ময়মনসিংহে ৫ কলেজে ছাত্রদলের আংশিক কমিটি ঘোষণা
Published: 4th, March 2025 GMT
ময়মনসিংহ মহানগর শাখার অন্তর্ভুক্ত পাঁচ কলেজে ছাত্রদলের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় মহানগর ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক আল মো. রাফসান সামি ও সহদপ্তর সম্পাদক ইসফাক আহমাদ স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, ময়মনসিংহ মহাবিদ্যালয়, আলমগীর মনসুর (মিন্টু) মেমোরিয়াল কলেজ, ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি ও ময়মনসিংহ কলেজ অব ফিজিওথেরাপি অ্যান্ড হেলথ সায়েন্সেস ছাত্রদল শাখার আংশিক কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, ময়মনসিংহ মহানগর শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ময়মনসিংহ মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি নাইমুল করিম ও সাধারণ সম্পাদক তানভীর রবিনের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ময়মনসিংহ মহানগর ছাত্রদলের অধীন পাঁচ কলেজের কমিটির অনুমোদন দেওয়া হলো।’
ময়মনসিংহ কলেজ অব ফিজিওথেরাপি অ্যান্ড হেলথ সায়েন্সেস ছাত্রদলের সভাপতি পদে এফ এম আবুল খায়ের ও সাধারণ সম্পাদক পদে নাহিদ হাসানের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ ছাত্রদলের সাত সদস্যবিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। এতে সভাপতি পদে রবিন মোল্লা ও সাধারণ সম্পাদক পদে কামরুল ইসলাম আছেন।
ময়মনসিংহ মহাবিদ্যালয়ের ৬৩ সদস্যের কমিটির সভাপতি রাব্বা মাহবুব খান ও সাধারণ সম্পাদক বায়োজিদ বোস্তামী। ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি কলেজে ১৮ সদস্যবিশিষ্ট ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। এতে সভাপতি মো.
আলমগীর মনসুর (মিন্টু) মেমোরিয়াল কলেজে ৩৪ সদস্যের ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। এতে সভাপতি পদে ইশরাক আজমাইন ও সাধারণ সম্পদাক শাহরিয়ার রাতুল।
বিজ্ঞপ্তিতে প্রতিটি শাখা কমিটিকে আগামী ৩০ দিনের মধ্যে কমিটি পূর্ণাঙ্গ করে ময়মনসিংহ মহানগর ছাত্রদলের দপ্তরে জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র ছ ত রদল র র কম ট সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
হাড়ভাঙা পরিশ্রমে পুরুষের অর্ধেকের কম বেতন নারীর
লিমা আক্তার কাজ করতেন ময়মনসিংহ নগরীর একটি রেস্তোরাঁয়। প্রতিদিন তাঁর ডিউটি শুরু হতো বেলা ১১টায়, শেষ হতো রাত ১২টায়। তাঁর কাজ ছিল বাবুর্চির রান্নার কাজে সহায়তা করা। প্রতিদিন ১৩ ঘণ্টা কাজ করেও তাঁর দৈনিক মজুরি ২৫০ টাকা। অথচ মূল বাবুর্চির দৈনিক বেতন এক হাজার টাকা। সংসার সামলে স্বল্প বেতনে প্রতিদিন দীর্ঘ সময় কাজ করা কষ্টসাধ্য হওয়ায় বাধ্য হয়েই চাকরি ছাড়েন তিনি।
একই চিত্র দেখা গেছে, সিটি করপোরেশনের নারী পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের বেলায়। সরেজমিন দেখা যায়, রাত ১০টার পর থেকে বিপণিবিতানগুলো বন্ধ হলে কাজ শুরু হয় তাদের। এ কাজে পুরুষের চেয়ে নারীর অংশগ্রহণ বেশি। তাদের অভিযোগ, রাত ১১টা থেকে কাজ শুরু হলে শেষ হয় রাত ২-৩টায়। এত রাতে কাজ শেষ করে নিরাপদে বাসায় যাতে পারেন না। এ কাজে মজুরিও অনেক কম।
সিটি করপোরেশনের তথ্যমতে, নগরীতে নারী পরিচ্ছন্নতাকর্মীর সংখ্যা প্রায় দেড় হাজার। তারা মাসিক বেতন পান ৭ হাজার ৮০০ টাকা। নারী অধিকারকর্মীরা জানান, সরকারি প্রতিষ্ঠানেও নারীর প্রতি বৈষম্য মেনে নেওয়ার মতো না। তাদের দাবি– বিশ্ববিদ্যালয়, সিটি করপোরেশন ও অন্যান্য স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে ন্যূনতম মজুরি সরকারি প্রজ্ঞাপনে ধরা আছে ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পাচ্ছেন মাত্র ২০০-২৫০ টাকা।
সুলেখা নামে এক নারী কর্মীর ভাষ্য, এত অল্প আয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়। আবার রাত-বিরাতেও কাজ করতে গিয়ে বিভিন্ন ঝামেলা পোহাতে হয়।
ময়মনসিংহের ইটভাটাগুলোতে কাজ করেন শতাধিক নারী কর্মী। সারাদিন কঠোর পরিশ্রম করলেও পুরুষের চেয়ে অর্ধেক বেতন জোটে। হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে তারা মজুরি পান ২৫০-৩০০ টাকা। যেখানে একজন পুরুষ একই কাজ করে মজুরি পান ৬০০-৭০০ টাকা। একই অবস্থা চালকলগুলোতে। শতাধিক চালকলে কাজ করেন কয়েক হাজার নারী শ্রমিক। নারীর তুলনায় এখানে দ্বিগুণ বেতন পান পুরুষ।
ময়মনসিংহ কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের সূত্রমতে, জেলার ইটভাটাগুলোতে ৮০ শতাংশ পুরুষের সঙ্গে কাজ করেন ২০ শতাংশ নারী। তবে ভালুকা উপজেলার বিভিন্ন পোশাক কারখানা ও স্পিনিং মিলগুলোতে কাজ করেন ৬৫-৭০ শতাংশ নারী শ্রমিক। সরকারি প্রতিষ্ঠানে মাতৃত্বকালীন ছুটি ছয় মাস হলেও এসব কারখানায় খুব একটা ছুটি মেলে না। তাদের অভিযোগ, অধিকাংশ নারীকেই অন্তঃসত্ত্বা হলে চাকরি ছেড়ে দিতে হয়। পরে আবার নতুন চাকরির জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হয়।
ট্রেড ইউনিয়ন সূত্রে জানা গেছে, নারীদের সন্ধ্যা ৬টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত কাজ না করানোর নির্দেশনা থাকলেও নিয়ম মানছে না অধিকাংশ কারখানা। রাত ১২টা থেকে ১টায় অনেক কারখানা ছুটি হলে ঘরে ফিরতে অনিরাপদ বোধ করেন নারী কর্মীরা। এ ছাড়া কর্মক্ষেত্রে ও রাস্তায় যৌন হেনস্তার শিকার হন অনেকে। এসব বিষয়ে ‘অ্যান্টি হেরেজমেন্ট কমিটি’ থাকলেও বাস্তবে সুফল পাচ্ছেন না শ্রমিকরা।
ট্রেড ইউনিয়নের নারী নেত্রী নওশীন বৃষ্টি জানান, মাঝে মাঝেই খবর আসে অফিস বা কর্মস্থলেই সন্তান প্রসব করেন নারী শ্রমিকরা। যা একইভাবে নিয়োগ কর্তার গাফিলতি ও শ্রমিকের অসচেতনার ইঙ্গিত দেয়। নিয়োগ কর্তা বা মালিক পক্ষ অধিকাংশ ক্ষেত্রে অন্তঃসত্ত্বা নারীদের ছুটি দিতে চান না। তার ওপর আবার বেতনসহ ছুটি দেওয়া তো আকাশ ছোঁয়ার মতো ব্যাপার।
বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘের জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক তফাজ্জল হোসেন সমকালকে বলেন, ময়মনসিংহে হোটেল রেস্টুরেন্টে সব মিলিয়ে পাঁচ হাজার নারী শ্রমিক কাজ করেন। তাদের দিয়ে পুরুষের তুলনায় অনেক কম বেতনে কাজ করানো হয়। তাঁর মতে, নারীরা সমাজে পুরুষের সমকক্ষ হওয়ার জন্য দেশে প্রচলিত বিভিন্ন রকম শ্রমশোষণ ও বিভাজন ভেঙে ফেলতে হবে।
কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর ময়মনসিংহের শ্রম পরিদর্শক (সেফটি) তুহিনুর রহমান জানান, কারখানাগুলোর বিরুদ্ধে শ্রমিকদের প্রতি মাসে ৫০-৬০টি অভিযোগ আসে। ১২৪-এর ক ধারায় ত্রিপক্ষীয় সালিশের মাধ্যমে এগুলো নিষ্পত্তি করা হয়। এ ছাড়া ১৬৩৫৭ নম্বরে ট্যুল ফ্রি ফোন করে অভিযোগ জানালে বিষয়গুলো বিবেচনা করে শ্রমিকের অধিকার রক্ষায় কাজ করে অধিদপ্তর।