক্ষতা।
অর্থ কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, ২০৫০ সাল পর্যন্ত বার্ষিক জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ ধরে নিয়ে তাঁর এই পূর্বাভাস।
কিন্তু সম্ম্প্রতি ভারতের প্রবৃদ্ধির হার কমে গেছে। গত জুলাই-সেপ্টেম্বরের তুলনায় অক্টোবর-ডিসেম্বরে প্রবৃদ্ধির গতি বাড়লেও তা আটকে গেছে ৬ দশমিক ২ শতাংশে। ৮ শতাংশই তো নয়ই, বার্ষিক ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাসও দিচ্ছে না কোনো মূল্যায়ন সংস্থা।এদিকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) জানিয়েছে, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ভারতের প্রবৃদ্ধির হার ৬ দশমিক ৫ শতাংশেই আটকে যাবে। চলতি অর্থবছরেও তা ৬ দশমিক ৩ থেকে ৬ দশমিক ৪ শতাংশের মধ্যে থাকবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে সরকারি-বেসরকারি সব সংস্থা। আইএমএফ মনে করছে, কাঠামোগত সংস্কারের মাধ্যমে বেসরকারি বিনিয়োগ উৎসাহিত করে কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে জোর দিতে হবে।
এদিকে বাংলাদেশও ২০২০ সালে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত অর্থনীতির হওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল। কিন্তু এরপর কোভিডের অভিঘাত এবং তারপর ২০২৪ সালের আগস্টে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর প্রবৃদ্ধির গতি অনেকটাই কমে গেছে। আওয়ামী লীগ সরকারের পরিপ্রেক্ষিত পরিকল্পনা অনুসারে, ২০৪১ সালে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির হার প্রায় ১০ শতাংশে উঠে যাওয়ার কথা। সেই লক্ষ্য অর্জন এখন সুদূর পরাহত বলেই মনে করা হচ্ছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রব দ ধ র হ র র প রব দ ধ র ৬ দশম ক ৭ দশম ক সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
শেষে এসে ‘বিপদে’ ওয়াসা
একের পর এক জটিলতায় পড়ছে চট্টগ্রাম ওয়াসার পয়োনিষ্কাশন প্রকল্পটি। অর্থ বরাদ্দের সংকট, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে বকেয়া নিয়ে বিরোধ, কাজের ধীরগতি—সব মিলিয়ে প্রকল্পের নির্মাণকাজ বর্ধিত সময়ে শেষ হওয়া নিয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা।
প্রায় ৫ হাজার ২০৪ কোটি টাকার এই প্রকল্পে ২২টি ওয়ার্ডের ২০ লাখ মানুষের জন্য আধুনিক পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থা গড়ে তোলার কথা রয়েছে। প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে ৭০ শতাংশ। এই সময়ে এসে নানা জটিলতায় ‘বিপদে’ পড়েছে ওয়াসা।
‘চট্টগ্রাম মহানগরের পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থা স্থাপন’ শীর্ষক প্রকল্পটি ২০১৮ সালের ৭ নভেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন পায়। শুরুতে প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩ হাজার ৮০৮ কোটি টাকা। এরপর প্রায় ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা ব্যয় বেড়েছে। মেয়াদ বেড়েছে তিন দফা। ২০২৩ সালের মধ্যে নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল, তা হয়নি।
বর্তমানে অর্থ বরাদ্দের সংকট নিয়ে বিপাকে আছে ওয়াসা। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সংস্থাটি চেয়েছিল ১ হাজার ৩৪০ কোটি টাকা, সরকারের কাছ থেকে পেয়েছে ৭৪৪ কোটি। চলতি অর্থবছরে (২০২৫-২৬) দরকার ১ হাজার ৪০ কোটি টাকা, কিন্তু এখন পর্যন্ত পাওয়া গেছে ৬৭৬ কোটি টাকা। প্রকল্পে খরচ হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৮০০ কোটি টাকা।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিল পরিশোধ করা হয়েছিল। এরপর ফেব্রুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত করা কাজের টাকা আমরা পাইনি। আগেও একই কারণে কাজ বন্ধ রাখতে হয়েছিল, পরে আশ্বাস পেয়ে শুরু করেছিলাম। এবারও সেই পরিস্থিতি।প্রকল্প পরিচালক, এসএ ইঞ্জিনিয়ারিংসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। এই নির্বাচনী মৌসুমে প্রকল্প বরাদ্দে আরও অনিশ্চয়তা দেখা দিতে পারে। অর্থ না এলে প্রকল্পের কাজ স্থবির হয়ে পড়বে। ২০২৭ সালের শুরুতে এ প্রকল্পের পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। কাজ শেষ না হলে এই পরিকল্পনা পিছিয়ে যাবে।
জানতে চাইলে ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম বলেন, গত বছরই অর্থ বরাদ্দের অভাবে অনেক কাজ আটকে ছিল। এ বছরও চাহিদা অনুযায়ী বরাদ্দ না পেলে সময়সীমা রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে। সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সঙ্গে অর্থ বরাদ্দ নিয়ে নিয়মিত যোগাযোগ করা হচ্ছে।
চলতি অর্থবছরে বরাদ্দের বিষয়ে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মো. রেজাউল মাকছুদ জাহেদীর সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে সাড়া পাওয়া যায়নি। তবে মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, পয়োনিষ্কাশন প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।
বর্তমানে অর্থ বরাদ্দের সংকট নিয়ে বিপাকে আছে ওয়াসা। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সংস্থাটি চেয়েছিল ১ হাজার ৩৪০ কোটি টাকা, সরকারের কাছ থেকে পেয়েছে ৭৪৪ কোটি। চলতি অর্থবছরে (২০২৫-২৬) দরকার ১ হাজার ৪০ কোটি টাকা, কিন্তু এখন পর্যন্ত পাওয়া গেছে ৬৭৬ কোটি টাকা।প্রকল্পের নথিতে বলা হয়, দৈনিক ১০ কোটি লিটার পরিশোধনের ক্ষমতাসম্পন্ন একটি পয়োশোধনাগার, দৈনিক ৩০০ ঘনমিটার পরিশোধনের ক্ষমতাসম্পন্ন একটি সেপটিক ট্যাংকের বর্জ্য শোধনাগার, ২০০ কিলোমিটার পয়োনালা নির্মাণ করা হবে। এতে চট্টগ্রাম নগরের ২২টি ওয়ার্ডের ৩৬ বর্গকিলোমিটার এলাকা প্রকল্পের আওতায় আসবে। আর উন্নত পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থার সুফল পাবেন ২০ লাখ মানুষ।
এখনো কাজ বন্ধ, অর্থের টানাপোড়েন
প্রকল্পের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ পাইপলাইন স্থাপনের কাজ ১৫ দিন ধরে বন্ধ রয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ার মূল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তাইয়ং ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড উপঠিকাদারদের অর্থ পরিশোধ না করায় সাতটি স্থানীয় প্রতিষ্ঠান কাজ বন্ধ রেখেছে।
হালিশহর এলাকায় পাইপ বসানোর কাজ করছে মেসার্স নূর এন্টারপ্রাইজ, এসএ ইঞ্জিনিয়ারিং, জাহান এন্টারপ্রাইজ, দেশ কন্ট্রাক্টরস অ্যান্ড ডেভেলপার লিমিটেড, ইনাস এন্টারপ্রাইজ, পোর্ট হারবার ইন্টারন্যাশনাল ও পাওয়ার বাংলা করপোরেশন। এ প্রতিষ্ঠানগুলোর দাবি, তাদের প্রায় ৪৬ কোটি টাকা বকেয়া পড়ে আছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার তাইয়ং কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনায় উপঠিকাদাররা দুটি শর্তে কাজ শুরুতে রাজি হয়েছেন—আগামী সোমবারের মধ্যে ৫০ শতাংশ বকেয়া পরিশোধ এবং ডিসেম্বরের মধ্যে বাকি অর্থ নিষ্পত্তি।
জানতে চাইলে এসএ ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রকল্প পরিচালক আহাদুজ্জামান বাতেন বলেন, ‘চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিল পরিশোধ করা হয়েছিল। এরপর ফেব্রুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত করা কাজের টাকা আমরা পাইনি। আগেও একই কারণে কাজ বন্ধ রাখতে হয়েছিল, পরে আশ্বাস পেয়ে শুরু করেছিলাম। এবারও সেই পরিস্থিতি।’
আহাদুজ্জামান জানান, ‘মূল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনায় আমরা দুটি শর্ত দিয়েছি—সোমবারের মধ্যে ৫০ শতাংশ বিল পরিশোধ এবং ডিসেম্বরের মধ্যে বাকি অর্থ নিষ্পত্তি। এ দুই শর্তে কাজ আবার শুরু করছি।’